আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"বিডিআর বিদ্রোহ : সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর" এই সেই আমার দেশের নিযমিত রিপোর্ট যা বিডিআর হত্যাকারি বাকশালীদের সহ্য হযনি



১.০ সূচনা বাংলাদেশ রাইফেলস সংক্ষেপে বিডিআর নামে পরিচিত। ঢাকার পিলখানায় এর সদর দপ্তর অবস্থিত। বিডিআরের মহাপরিচালকসহ অন্য কমান্ডিং পদগুলোয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। বর্তমানে বিডিআরের বিভিন্ন স্তরে প্রায় ৪৪ হাজার সদস্য কাজ করছে। বিডিআরের একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে।

১৭৯৫ সালে প্রথম রামগড় লোকাল ব্যাটেলিয়ন নামে এটি কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান আমলে তা ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার পর এটি বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর নামে পরিচিতি লাভ করে। স্বাধীনতাযুদ্ধে বিডিআরের ৮ জন সৈনিক জীবন উত্সর্গ করেন এবং তাঁদের মধ্যে দুজন অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হন। বিডিআর মোট ৪৪৬ জন কর্মকর্তার পদ রয়েছে।

এর মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে ৩৮৬ জন এবং বিডিআর জওয়ান থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫৯ জন। তা ছাড়াও একটি পশু ডাক্তারের পদ রয়েছে। পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরের মোট জনবল ৪,৮৬৬ জন (১,০১১ জন বেসামরিক জনবলসহ), যার মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যা ৮৬ জন। ঢাকার বাইরে কর্মরত কর্মকর্তার সংখ্যা ৩৬০ জন (সংযোজনী-১)। বিডিআর সদর দপ্তরে মোট পাঁচটি ব্যাটেলিয়ন রয়েছে—সদর, ১৩, ২৪, ৩৬ এবং ৪৪ রাইফেলস ব্যাটেলিয়ন।

মূলত বিডিআর একটি প্যারা-মিলিটারি ফোর্স। এর মূল কাজ দেশের সীমান্ত পাহারা দেয়া, চোরাচালান রোধ করা এবং যুদ্ধকালীন সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে সহায়তা করা। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বিডিআর জওয়ানদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সীমান্ত রক্ষাসহ এসব কাজে তাদের দক্ষ ও উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের প্রায় ৪,৪২৭ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় এ বাহিনীর সদস্যরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করেন। তা ছাড়াও বিশেষ দায়িত্বের আওতায় এ বাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলা, সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, খাদ্যপণ্য বিক্রয় ইত্যাদি কাজে সরকারকে সহায়তা করে থাকে।

পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে প্রবেশের জন্য মোট পাঁচটি গেট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২ নম্বর গেট ইটের দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১ নম্বর গেটের অবস্থান লালবাগের কাছাকাছি, ৩ নম্বর গেট নিউমার্কেটসংলগ্ন, ঝিগাতলার কাছে ৪ নম্বর গেট যা প্রধান ফটক হিসেবে সমধিক পরিচিত এবং ৫ নম্বর গেটের অবস্থান হাজারীবাগের বাংলাদেশ লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন (সংযোজনী-২)। প্রতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিডিআর সপ্তাহ’ পালিত হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত বিডিআর সদর দপ্তরে ‘বিডিআর সপ্তাহ’ উদ্যাপনের জন্য নির্ধারিত ছিল।

অনুষ্ঠানসূচির আওতায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে বিডিআর জওয়ানদের প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন। কর্মসূচি অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখ সকাল ৮টায় বিডিআরের বার্ষিক দরবার নির্ধারিত ছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বার্ষিক নৈশভোজ ও টাটু শোর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বার্ষিক দরবার হচ্ছে আনুষ্ঠানিক। এ দরবারে সাধারণত নীতি-নির্ধারণী বিষয়াদি অবহিত করা হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও বিডিআরের সেক্টর ও ব্যাটেলিয়ন পর্যায়েও দরবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেক্টর ও ব্যাটেলিয়ন পর্যায়ের দরবার সাধারণ সৈনিক ও অফিসারদের মধ্যে একটি মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে। এ ধরনের দরবারে সাধারণ সৈনিকরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভাব-অভিযোগ জানানোর সুযোগ পেয়ে থাকেন। বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে পিলখানা এলাকা রং-বেরংয়ের ফেস্টুন ও পতাকা দিয়ে সজ্জিত ছিল। ২৪ তারিখ রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত টাটু শোর মহড়া চলে।

