কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! আটটা বাজল, আমি ঘুম থেকে উঠলাম। অথবা, আমি ঘুম থেকে উঠলাম, আটটা বাজল।
পাশে তাকিয়ে দেখি তৃষ্ণা গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। গায়ে তার ফুল লতা পাতা আঁকা রাতপোশাক। এই পোশাক সে কখন পরল? ঘুমানোর আগে যতদূর মনে পড়ে আমি তাকে নগ্ন অবস্থায় দেখেছি।
সকালের রহস্যময় আলোয় ততোধিক রহস্যময়ী এ নারীকে আমার একটা বাচ্চা মেয়ে বলেই ভ্রম হচ্ছে। নারী? তাকে কি নারী বলা যায়? যেতেও পারে।
মাথাটা প্রচণ্ড ব্যথা করছে। তবে এরকম ব্যথা এই বুড়ো বয়সে হতেই পারে। আমি শুয়ে শুয়েই একটা পেইন কিলার ইনজেকশন নিয়ে নিলাম।
ব্যস, একটু পরেই ব্যথা একদম নাই হয়ে গেল। বিছানা ছেড়ে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে বিশটা বুকডন দিলাম আমি। তৃষ্ণার সামনে বুকডন আমি পারতপক্ষে দেই না, কারণ এক নাগাড়ে বিশ পঁচিশটার বেশি আমি কখনই দিতে পারি না। আর মাত্র বিশ বা পঁচিশটি বুকডন তৃষ্ণাকে ইমপ্রেস করার জন্য যথেষ্ট নয়। যে মাথামোটা প্রোগ্রামারটা ওকে প্রোগ্রাম করেছে সে মনে হয় নিছক ফান করার জন্যই ওর মুগ্ধ হবার লিমিট ন্যুনতম একশ বুকডনে রেখে দিয়েছে।
বুকডন শেষ করে বাথরুমে গেলাম আমি। ব্রাশ করলাম বেশ কিছুক্ষণ ধরে। একটা দাঁতে মনে হয় ক্যাভিটি হয়েছে। ফিলিং লাগতে পারে। দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাব যাব করেও যাওয়া হচ্ছে না।
এখন অবশ্য দাঁতের চিকিৎসা একটাই, সব দাঁত ফেলে দিয়ে নতুন ঝকঝকে তকতকে দাঁতের পাটি লাগানো। ব্যথা লাগে না, মাত্র দশ মিনিটে সব কাজ শেষ হয়ে যায়।
তৃষ্ণা গত মাসে আমাকে একটা ইলেকট্রিক রেজার গিফট করেছে। এটা নাকি ওর মামা গানা থেকে পাঠিয়েছিল। আমি শুনে প্রথমে খুব এক চোট হেসেছিলাম।
ওর আবার মামা! ও তো ক্রেতার প্রয়োজন অনুসারে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হওয়া সাধারণ একটা আইটেম! বায়োটেক একটা জিনিস। তৃষ্ণার মত বায়োলজিকালি নিখুঁত নারীদের ল্যাবরেটরিতে তৈরি করে শৈশবের বানানো কিছু স্মৃতি ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের মত নিঃসঙ্গ পুরুষদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। ভালো উদ্যোগ। নাহলে আমরা চলতাম কিভাবে?
