আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নূরা পাগলার বয়ান------“মুক্তি চাই কোটার অভিশাপ থেকে"

বিরিন শট

(East or West Nura Pagla is the best.) যে দেশে দরিদ্র ঘরের লাখো সন্তান প্রতিবছর জায়গা-জমি, হালের বলদ বিক্রি করিয়ে দরিদ্র বাবা-মাকে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর করে লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষিত বেকার হয়ে বাবা-মার ঘাড়ে অভিশাপ হয়ে চেপে বসে, যে দেশে একটি চাকরি মানে বাবা-মাকেসহ দুবেলা খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকবার নিশ্চয়তা সে দেশে চাকরি কেন শুধু মেধার জোরে হবেনা? কেন কোটার কাছে মেধা পরাজিত হবে? কি ৪র্থ শ্রেণী কি ১ম শ্রেণী সবশ্রেণীর চাকরিতেই কোটার প্রথার কারনে প্রকৃত মেধাবীদের চাকরি পাওয়া কঠিন। প্রাইমারী স্কুলের চাকরীর কথাই ধরা যাক। দেশে সবচেয়ে বেশি লোক নেয়া হয় প্রাইমারী স্কুলের টিচার হিসেবে। অথচ সে চাকরিতে প্রবেশাধিকার কোটাহীন ছেলেদের জন্য একেবারে নেই বললেই চলে। ৬০% কোটা শুধু এস. এস. সি, এইচ. এস. সি পাস মেয়েদের জন্য দিয়ে রাখা হয়েছে, ৩০% মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, তাদের সন্তানদের সন্তান এবং তাদের নিকটাত্মীয়দের জন্য, এছাড়া আরো আছে পোষ্য কোটা, আনসার-ভিডিপি কোটা, এতিম-প্রতিবন্ধি কোটা ইত্যাদি বিভিন্ন নামের কোটা।

তাহলে যে ছেলেটা মেয়ে হয়ে জন্মায়নি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার কারণে, যে ছেলেটার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেনি, বা করলেও অদূরদর্শী বোকালোক বলে সার্টিফিকেটটা নিয়ে রাখেনি, যার বাবা প্রাইমারী স্কুল বা আনসারের চাকরিও করেনা, যে ছেলেটা প্রতিবন্ধী বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বা এলাকার অধিবাসী নয় (যদিও এমনও হতে পারে যে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বা এলাকার সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া পরিবারটি থেকে তাদের পরিবারটি অগ্রসর এলাকার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও আরো বেশি পিছিয়ে রয়েছে) সে ছেলেটার চাকরি পাওয়ার সুযোগ কোথায়? সারাদেশে ৫০০ থানার আওতাধীন স্কুলে যদি একসাথে ১০০০০ টিচার নেয়া হয়, তাহলে গড়ে এক একটি থানায় ১০০০০/৫০০=২০ জন করে টিচারের পদ পড়ে। ৬০% মহিলা কোটায় ২০*৬০%=১২টি পদ বাদ, ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০*৩০%=৬ টি পদ বাদ। তাহলে ১২+৬=১৮ টি পদ যদি খালি মেয়ে আর মুক্তিযোদ্ধারাই খেয়ে ফেলে বাকি থাকে কয়টা? ২০-১৮=২টা। এখম এই ২টা পদ থেকে যদি পোষ্য কোটা, আনসার-ভিডিপি কোটা, এতিম-প্রতিবন্ধি কোটার ভাগও পূরন করতে হয় তাহলে কম করে হলেও ১টি পদ দিয়ে দিতে হবে। তাহলে শুধু মেধা ছাড়া যাদের কোনো রকমের কোনো কোটা নাই, সেই ছেলেগুলির জন্য কয়টি পদ রইল? এখন আসা যাক মেয়েদের জন্য বরাদ্দ রাখা কোটা প্রসঙ্গে।