মহড়া শেষে মহাপরিচালকের নির্দেশে পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারির সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিতব্য দরবারের সময় পরিবর্তন করে সকাল ৯টায় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। গত ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ খ্রি. তারিখ ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত বিদ্রোহ এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক হতাহত হন (সংযোজনী-৩)। নিহতদের মধ্যে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও উপমহাপরিচালকসহ সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে আগত অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন। বিদ্রোহীরা শুধু সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা অস্ত্রাগার লুট করে, ১৬টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়, ১৮টি গাড়ি ভাঙচুর করে, বাড়িঘর লুটপাট ও তছনছ করাসহ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার-পরিজনদের ওপর অমানবিক মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালায়। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ এবং জীবিত অফিসার ও তাদের পরিবার-পরিজনদের জিম্মি করে কার্যত দেশকে এক বিভীষিকাময় ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।

২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ ঘটিকায় বিডিআর দরবার হলে মহাপরিচালক ও উপমহাপরিচালকসহ বিডিআরে কর্মরত ব্যাটেলিয়ন সেক্টর কমান্ডার এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ১৩৩ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৮৬ জন সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন, বাকি ৪৭ জন বিডিআর সপ্তাহ হিসেবে ঢাকায় এসেছিলেন। পিলখানা ট্র্যাজেডিতে এ পর্যন্ত মোট ৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে বিডিআরে প্রেষণে আসা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, ২ জন সেনা কর্মকর্তার সহধর্মিণী, ৯ জন বিডিআর সদস্য, ৩ জন নিরীহ পথচারী, ১ জন সেনাবাহিনীর সিপাহি ও ১ জন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। তা ছাড়াও ২ জন সেনা কর্মকর্তার লাশ এখনও শনাক্তের অপেক্ষায় আছে।

বিদ্রোহীদের হাতে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে মেজর জেনারেল ছিলেন ১ জন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ১ জন, কর্নেল ১৬ জন, লে. কর্নেল ১০ জন, মেজর ২৩ জন, ক্যাপ্টেন ২ জন এবং এএমসি অফিসার ৪ জন। যারা প্রাণে বেঁচে গেলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন লে. কর্নেল ৩ জন, মেজর ১৪ জন, এএমসি অফিসার ১৫ জন, নতুন যোগদানকৃত অফিসার ১ জন, অপারেশন ডাল-ভাত মেজর ৫ জন, প্যারেডের জন্য আগত অফিসার মেজর ১ জন, নিমন্ত্রণপত্র বিতরণের জন্য আগত মেজর ৫ জন, পুরস্কার গ্রহণের জন্য আগত মেজর ৭ জন, বিভাগীয় অফিসার (আরডিও) ৮ জন ও বেসামরিক অফিসার ১৪ জন। বিডিআর সপ্তাহের নির্ধারিত টাটু শোতে প্রায় ৩,০০০ জওয়ানের অংশ নেয়ার কথা ছিল। বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকার বাইরে থেকে ১৭৮৩ জন বিডিআর সদস্যকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় উপস্থিত জওয়ানের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১০,০০০।

২.০ তদন্ত কমিটি গঠন ও কমিটির কর্মপরিধি ২৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার ২০০৯ সকাল ৯টা থেকে ঢাকার পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে সংঘটিত বিদ্রোহ ও তত্সহ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য গত ২ মার্চ ২০০৯ তারিখ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন (রাজ-২)/গোপ্র-বিবিধ/৪-৫/২০০৯/২০৮ নম্বর স্মারকমূলে (সংযোজনী-৪) সাবেক সচিব আনিস-উজ-জামান খানকে সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সদস্য সচিব করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট নিম্নরূপ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১. সচিব, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়—কাজী হাবিবুল আওয়াল। ২. মহাপরিচালক, বাংলাদেশ রাইফেলস—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মইনুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি। ৩. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি—এহছানুল হক, অতিরিক্ত সচিব। ৪. মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধি—মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, যুগ্ম সচিব।

৫. সশস্ত্র বাহিনীর ৩ জন প্রতিনিধি (ক) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির, এনডিসি, পিএসসি, পরিচালক, আর্টিলারি, সেনাসদর। (খ) কমোডর এম নাসির, (এন), এনসিসি, পিএসসি, নৌ-প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা। (গ) এয়ার কমোডর এম সানাউল হক, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), এয়ার অফিসার কমান্ডিং, ঘাঁটি বাশার, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। ৬. অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন)— নববিক্রম ত্রিপুরা, এনডিসি। ৭. জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল, সেনাসদর—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূর মোহাম্মদ।

