আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিকেটের যতো মজারু

ইসলামের পথে থাকতে চেষ্টা করি...।

দীর্ঘতম ম্যাচ : বলো তো দেখি, সবচেয়ে বেশিদিন ধরে যেই ম্যাচটি খেলা হয়েছিলো, সেই খেলাটা কয়দিন ধরে চলেছিলো? বলবে, এ আর এমন কি প্রশ্ন! টেস্ট ম্যাচ তো খেলা হয়-ই সর্বোচ্চ ৫ দিন। আর ওয়ানডে আর টি২০ তো একদিনেই খতম। ৫ দিনের বেশি খেলা হবে কিভাবে? ওই তো ভুল করলে! আগে তো আর নিয়ম ছিলো না যে, ৫ দিনের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ শেষ করতে হবে। তখন দুই দলের দুই ইনিংস শেষ হতে যতোদিন লাগতো, খেলা চলতো ততোদিন পর্যন্ত! আর দীর্ঘতম ম্যাচটি চলেছিলো কিনা ১৪ দিন! তারপরও অবশ্য খেলা শেষ হয়নি, খেলাটা হয়েছিলো ড্র।

ভাবছো, নিশ্চিত গুল মারছি! নয়তো ১৪ দিন খেলার পরও যখন খেলার ফল আসলো না, তখন আর কয়টা দিন আর না খেলার কি আছে? আসলে খেলাটা তো আর এখনকার দিনে হয়নি, হয়েছিলো ১৯৩৯ সালে, ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরে। তো ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা তো আর আগে থেকে বুঝতে পারেনি যে ওদের ১৪ দিন ধরে একটা টেস্ট ম্যাচ খেলতে হবে। তাছাড়া তখন তো আর এখনকার মতো প্লেনও ছিলো না যে খেলা শেষ করে টুক করে উঠে দেশে চলে আসবে। ওদের জাহাজের টিকিট আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো, ১৫ দিনের দিন ছিলো ওদের জাহাজ ছাড়ার দিন।

আর তাই জাহাজ ধরার জন্য ওদেরকে ম্যাচটা শেষ না করেই দেশের পথ ধরতে হলো! দীর্ঘতম ওভার : ওভার আবার দীর্ঘ হয় কিভাবে? ওভার তো ৬ বলেই শেষ। মজার কথা কি জানো, আগে ওভার হতো ৮ বলে! কিন্তু সবচেয়ে দীর্ঘ ওভার আবার এতো ছোটোও না! ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো ওভার হয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া লীগের একটা ম্যাচে। ১৯৪৬ সালে বার্বাডোজ আর বৃটিশ গায়ানার মধ্যকার ম্যাচের একটা ওভারে বল করা হয়েছিলো ১৪ টা! না, তুমি যা ভাবছো তা মোটেও ঠিক নয়, নো-ওয়াইড হিসাব করে ১৪ বলের ওভার মোটেই বানানো হয়নি। ৮ বলের ওভারই আম্পায়ারের ভুলে হয়ে গিয়েছিলো ১৪ বলের ওভার! নির্ঘাত ওই আম্পায়ার নিয়ম করে অংকে ডাব্বা মারতেন! দীর্ঘতম ইনিংস : সবচেয়ে বড়ো ইনিংসের কথা বললেই তো চোখে ভাসে চকচকে টাকের ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান ‘ত্রিনিদাদিয়ান কিং’ ব্রায়ান লারার কথা। টেস্টে একমাত্র লারাই করেছেন ৪০০ রান।

আবার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়ো ইনিংসটাও তারই, ৫০১ রান! অবশ্য ওয়ানডের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা অতো বড়ো না। এই তো কয়েকদিন আগে ভারতীয় মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের করা ২০০ রানের ইনিংসটাই ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ। কিন্তু সেসব কথা তো তোমরা সবাই-ই জানো। এখন বলো তো দেখি, সময়ের হিসাবে সবচেয়ে বড়ো ইনিংসটা খেলেছেন কে? বলেই দিচ্ছি- তিনি পাকিস্তানের হানিফ মোহাম্মদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।

এমনিতেই তাঁর উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার একটা সুনাম ছিলো। ওই ইনিংসে তিনি একেবারে দেখিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে, উইকেট কামড়ে পড়ে থাকা কাকে বলা, কতো প্রকার ও কি কি! উইকেটে একাই কাটিয়ে দিয়েছিলেন ৫ দিনের টেস্টের তিন-তিনটি দিন। উইকেটে তিনি ছিলেন পাক্কা ১৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট। মনে আছে তো, টেস্টে প্রতিদিন খেলা হয় ৬ ঘণ্টা করে, মানে ৩ দিনে মোট ১৮ ঘণ্টা খেলা হওয়ার কথা। তার ১৬ ঘণ্টাই তিনি কাটিয়ে দিয়েছিলেন তার ঐ ইনিংসে।

না, শেষ পর্যন্ত তাকে কেউ আউটও করতে পারেনি, শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ৩৩৭ রানে। এক বলে আট রান : ভাবছো, এবার নির্ঘাত আমি গুলই মারছি। নইলে এক বলে আট রান কিভাবে সম্ভব? নো বলে ছক্কা মারলে না হয় ৭ রান হয়, কিন্তু এক বলে ৮ রান! এ-ও একবার ক্রিকেটের আজব দুনিয়ায় ঘটেছিলো। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লীগের এক ম্যাচে একটা খেলা চলছে। ১৯৮৬ সালের কথা সেটা।

