Speak no evil, hear no evil, see no evil.
ভাইরে, প্রেমিক পুরুষ সাজিতে গিয়াছিলাম কিন্তু উল্টা পরপুরুষ হইয়া কিভাবে নাস্তানাবুদ হ্ইলাম তাহা নীচে পড়িলেই বুঝিতে পারিবেন! ডিসকো বান্দর আমি। জীবনে অনেক চালাকী করিয়া, ডানে বামে পাশ কাটাইয়া উৎরাইয়া গিয়াছি। ভাবিয়াছি জীবনে হালকা বুঝিয়া শুনিয়া চলিলেই আরামে আয়েশে থাকা যাইবে। কিন্তু ভাইরে, মানুয ভাবে এক আর হয় এক। চালাকী করিতে যাইয়া একবার যে ধরা খাইলাম তাহাতে আমার মান সম্মান তো ধুলিস্মাত হইলোই উপোরন্ত শাস্তি খাইতে খাইতে আমার প্রাণ হইলো ওস্ঠাগত!
তখন আমি বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীতে (BMA) প্রথম টার্মের ক্যাডেট।
আমার তখনকার তথৈবচ অবস্হা বর্ণনা করা সম্ভব নহে। রাতে বিরাতে শাস্তি, সকাল সন্ধ্যায় শাস্তি, শাস্তির উপরে শাস্তি। আর সিনিয়রগণ মনে হইলো নিত্য নতুন উদ্ভাবনী শক্তির দ্বারা শাস্তি আবিস্কার করিতেছেন। ক্যাডেট কলেজ হইতে গিয়াছি, শাস্তি কি তাহা জানি। কিন্তু BMA র শাস্তির সামনে ক্যাডেট কলেজের শাস্তি প্রেয়সীর চুম্বনের মতো লাগিতে লাগিলো।
যাহা হউক, প্রতি রাত তিনটার সময় শাস্তির মাত্রা কিছুটা কমিয়া আসিলে আমাদের লাইনে দাঁড় করাইয়া সিনিয়রগন আদি রসাত্মক কৌতুক করিতেন। অনেক গুলা আইটেম এর মধ্যে ছিলো আমাদের বান্ধবীদের সম্বন্ধে আলোচনা। সিনিয়রগন আমাদের বান্ধবীদের মনন ও শরীরবৃত্তী্য বর্ণনা সহ অনেক গোপন তথ্য জানিতে চাহিতেন এবং যে যত রংগ রস মাখাইয়া সিনিয়রদের সামনে উপস্হাপন করিতে পারিত সে তত বাহবা পাইতো। ভাইরে, প্রথম প্রথম আমি ছিলাম নাদান। কিন্তু শাস্তি হইতে মুক্তি পাইবার আশায় আস্তে আস্তে চরম গরম গল্প বলা শিখিলাম।
এক মাসের মধ্যেই ডিসকো বান্দর রসময় গুপ্তের চাইতেও কঠিন আদিকলা মাখানো গল্পকার হইয়া উঠিলো। এমন বিশ্বাসযোগ্যভাবে গল্প বলিতাম যেনো এখনই বান্ধবীর সাথে যৌবন যুদ্ধ করিয়া ফিরিলাম।
কিন্তু বিধিবাম!