৮. অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সদস্য সচিব মোঃ গোলাম হোসেন। (চলবে) ২.১ তদন্ত কমিটির কর্মপরিধি ১. ঘটনার পটভূমি ২. ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন এবং ৩. অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা। প্রাথমিকভাবে কমিটিকে ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় দেয়া হয়। পরবর্তীকালে এ সময়সীমা যথাক্রমে আরও ৭ (সাত) এবং ৪ (চার) কর্মদিবস সময় বাড়ানো হয়। ৩.০ বিবেচ্য বিষয় গত ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ খ্রি. তারিখ ঢাকার পিলকানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিডিআর সদস্যদের বিদ্রোহ এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কমিটি যে বিষয়াবলী সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিবেচনায় এনেছে তা হচ্ছে নিম্নরূপ : (ক) এটি কি কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছিল? (খ) বিদ্রোহীদের তথাকথিত দাবি-দাওয়া কী কী ও তার যৌক্তিকতা; (গ) এসব দাবি-দাওয়া মেটানোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল কি না; (ঘ) এ বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড কি বিডিআরের ভেতরকার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ; (ঙ) এর পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র ছিল কি না; (চ) বিডিআর সৈনিকদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা কী; (ছ) বাইরে থেকে অন্য কোনো শক্তি বা মহল এর মদদ দিয়েছিল কি না; (জ) এ ঘটনার সুবিধাভোগী কারা; (ঝ) এ বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী প্রভাব; এবং (ঞ) এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়গুলো কী কী? ৪.০ তদন্ত পদ্ধতি কমিটি গত ৩/০৩/২০০৯ তারিখে বিডিআর সদর দপ্তর এবং আনুষঙ্গিক স্থাপনা সরেজমিনে পরিদর্শন করে (সংযোজনী-৫)।

পরবর্তী সময়ে কমিটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহত/উদ্ধারকৃত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, পিলখানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দরবার হলে উপস্থিত সৈনিক/বেসামরিক সদস্য, বিডিআর হাসপাতালের ডাক্তার, সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও সন্তান, বিডিআর গেটসংলগ্ন ব্যাংকের ম্যানেজার, বিদ্রোহী বন্দি, সাবেক সব মহাপরিচালক ও বিডিআরের কতিপয় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিডিআর-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁদের মতামত শ্রবণ ও লিপিবদ্ধ করেছে (সংযোজন-৬)। বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ও কারণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মোটিভ, বিডিআর অসন্তোষ, ডাল-ভাত কর্মসূচি ও আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রধান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আহরিত তথ্য সংগ্রহের প্রয়াস নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখের নৃশংস ঘটনার আগের ও পরের কয়েকদিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। এসব সংস্থা সরকারকে আগাম কোনো সতর্ক বার্তা দিয়েছিল কি না, বিশেষ করে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের ঘটনাপ্রবাহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনিটর করেছিল কি না, তা জানার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান অথবা মনোনীত প্রতিনিধিকে কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ডিএমপি, এসবি, সিআইডি, র্যাব, এসএসএফ ইত্যাদির কাছ থেকে লিখিত বক্তব্যও সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঘটনা-পরবর্তী সময়ে তদন্ত কার্যে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলো যেমন—সিআইডি, র্যাব ইত্যাদির সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘটনা বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। কমিটির অনুরোধে র্যাব, ডিএমপি ও এসবি ইলেকট্রনিক মিডিয়া হতে প্রাপ্ত ও তাদের নিজস্ব যেসব ভিডিও ফুটেজ কমিটিকে সরবরাহ করে তা কমিটি প্রত্যক্ষ করে। কমিটি ফুটেজে চিহ্নিত অস্ত্রধারী, লাউড স্পিকার ব্যবহারকারী ও গাড়িচালক সৈনিকদের শনাক্ত করার জন্য সিআইডি এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ করে। এদের মধ্যে এরই মধ্যে যারা ধরা পড়েছে কিংবা পিলখানায় যোগ দিয়েছে, তাদের কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তা ছাড়া কমিটি ঘটনার সময় বা পরে ধারণকৃত অডিও, ভিডিও এবং স্থিরচিত্রগুলো এ ঘটনা সত্য উদ্ঘাটনে ব্যবহার করেছে।