ইলেকট্রিক রেজার জিনিসটা অনেক ভালো। ঠিকমত ব্যবহার করতে জানলে এক মিনিটেই কাজ সারা যায়, একটুও কাটে না।
আমার অবশ্য প্রথম দিকে অনেক ভয় লাগত। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। একটা বিউটি পার্লারে গেলেই অবশ্য হেয়ার ফলিকলগুলো পার্মানেন্টলি রিমুভ করে দিত। টাকা একটু খরচ হত অবশ্য। তবে আমি শেভ করাটাই প্রেফার করি।
পুরুষ পুরুষ একটা ভাব বজায় থাকে তাতে।
শেভ শেষ করে আয়নায় একবার নিজেকে দেখলাম আমি। নাহ, বয়সের ছাপ তেমন একটা নেই। দুইশ পাঁচ বছর হল, অথচ আমার শরীরের গাঁথুনি এখনও দেখার মত। মাসল এখনও ঝুলে যায় নি।
বেঢপ ভুঁড়ি বের হয়ে পড়ে নি এখনও। আমাকে বোধহয় এখনও সুপুরুষই বলা চলে। আর হ্যাঁ, বিশ পঁচিশটা বুকডন তো আমি অবলীলায় দিতে পারি। ভাবনাটা আসতেই গোপন একটা সুখের অনুভূতি আমার সমস্ত অন্তর অধিকার করে নিল। আমি মুচকি হাসলাম।
গরম পানির কথা চিন্তা করতেই বাথরুমের কল দিয়ে ঝরঝর করে গরম পানি পরতে শুরু করল। আয়েশ করে একটা হট পিউরিফাইড ফ্রদি ওয়াটার বাথ নিলাম আমি। এই গোসলের আইডিয়াটা তৃষ্ণারই। ওর এইসব বড়লোকি বিলাসিতা বড় পছন্দের। ছোটবেলা থেকে নাকি এসব দেখেই বড় হয়েছে সে।
এবার অবশ্য আমি হাসি নি। বায়োটেক ওর মাথায় যা ঢুকিয়েছে তৃষ্ণা তা-ই বিশ্বাস করে। সে তার অতীতের ব্যাপারে সুপার সিরিয়াস।
আজকে সকালের নাস্তাটা আমারই বানানোর কথা। আমরা নারী পুরুষের অসম অধিকারে বিশ্বাস করি না।
তৃষ্ণা আর আমি নিয়মিতই কাজ ভাগাভাগি করে নিই। আজকে যেমন আমার আগে ওঠার কথা ছিল। সে যাকগে। আমি গোসল সেরে বের হয়ে কাজে লেগে গেলাম। ফ্রিজ থেকে পাউরুটি বের করে টোস্টারে ঢুকিয়ে সুইচ টিপে দিলাম।
টোস্ট হয়ে যেতেই প্লেটে তুলে ঢাকনি দিয়ে ঢেকে রাখলাম খাবারটা।
তারপর গিয়ে তৃষ্ণাকে ডাক দিলাম আমি। তৃষ্ণা কিছুক্ষণ বাচ্চা মেয়ের মত উহু আহা করে অবশেষে ঘুম থেকে উঠল। যে দিনগুলোয় আমার আগে ওঠার কথা থাকে সে দিনগুলোয় ও এরকমই করে। একদম উঠতে চায় না।
ছোটবেলায়ও নাকি ও ওরকম ছিল। উঠতেই চাইত না বিছানা থেকে। ওর আম্মা নাকি বলতেন, “শুয়ে থেকে থেকে তো হাতি হবি। ঘরের কাজকর্ম কিছু কর”।
তৃষ্ণা নাকি বলত, “আরেকটু মা, আরেকটু”।
এটা শুনেও অবশ্য আমি কোনোমতে হাসি চাপিয়ে রেখেছি। ওর স্মৃতিতে যে আম্মা আছেন তার চেহারা কিরকম জানতে ইচ্ছা করছিল, পরে আর জিজ্ঞেস করি নি।
বাথরুম সেরে খেতে এল তৃষ্ণা। ব্রেডে জেলি মাখিয়ে কামড়ে কামড়ে খেতে লাগল সে। মেয়েটার এই একটা বৈশিষ্ট্য আছে, খাবার সময় সে একদমই উপরে তাকায় না।
একমনে নিচে তাকিয়ে খেয়ে যায়। আজও খাচ্ছে।
আমি খোঁচা মেরে বললাম, “ইঁদুর একটা। এভাবে কেউ খায়?”
আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকাল সে। আমার তাকিয়ে থাকার ব্যাপারটা লক্ষ্য করে কেমন যেন লজ্জা পেয়ে গেল সে।
খাওয়ার গতি কেমন স্লথ হয়ে গেল তার। আমি হাসলাম।
তৃষ্ণা লাজুক হেসে বলল, “এমন করলে কিন্তু আমি খাব না”।
আমি আবার হাসলাম। তৃষ্ণা ভিতরে ভিতরে এখনও একটা অভিমানী বাচ্চা মেয়ে রয়ে গেছে।
ও নাকি ছোটবেলায়ও এরকম ছিল। খুব অভিমানী, খুব আদুরে। গাল ফুলানো, ন্যাকা একটা মেয়ে। ক্লাসমেটরা নাকি ওকে বিলাই বলে ডাকত। আমার মনে হল, সে কি জানে সে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হওয়া একটা আইটেম ছাড়া আর কিছুই নয়? তার স্মৃতির বিন্দুমাত্র সত্যি নয়? সে কি জানে এগুলো?
