লক্ষ্য পানে পৌছাঁর আলোকিত প্রত্যয় সাঈদীকে যে দু’টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যে দু’টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো বিশাবালীকে হত্যা। এ ঘটনায় মাওলানা সাঈদীকে অভিযুক্ত হিসেবে প্রমাণের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দীর সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হয়েছে রায়ে। তবে এ হত্যা ঘটনায় মাওলানা সাঈদী জড়িত নন দাবি করে আসামিপক্ষ যেসব যুক্তি উপস্থাপন করেছে তা তুলে ধরা হয়নি।
বিশাবালীকে হত্যার ঘটনা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২ জুন মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগীরা পাকিস্তান আর্মিকে সাথে নিয়ে উমেদপুর গ্রামে হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ চালায়। তারা হিন্দুদের ঘরে আগুন দেয়।
ঘটনার একপর্যায়ে বিশাবালী নামে একজনকে তার বাড়ির সামনে নারকেলগাছের সাথে বেঁধে রাজাকাররা হত্যা করে মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে।
এ অভিযোগ প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন হাওলাদারকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করে। তাদের একজন হলেন মামলার বাদি মাহবুবুল আলম হাওলাদার। অপর দু’জন হলেন মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার ও আলতাফ হোসেন হাওলাদার। এ তিনজন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে রায়ে।
মাহবুবুল আলম হাওলাদারের জবানবন্দী তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে তিনি লোকজনের কাছে শুনেছেন যে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজাকার ও শান্তি কমিটির অন্য লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি উমেদপুরে হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ পরিচালনা করে। এ সময় তারা ২৫-৩০টি ঘরে লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। বিশাবালীকে নারকেলগাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের পর রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে।
সাক্ষী মাহতাবউদ্দিন হাওলাদার বলেছেন, তিনি পাড়েরহাট যাওয়ার পথে দেখেছেন মাওলানা সাঈদী ও অন্য লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি হিন্দুদের বাড়িতে হানা দিয়েছে। এরপর মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে বিশাবালীকে হত্যা করা হয় নারকেলগাছের সাথে বেঁধে।
অপর সাক্ষী আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, তিনি মামার বাড়ি যাওয়ার পথে দেখেছেন পাকিস্তান আর্মি মাওলানা সাঈদী অন্যান্য রাজাকারকে নিয়ে হিন্দুপাড়ায় হানা দেয়। এরপর মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে একজন রাজাকার বিশাবালীকে গাছের সাথে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে।
রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে এ ঘটনায় দু’জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী রয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে আসামির উপস্থিতিতে হিন্দুপাড়ায় আগুন দেয়া এবং বিশাবালীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আসামি সজ্ঞানে এ ঘটনায় সহায়তা করেছেন।
কাজেই এ হত্যা এবং আগুন দেয়ার ঘটনায় আসামির জড়িত থাকার বিষয়টি ভালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
বিশাবালীকে হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদী জড়িত নন দাবি করে যুক্তি উপস্থাপনের সময় আসামিপক্ষ বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছিল। কিন্তু তার কোনো কিছুই উল্লেখ করা হয়নি রায়ের সাক্ষ্য পর্যালোচনায়। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া একটি ডকুমেন্টে উল্লেখ আছে বিশাবালীকে বলেশ্বর নদীর তীরে হত্যা করা হয়। এ ডকুমেন্টটি পিরোজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের।
আমরা এ ডকুমেন্টটি ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টিগোচর করেছি। তা ছাড়া জেরার সময় সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার এবং তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনও এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু রায় পর্যালোচনায় আমাদের উপস্থাপিত যুক্তির কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
মিজানুল ইসলাম জানান, সাক্ষীরা বলেছেন মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে একজন রাজাকার বিশাবালীকে গুলি করে হত্যা করেছে; মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে এবং উপস্থিতিতে বিশাবালীকে গুলি করার ঘটনা তারা দেখেছেন। কিন্তু কোন রাজাকার তাকে গুলি করেছে তার নাম কেউ বলতে পারেনি।
সুখরঞ্জন বালী প্রসঙ্গ : বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালী ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দিতে আসেননি ট্রাইব্যুনালে। বরং তিনি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন ট্রাইব্যুনালে। গত ৫ নভেম্বর তিনি ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরণের শিকার হন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এ অপহরণের ঘটনাকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছে।
তারপর থেকে আজ পর্যন্ত সুখরঞ্জনের কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
অপহরণের পরদিন একটি দৈনিক পত্রিকায় সুখরঞ্জন বালীর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। অপহরণের আগে প্রদত্ত এ সাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালী বলেছেন, তার ভাই বিশাবালী হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদী জড়িত ছিলেন না। তাকে পাকিস্তান আর্মি বলেশ্বর নদীর তীরে হত্যা করেছে।
গত ৬ জুন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ভাই বিশাবালীর হত্যার ঘটনার বিবরণ দিয়ে সুখরঞ্জন বালী বলেন, ‘১৯৭১ সালের জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় হবে।
আমার ভাই বিশাবালী অসুস্থ ছিলেন। ঘটনার দিন মিলিটারি আসার খবর এবং চিৎকার শুনে আমি আমার মাকে নিয়ে বাড়ির পাশে বাগানে যাই। আমার অসুস্থ ভাই ঘরে থাকে। ১৫-১৬ জন মিলিটারি আসে। তাদের সাথে রাজ্জাক, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, গনি গাজী, মোসলেম মওলানা, মোহসিন, মোমিন ও মুন্সি তারা ছিল।
সাঈদী সাহেব ছিলেন না। তাকে আমরা দেখিনি। পাক সেনারা আমার অসুস্থ ভাই বিশাবালীকে ঘর থেকে বের করে উঠানে এনে বেঁধে রেখে আমাদের ঘরসহ ১৫-১৬টি হিন্দুবাড়িতে আগুন দেয়। পরে তারা আমার ভাইকে সাথে নিয়ে উত্তর দিকে হিন্দুপাড়ায় যায়। পরদিন সকালবেলা শুনি বলেশ^র নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে তাদের হত্যা করে পাক সেনারা।
সেখানেও সাঈদী সাহেবের কথা শুনিনি। আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে সাঈদী সাহেব কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। এত বছরেও আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে মাওলানা সাঈদী জড়িত ছিলেন বলে আমরা শুনতে পাইনি। ’
সূত্রঃ http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=131076 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।