::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
দুপুরবেলা মেগা সিটি বাস প্রায় খালি যায়। পছন্দ মতো সীট পেতে সমস্যা হয় না। বাস টানেও বেশ তাড়াতাড়ি। ধানমন্ডিতে এসে অবস্থা খারাপ। রাস্তা পুরা স্থবির।
বাস সামনেও আগায় না পিছেও না। অনেকক্ষন পরে টের পেলাম। ওদিক থেকে মিছিল আসছে। বিডিআর সৈনিকরা যাচ্ছে আবাহনী মাঠে। বয়স্ক দাড়ি ওয়ালা একজন আবার সদ্য কৈশোর উর্ত্তীন্ন আরেকজন।
কারো পায়ে স্যান্ডেল গায়ে টি-শার্ট আবার কারো গায়ে শার্ট-প্যান্ট। চুলের কাটিং আর হাঁটার স্টাইলই না, পেশাদার সৈনিকের চেহারার মধ্যেই লেখা থাকে সৈনিক। লুকানো যায় না। ইনফেন্ট্রির বইতে একটা কথা পড়েছিলাম। যখন প্রচন্ড প্রতিকুল পরিবেশে দেখবে এক লোক হাতে রাইফেল কাধে বিশাল বোঝার ভারে নুয়ে পড়েছে কিন্তু তার মাথা গর্বিত ভঙ্গিতে উড্ডিন, বুঝে নেবে সে একজন ইনফ্যান্ট্রি।
পরাজিত মানুষ দেখতে খুব খারাপ লাগে। পরাজিত সৈনিকের মাঝে এমন একটা জিনিস থাকে যেটা লুকানো যায় না। বিডিআরের সৈনিকদের অবশ্য পরাজিত সৈনিক বলা যায় না। আমার গত পোস্টটা দিয়েছিলাম বিদ্রোহের রাতে। কথাটা একটু নির্মম ছিল।
যতোই যা হোক একজন সামরিক বাহিনীর লোক নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে কিংবা মিউটিনির সাথে জড়িত হচ্ছে এটা মানা যায় না। বিডিআর উচ্ছৃঙ্খল সদস্যরা সে সময় বেশ ইমোশান আদায় করে ফেলেছিল। ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম অনেকে প্রোফাইল পিকচারে বিডিআরের লোগো ব্যাবহার করছে। গন হারে গালি খেয়েছিলাম। বিদ্রোহ অবসানের পরে নারকীয় বর্বরতা প্রকাশ পেল, যারা বিডিআরের লোগো ব্যাবহার করছিলো তারাই দেখলাম কালো ব্যাজ ধারন করলো।
বর্বরতার ঘটনা প্রকাশ পেল তখন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় মনে হলো মুল ঘটনা শুরু করেছিল অল্প কিছু সৈনিক। হয়তো এক সেকশান বা দুই সেকশান খুব বেশী হলে এক প্ল্যাটুন। বাইরের হাত থাকার কথাও জোরে শোরে শোনা যাচ্ছে। আবার বিডিআরে দূর্নীতি হয় না কিংবা সৈনিকরা বঞ্চিত হয় না একথাও ভুল না।
একই ভাবে সঠিক কথা হচ্ছে মুষ্টিমেয় সৈনিক এই ন্যাক্কারের সাথে জড়িত। উস্কানী আর ঘটনার ঘটার পরে প্যানিক থেকে আরো শ-খানেক সৈনিক জড়িয়ে গেছে।
আবাহনী মাঠের সামনে যেই স্রোতটাকে দেখলাম এরা সবাই ইউনিফর্ম ছাড়া সৈনিক। রিপোর্ট করতে আসছে। তাদের চোখে ভয়, শঙ্কা আর আতঙ্ক।
কিন্তু তাদের পরিবারের চেহারা আরো করুন। আবাহনী মাঠের দেয়ালের ওপাশ থেকে সৈনিকেরা উকি ঝুকি দিচ্ছে। ইউ আই ইউ ইউনিভার্সিটির সামনের টং দোকানে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে সিগারেট টানছে। এটা অবশ্য গতকালের চেহারা। আজকের এরা অনেক শান্ত।