ওর খাওয়া শেষ হল।
আমি প্লেট গুছিয়ে টেবিল পরিষ্কার করে ফেললাম। তারপর রুমে গিয়ে শার্ট প্যান্ট পরে অফিসে যাবার জন্য তৈরি হলাম।
বাসা থেকে বের হবার আগে তৃষ্ণার গালে আলতো একটা চুমু দিলাম আমি। তৃষ্ণা সেই চুমু শতগুণে ফিরিয়ে দিল ঠোঁটে। আমার অফিসে যেতে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট দেরি করিয়ে দিল সে।
অফিসে গিয়ে দেখি অনেক কাজ। আমার বস একটা রোবট। শালা হারামির বাচ্চা, যতটা না খাটায় তারচেয়ে বেশি কথা শুনায়। অথচ মাস শেষে বেতন বোনাসের বেলায় তার হাত খুলতেই চায় না। শুয়োর বসটা যে কবে যাবে।
কিছুক্ষণ কাজ করার পরই মাথার ব্যথাটা ফিরে এল। পেইন কিলারের ডিউরেশন অফ অ্যাকশন শেষ। আমি ব্যাগ থেকে আরেকটা পেইন কিলার বের করে ইনজেকশনে নিয়ে নিলাম। একটু পরেই, আহ! শান্তি।
এগারোটা পর্যন্ত ভালোই কাজ করছিলাম।
তার পর থেকেই দেখলাম আমার চিন্তা করতে কেমন যেন সমস্যা হচ্ছে। ডান হাতটা মাঝে মাঝে অকারণে কেঁপে কেঁপে উঠছে। এগুলো কি রে ভাই? এক ডাক্তার অবশ্য পঞ্চাশ বছর আগে বলেছিল “সেনাইল অ্যাট্রফি”র কারণে বুড়ো বয়সে স্নায়ুতন্ত্রের কোষ ক্ষয়ে যায়। সেটাই কি আমাকে কাবু করা শুরু করল নাকি? চিন্তার বিষয়।
দুপুর একটার দিকে অফিসের পিওন লাঞ্চ দিয়ে গেল।
তৃষ্ণা পাঠিয়েছে বাসা থেকে। খুলে দেখি ইলিশ মাছের তরকারির সাথে ডিম ভুনা। দেখেই জিভে জল আসে।
খেয়েদেয়ে ফোন দিলাম, “ডার্লিং, কেমন আছ?”
আদুরে কণ্ঠের উত্তর এল, “খেয়েছ?”
বললাম, “হুম”।
“ভালো হয়েছে?”
“সত্যি বলব নাকি যেটা শুনলে তুমি খুশি হবে সেটা বলব?”
“সত্যি বল”।
“ফ্যানটাবুলাস হয়েছে”।
“কি বুলাস?”
“ফ্যানটাবুলাস”।
“সেটা আবার কি?”
“ফ্যানটাসটিক প্লাস ফ্যাবুলাস”।
“ফাজিল”।
“কে?”
