প্রতিটা মানুষেরই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে একবারের জন্য হলেও পাখি হওয়ার ইচ্ছে জাগে। ‘পাখি যদি হতাম আমি, ঘুরতাম সারা বিশ্ব রে!’ -ছড়াকাররা এমন করে পাখি হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছেন। সে বাসনা ছড়িয়ে গেছে আমাদের প্রাণেও। পাখি হয়ে সারা বিশ্ব ঘুরে দেখার বাসনা থেকেই
অ্যাসেজ জিতলেও ওয়ানডে সিরিজে ৬-১ ব্যবধানে হারার পর অনেকটা নেতিয়ে পড়েছিলো ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে।
ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে মাঠে নামার আগেই ধরা হয়েছিলো তাদের পরাজয়ই স্বাভাবিক। ভারত ইনিংসের পর তো সেটা আরো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। অথচ এই ইংল্যান্ড ভারতের মাটিতে ভারতকেই হেসে খেলে হারাতে বসেছিলো। জহির খানের দুই ওভারে ম্যাচটা যখন আবার ভারতের নাগালে, শেষ ওভারে দরকার যখন ১৪ রান, সেখান থেকেও ম্যাচটা বাঁচিয়ে দিল ইংলিশরা। জিততে না পারলেও টাই করে অন্তত স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে তারা।
পরতে পরতে রঙ বদলিয়ে টাই করা ম্যাচে এক অর্থে জয়ই পেয়ে ইংল্যান্ড। উপমহাদেশের কন্ডিশনে ভারতের বিপক্ষে ৩৩৮ রান তাড়া করে ম্যাচ বাঁচানো মানসিক জয় তো বটেই। ক্রিকেট বোদ্ধারা তো বটেই সাধারণ ক্রিকেট ভক্তরাও এবারের বিশ্বকাপকে উন্মুক্ত দেখছেন। এককভাবে কোনো দলকে এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সম্ভাবনাময় এই দলগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ড তাদের নামকে একটু আলাদাভাবে উচ্চারণ করার দাবি তুলতে পারে ভারতের বিপক্ষে পারফরমেন্স দিয়ে।
বিশ্বকাপের এখনো অনেক পথ বাকি। সব দিন একরকম যায় না। প্রতি ম্যাচে এভাবে লড়াই করে সফল হওয়াটা তাই হবে না হয়তো। ইংলিশরা এটা ভালো করেই জানে। আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়বে ইংল্যান্ড।
অধিনায়ক স্ট্রাউস নেতৃত্ব দিচ্ছেন একেবারে সামনে থেকে। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি না পেলেও ভারতের বিপক্ষে করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৫৮ রান। বড় রান তাড়া করতে অধিনায়কের এই ব্যাটিংই বাকিদের সাহস জুগিয়েছে। তবে বোলিং নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে ইংলিশ দলপতিকে। দুটো ম্যাচেই বেশ বাজে বোলিং করেছে বোলাররা।
আয়ারল্যান্ডের অনেক ভালো ব্যাটসম্যান আছে। কাউন্টি ক্রিকেটের দু-একজন সতীর্থও আছে আয়ারল্যান্ড দলে। গত বিশ্বকাপ এবং এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে আইরিশদের পারফরমেন্স মাথায় আছে ইংলিশদের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাই বেশ সতর্ক থাকছে ইংল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড বছর চারেক ধরেই ভয়ঙ্কর দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে।
নিজেদের দিনে যে কোনো দলকে মাথা নুইয়ে মাঠ ছাড়াতে পারে দলটা। গত বিশ্বকাপে পাকিস্তান-বাংলাদেশের মতো টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারানো, টেস্ট থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাই, এই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে আবার কাঁপিয়ে দেয়াÑসবমিলিয়ে ভয়ঙ্কর একটা দল আয়ারল্যান্ড। চার বছর ধরে এক সঙ্গে খেলছে অনেক ক্রিকেটার। অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হয়েছে দলের অনেক ক্রিকেটারদের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় দলের বিপক্ষে তেমন ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও আইসিসির সহযোগী দলগুলোর মধ্যে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে আয়ারল্যান্ড।
