আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়ের মর্জি থোড়াই কেয়ার কে কী ভাবল। জীবনটা তো আমার। কলকাতার ক্যারি, আর আমরা কোথাই! নারী দিবসে প্রশ্ন!

তক
● বিয়ে নয়, যৌনজীবন। ● বাচ্চা নয়, নিজেকে প্যাম্পার করা। ● কমিটমেন্ট নয়, কানেকশন হলেই যথেষ্ট। ভুল না ঠিক? সে বিচার করতে বয়েই গেছে আমাদের। আসলে এর কোনওটাই ফ্যাক্টর নয়।

প্রত্যেকটাই দৃষ্টিভঙ্গি। আসল শব্দটা হল মুক্তি। ‘বিয়িং ফ্রি’। বিলেতে বেশ একটা গালভারী নাম দিয়েছে আমাদের— ‘ফ্রিমেল’। সে তো ওই ম্যানহাটানিদের বলে।

‘সেক্স অ্যাণ্ড দ্য সিটি’র ক্যারি, সামান্থা, শার্লট আর মিরাণ্ডার মতো মেয়েদের। আমরা থাকি কলকাতায়। তবু, ‘ফ্রিমেল’ শব্দটার মধ্যে কোথায় যেন একটা দারুণ স্ফূর্তি আছে। সেটা ভীষণ টানে আমাদের। আমি শালিনী।

আমি ৩২। আমি শুভমিতা। আমি ২৮। আমি পায়েল। আমি ৪০।

আমরা কেউ কাউকে চিনি না। কিন্তু আমরা তিন জনে ভীষণ আলাদা আলাদা হয়েও এক রকম। আমাদের দলটা এই শহরেও বাড়ছে। বাঙালি মেয়েদের সম্বন্ধে যে ধারণাটা ছিল— ঘরের বৌ, বরের পেছন পেছন পুরী, দিঘা, নিদেন বাইরে গেলে স্কার্ট বা জিন্স পরা, গয়না মানে ভারী সোনা আর বিয়েবাড়ি— এর কোনওটায় আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা প্রাণ খুলে বাঁচি।

জীবনটা আমাদের কাছে ভীষণ সুগন্ধি ক্যাপুচিনো। শেষ ফেনাটা পর্যন্ত জিভের ডগায় নিতে চায় মন। ● ● ● এই কথাগুলো বলা হয়েছেই কখনও না কখনও। বাইপাস থেকে বাগবাজার হয়ে বালিগঞ্জ— মেগাসিটির আনাচে-কানাচে এমন কত স্বাধীন নারী। তাদেরই তিন জন এঁরা।

চেনাজানা না থাকলেও যাঁদের জীবনটা এক তারে গাঁথা। না হলে, একই প্রশ্নের একই রকম উত্তর আসে কী করে তিন জনের কাছ থেকেই? একলা জীবন বেছে নিলেন কেন? ‘‘ইচ্ছে মতো যা খুশি তাই করার স্বাধীনতা আছে। ‘ফ্রিমেল’ না হয়ে ‘ফিমেল’ হলে কি সব কিছু ভুলে রাত দুটো অবধি পার্টি করা যেত?’’ পাল্টা প্রশ্ন শালিনীর। ‘সেক্স অ্যাণ্ড দ্য সিটি’র কোন চরিত্রটা পছন্দ? ‘‘সিরিজটা দেখা হয়নি। বড় পর্দায় দেখেছি চার বন্ধুর কাণ্ড।

মিরাণ্ডাকে দেখে মনে হচ্ছিল পর্দায় যেন নিজেকেই দেখছি,’’ বললেন শালিনী। পায়েলের অবশ্য এখনও দেখা হয়ে ওঠেনি নিউ ইয়র্কের ‘ফ্রিমেল’দের কীর্তিকলাপ। ‘‘তবে ওদের সম্বন্ধে যতটুকু জেনেছি তাতে সামান্থাকেই আমার ভাল লেগেছে,’’ জানালেন পায়েল। ‘‘কী দারুণ দোস্তি বলুন তো ওদের চার জনের? এই ব্যাপারটাই সব চেয়ে ছুঁয়ে গেছে আমাকে,’’ বলছিলেন শুভমিতা। পায়েল, শালিনীদের কাছে বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটাই আলাদা।