“আমার সাথে যে কথা বলছে সে”।
ঠিক এই সময় বস আমাকে দেখা করতে বলল। শালা জাউরা। রোবট একটা। জাউরা রোবট।
গিয়ে দেখি একগাদা ফাইলের কাজ বাকি।
সব আমাকে করতে হবে। মনে মনে বসকে একশ এক বার “শালা জাউরা” বললাম আমি। বলতে বলতেই ফাইল নিয়ে এলাম নিজের রুমে। হাতের কাঁপুনিটা কেমন যেন বেড়ে যাচ্ছে। মাথার মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা আবার আস্তে আস্তে বাসা বাঁধছে।
আমি পাত্তা দিলাম না। কাজ শেষ করতেই হবে আমাকে।
সব কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাসায় গিয়ে দেখি তৃষ্ণা গবীন্দ্রসঙ্গীত ছেড়ে বসে আছে। ওর ফার্স্ট ক্র্যাশ নাকি গবিঠাকুর।
গবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলেই নাকি ও বর্তমান পৃথিবী থেকে হঠাৎ করেই অন্য কোন ভাবের জগতে হারিয়ে যায়।
আমি নিজে অবশ্য মেটাল ছাড়া অন্য কিছু শুনি না। বুড়ো বয়সে মেটাল শোনা হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জানি, তবুও কেন যেন ছাড়তে পারি না। বিশেষ করে Children of Sodom এর মেটাল সং আমার প্রিন্সিপাল অ্যাডিকশন। প্রতিদিন শুনতে হয়, কমপক্ষে আধঘণ্টা, না শুনলে মনটা কেমন ছটফট করে, স্থির থাকতে পারি না।
তৃষ্ণা আমাকে এক কাপ ব্রাউনিশ ব্ল্যাক কফি করে দিল। কফি খেয়ে আমি খবর দেখতে বসলাম। এখন অনেক চ্যানেল, টিভি খুললেই একটায় না একটায় খবর পাওয়া যাবেই যাবে।
জিএম টিভিতে দেখাচ্ছে, পামেরিকার বিজ্ঞানীরা নাকি দাবি করছেন তারা কৃত্রিম সূর্য তৈরি করেছেন। এই নিয়ে সারা বিশ্ব তোলপাড়।
উইটিভিতে দেখাচ্ছে, ইরাক মরুভূমিতে নাকি মানুষের ফসিল পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, একসময় এখানে নাকি মানুষ বাস করত।
ধেত, কি ভুয়া খবর। ইরাক মরুভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি। সুপারসনিক প্লেনে পার হতেও ঘণ্টাখানেক লাগে।
এখানে ছিল মানুষ? হাউ পছিবল? বোগাস।
খবর শেষে কম্পিউটারের সাথে কিছুক্ষণ দাবা খেললাম আমি। প্রাচীনকালে এই খেলাটার খুব প্রচলন ছিল। পরে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। আমাদের মত প্রাচীনপন্থী কয়েকজনের কম্পিউটার ছাড়া এই পৃথিবীতে দাবার কোন অবশিষ্টাংশ নেই।
আমাদের বাসায় ফেসবুক নিষিদ্ধ। তৃষ্ণাই নিষেধ করেছে। আমি নাকি ফেসবুকে অতিরিক্ত পরিমাণ সময় নষ্ট করি। ওর কথা শুনে আমি হাসি। জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করি না, “ফেসবুক না থাকলে তোমায় পেতাম কিভাবে?”
সাড়ে আটটার দিকে আমি আবার মাথার ব্যথাটা প্রবল আকারে টের পাই।
নাহ, কালকেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আবার একটা পেইন কিলার খেয়ে ব্যথাটা চেপে রাখি আমি। রাতের খাবার তৈরিতে তৃষ্ণাকে যথাসাধ্য সাহায্য করি তারপর। ও সবসময়েই রান্না করতে গিয়ে ঘেমে যায়, একসময় ওর ঘামের ফোঁটা টপটপ করে পড়তে থাকে কিচেনের মেঝেতে, মাঝে মাঝে রান্না হতে থাকা ভাত বা সব্জির মধ্যে। আমি দেখি আর হাসি।
ওর জন্য অদ্ভুত একটা মায়া টের পাই নিজের অন্তরের মধ্যে। বায়োটেকের হার্ডওয়ার ডিভিশনকে মাঝে মাঝে স্যালুট ঠুকতে ইচ্ছা হয়। এত নিখুঁত করে মানুষ ওরা কিভাবে বানায়?
