I am student
একুশে বইমেলার কেটে গেছে ২২ দিন। এ পর্যন্ত নানা বিষয়ের বই এসেছে দুই হাজার ৩৪৪টি। এর মধ্যে গতকাল এসেছে ৭১টি। বইয়ের এ জোয়ারে মননশীল প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী বই তেমন দৃষ্টিগোচর হয়নি, সঙ্গত কারণেই প্রশ্নটি আসছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
পাঠকের চিন্তা-চতনা, মেধা-মনন ও রুচি উন্নত করার পাশাপাশি সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি ব্যক্তি চেতনায় নাড়া দেয়ার মতো বই এসেছে হাতেগোনা কয়েকটা মাত্র। ২২ দিনে আসা বইয়ের মধ্যে ২২টি মানসম্পন্ন বই খুঁজে পাওয়াও পাঠকদের জন্য কঠিন। জনপ্রিয় লেখকরা বাজার কাটতি গল্প-উপন্যাসে আটকে আছেন। মননশীল বিষয়ের দিকে তারা যাচ্ছেন না। সম্পাদকের অনুরোধে পত্রিকায় লেখা উপসম্পাদকীয় অনেকে গবেষণা, প্রবন্ধের বইয়ের নামে মেলায় আনছেন।
অশুদ্ধ বানানে ভরা এসব বইয়ের ছাপা ও কাগজের মানও অনুন্নত। এবারের অধিকাংশ উপন্যাস সস্তা ছাপানো গল্প, যৌন সুড়সুড়ি জাগানিয়া, হালকা মানের ও বাজার চলতি চিন্তা-ভাবনার। নানা কারণে মননশীল বইয়ের আকালটা গত কয়েক বছর ধরে চরম আকার ধারণ করছে। অভিজ্ঞরা বলছেন, নিত্যদিনের জিনিসের দাম, জীবনযাত্রার খরচ বাড়লে মধ্যবিত্তদের প্রতিভা বিকাশের পথ বন্ধ হয়ে যায়। মননশীলতার চর্চা তখন শূন্যের কোঠায় দাঁড়ায়।
তাছাড়া বুদ্ধিদীপ্ত পাঠক কম হওয়া, পাণ্ডুলিপির অভাব, প্রকাশকদের অনীহায় এসব বইয়ের আকাল দেখা দিচ্ছে।
প্রাবন্ধিক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মননশীল বইয়ের বিক্রির জন্য প্রচারের উদ্যোগ নেন না প্রকাশকরা। গভীর চিন্তা করে অনেকে সৃজনশীল বই লিখছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সৃজনশীল বই প্রকাশের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ তেমন নেই। ফলে ভালো বইয়ের অভাব দেখা দিচ্ছে।
’ প্রাবন্ধিক বদরুদ্দীন উমরের মতে, ‘একুশে মেলায় বিদেশি বই এলে এদেশের লেখকরা চিন্তাভাবনা, পরিশ্রম করে বইয়ের মান উন্নয়নের চেষ্টা করতে বাধ্য হবেন। কেননা, তখন তাদের বইকে ভালো বইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। ’
এলেবেলে বই প্রকাশের ঢল : এ পর্যন্ত মেলায় আসা বইয়ের মধ্যে আছে ১৮৯টি প্রবন্ধ, ৭৯টি গবেষণাধর্মী! যথাযথ মান বিচার ছাড়া মেলায় প্রতিদিন আসছে অসংখ্য বই। চটুল বইও আসছে। জানা যায়, প্রকাশনা ও সম্পাদনার নীতিমালা চালু না থাকায় এটা হচ্ছে।
প্রকাশকের ধার না ধেরে টাকা দিয়ে বই করছেন অনেকে। ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য ব্যক্তির বউ, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রীর সহকারী, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কেরানি, ছাত্র ও শিক্ষক টাকার জোরে বই বের করছেন। প্রকাশকরাও মান বিচার না করে ছাপছেন। অধিকাংশ প্রকাশনা সংস্থায় সম্পাদনা পরিষদ নেই বলেই জানান জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক ওসমান গনি। গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘উন্নত দেশে সম্পাদনার পর প্রকাশক বই ছাপেন।
বড় লেখকের বইও সম্পাদনা ছাড়া বের হয় না। এদেশে সম্পাদনার প্রথা গড়ে ওঠেনি। নামকরা লেখক পাণ্ডুলিপি দিলে প্রকাশক চোখ বন্ধ করে ছেপে দেন। এতে ত্রুটিসহ বই পাঠকের হাতে চলে যাচ্ছে। সাহিত্যের মানের প্রশ্নটি উপেক্ষিত থাকছে।
’
তবে বাংলা একাডেমী বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্পাদনার বিষয়টি অনুসরণ করে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপি দুজন বিশেষজ্ঞের কাছে সম্পাদনার জন্য পাঠানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে মানসম্পন্ন বইয়ের প্রকাশনা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাগিদও আছে। মেলায় প্রকাশিত তিনটি মানসম্পন্ন বইয়ের জন্য প্রকাশনা সংস্থাকে কয়েক বছর ধরে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা’ পুরস্কার দেয়া হয়। এবার শহীদ মুনীর চৌধুরীর নামে পুরস্কার দেয়া হবে সর্বাধিক মানসম্পন্ন বইয়ের জন্য একটি প্রকাশনা সংস্থাকে।