এ কোটা এমনি এক শক্ত কোটা ন্যুনতম পাস নাম্বার না পাওয়ার কারনে যদি দুই একটা মেয়ে কম পাওয়া যায় তাহলে অন্য থানা, অন্য জেলা এমনকি অন্য বিভাগ থেকেও মেয়ে এনে চাকরিগুলি দিয়ে দেয়া হয়, কিন্ত নিজ থানার অনেক বেশী নাম্বার পেয়ে থাকা এবং বেশি লেখাপড়া জানা ছেলেগুলিকে দেয়া হয়না। এবং এভাবে একজনের ন্যায্য প্রাপ্য চাকরি জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য আরেকজমকে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে কি শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব?বলা হয়, মেয়েরা টিচার হিসেবে বেশি caring এবং কম ফাঁকিবাজ হয়। এটা কোনো যুক্তি হতে পারেনা, এটা কোনো সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত সত্যও নয়। মাথায় যদি আপন পরিবার নিয়ে, সন্তান নিয়ে নানান দুঃশ্চিন্তা থাকে তবে পুরুষ বা নারী যেই হোক কারো পক্ষেই ক্লাশে ১০০% ডেডিকেটেড হওয়া সম্ভব নয়।

একজন ডাক্তারের বা গভঃ কলেজ শিক্ষকের স্ত্রী যদি প্রাইমারী স্কুলের টিচার হয়, তবে তার পক্ষে ক্লাশে যতটা dedicated হওয়া সম্ভব, একজন বেকার লোকের স্ত্রী কিন্ত তা কখনই হতে পারবেনা। কারণ তার সংসারের অভাবের চিন্তা ক্লাশ নেয়ার সময়ও তার মাথায় ঘুরপাক খাবে যেটি পুরুষ টিচারদের বেলায় ঘটে। আর সবচেয়ে বড় কথা প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার রয়েছে দেশের সবকিছুর উপর। অধিকার রয়েছে যার যার মেধা ও শিক্ষার উপর লড়ে কোনো চাকরি পাবার। অধিকার রয়েছে সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবার।

কোনো অনুমানের উপর নির্ভর করে কারো ন্যায্য প্রাপ্য ছিনিয়ে নিয়ে অন্যকে দিয়ে দেয়া কোনোমতেই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারেনা। যে ছেলেগুলি প্রাইমারি স্কুলের চাকরির জন্য লড়ে এবং অনিবার্যরূপে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হয় তাদের অধিকাংশের পিতা-মাতাই কিন্ত গরীব, ১৭/১৮ বছর পড়ালেখা করিয়ে তাদের কিনতু এই সামর্থ্য আর থাকেনা যে, একটা দোকান বা ব্যবসা দিয়ে দেবেন। এই লক্ষ লক্ষ বেকার ছেলে গুলোর ১-২% ছেলেও যদি হতাশায় বিপথগামী হয়, ছিনতাই, ডাকাতিতে লিপ্ত হয় তাহলে যতই পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হোক, আর যতই পুলিশকে আধুনিক training দেয়া হোক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি কিছুতেই নিয়ণ্ত্রণ করা যাবেনা। একদা একসাথে লেখাপড়া করে বেড়ে ওঠা প্রতিবেশীর কম লেখাপড়াওয়ালা এবং কম নাম্বার পাওয়া মেয়েটি যখন শুধু কোটার জোরে তার বা তার মত অন্য কোনো ছেলের ভাগের ন্যায্য চাকরি ছিনিয়ে নিয়ে at least 2nd class(যেহেতু মেয়েরা তার থেকে উপরের level-এর একজনকে husband হিসেবে চায়) একজন অফিসারকে বিয়ে করে অহংকার নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তখন লজ্জায়, হতাশায় ছেলেটির মনের অবস্হা কি হয় তার খোঁজ কি কেউ রাখে? মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁরা সবকিছুতেই অগ্রাধিকার পাবেন এটা একেবারে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

যে সব মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন, যুদ্ধে অংগ হারিয়েছেন, বা সব কিছু হারিয়ে দরিদ্রতায় নিমজ্জিত হয়েছেন, এবং এ কারণে তাঁদের সন্তানদের পক্ষে ভালভাবে পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি তাদেরকেও তাঁদের পিতার privilege দেয়া সমর্থনযোগ্য(তবে মনে রাখতে হবে একজনকে দেয়া privilege আরেকজনের প্রতি বঞ্চনার কারণ)। কিনতু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সন্তান, তাদের সন্তানের সন্তান, এবং মুক্তিযোদ্ধার নিকটাত্মীয়দেরও একই privilege আইন করে দেয়ার বিধান করা হবে এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। (প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তা চান বলেও আমি বিশ্বাস করিনা। পশ্চিম পাকিসতানীরা পূ্র্ব পাকিস্তানীদের সমান অধিকার দিত না বলেই কিনতু সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপনারা যুদ্ধ করে দেশ মুক্ত করেছিলেন। ) আমার বাবা যুদ্ধ করেনি, বা করলেও অদূরদর্শী বোকালোক বলে সার্টিফিকেটটা নিয়ে রাখেনি বলে আমার বাবার অপরাধে আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কাছে সবসময় হেরে এসেছি চাকরী পাওয়ার ক্ষেত্রে।