‘‘বন্ধু ছাড়া থাকা যায় নাকি? অফিসের সমস্যা হোক বা বয়ফ্রেণ্ডের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি, যতক্ষণ বেস্ট ফ্রেণ্ডকে সব কথা বলতে না পারছি আমার শান্তি নেই,’’ বলছেন শুভমিতা। সে কথা স্বীকার করেন পায়েল আর শালিনীও। ‘‘আমার একলা থাকার সিদ্ধান্তটা খুব একটা ভাল ভাবে নেয়নি আত্মীয়স্বজন। এমনকী মা-বাবাও বেশ ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। সেই সময় একমাত্র আমার বন্ধুরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।

সাহস জুগিয়েছিল। ওরাই আমার সব চেয়ে বড় ভরসা,’’ এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন পায়েল। বন্ধু বলতে কিন্তু শুধু মেয়ে নয়, ছেলেরাও। ‘‘ছেলে বলে বন্ধু হতে পারবে না? ফ্রিমেল বলে আমাদের মেল-হেটার ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং আমরা অনেক খোলা মনে ছেলেদের সঙ্গে মিশি,’’ মত শালিনীর।

তবে ‘‘কথাটা ক্লিশে শোনালেও সত্যি যে, এমন অনেক পরিস্থিতি আসে, যখন ছেলেদের চেয়ে মেয়ে-বন্ধুরা অনেক ভাল বোঝে মনের কথা। মনে করে দেখুন, মি. বিগের সঙ্গে ক্যারির বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর, মিরাণ্ডা, সামান্থারা কেমন করে আগলে রেখেছিল ওকে,’’ বললেন শুভমিতা। [sb]আপনি ‘ফ্রিমেল’ যখন... ● সম্পর্কে ‘কমিটমেন্ট’ নয় চান শুধু ‘কানেকশন’। ● বিয়ে নয় বরং উপভোগ করেন যৌনজীবন। ● সংসার নয়, বেছে নেন একলা জীবন।

● টাকা, সময় দুটোই খরচা করেন মর্জি মাফিক। ● নিজের শখ-আহ্লাদ মিটিয়ে ফেলেন কোনও অপরাধবোধে না ভুগেই। ● ‘মেয়ে মানেই মাতৃত্ব’, এই ধারণাটা ফেলে দেন বাতিলের তালিকায়। ● আপনার কাছে গয়না মানেই সোনা নয়। ক্যারি, সামান্থারা তো বারবার জড়িয়েছেন পুরুষদের সঙ্গে।

খুঁজেছেন তাঁদের মনের মানুষকে। কলকাতার ‘ফ্রিমেল’দের জীবনেও এসেছে ভালবাসা। ‘‘জীবনে অনেক পুরুষ এসেছে। আঘাতও পেয়েছি। তবুও আবার ভালবাসতে ইচ্ছে করে।

তবে টিনএজ প্রেমের আর্মক্যাণ্ডি পুরুষ নয়, এখন খুঁজি প্রেমিক পুরুষকে,’’ সোজাসাপ্টা কথা শুভমিতার। প্রেম এসেছিল পায়েলের জীবনেও। কিন্তু বিয়ে অবধি গড়ায়নি কখনওই। গত চার বছর ধরে কোনও ‘বয়ফ্রেণ্ড’ও নেই তাঁর। ‘‘হয়তো সামান্থার মতোই নিজেকে একটু বেশি ভালবাসি।

বিয়ের মতো একটা কমিটমেন্টে যেতে কোনও দিনই চাইনি। নিজেকে একদম ভুলে গিয়ে অন্য কারও সুখ-দুঃখের কথা ভেবে সারাটা জীবন কাটানো সম্ভব নয়,’’ বললেন পায়েল। চার বন্ধুর মধ্যে সামান্থার উদ্দাম যৌনজীবন রীতিমতো আলোচনার বিষয়। সামান্থা নিজেকে বলেন, ‘ট্রাই-সেক্সুয়াল’। সামান্থার সঙ্গে পায়েলের মিল কি সেখানেও? ‘‘সামান্থার মতো ট্রাই-সেক্সুয়াল নই।

তবে আমার পছন্দ বেপরোয়া পুরুষ। জীবনে এবং বিছানায়। এমন কেউ যে বাঁধনহারা ভালবাসতে জানে,’’ জানালেন পায়েল। পায়েলের মতো শুভমিতা নিজের যৌনজীবন নিয়ে খোলামেলা কথায় খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন। শালিনীর অবশ্য নিজের যৌনজীবন নিয়ে কথা বলতে কোনও ‘ইনহিবিশন’ নেই।