নাম, পরিচয় গোপন রেখে তথ্য সরবরাহে আগ্রহী নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য প্রদানের জন্য পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। সচিবালয়ের সব গেট ও পিলখানার মূল গেটে দৃশ্যমান স্থানে এ জন্য অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ বাক্সে ঘটনা তদন্তে সহায়ক হয় এমন কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্যাদি পাওয়া যায়নি। ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে পিলখানায় উপস্থিত সৈনিক সংখ্যা, দরকার হলে উপস্থিত সৈনিক সংখ্যা, হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত সৈনিকের তালিকা, ২০০১ সাল থেকে সব সৈনিক নিয়োগের তথ্য ইত্যাদি বিডিআর কর্তৃপক্ষ থেকে সংগ্রহ করা হয়। কমিটির তৈরি একটি প্রশ্নপত্রে ওই সৈনিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

কমিটি বিডিআর জওয়ানদের প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কিছু সংশ্লিষ্ট সৈনিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। ৫.০ সীমাবদ্ধতা তদন্তের স্বার্থে এ কমিটি কয়েকটি সংস্থার প্রধান, কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা আবশ্যক বলে মনে করেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবে এ কাজগুলো করা সম্ভব হয়নি। ফলে পর্যান্ত তথ্যপ্রমাণসহ এ বিদ্রোহ এবং হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করা এবং ঘটনার পেছনের মূল কারণ বা মোটিভ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। কমিটি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেমন এনএসআই, ডিজিএফআই, র্যাব, সিআইডি ও পুলিশের এসবিকে তাদের সংগৃহীত বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ও প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে কমিটির কাছে সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করেছিল।

কিন্তু বর্ণিত সংস্থাগুলো থেকে ঈপ্সিত সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। যেহেতু এ কমিটির কাজে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করার উপযুক্ত উপকরণ, প্রযুক্তি এবং কৌশল ছিল না, তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কমিটির কাছে উপস্থাপিত বা আনীত প্রায় সবাই কোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা প্রমাণ দেয়নি। ফলে কমিটির কাছে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী ও পেছনের পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত না করা পর্যন্ত এ ঘটনার পেছনের কারণ ও উদ্দেশ্য বের করা একটি দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ কাজ। ৬.০ পিলখানা ট্র্যাজেডির পটভূমি দুশ’ বছরের অধিককালের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বিডিআরের নেতৃত্ব শুরু থেকেই দিয়ে আসছে সেনাবাহিনী। ফলে সাধারণ জওয়ান ও সেনা কর্মকর্তাদের মাঝে একটি ব্যবধান সব সময়েই ছিল।

সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধের মতো কার্যক্রমের সঙ্গে বিডিআর সদস্যরা সরাসরি জড়িত থাকার কারণে বিডিআরের সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির মতো অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু বিডিআর সৈনিকদের কমান্ডে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর অধিকাংশ কর্মকর্তারা এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পথে অন্তরায় ছিল। শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অনৈতিক কাজের জন্য বিডিআর সদস্যদের শাস্তি প্রদান ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু ৫৭ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরির সুযোগ থাকা, অপরাধের গুরুত্বের তুলনায় লঘুদণ্ড প্রদান ইত্যাদি দুর্নীতি প্রতিহত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং বিডিআর সদস্যদের মধ্যে সেনা কর্তৃত্ব মেনে না নেয়ার এক প্রচ্ছন্ন মানসিকতা সব সময়ই নীরবে সক্রিয় ছিল।

উপরন্তু এ উদ্ধতপূর্ণ মানবিকতায় পৃষ্ঠ হয়ে বিডিআরের বিভাগীয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত ডিএডি এবং এডিরা নানাভাবে উস্কানিমূলক কথাবার্তার মাধ্যমে সাধারণ ও নবাগত সৈনিকদের প্ররোচিত ও বিভ্রান্ত করত। ৬.১ বিদ্রোহের পরিকল্পনা তদন্তে সহায়তাকারী একটি সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে (সংযোজনী-৭) ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ ও অন্যান্য অপরাধের পর༯div (গতকালের পর) ২.১ তদন্ত কমিটির কর্মপরিধি ১. ঘটনার পটভূমি ২. ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন এবং ৩. অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা। প্রাথমিকভাবে কমিটিকে ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় দেয়া হয়। পরবর্তীকালে এ সময়সীমা যথাক্রমে আরও ৭ (সাত) এবং ৪ (চার) কর্মদিবস সময় বাড়ানো হয়। ৩.০ বিবেচ্য বিষয় গত ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ খ্রি. তারিখ ঢাকার পিলকানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিডিআর সদস্যদের বিদ্রোহ এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কমিটি যে বিষয়াবলী সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিবেচনায় এনেছে তা হচ্ছে নিম্নরূপ : (ক) এটি কি কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছিল? (খ) বিদ্রোহীদের তথাকথিত দাবি-দাওয়া কী কী ও তার যৌক্তিকতা; (গ) এসব দাবি-দাওয়া মেটানোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল কি না; (ঘ) এ বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড কি বিডিআরের ভেতরকার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ; (ঙ) এর পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র ছিল কি না; (চ) বিডিআর সৈনিকদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা কী; (ছ) বাইরে থেকে অন্য কোনো শক্তি বা মহল এর মদদ দিয়েছিল কি না; (জ) এ ঘটনার সুবিধাভোগী কারা; (ঝ) এ বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী প্রভাব; এবং (ঞ) এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়গুলো কী কী? ৪.০ তদন্ত পদ্ধতি কমিটি গত ৩/০৩/২০০৯ তারিখে বিডিআর সদর দপ্তর এবং আনুষঙ্গিক স্থাপনা সরেজমিনে পরিদর্শন করে (সংযোজনী-৫)।