রাতে তৃষ্ণা বিছানায় আসে। আমি প্রবল আবেগে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই। গত দুইশ পাঁচ বছরে এরকম অনেককেই চুমু খেয়েছি আমি।
কিন্তু এরকম আনন্দ পেয়েছি কিনা মনে পড়ে না। তৃষ্ণা আমার চুমু প্রবল আবেগে ফিরিয়ে দেয়। আমি আবার ওকে চুমু খাই। তৃষ্ণার কোন ক্লান্তি নেই। সে আবার আমার চুমু ফিরিয়ে দেয়।
আমার হাত কাঁপতেই থাকে। কিন্তু শরীরের বাকি অংশের প্রবল কাঁপুনির কারণে বিচ্ছিন্ন হাতের কাঁপুনি তৃষ্ণা বা আমি, কেউই খেয়াল করি না।
উন্মত্ততার চরম শিখরে পৌঁছানোর আগে হঠাৎ কম্পিউটারে ব্লিপ করে একটা শব্দ হয় আমার। আমি পাত্তা দেই না। তৃষ্ণাও পাত্তা দেয় না।
সারারাত আমরা জড়াজড়ি করে ঘুমাই। সকালে উঠে চোখ পড়ে যায় কম্পিউটারের দিকে। আমি ব্লিপ শব্দের উৎসানুসন্ধান করি। দেখি, একটা ইমেইল।
ইমেইলটা পড়ে স্বভাবতই ডিলিট করতে গিয়ে ইনবক্সের নিচের দিকে চোখ আটকে গেল আমার।
ওখানে আগের কিছু read e-mail অবহেলায় পড়ে আছে।
বায়োটেক এর ইমেইলটা দেখে আমি হঠাৎ চমকে উঠলাম। মেসেজ এসেছে পাঁচ দিন আগে, অথচ এখানে স্পষ্ট দেখাচ্ছে read e-mail. তারমানে আমি যেহেতু পড়ি নি, কেউ এটা আগেই খুলে পড়েছে। আর কেউ বলতে শুধু তৃষ্ণাকেই বুঝায়। আমি শুধু বাসা থেকেই নেট ইউজ করি।
আর বাসায় আমি আর তৃষ্ণা ছাড়া আর কেউ নেই। তারমানে সে-ই খুলে দেখেছে ইমেইলটা।
সে দেখলে আমাকে বলল না কেন? বায়োটেক গত দুমাস ধরে আমাকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে, তৃষ্ণাকে নাকি ফিরিয়ে দিতে হবে। আমার সাবস্ক্রিপশন নাকি শেষ। আরে বাবা, হোক না সাবস্ক্রিপশন শেষ, তাই বলে এত মূল্যবান একটা জিনিস আমি বলার সাথে সাথে ফেরত দিয়ে দেব? আমার দিকটা দেখতে হবে না? এই বুড়ো বয়সে আমি এখন করবটা কি? আর তৃষ্ণাও হয়তো আমাকে ভালবেসে ফেলেছে, সে-ও নিশ্চয়ই আমাকে ছেড়ে যেতে চায় না।
না না তৃষ্ণাকে আমি দেব না। অন্য কারো হাতে ছেড়ে দেব না তাকে। সে শুধু আমার। শুধু আমার।
আচ্ছা দেখি তো কি এমন ইমেইল যেটা তৃষ্ণা দেখেছে কিন্তু আমাকে বলে নি।
দেখি তো সেটা কি এমন জিনিস যে আমাকে বলার দরকার মনে করে নি সে।
আমি ইমেইলটা খুললাম।
Sender:
Mr. Saleh
Your 2-year subscription for the item “Vaginated Woman” (Item no. 21) has been expired 47 days back. Please Deactivate her by pressing the green switch behind her left ear and then reformat her memories by pressing the same switch after 40 seconds. Give us your current address immediately. If you don’t follow our instructions within 72 hours from now, potent neurotropic Biotech-specialized microbes will be activated inside the item’s body and will be transmitted to you by skin contact, kissing or sexual intercourse. This microbe can invade human central nervous system and cause irreversible brain damage followed by death within 7 days. Initial symptoms including migraine and tremor of arms will ensure that the microbes have entered your body and have started invading your central nervous system.
This is the last warning.
Sincerely
Biotech organization
Kuashington D.C.
United States of Pamerika
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট। প্রবল কষ্ট।
বুকে ছুরি বেঁধানোর মত কষ্ট। বক্ষপিঞ্জর উপড়ে ফেলার মত কষ্ট।
তৃষ্ণা, তুমি সবই জানতে, অথচ আমায় বললে না কেন? কেন তৃষ্ণা? তোমার কাছে কি ভালোবাসার কোন দাম নেই?
(সমাপ্ত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।