এক ২০/২২ বছরের সৈনিকের সাথে করে আসছেন এক বৃদ্ধা। সম্ভবত মা। বেচারার বোরখার ঢাকনি টাকনি সব এলোমেলো। কেঁদে হুলুস্থুল। লোকজন ভীর করে দেখছে।
রাইফেলস স্কয়ারের সামনে এক বাচ্চা বয়সী সেকেন্ড লেফট্যান্টকে দেখে মনে হলো পুরো ব্যাপারটায় সে বিব্রত। আর্মির কম্ব্যাট গ্রীন ড্রেসে মানাচ্ছে না। রাইফেলস স্কয়ারের সামনে ইউনিফর্ম পড়া জওয়ানরা। লোকজন গ্রীলের ওপাশ থেকে দেখছে। ব্যাপারটা খারাপ লাগলো খুব।
ক্যাপ্টেন মৌসুমীর হাজব্যান্ড মেজর গাজ্জালী। ক্যাপ্টেন মৌসুমী মিলিটারী একাডেমীতে আমার সিনিয়র ছিলেন (৪৭ লং কোর্স)। মজার ব্যাপার তাঁর সাথে তেমন পরিচয় না থাকলেও মেজর গাজ্জালীকে খুব ভালো করে চিনতাম। খুব হাসি খুশি প্রান উচ্ছল মানুষ। তিন বছরের একটা বাচ্চা আছে তাদের।
খুব গল্প করতেন। মেজর গাজ্জালীর মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে না। ক্যাপ্টেন মৌসুমী কাপড়ে মুখ ঢেকে লাশ খুজছে। সব পত্রিকায় ছবিটা দেখলাম ।
বছর খানেক আগে জনৈক মেজর সাহেবের সাথে পরিচয় হয়েছিল।
প্রতিভাবান অফিসার। তার বিকৃত লাশটা টিভির খবরে দেখলাম।
বাসে এক লোক উত্তেজিত বক্তৃতা দিচ্ছে। বিডিআরের সৈনিকদের দেখিয়ে বললেন এরা সব ট্রেইটর। এদের ইয়ে দিয়ে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে ফায়ার করা উচিত।
বর্বরতার বর্ননা সহ বলতে থাকেন কি কি শাস্তি দেয়া উচিত। বিডিআর জিনিসটাই উঠিয়ে দেয়া উচিত। আর্মি আর পুলিশ মিলে বর্ডার পাহারা দেব এরকম থিওরী গলার জোরে বলছিল। কথা শুনেই বুঝলাম সামরিক বাহিনী সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই। কয়েকদিন আগে দেখেছিলাম একজনের ব্লগে আর্মি উঠিয়ে দেবার দাবী।
আমার গন্তব্য ছিল মতিঝিল। ভদ্রলোকের বকবকানী সহ্য করতে না পেরে সায়েন্স ল্যাবে বাস থেকে নেমে গেলাম। আজকে শুনলাম বিডিআর উঠিয়ে দেবার দাবী। কোন ইউনিটে বিদ্রোহ হলে সেই ইউনিট ভেঙ্গে দেয়া হয়। নেভীতে শীপটাকে ডি-কমিশান করে দেয়া হয়।
বিডিআরে কি হবে জানি না। নিরপরাধ জওয়ানরা যেন ভালো থাকে। বাংলাদেশ আর্মির উপরে অনেক আস্থা আছে আমার।
ইউ-আই-ইউ ইউনিভার্সিটির সামনে গন মিছিল যাচ্ছিল। অসংখ্য সৈনিক তাদের পরিজন নিয়ে লাইন ধরে যাচ্ছে রিপোর্ট করতে।
একটা দৃশ্য চোখে লাগলো। একজন সৈনিক হেটে যাচ্ছে। তার একটা হাত শক্ত হাতে আকড়ে ধরেছে তার অল্প বয়সী গ্রাম্য স্ত্রী। সৈনিকের কাধে একটা শিশু। বড় বড় চোখে চার পাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছে বাবার সাথে।
বিভুতীভুষনের অপুর সংসার দেখে যারা মুগ্ধ হন তাদের বলি, এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আশে পাশে প্রতিদিন ঘটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।