আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ল্যান্স আর্মস্ট্রং সাইকেল চালিয়ে বিখ্যাত

চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ি।

আমেরিকান এক সাইকেল-চালিয়ে। এক কথায় 'রোড রেসিং সাইকেলিস্ট'। দি ফ্রান্স টু্যর বিজয়ী হিসেবে তার পরিচিতি সর্বস্তরে। পরপর সাতবার বিজয় তাকে সবার চোখের সামনে তুলে ধরেছে খুব সহজেই।

সাইকেলিংয়ের বাইরে তার জীবনের অনেক বড় সার্থকতার মধ্যে একটি হলো, টেস্টিক্যাল ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া। অবশ্য সাইকেলিংয়ের বাইরেও তার একটা পরিচয় আছে, তিনি একটা ক্যান্সার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। তাকে নিয়ে লিখেছেন প্রাঞ্জন সেলিম আমাদের প্রজন্মের খ্যাতিমান এই ব্যক্তির পুরো নাম ল্যান্স এডওয়ার্ড আর্মস্ট্রং। ক্যান্সার ফাউন্ডেশনটির নাম তার নিজের নামেই রাখা হয়েছে, 'ল্যান্স আর্মস্ট্রং ফাউন্ডেশন'। আরো কিছু তথ্যকণিকা ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসে তার ব্রেনে ও ফুসফুসে ক্যান্সার ব্যাধি ধরা পড়ে।

এবং সেটা ছিল খুব জটিল ও বড় আকারের। মুহূর্ত দেরি না করেই শুরু হয় তার ক্যান্সারের চিকিৎসা। কেমোথেরাপি এবং সার্জারির ব্যবস্থা করা হয়। সৌভাগ্যবশত তিনি এই দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়ে যান। এর মধ্যে সামনেই ছিল তার ফ্রান্সের সাইকেলিং টু্যর।

তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি টানা ৫ বার এই টু্যরে বিজয়ীর স্থানটি ছিনিয়ে নিয়েছেন। সালটি ছিল ১৯৯৯। শুরু হয় ফ্রান্স টু্যরের প্রথম ধাপ, যা ২০০৫ সালে গিয়ে শেষ হয়। এর ভেতর তিনি পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙে ফেলেন। তার আগে এ টু্যরের বিজয়ী ছিলেন মিগুয়েল, বার্নার্ড, এডি ও জ্যাকুয়েস-এর মতো সাইকেল চালিয়েরা।

টু্যরের শুরুতে তার নাম আসে বিভিন্ন মিডিয়াগুলোতে। অথর্াৎ, খবরের শীর্ষে উঠে আসেন তিনি। এবিসি রেডিওতে তাকে অ্যাথলেট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়। এটা ওয়াইড ওয়ার্ল্ড অব স্পোর্টসের আয়োজন ছিল। এরপর ২০০০ সালে, তাকে 'প্রিন্স অব অস্ট্রিয়াস অ্যাওয়ার্ড' প্রদান করা হয়।

২০০২ সাল, 'স্পোর্টসম্যান অব দ্য ইয়ার' ম্যাগাজিনের কভার পেজে আসেন তিনি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তাকে 'অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস মেইল অ্যাথলেট অব দ্য ইয়ার' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার সাফল্যের মুকুটে আরো পালক যোগ করে তার ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫ এবং ২০০৬ সালের পুরস্কারগুলো। তিনি ইএসপিএন-এর 'ইসপি' অ্যাওয়ার্ড পান। এ ছাড়াও বিবিসি থেকে বেস্ট পারসোনালিটি অ্যাওয়ার্ডও তাকে প্রদান করা হয়।

তবে, এরপর ২০০৯ সালের শেষদিকে এ টু্যরে তিনি তৃতীয় স্থানে আসেন। সম্প্রতি শোনা গেছে যে, তিনি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১-তে ঘোষণা দেন, তার এ পেশা থেকে রিটায়ার্ড করার কথা। ক্যারিয়ারের শুরুটা যেভাবে ছিল ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাসে টেক্সাসের ওক ক্লিফ শহরের মেথডিস্ট হাসপাতালে জন্ম নেন এই খ্যাতিমান ক্রীড়াশিল্পী ল্যান্স আর্মস্ট্রং। টেক্সাসের পশ্চিমে ডালাস শহরে বেড়ে ওঠেন তিনি। তিনি প্রথম ক্রীড়াজগতে পা রাখেন সাঁতার দিয়ে।