পরবর্তী সময়ে কমিটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহত/উদ্ধারকৃত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, পিলখানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দরবার হলে উপস্থিত সৈনিক/বেসামরিক সদস্য, বিডিআর হাসপাতালের ডাক্তার, সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও সন্তান, বিডিআর গেটসংলগ্ন ব্যাংকের ম্যানেজার, বিদ্রোহী বন্দি, সাবেক সব মহাপরিচালক ও বিডিআরের কতিপয় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিডিআর-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁদের মতামত শ্রবণ ও লিপিবদ্ধ করেছে (সংযোজন-৬)। বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ও কারণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মোটিভ, বিডিআর অসন্তোষ, ডাল-ভাত কর্মসূচি ও আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রধান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আহরিত তথ্য সংগ্রহের প্রয়াস নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখের নৃশংস ঘটনার আগের ও পরের কয়েকদিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। এসব সংস্থা সরকারকে আগাম কোনো সতর্ক বার্তা দিয়েছিল কি না, বিশেষ করে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের ঘটনাপ্রবাহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনিটর করেছিল কি না, তা জানার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান অথবা মনোনীত প্রতিনিধিকে কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ডিএমপি, এসবি, সিআইডি, র্যাব, এসএসএফ ইত্যাদির কাছ থেকে লিখিত বক্তব্যও সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঘটনা-পরবর্তী সময়ে তদন্ত কার্যে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলো যেমন—সিআইডি, র্যাব ইত্যাদির সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘটনা বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। কমিটির অনুরোধে র্যাব, ডিএমপি ও এসবি ইলেকট্রনিক মিডিয়া হতে প্রাপ্ত ও তাদের নিজস্ব যেসব ভিডিও ফুটেজ কমিটিকে সরবরাহ করে তা কমিটি প্রত্যক্ষ করে। কমিটি ফুটেজে চিহ্নিত অস্ত্রধারী, লাউড স্পিকার ব্যবহারকারী ও গাড়িচালক সৈনিকদের শনাক্ত করার জন্য সিআইডি এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ করে। এদের মধ্যে এরই মধ্যে যারা ধরা পড়েছে কিংবা পিলখানায় যোগ দিয়েছে, তাদের কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তা ছাড়া কমিটি ঘটনার সময় বা পরে ধারণকৃত অডিও, ভিডিও এবং স্থিরচিত্রগুলো এ ঘটনা সত্য উদ্ঘাটনে ব্যবহার করেছে।

নাম, পরিচয় গোপন রেখে তথ্য সরবরাহে আগ্রহী নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য প্রদানের জন্য পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। সচিবালয়ের সব গেট ও পিলখানার মূল গেটে দৃশ্যমান স্থানে এ জন্য অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ বাক্সে ঘটনা তদন্তে সহায়ক হয় এমন কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্যাদি পাওয়া যায়নি। ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে পিলখানায় উপস্থিত সৈনিক সংখ্যা, দরকার হলে উপস্থিত সৈনিক সংখ্যা, হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত সৈনিকের তালিকা, ২০০১ সাল থেকে সব সৈনিক নিয়োগের তথ্য ইত্যাদি বিডিআর কর্তৃপক্ষ থেকে সংগ্রহ করা হয়। কমিটির তৈরি একটি প্রশ্নপত্রে ওই সৈনিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