এখন আমার সন্তানও তার দাদা যুদ্ধ করেনি বলে তার দাদার অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সন্তানদের কাছে হেরে কিনবা তাঁর নিকটাত্মীয়দের কাছে হেরে ----এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। কিংবা, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কাছে আমি হারতাম বলে এখন তাঁদের নাতি-পুতিদের এমনকি নাতি-পুতি না পাওয়া গেলে নিকটাত্মীয়দের জন্যও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে এটা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারিনা। নবীর ছেলে নবী হয়না, ঈমামের ছেলে ঈমামের সম্মান পেতে পারেনা। তবে জমিদারের নাতি জমিদার হয়, পীরের নাতিও পীরের সম্মান ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। একজন যদি কোনোভাবে পীরের তকমা গায়ে লাগাতে পারে তবে তার নিকটাত্মীয়দের কপাল খুলে যায়।

এখন আমাদের ভোটে নির্বাচিত এ সরকার দেশে দেখা যাচ্ছে এক নতুন পীরতন্ত্র নব্য elite class প্রতিষ্ঠা করে ফেললো। এভাবে যদি চলতে থাকে তবে দেশে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সময়ের দাবীতে আবার নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন দেখা দেবে (আমার এ লেখা পড়ে আনেকেই আমি রাজাকারের সন্তান কিনা সন্দেহ করছেন। অনেকে গালি দিচ্ছেন। না আমি রাজাকারের সন্তাননা, রাজাকারদের নিয়ে কবিতা লেখালেখির অপরাধে আমাকে বছর দশেক আগে ইউনিভার্সিটিও ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্নটা যখন ভাতের অধিকারের তখন আর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের বা নিকটাত্মীয়দের জন্য এত আবেগ কাজ করেনা) প্রতিবন্ধী কোটার ব্যাপারে আমার বিশেষ কিছুই বলবার নাই।

পোষ্য কোটার ব্যাপারে আপত্তি আছে। যে যুক্তিতে পোষ্য কোটা চালু রাখা হয়েছে সেটা মেনে নেয়া যায়না, সবাই যার যার অবস্থান থেকে দেশের জন্য কষ্ট করে। তবে দেশের প্রতি কৃষকের অবদান, ত্যাগ সবচে বেশি। তাই তাদের সন্তানদের জন্য যদি কোটা না থাকে তবে সুবিধাভোগী চাকরীজীবীর সন্তানদের জন্য কেন থাকবে? জেলা কোটার ব্যাপারটাও মানা যায়না। কারো জন্মের আগেই কিংবা কারো পড়ালেখা complete হবার আগেই যদি তার এলাকার জন্য নির্ধারিত কোটা পুরণ হয়ে যায় তবে লেখা হয় অমুক জেলার প্রার্থীদের আবেদন করবার প্রয়োজন নাই।

একেবারে হীরক রাজার দেশের আইন। অমুক এলাকার লোকেরা বেশি খেয়ে ফেলেছে, ওদের আর খাওয়ার দরকার নাই। “না খেলে নাই ক্ষেত, খেলে পরে বাড়ে মেদ। “ কেনরে ভাই, ছেলেটার মেধা যদি অন্য এলাকার প্রার্থীর চেয়ে বেশী থাকে তবে সে কেন চাকরি পাবেনা? তার এলাকার অন্য লোকেরা তার জন্মের আগেই বা তার পড়া শেষ হবার পূর্বেই বেশি বেশি চাকরি যদি পেয়ে থাকে তাতে তার বা তার গরীব পিতা-মাতার কি লাভ হয়েছে? পরিশেষে বলা যায়, একের প্রতি দেয়া privilege অন্যের প্রতি বঞ্চনার কারণ। সুতরাং, কোটা নয় চাকরি হোক মেধার ভিত্তিতে।

মুক্ত হোক লক্ষ বেকার কোটার অভিশাপ থেকে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।