‘‘যৌনজীবন নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে আমি বেশ চুজি,’’ বলেন তিনি। শুধু পরুষ-সঙ্গী নির্বাচনে স্বাধীনতা নয়, ‘‘একলা হওয়ার আরেকটা মস্ত সুবিধে কী জানেন?’’ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন শুভমিতা, ‘‘নিজের পেছনে অনেকটা খরচ করা যায়— সময় এবং পয়সা, দুটোই। ’’ ‘ফ্রিমেল’দের জমা-খরচ ● পছন্দ হলেই কিনে ফেলা পোশাক। সঙ্গে অবশ্যই ম্যাচিং চটি বা জুতো,ব্যাগ, জুয়েলারি।

সব মিলিয়ে খরচ ছুঁতে পারে হাজার দশেক টাকা। ● মাসে অন্তত তিনটে পার্টি। ● রেস্তোরাঁতে জমিয়ে খাওয়া সপ্তাহে দু’-তিন দিন। ● প্রায় প্রতি মাসে দুটো সিনেমা মাল্টিপ্লেক্সে। ● মাসে অন্তত দু’বার বিউটি পার্লারে রূপচর্চা।

● মাসে মাসে স্পা-তে গিয়ে নিজেকে আরও সুন্দর করে তোলা। ● দু’মাস অন্তর বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে কাছেপিঠে কোথাও বেড়িয়ে আসা। বছরে একটা দিন পনেরো-কুড়ির লম্বা ভ্রমণ। শালিনী সেক্টর ফাইভের এক কলসেন্টারে ভয়েস ট্রেনার। মাসিক রোজগার হাজার তিরিশ।

শুভমিতা কাজ করেন বেসরকারি এক ব্যাঙ্কে। মাইনে পঁচিশ ছুঁই-ছুঁই। স্কুল শিক্ষিকা পায়েল পান কুড়ি হাজার টাকা। নিজের মাইনে মর্জিমাফিক খরচ করার আনন্দ এবং গর্ব— দুটোই পাওয়া যায় পায়েলের উত্তরে। ‘‘পোশাক-আশাক, গয়না তো আছেই।

ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিমাও করিয়েছি। সংসারী মেয়েরা তো পরিবারের চাপে নিজেকেই ভুলে যায়,’’ বলেন পায়েল। অনেকেই অবশ্য এই অবিবাহিত, সংসার-সন্তানহীন একলা মেয়েদের বলছেন ‘কমিটমেন্ট-ফোবিক’। দায়দায়িত্ব নিতে নাকি ভয় পান তাঁরা। আর তাই সংসার, সন্তান বা সম্পর্কের প্রতি তাঁদের এই অনীহা।

এখানেই তীব্র আপত্তি মেয়েদের। ‘‘সমাজের নিয়ম মেনে চলা সংসারী মেয়েদের থেকে অনেক বেশি দায়দায়িত্ব আমাদের,’’ সাফ জানিয়ে দিলেন পায়েল, ‘‘মা-বাবার দায়িত্ব আছে। ভাই, বোন, তাদের সংসার। কম ঝক্কি সামলাতে হয়?’’ দায়িত্বহীনতার অভিযোগকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন শালিনীও। ‘‘আরে, বাদ দিন ও সব কথা।

আমার দিদির দুই মেয়ে তো আমার নিজের মেয়ের মতো। ’’ নিজের সন্তান হোক চান না? ‘‘এই প্রশ্নটাতেই আমার আপত্তি। মেয়ে হলেই কি মা হতে হবে নাকি,’’ বেশ রাগত স্বরে জবাব দেন তিনি। শেষ কথাটা বললেন শুভমিতাই, ‘‘কোনও নিয়ম টিয়ম জানি না। জীবনটাকে চালাতে চাই নিজের মর্জি মাফিক।

’’ ● ● ● মর্জি। মনে পড়ছে সেই গানটা—‘ইটস মাই লাইফ’? আমাদের সবার গানটা শোনা না থাকলেও, উপলব্ধিটা কিন্তু আছে ষোলো আনা। আমরা, শালিনী, শুভমিতা, পায়েল। আমরা নিজের মর্জি মতো চলি। আপনি? যেখান হতে লেখাটি কপি করা হয়েছে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.