সাবি্বর নেওয়াজ (সমকাল )
'দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়' নামে চারটি পৃথক কর্তৃপক্ষ দেশে ২৯টি অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস খুলে সার্টিফিকেট ব্যবসা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে কমপক্ষে ১৫ দফা চিঠি দিয়েও এসব ক্যাম্পাস বন্ধ করা যায়নি। এমনকি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কোন কর্তৃপক্ষ বৈধ আর কোনটি অবৈধ। বাধ্য হয়ে ইউজিসি প্রায় এক বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে হাইকোর্টের এক বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত মালিক কারা তা খুঁজে দেখার অনুরোধ জানিয়েছিল। ইউজিসির এ অনুরোধ বছর ঘুরে গেলেও কার্যকর হয়নি।
পদাধিকারবলে শিক্ষা সচিব নিজেই ইউজিসির একজন খণ্ডকালীন সদস্য। উপরন্তু এ মুহূর্তে এশিয়ান, রয়েল, নর্দান, ইউআইএসটি, সাউদার্ন, শান্ত-মারিয়াম, আমেরিকান বাংলাদেশ,
ইউএসটিসিসহ আরও বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। ইউজিসি এসব ক্যাম্পাস পরিচালনাকারীদের সতর্ককরণ চিঠি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। বরং কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির দেওয়া চিঠিকে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেছে এবং তারা ওই চিঠিগুলোর কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ পেয়েছে। এভাবেই দিন দিন কাগুজে বাঘে পরিণত হচ্ছে ইউজিসি।
একইভাবে বারবার নির্দেশনা দেওয়ার পরও প্রতিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বছর বছর ব্যয় বাড়িয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত লোকবলের বাইরেও জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ইউজিসির নির্দেশনা না মানলে কী হবে_ এরকম কোনো বিধি ইউজিসি আইনে নেই। অন্যদিকে ইউজিসির দেওয়া চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একের পর এক রিট পিটিশন করছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ায় ইউজিসির চিঠির কার্যকারিতাও থেমে যাচ্ছে।
উচ্চশিক্ষা স্তরে সৃষ্টি হচ্ছে অরাজকতা।
দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের মতে, 'ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার'-ইউজিসিকে দেখলে করুণা হয়। এর ওপর আবার প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ইউজিসির হাত-পা বেঁধে দিচ্ছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আগামী ১৫ মার্চ ইউজিসির নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশ অনুসারে 'বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন' প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই আদেশের ৪(১) নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ১৯৯৮ সালের সংশোধনী অনুসারে একজন চেয়ারম্যান, পাঁচজন পূর্ণকালীন সদস্য এবং নয়জন খণ্ডকালীন সদস্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এখন চলছে।
ইউজিসির পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়ার ক্ষমতা নেই প্রতিষ্ঠানটির। দেশে এ মুহূর্তে ৩৩টি সরকারি এবং ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ৮৪টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার মতো কোনো ক্ষমতা ও লোকবল আসলেই ইউজিসির নেই। '
জানা গেছে, আইনে সংশোধন এনে ইউজিসিকে পূর্ণ স্বাধীন সংস্থায় রূপান্তর করতে নাম পরিবর্তন করে 'উচ্চশিক্ষা কমিশন' (হায়ার এডুকেশন কমিশন) বা 'ইউনিভার্সিটিস কমিশন অব বাংলাদেশ' করার প্রস্তাব এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল।
এর চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা হবে একজন পূর্ণমন্ত্রীর সমান। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।
এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ কয়েকদিন আগে বলেন, উচ্চশিক্ষার বিকাশকে আরও বিস্তৃত করার জন্যই শক্তিশালী ইউজিসি দরকার। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করেন তিনি।
ইউজিসি চেয়ারম্যানের বক্তব্য : ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, 'কমিশনের জনবল খুব কম, উপরন্তু অনেকে আবার শিক্ষা ছুটিতে বিদেশ যাচ্ছেন।
দিন দিন ইউজিসির কার্যপরিধিও বাড়ছে। এ অবস্থায় ৪১৫ জনবল সংবলিত একটি নতুন অরগানোগ্রাম প্রস্তাব আগামী ১৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।