প্রবাসী
রেডিয়েশান সিকনেস- বিকিরনের অসুখ
জাপানের ফুকুশিমা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভুমিকম্প ও সুনামির আঘাতের পর তেজশক্রিয় বিকিরনের ফলে স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের আশংকা করছেন অনেকে। পারমানবিক বিদ্যুতের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন জাগছে।
বিকিরন রশ্মি দুই প্রকার আয়োনাইজিং এবং নন আইয়োনাইজিং রেডিয়েশান। এদের মধ্যে নন আয়োনাইজিং রেডিয়েশান যেমন আলো, রেডিও, মাইক্রোওয়েভ, রাডার ইত্যাদি শরীরের কোন ক্ষতি করে না। পক্ষান্তরে আয়োনাইজিং রেডিয়েশান যেমন এক্স রে, গামা রে, নিউট্র,প্রোটন বা ইলেক্ট্রন রশ্মি শরীরের কোষে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে।
এই ধরনের রশ্মি ব্যবহার করা হয় ক্যান্সার চিকিৎসায়, পারমানবিক পরীক্ষাতে,শক্তি উৎপাদনে, শিল্প উৎপাদনে,পারমানবিক অস্ত্রে ইত্যাদি তে।
বিকিরনের প্রভাব দুই রকম হতে পারে। যদি এক সাথে বেশী পরিমান বিকিরন রশ্মি(Acute large Dose) শরীরের উপর পড়ে তা হল একিউট বিকিরন(Acute Radiation) আর অল্প পরিমান দীর্ঘকাল ধরে চললে সেটা হল ক্রনিক।
জাপানে এই মুহ্রুর্তে যা ঘটছে তাতে যে দুটো পদার্থ সমস্যার জন্ম দিচ্ছে তা হল রেডিওএক্টিভ সিজিয়াম এবং আইওডিন। এর মধ্যে আইওডিনের প্রভাব তাৎক্ষনিক এবং সিজিয়ামের প্রভাব দীর্ঘকালীন।
বিকিরনের মাত্রার একক হল মিলিসিভার্টস(Millisieverts,মি সিভি) আর তা শরীরের মধ্যে কতটা ঢুকলো তা হিসেব করা হয় “মিলি গ্রে(Milli Grey)” এককে। দুটো একক সম মানের।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরীক্ষার জন্য যে পরিমান বিকিরন ব্যবহার করা হয় প্রভাব পড়ে তা অতি ক্ষুদ্র।
যেমন
ব্রেন স্ক্যান এ ২.৫ মিলিসিভার্টস
সারা শরীর স্ক্যান এ তার পরিমান ১৫ মি সিভি’র মত।
বিকিরনের মাত্রার উপর নির্ভর করে প্রভাবঃ-
• ১০০০ মি সিভি অল্প কালীন “রেডিয়েশান সিকনেস" করাতে পারে,
• ৫০০০মিসিভি মাত্রায় ৫০%ভাগ লোক মারা যাবে
• ৬০০০ মিসিভি তে প্রায় সবাই ।
• ১০,০০০ মিসিভি মাত্রার বিকিরনে চিকিৎসা ছাড়া সবার ই মৃত্যু ঘটবে।
• ১০০,০০০ মি সিভি মাত্রার বিকিরনে ১ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু ঘটবে
পারমানবিক চুল্লীর দুর্ঘটনায় চুল্লীর ভিতর কয়েক হাজার মিসিভি মাত্রার বিকিরন থাকতে পারে। দুরত্ব বাড়ার সাথে সাথে বিকিরনের পরিমান কমে । দুর্ঘটনার পর চুল্লীর ভিতর কয়েক হাজার মি সিভি হলেও তা কিছুটা দুরেই নেমে আসে কয়েকশ’ মি সিভি তে।
বিকিরনের ফল নির্ভর করে কি ধরনের বিকিরন, মাত্রা কত, শরীরের কোন অংশে বিকিরন টা পড়ছে,কতক্ষন ধরে পড়ছে ইত্যাদির উপর।
হঠাৎ করে বেশী পরিমান(Acute large Dose) বিকিরন যেমনটি ঘটতে পারে পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্ঘটনা বা পারমানবিক বোমার বিস্ফোরনে তা শরীরে যে অসুস্থতার জন্ম দেয় তা হল একিউট রেডিয়েশান সিকনেস(Acute radiation sickness)। এটিতে নিচের উপসর্গ লক্ষন গুলো দেখা দিতে পারে
• নাক দিয়ে মুখ দিয়ে বা পায়খানার সাথে রক্ত
• চামড়ায় ফোস্কা
• পানিশুন্যতা
• ডাইরিয়া
• অজ্ঞান
• দুর্বলতা
• চুল পড়ে যাওয়া
• আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ- লাল ফোলI,ব্যাথা ইত্যাদি।
• মুখে ঘা
• বমি বা বমির ভাব হওয়া
• চামডায় ঘা
• চামড়া খসে পড়া
• রক্তবমি
• পাকস্থলি ইসোফেগাস বা মলদ্বারে ঘা।
প্রথম বমি বমি ভাব দিয়ে শুরু হয়ে বমি এবং তার পর অনান্য লক্ষন গুলো দেখা দেবে। কি পরিমান বিকিরন শরীরে ঢুকল তার উপর নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যাক্তি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়বেন এবং লক্ষন গুলোর মাত্রাও তীব্রতর হবে।
রক্তের শ্বেত কনিকার পরিমান দিয়ে বিকিরনের মাত্রা সম্পর্কে মোটামুটি ধারনা করা যায়।
প্রাথমিক চিকিৎসা-
রোগীর জামা কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
সাবান এবং পানিদিয়ে সারা শরীর ধুয়ে দিতে হবে।
তারপর পরিস্কার কম্বলে সারা শরীর ঢেকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
শুধুমাত্র উপযুক্ত পোষাক পরেই উদ্ধার কাজে যাওয়া উচিৎ না হলে উদ্ধারকারী নিজেই আক্রান্ত হবেন।
পরবর্তীতে ব্যাথার ঔষধ, বমি রোধকারি ঔষধ এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি্র দরকার পড়বে। রক্তশুন্যতার কারনে ব্লাড ত্রান্সফিঊষানের দরকার পড়বে।
শরীরের যে সমস্ত কোষ দ্রুত বাড়ে সে গুলো বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন রক্ত কোষ, শুক্রানু, ডিম্বানু, ইত্যাদি। বার বার রক্ত পরীক্ষা করে শ্বেত কনিকার পরিমান দেখতে হবে। শ্বেত কনিকা কমে যাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ইনফেকশান মৃত্যুর কারন।
পটাসিয়াম আইওডাইড ট্যাবলেট তেজশক্রিয় আইওডিনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
দীর্ঘকালীন পরভাবের মধ্যে ক্যান্সার ই প্রধান। লিউকেমিয়া, থাইরয়েড , ফুসফুস ইত্যাদি প্রধান। তা ছাড়াও আক্রান্ত ব্যাক্তির বয়ষ দ্রুত বাড়বে এবং বয়সের তুলনায় বুড়ো হয়ে যাবেন তাড়াতাড়ি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।