তার বয়স তখন ১২ বছর। তিনি পস্নানো সুইম ক্লাবে যোগদান করেন। তা-ও একটা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। ১৯৮৭-১৯৮৮ সালব্যাপী তিনি অনুধর্্ব ১৯ গ্রুপে ছিলেন। শুরুতেই তিনি প্রথম স্থান অর্জন করে সকলের সামনে আসেন।

সে বছর একজন অ্যামেচার হিসেবে তার পয়েন্ট তখন আরো ৫ জন প্রফেশনালদের থেকে এগিয়ে ছিল। এর পর তিনি বাইসাইকেল রেসিং-এর দিকে ঝুঁকে পড়েন। সেখানেও দেখা যায় তার প্রতিভার ঝলক। সালটা ছিল ১৯৯১, তিনি আমেরিকার অ্যামেচার গ্রুপের মধ্য থেকে চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৯২ সাল, ল্যান্সের ক্যারিয়ারে একটি বড় মোড় আসে।

তিনি আমেরিকার পক্ষ থেকে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ১৪তম স্থান অর্জন করেন। তার এ সাফল্য আসে মটোরোরা কোম্পানির সাথে চুক্তির প্রস্তাবের মাধ্যমে। সিয়েন ইয়েটস-এর পাশে বাইসাইকেল রাইডিংয়ে অংশ নিতে হবে তার। সে বছরই তিনি আয়ারল্যান্ড টু্যরে অংশ নেন। পরবতর্ী বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তার সাফল্যের কথা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের সাফল্য অনেক উলেস্নখযোগ্য পর্যায়ে পড়ে। তিনি প্রথম আমেরিকান, যিনি লা ফ্লেচ ওয়ালোন পুরস্কার পান। সেবছরই পুনরায় অলিম্পিকে অংশ নিয়ে ১২তম স্থান অর্জন করেন। ক্যান্সার ১৯৯৬ সাল, ২ অক্টোবর। তখন তার বয়স ২৫, তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে।

সেটা তার ব্রেন ও ফুসফুস অবধি ছড়িয়ে পড়ে। কেমোথেরাপি শুরুর পর বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন, এ ধরনের কেস থেকে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা শতকরা ৪০ শতাংশ। এবং সৌভাগ্যবান ছিলেন তিনি। জীবনের এ যুদ্ধেও তিনি জয়ী হলেন। মুক্তি পেলেন ক্যান্সার ব্যাধি থেকে।

এর পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়বেন। সেই লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ক্যান্সার ফাউন্ডেশন। কাজটি খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল তার জন্য। কিন্তু তিনি সাফল্যের সাথে তা মোকাবিলা করেন। বর্তমানে তিনি এ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।

এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন তার মা লিন্ডা মনিয়াম ডালাস 'মরনিং নিউজ' কোম্পানির সেক্রেটারি। বাবা এডি চার্লস সেই সংবাদপত্রেরই ম্যানেজার পদে ছিলেন। তার দুই বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। তার মা টেরি নামের একজনকে বিয়ে করেন, ১৯৭৪ সালে তিনি ল্যান্সকে দত্তক নেন।

১৯৯৭ সালে ল্যান্সের জীবনে একটি মেয়ের পদার্পণ ঘটে, ক্রিস্টিন রিচার্ড। এর ঠিক এক বছর পরই তারা বিয়ে করেন। ১৯৯৯ সালে একজন পুত্র সন্তানের বাবা হন। এবং ২০০১ সালে আবারো বাবা হন একটি কন্যা সন্তানের। এর পর দুর্ভাগ্যজনক কারণে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।

এরপর এপ্রিলের ২০১০ সালে টুইটারের মাধ্যমে তিনি ঘোষণা দেন, তার ও অ্যানা হানসেনের সম্পর্কের কথা এবং সেই সাথে তাদের সন্তানের কথা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.