আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত এনশাদ ইবনে আমিন- মারা যাওয়ার আগে ছেলের হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার দেখে যেতে চান মা ফাহমিদা আমিন

mamun.press@gmail.com

পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বডার গার্ড) বিদ্রোহের দুই বছর পার হয়েছে। বিদ্রোহী জওয়ানদের বিচার কাজও শুরু হয়েছে কিন্তু উপযুক্ত বিচার হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন বিডিআর জওয়ানদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের লে. কর্ণেল এনশাদ ইবনে আমিনের মা ফাহমিদা আমিন। গত বুধবার (২৩ ফেব্র“য়ারি) তিনি এ প্রতিনিধি সাথে একান্ত আলাপকালে আরও বিভিন্ন স্মৃতি ও ক্ষোভের কথা জানান। ফাহমিদা আমিন জানান, ২৫ ফেব্র“য়ারী যে নৃসংশভাবে হত্যা চালিয়ে তাদেরকে আবার নালা নর্দমায় ফেলে দিয়েছে মানুষ নামের অমানুষরা। কিন্তু সে অপরাধের উপযুক্ত বিচার হচ্ছেনা এমন বিচার দেখে আমি খুবই হতাশ।

তিনি আরো বলেন, যে বিচার করে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে এটা কোন বিচার হলো। যারা এমন জগন্য অন্যায় করেছে যারা ওই দিন লুট, নারী নির্যাতন এবং কি ধর্ষনের মত ঘটনা করেছে সে অপরাধের কোন বিচারই হচ্ছেন। তাই তিনি সরকার ও বিচার বিভাগের কাছে দাবী জানান, যারা ওই দিনের ঘটনা মুল নায়ক তাদেরকে চিন্নিত করে এমন শাস্তি দেয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে এমন জগন্য কাজ করার সাহস পায়না কেউ। নিহত ইনশাদ ইবনে আমিনের স্ত্রী ডা. রোয়েনা জানান, সরকারের প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী আর্থিক সাহায্য পেয়েছি কিংবা পাচ্ছি। সরকার তখন ঘোষণা দিয়েছিল নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনদের থাকার জন্য একটি ও ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি প্লট দেওয়া হবে।

কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেলেও সে প্রতিশ্র“তি পূরণ হয়নি। তিনি সরকারের কাছে জোর দাবী জানান, ২৫ ফেব্র“য়ারী কে অন্যান্য জাতীয় দিবসের মত ‘শহীদ সেনা দিসব হিসেবে যেন ঘোষনা করা হয়’। তিনি আরো বলেন, যে বিচার করে রায় দেয়া হচ্ছে সেটা কি উৎশৃখল বিডিআর জওয়ানদের না হত্যাকারীদের বুঝতেছিনা। তাই তিনি আসল ঘটনা উদঘাটন করে প্রকৃত দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবী করেন। বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্ণেল এনশাদ ইবনে আমিনে পিতৃক বাড়ী চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার এলাকায় হলেও তিনি ১৯৫৯ সালের ৩ মার্চ রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন।

বাবা ড. এম. আর আমিন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবক ছিলেন। রতœাগর্ভা মা স্বনামধন্য লেখিকা ফাহমিদা আমিন চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘের সভানেত্রী। ছয় ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় এনশাদ। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ১৯৭৯ সালে এনশাদ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৮৫ সালে লে. কর্নেল এনশাদের সঙ্গে ঘর বাঁধেন ডা. রোয়েনা মতিন হিমা।

তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। ছেলে মাশায়েদ বিন এনশাদ বুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র। মেয়ে নুজহাত নাহিয়ান হলিক্রস কলেজে এইচএসসি ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। এমন সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেল বিদ্রোহী বিডিআরের বুলেটের আঘাতে। এনশাদের মা বিশিষ্ট লেখিকা ফাহমিদা আমিন ফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, একটা মায়ের একটা উপযুক্ত সন্তান চলে গেলে মায়েদের যে কষ্ট হয় তা আর কেউ বুঝবে না।

দুই বছর পুর্বে এ সময়ে পিলখানায় এনশাদের নিহতের খবর কোনভাবেই মেনে নেয়ার মত না। ভেতরে দুঃখ থাকলেও বাইরে কাউকে দেখাতে পারছি না। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা সন্তান হারিয়েছি, আমরাতো আর ছেলেকে ফিরে পাবো না। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে, যাতে সরকার আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেন। সন্তানদের পড়ালেখা ও থাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থা যাতে সরকার করে দেন এ প্রত্যাশা করি’।

উপযুক্ত ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক প্রায় মা ফাহমিদা আমিন এখনো ভুলতে পারেননি ছেলের সাথে তার বিভিন্ন স্মৃতির কথা। ছেলেকে হারানোর কষ্টের কথা তিনি এভাবেই প্রকাশ করেন, ‘এভাবে ছেলেকে চিরদিনের জন্য হারানোটা মা হিসেবে আমার জন্য যে কত কষ্টের, তা বুঝিয়ে বলার ভাষা আমার নেই। কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের? কী কারণে মায়ের আগে তাকে দুনিয়ার বুক থেকে বিদায় নিতে হলো? দেশের জন্য কাজ করার এই কি প্রতিদান?’ দুই বছর পার হয়ে গেলেও মায়ের এমন প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারে না। মাকে সান্তনা দেওয়ার ভাষাই যেন নেই কারো কাছে। এখনো ছেলের ছবি দেখলে কেঁদে উঠেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরে শুরু হয় জওয়ানদের বিদ্রোহ। টানা দুই দিনের হত্যাযজ্ঞের পর ২৮ ফেব্র“য়ারি লাশের সারিতে পাওয়া যায় লে. কর্ণেল এনশাদ ইবনে আমিনের লাশও। একই বছরের ২ মার্চ তিনি অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অবসরে গেছেন চিরদিনের জন্য। ২ মার্চ সবার সাথে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জানাজা শেষে বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় তাকে।

এরপরদিনই ছিল তার জন্মদিন। পরিবারের সকলের আশা ছিল, ২ মার্চ অবসর নিয়ে পরেরদিন সবাইকে নিয়ে ঘটা করেই পালন করবেন জন্মদিন। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহে সব স্বপ্নেরই সমাধি ঘটে গেল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.