আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমুসলিমদের জান-মালের হেফাজত : ইসলাম কী বলে

সম্প্রতি দেশের সংখ্যালঘু অমুসলিমদের ঘরবাড়ি এবং উপাসনালয়ে বিনা উস্কানিতে আক্রমন প্রতিটি বিবেকবান মুসলিম এবং অমুসলিমের অন্তরে দাগ কেটে গেছে। এ উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ইসলামিক বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ড ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াত তথা অন্ধকার যুগের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আসুন দেখি, একটি ইসলামী রাস্ট্রে (শরীয়া আইনে পরিচালিত) সংখ্যালঘুদের এই জান মালের ক্ষতিসাধনকে কিভাবে নেওয়া হয়। ইসলামের সংখ্যালঘু সংক্রান্ত আইনগুলো যাদের জানা আছে তারা বিষয়টি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। এখানে একজন সংখ্যালঘুর জান, মাল ও ইজ্জতের মূল্য একজন মুসলমান নাগরিকের সমান।

শরীয়তের ভাষায়- دمائهم كدمائنا وأموالهم كأموالنا “ (অর্থ) তাদের (ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিমগণ) রক্ত আমাদের রক্তের মত এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মত মর্যাদাদাশীল”। এবার নজর দেওয়া যাক এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি বিধানের দিকে। এ বিষয়টি মূলত: ‘আততাশরীউল জিনাইল ইসলামী’ তথা ইসলামের ফৌজদারী দন্ডবিধির আওতাভুক্ত বিষয়। যেভাবে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের ঘরবাড়ি এবং উপাসনালয়ে বিনা উস্কানিতে আক্রমন ও ক্ষতিসাধন করা হয়েছে এটি ইসলামী আইনে الحرابة (আলহিরাবাহ) বা قطع الطريق (কতউত তরীক) এর অন্তর্ভুক্ত। ‘আলহিরাবাহ’ বা ‘কতউত তরীক’ অর্থ হলো প্রকাশ্যে কাউকে হত্যা করা ও তার সম্পদ লুণ্ঠন করা অথবা এর যেকোনোটি সংঘটিত করা।

কিংবা সশস্ত্র সন্ত্রাসের মাধ্যমে এসব কর্মের চেষ্টা করা যদিও জান-মালের ক্ষতি করতে সফল না হোক। সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রকাশ্যে সংঘটিত যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ‘আলহিরাবাহ’ এর অন্তর্ভূক্ত। কুরআনুল কারীমে ‘আলহিরাবাহ’ অপরাধ ও এর শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন : “ যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শুলিতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে অথবা এলাকাছাড়া করা হবে। এটি হল তাদের জন্য ইহকালের লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

“ (সূরা আলমায়িদাহ, আয়াত : ৩৩) উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের জন্য ৪টি শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এবং অপরাধের মাত্রা ও ধরন অনুযায়ী উক্ত ৪টি শাস্তি থেকে যার জন্য যেটা প্রযোজ্য তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব বিচারকের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। যেমন কোনো সন্ত্রাসী কাউকে প্রকাশ্যে হত্যা করে যদি তার সম্পদও ছিনিয়ে নেয়, তবে তাকে হত্যাও করা হবে আবার শুলেও চড়ানো হবে। আবার কেউ যদি হত্যা না করে শুধু সম্পদ ছিনিয়ে নেয় সেক্ষেত্রে তার একদিকের হাত এবং অন্যদদেকের পা কেটে দেওয়া হবে। এভাবে অপরাধ ভেদে নির্ধারিত হবে ৪ শাস্তির কোনো ১টি।

ইসলামের ফৌজদারী দন্ডবিধিতে হত্যা ও সন্ত্রাস তথা কতল ও আলহিরাবাহকে দু’টি পৃথক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং প্রকাশ্যে কাউকে হত্যা করা বা প্রকাশ্যে কারো সম্পদ লুণ্ঠন সাধারণ হত্যা ও চুরি থেকে অনেক বেশি জঘন্য অপরাধ হিসেবে ধর্তব্য হয়েছে। এ কারণেই ‘আলহিরাবাহ’-এর শাস্তি অন্য যেকোনো শাস্তির চেয়ে কঠোর। শুধু তাই নয় বরং ইসলামী দন্ডবিধিতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের (আলহিরাবাহ) কারণে প্রাপ্য শাস্তি ক্ষমাযোগ্য বলে বিবেচিত নয়। সাধারণ হত্যার ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণ যদি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয় (অর্থের বিনিময়ে বা অর্থ ছাড়াই) তবে হত্যকারীরর মৃত্যুদন্ড হবে না, কিন্তু এই হত্যা যদি ‘আলহিরাবাহ’-এর আওতাভুক্ত হয়, তখন ঐ ব্যক্তির শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা ক্ষমা করে দিলেও সে নিস্তার পাবে না; বরং ঐ দন্ড তাকে ভোগ করতেই হবে।

জান-মালের ক্ষতি না করলেও শাস্তি। কুরআনুল কারীমে ‘আলহিরাবাহ’-এর সর্বনিম্ন শাস্তির কথা বলা হয়েছে এভাবে- ينفوا من الارض “অর্থাৎ তাদেরকে এলাকাছাড়া করা হবে। “ এটি ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন কোনো দৃষ্কৃতিকারী কারো জান-মালের ক্ষতি করেনি কিন্তু সে জনগণের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছে এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে অপরাধীকে নিজ এলাকা থেকে অনেক দূরের কোনো কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনজন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হবে।

অতপর তার আচার-আচরণ ও চারিত্রিক অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের সমাজে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের ব্যবসায়ী ও অন্যান্যদেরকে যেভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়, চাঁদা দাবি করা হয় যদি সেক্ষেত্রে এ শাস্তির যথাযথ প্রয়োগ হত তাহলে মানুষ হয়ত সংখ্যালঘু অমুসলিমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারত। পরিশেষে রাসূল (সাঃ) এর সতর্কবাণীটি মনে করিয়ে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "মনে রেখো যদি কোন মুসলমান কোন অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায়, তাদের অধিকার খর্ব করে,তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরূদ্ধে অমুসলিম নাগরিকদের পক্ষ অবলম্বন করব। " (আবু দাউদ) অমুসলিমদের ঘরবাড়ি এবং উপাসনালয়ে বিনা উস্কানিতে আক্রমনকারীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক।

তাদের শাস্তি দেখে অন্য বিপথগামী মুসলিমরা সৎ পথে ফিরে আসুক, নিরাপত্তা ও শান্তি ফিরে আসুক-আমার-আপনার প্রিয় মাতৃভূমিতে মহান আল্লাহর দরবারে এ মুহূর্তে এটিই ঐকান্তিক প্রার্থনা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.