বিশ্বকাপে তাদের টার্গেট কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। কেউ এটাকে হেসে উড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি নিতে চাইবে না। বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়ে হেরে গেলেও এখনো সম্ভাবনা আছে বড় দলগুলোর বিপক্ষে ভালো কিছু করার, এমনকি অঘটন ঘটিয়ে দেয়ার বিষয়টাও উড়িয়ে দেয়া যাবে না। তাছাড়া কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে শুধু ভালো খেললেই হবে না, জিততেও হবে। বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ড দল দুটো টার্গেটে ছিলো তাদের।
বাংলাদেশের বিপক্ষে না পারলেও হাল ছাড়তে নারাজ আইরিশরা। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কিছু একটা করে দেখাতে চায় তারা। অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড, নিয়াল ও’ব্রেইন, কেভিন ও’ব্রেইন, ট্রেন্ট জনস্টন, আন্দ্রে বোথাদের সে সামর্থ্য যে আছে তাতে সন্দেহ নেই। আয়ারল্যান্ড দলটা অনেক প্রফেশনাল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যায়।
ইংল্যান্ডের কাছ থেকেও তাই সমীহ পাচ্ছে আয়ারল্যান্ড। গত বিশ্বকাপে সুপার এইটে একবার মুখোমুখি হয়েছিলো দুদল। হারলেও ভালোই লড়াই করেছিলো আয়ারল্যান্ড। একটা পর্যায়ে পরাজয়ের শঙ্কায়ও পড়তে হয়েছিলো ইংল্যান্ডকে। এই ম্যাচের আগে-পরে আরো দুটো ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো দুদুল।
স্কোরবোর্ড বলছে কোনো ম্যাচেই একক আধিপত্য বিস্তার করে জয় পায় নি ইংল্যান্ড। কোনো না কোনো ভাবে প্রতি ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে আয়ারল্যান্ড। ইংল্যান্ডে ৩০১ রানের জবাবেও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে নি আয়ারল্যান্ড। ২৬৩ রান তুলে ৩৮ রানে পরাজিত হয়ে জবাব দিয়েছে তারাও ব্যাটিং করতে পারে। ইংল্যন্ডের বিপক্ষে আয়রল্যান্ডের সবচেয়ে বড় পরাজয় ৯১ রানের হলেও আইরিশদের বোলিং তোপে প্রথমে ব্যাট করা ইংল্যান্ডের ইনিংস থেমে গিয়েছিলো মাত্র ২০৩ রানে।
টেস্ট পরিবারের অন্যান্য দল থেকে এখানেই অলাদা আয়ারল্যান্ড। বড় দলকে চ্যালেঞ্জ জানতে তারা সক্ষম। এই দলটার বিপক্ষে আলাদা সতর্কতা তাই থাকে ছোট-বড় যেকোনো দলেরই। উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে আয়ারল্যান্ডের চেয়ে ইংল্যান্ড বেশি অভ্যস্ত হলেও আজ ইংল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত আয়ারল্যান্ড। আজ আয়ারল্যান্ডের একজনের দিকে আলাদা নজর থাকবে সবার।
গত বিশ্বকাপের আগে বাছাই পর্বে আয়ারল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত খেলে আয়ারল্যান্ডকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিতে বড় ভূমিকা রাখলেও বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের হয়ে। আয়ায়ল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠেও নেমেছিলেন। এবার বিশ্বকাপ আবার খেলছেন আয়ারল্যান্ডের পক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। আজও যদি একাদশে থাকেন অন্যরকম একটা রেকর্ড করে ফেলবেন ইডি জয়েস।
গত বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করতে পেরেছিলেন মাত্র এক রান। আজ আয়ারল্যান্ডের পক্ষে কেমন করেন তাই দেখতে চেয়ে থাকবে অনেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।