একবার এক চরম উত্তেজিত সিনিয়র আমার গল্প শুনিয়া লালায়িত হইয়া গেলো। বলিল "তোমার বান্ধবী সমূহের ছবি লইয়া আইসো"। সিনিয়রগন প্রায়শই প্রথম টার্মের ক্যাডেটদের বান্দ্ধবীদের ছবি দেখিত চাহিতো এবং না দেখাইতে পারিলে ভীষন শাস্তির সম্মুখীন হইতে হইতো।
ভাইরে, ইহাকে পূঁজী করিয়া BMA র গেটে এক ব্যাটা ছবির স্টুডিও খুলিয়াছিলো যাহার কাজ ছিলো ছবি তোলার পাশাপাশি গোপনে দুইদিনের জন্য ১০ টাকায় প্রথম টার্মের ক্যাডেটদের বিভিন্ন লাস্যময়ী তরুনীর ছবি সরবরাহ করা! বাংগালী ব্যবসা বোঝে ভালো! এক বন্ধুর কাছে শুনিয়া গেলাম ঐ ছবি ওয়ালার কাছে। ভাইরে, প্রথমেই জানিতে চাহিলো কি ধরনের ছবি চাহি। এলবাম দেখাইলো। ঘটক পাখী ভাই এর এলবাম তো কোন ছাড়, তাহার কাছে শ'য়ে শ'য়ে ছবি। কোনোটা হাসি মিশ্রিত, কোনোটা খোলামেলা, কোনোটা আবার মারমুখী।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া গেলাম। ছবিওয়ালা চামে জানাইলো তাহার ব্যবসা ভালোই চলিতেছে। যাহা হউক চরম এবং গরম দেখিয়া একখানি ছবি পছন্দ করিলাম এবং ৫ দিনের জন্য ভাড়া করিয়া ৩০ টাকা গচ্চা দিলাম।
তাহার দুইদিন পর রাত্রিতে:
আমরা সবাই শাস্তি খাইয়া যারপরনাই পেরেশান হইয়া লাইনে দাঁড়াইয়াছি। সিনিয়ারগন আমাদের সামনে বসিয়া ঠাট্টা মসকরা করিতেছে।
হঠাৎ করিয়া সবচে' মারাত্মক বলিয়া পরিচিত একজন আমাকে বলিলো "তোমার বান্ধবীর সহিত তোমার অনেক কথাইতো শুনিলাম এখন তাহাকে দেখিতে মুন্চায়!" আমি তো এই সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিলাম। সাথে সাথে রুম এ গিয়া বালিশের তলা হাতড়াইয়া উহাকে বাহির করিলাম এবং ছবির দিকে তাকাইয়া মুচকি হাসি দিয়া চক্ষু টিপিলাম।
লাইনে আসিয়া দাঁড়াইলাম। ততক্ষণে অনেক সিনিয়রগন নব্য রসময় গুপ্তের আবেদনময়ী বান্ধবীকে একনজর দেখিবার জন্য ভীড় করিয়াছেন। "আমি এইবার বিখ্যাত হইলাম" এই ভাবিয়া ছবি খানি হালাকু খান সদৃশ্য সেই সিনিয়র এর কাছে হস্তান্তর করিয়া আয়েশী মনে অপেক্ষা করিতে লাগিলাম।
ছবির যেই ভংগী তাহাতে কামজ্বরে কাতর সিনিয়রগন বিয়াপক মজা পাইবেন এবং সেই সংগে আমারো কিছুটা শাস্তি মওকুফ হইবে তাতে মোটামুটি নিশ্চিত হইলাম।
ভাইরে, ছবি দেখিয়া প্রেম কাতর সব সিনিয়ারগন আহা উহু করিতে লাগিলো। চিৎকার ও শিৎকারে আশেপাশের বাতাস লালাপুর্ণ হইয়া উঠিলো আর আমি, ডিসকো বান্দর, মনে মনে গর্বিত হইয়া উঠিতে লাগিলাম। কিন্তু সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। কামভাব হঠাৎ উঁকি দিয়াই যেনো বাতাসে মিশিয়া গেলো।
হালাকু খানের রোষমিশ্রিত কন্ঠের হুন্কার! হঠাৎ চারিদিকে শুনশান হইয়া গেলো।
তাহার পর যাহা কথাবার্তা হইলো তাহা নিম্নরুপ:
হালাকু খান (হা.খা). - So, this is your Girlfriend? (তাহা হইলে, ইহাই তোমার বান্ধবী?)
আমি - Yes Sir. She loves me sir. I also love sir. (জ্বী স্যার, আমরা একে অপরকে অনেক ভালোবাসি, স্যার!)
হা.খা. - What’s her name? (উহার নাম কি?)