নতুন মলাটে পুরনো বই : এবারের মেলায় নতুন প্রচ্ছদে মননশীল পুরনো অনেক বই আসছে। এর মধ্যে বিশ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে প্রকাশিত দুর্লভ বইও আছে। ঝকঝকে প্রচ্ছদ, আধুনিক অঙ্গসজ্জা, উন্নতমানের কাগজে ছাপানো এসব বইয়ের পাঠকপ্রিয়তা, কদর সদ্য মেলায় আসা অনেক বইয়ের চেয়ে বেশি। বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন লেখক, প্রাবন্ধিক, পাঠকরা। ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, ‘ভালো বইয়ের পুনঃপ্রকাশ মননশীলতা চর্চার জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।
এসব বই মেলায় বিক্রি হচ্ছে, যা প্রকাশনা শিল্পের জন্যও ভালো খবর। এতে প্রমাণিত হয় মননশীল বইয়ের পাঠক বাড়ছে। ’ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, গোলাম মুর্শিদ, আহমদ শরীফ, আহমদ ছফা, ফরহাদ মজহার, বদরুদ্দীন উমর, আহমদ রফিক, হুমায়ুন আজাদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ, আনু মুহাম্মদ, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, মুনতাসীর মামুন, সৈয়দ আলী আহসান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, শওকত ওসমান, সেলিনা হোসেন প্রমুখের প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী বইয়ের পুনঃপ্রকাশ হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের নতুন বইও এবার এসেছে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে।
শেষ শিশু প্রহর : আজ মেলার শেষ শিশু প্রহর।
সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মেলার গেট শিশুদের জন্য খোলা থাকবে। এর আগে গত ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি শিশু প্রহর ছিল।
হাসান হাফিজের চার বই : কবি-সাংবাদিক হাসান হাফিজের চারটি বই এসেছে মেলায়। এগুলো হচ্ছে—‘মনজুড়ানি রূপকথা’ (শিশুতোষ, বিদ্যা প্রকাশ), ‘জোড়া হাতি রিমান্ডে’ ( রঙ্গ-ব্যঙ্গ, কাশবন প্রকাশ), ‘হাওয়াই মিঠাই শন পাপড়ি’ (ছড়া, টুম্পা প্রকাশনী) ও ‘দশ দেশের রূপকথা’ (অনির্বাণ)।
গতকালের বই, অন্য আয়োজন : গতকাল উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে বিজয় এনেছে হাসান আজিজুল হকের ছোটগল্প ‘প্রেম-অপ্রেমের গল্প, অন্যপ্রকাশ হুমায়ূন আহমেদের সংকলন ‘সেই সময়’, বিভাস এনেছে রফিক আজাদের ‘নির্বাচিত ২০০ কবিতা’, মোহাম্মদ রফিকের ‘নির্বাচিত ১০০ কবিতা’, শ্রাবণ এনেছে আবদুল মান্নানের ‘প্রতিকৃতি : এই দেশ এই সময়’, আগামী এনেছে তিতাশ চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘আমাদের মুক্তিসংগ্রামে নজরুল সঙ্গীতের ভূমিকা’ ও ঐহিত্য এনেছে নেসার আহমেদের প্রবন্ধ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও চারু মজুমদার’।
বিকেলে মেলামঞ্চে ‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচিন্তা’ শিরোনামে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রবন্ধ পাঠ করেন শ্যামল চক্রবর্তী। আমিন হাসান কাজীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন মুহম্মদ ইব্রাহীম, রবীন্দ্র্রনাথ শীল, ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, সুভাষ সিংহ রায়। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেয় আবৃত্তি সংগঠন ‘রোদ্র করোটি’, ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’।
সুত্র: আমার দেশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।