নতুন কোনো সূত্র আবিষ্কারের স্বপ্ন আমার আশৈশব। বিশেষ করে তখন থেকে, যখন স্কুলে অন্যদের আবিষ্কার করা সূত্রগুলো না জানার অপরাধে ‘দুই’* পেতাম প্রায়ই। সেই সময় আমার চোখের সামনে স্পষ্টভাবে ভেসে উঠত একটা দৃশ্য:
শ দুয়েক বছর পর কোনো এক স্কুলবালক ‘দুই’ পেয়ে গোমড়া মুখে বাসায় ফিরবে। মা তাকে জিজ্ঞেস করবে, ‘দুই পেলে কেন? কী জানা ছিল না তোমার?’
সে উত্তর দেবে বিষণ্ন সুরে, ‘সিদোরভের সূত্র’।
মা তখন ভর্ৎসনা করে বলবে, ‘এই সূত্র না জানা সম্ভব?’ তারপর আচ্ছামতো শাসন করবে তাকে।
বড় হয়ে ওঠার পর এমন নিম্নশ্রেণীর স্বপ্ন আমাকে আর উদ্বুদ্ধ করে না। অবশ্য সম্ভাব্য আবিষ্কারের পর প্রাপ্য বড় অঙ্কের সম্মানীর কথা আলাদা।
তবে সেই যুগ এখন আর নেই, যখন একের পর এক নতুন নতুন সূত্র মাথার ওপর এসে পড়ত, ডাল থেকে আপেল ঝরে পড়ার মতো। আমার মাথায় অবশ্য একবার একটা টব পড়েছিল পাঁচতলা থেকে। চারপাশ অন্ধকার হয়ে উঠেছিল মুহূর্তের মধ্যে।
মনে হয়েছিল, এখনই নতুন কোনো সূত্র আসবে মাথায়।
জ্ঞান ফিরলে দেখি, আমার হাতে একটা কাগজ। নিশ্চয়ই সূত্র আবিষ্কারের স্বীকৃতিপত্র! ভালো করে তাকিয়ে দেখি, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন।
নিউটনের পদ্ধতিতে ব্যর্থ হয়ে কৌশল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলাম।
পিথাগোরাস কীভাবে নাম কুড়িয়েছিলেন? তাঁর প্যান্টের আকৃতি থেকে আবিষ্কার করেছিলেন তাঁর সেই বিখ্যাত সূত্রটি।
নিজের জিন্সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নতুন একটা ছেঁড়া জায়গা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না আমার। কিন্তু এই ‘আবিষ্কার’ তো মানবজাতির কোনো উপকারে আসবে না।
দিনের পর দিন যেতে থাকল। সপ্তাহের পর সপ্তাহ। কিন্তু আমার সূত্রটা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল।
আমি প্রায় মরিয়া হয়ে উঠলাম। তখন একদিন…
বাথটাবে নেমেছি গোসল করতে। ট্যাপ খুলে দিয়েছি। হঠাৎ গরম পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল এবং গরম পানির বদলে দ্বিগুণ গতিতে ঠান্ডা পানি বেরোতে শুরু করল। আমি বাথটাব ত্যাগ করলাম এক লাফে।
গরম পানি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে আবার নামলাম বাথটাবে। ঠিক তখন ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি হলো। পার্থক্য ছিল শুধু এই যে এবার গরম পানির বদলে থেমে গেল ঠান্ডা পানি। আমি ফুটন্ত পানি থেকে বেরিয়ে এলাম তিরবেগে।
এবং ঠিক সেই সময় সূত্রটা মাথায় এল আমার।
দিগম্বর অবস্থায় ছুট লাগালাম কাগজ আর কলমের খোঁজে। চটজলদি লিখে ফেলতে চাই সূত্রটা। আমার নিজের।
সূত্র: কোনো বস্তুকে উত্তপ্ত বা শীতল তরল পদার্থে নিমজ্জিত করলে বস্তুটির ওপরে পানির বহির্মুখী চাপ সাধারণ তাপমাত্রার তরল পদার্থে নিমজ্জিত বস্তুর ওপরে পানির বহির্মুখী চাপের চেয়ে অনেক বেশি।
মহান ব্যক্তিদের মতো আমিও আমার সূত্রটি আবিষ্কার করলাম একেবারেই আকস্মিকভাবে।
হয়তো আমাকে অনেকেই বলবে, প্রায় একই ধরনের একটি সূত্র আর্কিমিডিস ইতিমধ্যেই আবিষ্কার করেছেন।
আচ্ছা, ঠিক আছে, সে ক্ষেত্রে আমার আবিষ্কৃত সূত্রটিকে ‘সিদোরভ-আর্কিমিডিসের সূত্র’ নামে ডাকা যেতে পারে। আমার আপত্তি নেই।
* রুশ শিক্ষাব্যবস্থায় ‘পাঁচ’ সর্বোচ্চ নম্বর; ‘দুই’ হচ্ছে ফেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।