কমিটি বিডিআর জওয়ানদের প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কিছু সংশ্লিষ্ট সৈনিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। ৫.০ সীমাবদ্ধতা তদন্তের স্বার্থে এ কমিটি কয়েকটি সংস্থার প্রধান, কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা আবশ্যক বলে মনে করেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবে এ কাজগুলো করা সম্ভব হয়নি। ফলে পর্যান্ত তথ্যপ্রমাণসহ এ বিদ্রোহ এবং হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করা এবং ঘটনার পেছনের মূল কারণ বা মোটিভ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। কমিটি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেমন এনএসআই, ডিজিএফআই, র্যাব, সিআইডি ও পুলিশের এসবিকে তাদের সংগৃহীত বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ও প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে কমিটির কাছে সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করেছিল।

কিন্তু বর্ণিত সংস্থাগুলো থেকে ঈপ্সিত সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। যেহেতু এ কমিটির কাজে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করার উপযুক্ত উপকরণ, প্রযুক্তি এবং কৌশল ছিল না, তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কমিটির কাছে উপস্থাপিত বা আনীত প্রায় সবাই কোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা প্রমাণ দেয়নি। ফলে কমিটির কাছে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী ও পেছনের পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত না করা পর্যন্ত এ ঘটনার পেছনের কারণ ও উদ্দেশ্য বের করা একটি দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ কাজ। ৬.০ পিলখানা ট্র্যাজেডির পটভূমি দুশ’ বছরের অধিককালের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বিডিআরের নেতৃত্ব শুরু থেকেই দিয়ে আসছে সেনাবাহিনী। ফলে সাধারণ জওয়ান ও সেনা কর্মকর্তাদের মাঝে একটি ব্যবধান সব সময়েই ছিল।

সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধের মতো কার্যক্রমের সঙ্গে বিডিআর সদস্যরা সরাসরি জড়িত থাকার কারণে বিডিআরের সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির মতো অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু বিডিআর সৈনিকদের কমান্ডে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর অধিকাংশ কর্মকর্তারা এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পথে অন্তরায় ছিল। শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অনৈতিক কাজের জন্য বিডিআর সদস্যদের শাস্তি প্রদান ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু ৫৭ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরির সুযোগ থাকা, অপরাধের গুরুত্বের তুলনায় লঘুদণ্ড প্রদান ইত্যাদি দুর্নীতি প্রতিহত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং বিডিআর সদস্যদের মধ্যে সেনা কর্তৃত্ব মেনে না নেয়ার এক প্রচ্ছন্ন মানসিকতা সব সময়ই নীরবে সক্রিয় ছিল।

উপরন্তু এ উদ্ধতপূর্ণ মানবিকতায় পৃষ্ঠ হয়ে বিডিআরের বিভাগীয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত ডিএডি এবং এডিরা নানাভাবে উস্কানিমূলক কথাবার্তার মাধ্যমে সাধারণ ও নবাগত সৈনিকদের প্ররোচিত ও বিভ্রান্ত করত। ৬.১ বিদ্রোহের পরিকল্পনা তদন্তে সহায়তাকারী একটি সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে (সংযোজনী-৭) ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ ও অন্যান্য অপরাধের পরিকল্পনার সঙ্গে বিডিআরের অনেক সদস্যসহ আরও অনেক বেসামরিক ব্যক্তিরা জড়িত ছিল বলে প্রকাশ। একই সূত্রমতে, প্রায় ২ মাস যাবত্ এ পরিকল্পনার কাজ চলে। পরিকল্পনার বিভিন্ন পর্যায়ে ষড়যন্ত্রকারীরা ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত বেশ কিছু বৈঠক করে। এসব বৈঠকের তথ্যাবলী নিম্নরূপ : (ক) নির্বাচনের আগে বিডিআরের বেশকিছু সদস্য ব্যারিস্টার তাপসের (বর্তমানে সংসদ সদস্য) অফিসে যান।

এদের মধ্যে উল্লেখ্য হাবিলদার মনির, সিপাহি তারেক, সিপাহি আইয়ুব, ল্যা. নায়ক সহকারী সাইদুরসহ ২৫-২৬ জওয়ান ও জাকির সেখানে উপস্থিত ছিল। (খ) নির্বাচনের ৩-৪ দিন পর পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিডিআর সদস্য এমপি তাপসের বাসভবন ‘স্কাই স্টার’-এ যায়। সেখানে তাকে দাবি পূরণের কথা বলা হলে তিনি রেশনের বিষয়টি ছাড়া অন্য কোনো বিষয় বিবেচনায় আনা সম্ভব নয় বলে জানান। (গ) ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের বাসায় ২ জন ডিএডি এবং বেসামরিক জাকিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জন বিডিআর সদস্য সাক্ষাত্ করে। এমপি জনাব সেলিম জানান, এসব দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়, তবে তিনি তার একটি লিখিত কপি চান।