ব্যাটসম্যান বল মেরেই দিলেন রানের জন্য দৌড়। দৌড়াতে গিয়ে হাত ফসকে ওর ব্যাট গেল পড়ে। বোলার ভালো মানুষের মতো সেটা তুলে নিলেন, ভাবলেন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেবেন। এরই মধ্যে আবার ফিল্ডার বল ধরে দিলেন থ্রো করে। এখন বোলারকে বলও ধরতে হয়, ওদিকে ওর তো হাত বন্ধ, হাতে তো ব্যাটসম্যানের হাত ফসকে পড়ে যাওয়া ব্যাট।

বোলার বুদ্ধি করে ব্যাট দিয়েই বল আটকালেন। মনে মনে তো নিজের বুদ্ধির খুব তারিফ করছেন। ভাবছেন, ও তো বেশ বুদ্ধিমান! অমনি কিন্তু আম্পায়ার আবার হা-হা করে ছুটে আসলেন। ও তো ক্রিকেটের নিয়ম লক্সঘন করেছে। মাঠে ফিল্ডিং দলের কোনো খেলোয়াড় হাত-পা ছাড়া অন্য কোনো কিছু দিয়েই বল আটকাতে পারে না।

আটকালেই ৫ রান জরিমানা। বোলারের বুদ্ধির জন্য এবার ব্যাটিং দল জরিমানা স্বরূপ পেয়ে গেলো ৫ রান। আর দৌড়ে তো ৩ রান নিয়েছেই। মানে ১ বলেই ব্যাটসম্যানরা মোটমাট পেয়ে গেলো ৮ রান! সবচেয়ে বড়ো পরাজয় : একটু ভেবে বলো তো দেখি, সবচেয়ে বড়ো পরাজয়ের ব্যবধান কতো হতে পারে? এবার নিশ্চিত তোমরা সত্যি ঘটনার ধারে-কাছেও যেতে পারবে না। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের ঘরোয়া লীগের খেলা চলছে।

পাকিস্তান রেলওয়ে ৬ উইকেটে ৯১০ রান তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিলো। জবাবে ব্যাট করতে নামলো বিপক্ষ দল দেরা ইসমাইল খান। ওরা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে গেলো মাত্র ৩২ রানে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ওদের অবস্থা হলো আরো শোচনীয়, এবার ২৭ রানেই অলআউট। ম্যাচ হেরে গেলো ১ ইনিংস ও ৮৫১ রানের বি-শা-ল ব্যবধানে! মাঠে পশু-পাখিদের হামলা : ক্রিকেটের মাঠে কিন্তু বেশ কয়েকবার পশু-পাখি ঢুকে পড়েছিলো।

আর তাতে রীতিমতো খেলাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আর কেন জানি, সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লীগে। এর বাইরেও যে এমন ঘটনা ঘটেনি, তা নয়। কিন্তু আজকে আমরা না হয় ইংল্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে চাওয়া পশু-পাখিদের ঘটনাই শুনি, কি বলো? প্রথমবারের মতো এই ঘটনা ঘটে প্রায় সোয়াশো’ বছর আগে। ১৮৮৯ সালে ইংল্যান্ডের দুইটি স্থানীয় দল ওয়ার্চেস্টারশায়ার আর ডার্বিশায়ারের খেলা চলছিলো।

এর মধ্যে কোত্থেকে মাঠে ঢুকে পরলো একটা আস্ত শূকর। আর ঢুকেই এদিক ওদিক দেখে দৌড় দিলো একেবারে পিচ বরাবর। তখন সবাই মিলে খেলা থামিয়ে শূকর ধরে ওকে মাঠ থেকে বের করতে লেগে গেলো। এমনি আরেকটা ঘটনা ঘটে ১৯৩৬ সালে। এই ঘটনাটি অবশ্য মোটেও হাসির ছিলো না।

লন্ডনে এমসিসি আর ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলা চলছিল। ব্যাটসম্যান একটা বলে সজোরে হাঁকালো, ও তো ভাবছিলো, এবার ছক্কা না হয়ে যায়-ই না। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, বল গিয়ে লাগলো একটা টিয়া পাখির গায়ে। আর ক্রিকেট বলের ঐ এক মোক্ষম আঘাতেই টিয়াটার ভবলীলা সাঙ্গ। মানে ঐ এক আঘাতেই মারা গেলো দুর্ভাগা পাখিটা।

অবশ্য মরা টিয়াটা এখনো লর্ডস মাঠে সংরক্ষণ করা আছে। এমন ভাগ্যও বা কয়টা টিয়া পাখির কপালে জোটে, বলো? এমনতরো ঘটনা ১৯৫৭ সালেই ঘটলো দুই-দুইবার। একবার মাঠে ঢুকে পড়লো শূকরের মতো দেখতে একটা প্রাণী, ওটার নাম হেজহগ। তখন আর কি করা, উইকেটকিপার হেজহগটাকে কোলে করে নিয়ে মাঠের বাইরে দিয়ে আসলো। আরেকবার মাঠে ঢুকে পড়লো একটা ইঁদুর।

ভাবছো, ইঁদুরের জন্য পুরো খেলাই বন্ধ করে দিলো! বৃটিশরা তো তাহলে দেখছি একেকজন আস্ত ভদ্রলোক। আসলে ঘটনা সেটা নয়। ইঁদুরটার পিছে পিছে যে মাঠে দৌড় দিয়েছিলো ইঁদুরটার মনিব, একটা বাচ্চা ছেলে! সে তার আদরের ইঁদুরটাকে ধরতে একটা হ্যাট নিয়ে ইঁদুরটার পিছে দৌড়ে বেড়াচ্ছিলো মাঠজুড়ে! আরেকটা ঘটনা ঘটে ১৯৬২ সালে। এবার আর কিছু না, মাঠে ঢুকে পড়লো এক ঝাঁক মৌমাছি। আর খেলোয়াড়রা তো তাই দেখে একেবারে প্যাভিলিয়নে, যাকে বলে কিনা ‘ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন’!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।