আমি - Sagufta, Sir। (সাগুফ্তা, স্যার)
হা.খা.- (সন্দেহের চোখে) But you said your girlfriend is Lisi!!! (কিন্তু তুমি বলিয়াছো তোমার বান্ধবীর নাম লিসি!)
আমি - (ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া) Yes Sir, Lisi Sir. Sagufta is my ex-girlfriend sir! (স্যার, লিসি ই ইহার নাম। সাগুফতা আমার পুরাতন বান্ধবীর নাম!)
হা.খা. - Hmm. Did you kiss her? (তুমি ইহাকে চুম্বন খাইয়াছো?)
আমি - (অধিক উত্তেজিত হইয়া) - Yes Sir, many times Sir. Everywhere Sir. Not only kiss sir but sir….. (অনেক বার খাইয়াছি। মোটামুটি সব জায়গায়।
শুধু চুম্বন নহে...)
ইহা বলিতেই হা.খা. হুন্কার দিয়া আমাকে থামাইয়া দিয়া গটগট করিয়া তাহার রুমে চলিয়া গেলো। আমি প্রমাদ গুনিলাম। নিশ্চই আরো অধিক কামোদ্দিপক কথা বলা উচিৎ ছিলো, ভাবিলাম।
হঠাৎই হালাকুর আগমন। হাতে তাহার একখানি খাম।
আমার দিকে তাহা ছুঁড়িয়া মারিয়া বলিলো "Open It!"
আমি খুলিয়া একখানি ছবি আবিস্কার করিলাম। অতি আধুনিক, লাস্যময়ী এক তরূনীর ছবি। ছবির উপরে লাল লিপিস্টিকের চুম্বনের দাগ। পিছনে বলপেন দ্বারা লেখা Kiss me, please me!!
আমি হা করিয়া হালাকুর দিকে তাকাইলাম, কিছুই বুঝিলাম না। হালাকু আমাকে চিৎকার করিয়া বলিলো "Who is she? (ইহা কে?)" আমি বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করিয়া তাকাইয়া বলিলাম "I do not know Sir।
But very cute Sir!"
ইহাতে হালাকু খান লাফ দিয়া আসিয়া আমার মুখের সামনে আসিয়া চিৎকার করিয়া বলিলো "How come my girlfriend’s picture is same as YOUR girlfriend’s picture!?" (আমাদের দুইজনের বান্ধবীর ছবি এক হইলো কিরুপে?)!
আমি তখন নাই। দুইখানা ছবি পাশাপাশি রাখিয়া ভালো করিয়া দেখিলাম এবং প্রায় হার্টফেল করিলাম।
আমার ৩০ টাকায় ভাড়া করা ছবি আর হালাকুর প্রেয়সীর ছবি একই
রমণীর!
ইহার পর কি হইয়াছিলো আমার স্পস্ট মনে নাই। এটুকু মনে আছে BMA গেটের ছবি ওয়ালা ব্যবসা গুটাইয়া পালাইয়াছিলো। হালাকুর আসল প্রেম কতদিন টিকিয়াছিলো তাহা আমি বাহির করিতে পারিনাই।
পরে শুনিয়াছি হালাকু মহাশয়ও ঐ ছবি ওয়ালার কাছ হইতে ২০ টাকা দিয়া ঐ রমণীর ছবি ভাড়া করিয়া আনিয়াছিলো। পরে কোনোভাবে তাহাদের পরিচয় ও প্রেম হইয়াছিলো!
হালাকু খান ইহার পর হইতে নিজে আমাদের আর জ্বালাতন করেন নাই। তবে উনি অন্যন্য সিনিয়রদের আমার পিছনে লেলাইয়া দিয়া আমর অবস্হা সংগীণ করিয়াছিলেন! আমরা আর কোনোদিন কোনো লাস্যময়ী রমণীর ছবিও ভাড়া করিতে সাহস করি নাই।
হায়রে আমার যৌবন!
- আপনাদের ডিসকো বান্দর!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।