(ঘ) পরবর্তী সময়ে এ দলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করার জন্য সচেষ্ট হয় বলে জানা যায়। (ঙ) রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে দাবি-দাওয়া সম্পর্কিত ব্যাপারে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে ভবিষ্যত্ কর্মপন্থা নিয়ে জওয়ানরা নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন তারিখে নিজ এলাকায় তারা বেশ কয়েকটি বৈঠক করে। (চ) ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সদর রাইফেলস ব্যাটেলিয়নের বাস্কেটবল মাঠে এ বৈঠকে জনৈক নেতৃস্থানীয় বিডিআর সদস্য মন্তব্য করে যে, ‘এ রকম দাবি করে কোনো লাভ নেই, অফিসারদের জিম্মি করে দাবি আদায় করতে হবে। ’ (ছ) ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকায় ৫ নম্বর গেটসংলগ্ন বেসামরিক জাকিরের প্রাইম কোচিং সেন্টারে প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠক করে।

জানা যায়, তাদের দাবি-দাওয়া সংবলিত একটি খসড়া লিফলেট প্রাইম কোচিং সেন্টারে টাইপ করিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পিলখানার সব ব্যাটেলিয়নসহ আরএসইউ অফিসারদের কাছে বিতরণ করে। (জ) ডিএডি তৌহিদ, ডিএডি রহিমসহ আরও ৩-৪ জন ডিএডি ৩৬ রাইফেল ব্যাটেলিয়নের এক সৈনিকের বাসায় বৈঠক করে। (ঝ) ঘটনার আগে রাতে ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের মাঠে একটি চূড়ান্ত বৈঠক হয়। কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় পরে চক্রান্তকারীরা ৫ নম্বর গেটের বাইরে ল্যা. নায়ক জাকারিয়ার (সিগন্যাল) ভাড়া নেয়া টিনশেড বাসায় ৯.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। (চলবে) (গতকালের পর) এ রাতে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয় : (ক) ডিজি ও ডিডিজিকে জিম্মি করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে অন্য অফিসারদেরও জিম্মি করা হবে; (খ) ডিজিকে মনোনীত ২ জন বিডিআর জওয়ান অস্ত্র ধরবে; (গ) ডিজি’র মাধ্যমে অন্য অফিসারদের জিম্মি করা হবে।

কোনো বাধা এলে গুলি করা হবে, তবে হত্যা করা হবে না। (ঘ) কোত (কড়ঃব) ও ম্যাগাজিন একসাথে দখলকরত হামলার পরিকল্পনা করা হয়। (ঙ) জিম্মি করার পর সরকারের কাছে দাবি আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়; এবং (চ) মিটিং শেষে ২০-২৫ জন বিডিআর সদস্য দাবি আদায়ে হাতে হাত রেখে শপথ নেয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে সংঘটিত ঘটনাবলী ক্রমানুসারে সাজালে বিদ্রোহের একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা উদ্ঘাটিত হয়। প্রথমত, ২১ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে বিদ্রোহের পরিকল্পনাকারীরা অন্য বিডিআর সদস্যদের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উসকে দেয়।

দ্বিতীয়ত, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে দরবারে ডিজি তার ভাষণে ডাল-ভাত কর্মসূচিসহ অন্যান্য বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় সুপরিকল্পিতভাবে একজন বিদ্রোহীকে মঞ্চে অস্ত্রসহ অতর্কিতে প্রবেশ করানো হয়। তৃতীয়ত, সেই বিদ্রোহী ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করার পরপর একটি ফাঁকা গুলি করা হয় যাকে বিদ্রোহ শুরুর একটি সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চতুর্থত, সঙ্গে সঙ্গে দরবার হলে উপস্থিত কতিপয় বিদ্রোহী ‘ভাগো’ বলে চিত্কার করে ওঠে এবং সকল সৈনিকদের দরবার ত্যাগের ইঙ্গিত দেয়। পঞ্চমত, এর পরপর দরবার হলের বাইরে পিলখানার সর্বত্র এবং তার পর মোবাইল ও রেডিও’র মাধ্যমে সর্বত্র সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সৈনিকদের চূড়ান্তভাবে উস্কে দেয়ার উদ্দেশে একথা ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, দরবার হলে গুলি করে একজন সৈনিককে সেনা কর্মকর্তারা মেরে ফেলেছে। পরে মিডিয়াতেও বিদ্রোহীদের এ দাবি করতে শোনা যায়, যা পরবর্তীকালে কমিটির তদন্তকালে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন থেকে বিডিআর জওয়ানদের কিছু যৌক্তিক/ অযৌক্তিক অভিযোগ, দাবি-দাওয়ার ওপর ভিত্তি করে তাদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত ছিল বলে তদন্তে জানা যায়। তবে কমিটি মনে করে, এজন্য বিপুলসংখ্যক সেনা কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যার বিষয়টি তাদের ক্ষোভের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। সার্বিকভাবে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার জন্য কোনো মহল বিডিআর বিদ্রোহীদের দাবি-দাওয়ার আড়ালে নিজেদের কায়েমি স্বার্থ উদ্ধারের প্রয়াস পেয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। ৬.২ লিফলেট বিলি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে একটি লিফলেট (সংযোজনী-৮) সীমিত সংখ্যায় পিলখানায় বিলি করা হয়। লিফলেটটি বহুল প্রচার পাওয়ার আগেই তা বিডিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

