মাহবুব লীলেন
অনীক
এই চিঠি তোকে পোস্ট করব না কিন্তু চিঠিটা তোকেই লিখছি আমি। এখানে যা বলতে চাই তা কোনোদিনও জানাতে চাই না তোকে
ডাক্তার বলেছে আমি বেঁচে আছি কিছুদিন পরে মারা যাবার জন্য। ...বুকে হাত দিয়ে বলতো- এই কথা শুনলে কি আমাকে তুই কথায় কথায় পেত্নি কিংবা কুত্তারাশি কিংবা কাউয়াকণ্ঠী বলতে পারতি? ...পারতি না। তুই ভাবতি- মেয়েটা মাত্র কয়েকটা দিন বাঁচবে; তাকে সব সময় প্রশংসা করা উচিত। আর জোর করে প্রশংসা করতে গিয়ে আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিতি সেইসব কথা যা আমি মনে করতে চাই না মোটেও
হাসপাতালে সবাই আমার দিকে কেমন কেমন করে যেন তাকায়।
আমার কী ইচ্ছে করে জানিস? ইচ্ছে করে সবাইকে চিৎকার করে বলি- ঔষধ নয়। তোমরা আমাকে মারো না হয় গালি দাও। তাহলে আমি রাগ করতে পারব। আর রাগ করতে পারলেই আমি ভুলে যাব যে আমার এই অসুখটা ভালো হবে না কোনোদিন
আমার মা বকাঝকা ভুলে গেছে। আমি ইচ্ছা করে জিনিসপত্র নষ্ট করি- ভাঙচুর করি।
কিন্তু কিচ্ছু বলে না সে। বাবা তার পিত্তি জ্বালানো তাত্ত্বিক উপদেশগুলো এখন আর দেয় না। কেমন যেন ক্লাউনের মতো আচরণ করে। খামাখাই আমার সামনে হাসে আর লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে আমি হাসছি কি না
কিন্তু আমি কী করি জানিস?
আমাকে গালাগালি করে লেখা তোর চিঠিগুলো পড়ি। সারাক্ষণ।
মায়ের ওষুধ- ডাক্তার হয়তো আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু তোর গালিগুলো আমাকে ভুলিয়ে রাখে কেন মা আমাকে প্রতিদিন কয়েকশোবার উঁকি দিয়ে দেখে যায়। কেন বাবা আমার বেডে জোকসের বই রেখে যায়
তোর সবগুলো চিঠি আমার বালিশের নিচে রাখা। ঘুমের ভেতরেও ওগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে আমি রেগে উঠি- শুয়োরের বাচ্চা আমাকে কত্তো বড়ো গালি দিলো। এরপরে তাকে এমন গালি দেবো যে... আর তখনই ব্যস্ত হয়ে পড়ি তোকে দেবার জন্য গালি খুঁজতে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে গালাগাল খুঁজি...
হয়তো একদিন তুই জেনে যাবি কোন কথাগুলো তোকে জানাতে চাইনি আমি। যখন জানবি তখন কি তুই আমাকে একটা ক্যান্সারের রোগী হিসেবে মনে রাখবি? নাকি মনে রাখবি সারাক্ষণ হৈচৈ করা- গালাগালি করা- হাতাহাতি করা এক হাড্ডি জ্বালানো ড্রাকুলা হিসেবে?
তুই প্রায়ই বলতি আমাকে নিয়ে স্ক্যান্ডাল লিখে পত্রিকায় ছাপিয়ে দিবি। প্লিজ লিখিস। এমনভাবে লিখিস যেন সেটা পড়ে সবাই আমাকে গালাগাল করে। লিখবি? পারবি এই চিঠি পড়ার পরও আমাকে গালি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে? ...তুই একটা হরর নাটক লেখার কথা বলতি।
বলতি সেই হররে একটা মেয়ে ড্রাকুলা থাকবে। যার নাম হবে লোপা
সত্যি করে বলতো অনীক; কী লিখবি আমাকে নিয়ে? স্ক্যান্ডাল- হরর নাকি এলিজি? আমি জানি আমাকে নিয়ে এলিজিই লিখবি তুই। যার অক্ষরে অক্ষরে থাকবে করুণা- দয়া আর সহানুভূতি। থাক। লিখিস না।
কিছুই লিখিস না আমাকে নিয়ে। এলিজিতে মানুষ মানুষকে বড়ো বেশি করুণা করে। আমাকে করুণা করিস না তুই। তোর থেকে অনেক বেশি ধুরন্ধর আর ফাজিল; যার হাতে তোকে সব সময় নাস্তানাবুদ হতে হয় সেরকম শত্রু ভেবে মরার পরেও আমাকে তুই জেলাস করিস প্লিজ। আর আমাকে শায়েস্তা করার জন্য মনে মনে কখনও স্ক্যান্ডাল- কখনও হরর- কখনও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের প্লান করিস
আর যদি না পারিস।
মনে করিস সিনেমা দেখতে গিয়ে সিনেমার পর্দাতেই কোনো একদিন আমাকে দেখেছিলি। যার নাম কিংবা চেহারা কিংবা ঘটনা কোনোটাই মনে নেই তোর
- তোর সেই লোপা
২০০৬.০৫.২০ শনিবার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।