তবে দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ লিফলেট সম্পর্কে কিছুই জানত না। এমনকি পিলখানা ট্রাজেডির কয়েক দিন পরেও কোনো কোনো গোয়েন্দা সংস্থা আলোচ্য লিফলেট সম্পর্কে অনবহিত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পিলখানা সফর উপলক্ষে প্রকাশিত এ লিফলেটে প্রেষণে বিডিআরে কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবন-যাপন, গাড়ি ব্যবহার, সেনাবাহিনী ও বিডিআরের মধ্যকার বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো, নিম্নমানের খাবার, ডাল-ভাত কর্মসূচির টাকা আত্মসাত্, ইজতিমার ডিউটিতে সৈনিকদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তার টাকা আত্মসাত্, নির্বাচনের বিল পরিশোধ না করা ইত্যাদি অভিযোগ ডিসি শাকিল আহম্মদ, তার স্ত্রী, ঢাকা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিবুল হক প্রমুখের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। এ লিফলেটে সেনাবাহিনীর অফিসার প্রেষণে প্রেরণ বন্ধ করে বাংলাদেশ পুলিশের মতো বিসিএস (বিডিআর) ক্যাডার সৃষ্টি করে কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি করা হয়। পরিশেষে হুমকি দেয়া হয় যে, ‘বিডিআর বাহিনীতে ওদের দেখতে চাই না, প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে কুকুরের ন্যায় সরাব’।

সর্বোপরি, ১৯৯৬ পরবর্তী সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জওয়ানদের সঙ্গে দরবার না করার অনুযোগও আলোচ্য লিফলেটে রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে বিডিআরের তদানীন্তন মহাপরিচালক এই লিফলেটটি সম্পর্কে ২১ ফেব্রুয়ারিই অবহিত হয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে তিনি এটি গুরুত্ব সহকারেই নিয়েছিলেন এবং ওই দিনের মধ্যেই একটি কাউন্টার লিফলেট তৈরির উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে অজ্ঞাত কারণে ওই উদ্যোগ পরিত্যক্ত হয়। প্রায় অভিন্ন অভিযোগ সংবলিত ২য় লিফলেটটি (সংযোজনী-৯) ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ফার্মগেট ও পিলখানার আশপাশের এলাকায় পাওয়া যায়।

এ লিফলেটে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার, নিপীড়ন, ডাল-ভাত কর্মসূচিতে অনিয়ম, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভাতার টাকা আত্মসাত্, দরবার হলের আয় ও রাইফেল স্কয়ার মার্কেটের আয় লুটপাটের অভিযোগ করে সেনা অফিসারদের সব স্থান থেকে হটানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। বিডিআরে লিফলেট বিলির মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ জনসমক্ষে তুলে ধরার প্রয়াস নতুন কিছু নয়। বার্ষিক প্যারেড ও দরবারের আগে এ ধরনের লিফলেট আগেও বিলি হয়েছে। তবে একথা সত্য, ২১ ফেব্রুয়ারি বিলিকৃত লিফলেটে যে একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি ছিল, কর্তৃপক্ষ তা যথার্থ অনুধাবন ও মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে পিলখানায় প্যারেড পরিদর্শন ও বিডিআর সপ্তাহ উদ্বোধন কর্মসূচি থাকায় বিষয়টি নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো হুমকি ছিল কিনা, তা পর্যালোচনা করা হয়নি।

(চলবে) (গতকালের পর) বিডিআর কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে অবহিত করেছ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.