------
লিবিয়ায় দমন-পীড়নের মুখে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ৩শ'র বেশি বিদেশিকে জিম্মি করেছে, যার মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছে।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজি থেকে প্রায় ৩৫০ কিলো মিটার পূর্বে দারনা সিটিতে কয়েকদিন ধরে এরা আটক রয়েছেন বলে জিম্মি থাকা এক বাংলাদেশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
জিম্মিদের ধারণা, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেই বিদেশিদের আটক করা হয়েছে।
রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে লিবিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ রাজধানী ত্রিপোলিতে ছড়িয়ে পড়লে মুয়াম্মার গাদ্দাফির সরকার কঠোরভাবে তা দমন করছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, বুধবার থেকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-সহিংসতায় লিবিয়ায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৭৩ জন।
দারনা সিটিতে জিম্মিদের একজন মানিকগঞ্জ জেলার শফিউদ্দিন বিশ্বাস সোমবার দুপুরে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গত শুক্রবার বিকালে ৩০/৪০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি আমাদের ক্যাম্প অফিস থেকে জিম্মি করে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদে নিয়ে যায়। পরের দিন স্থান পরিবর্তন করে পাশের দুটি কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের আনা হয়েছে। "
জিম্মিরা দক্ষিণ কোরিয়ার একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। জিম্মিদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও কোরিয়া, নেপাল ও শ্রীলংকার নাগরিক রয়েছেন বলে জানান শফিউদ্দিন।
এ বিষয়ে ত্রিপোলির বাংলাদেশ মিশনে যোগাযোগ করা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানানো হয়, তারা ঘটনাটি রোববার জেনেছেন। বিষয়টি সেদেশর পুলিশকে জানানো হলেও এলাকাটি সরকারবিরোধীদের ঘাঁটি হওয়ায় পুলিশ অভিযান চালাতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, "সম্ভব লুটপাট করা জন্য এটা করা হয়েছে। যারা জিম্মি করেছে, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু সেটা এখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি।
তবে বাংলাদেশি কোনো নাগরিক নিহত বা আহত হয়নি। "
মিশন থেকে জানানো হয়েছে, লিবিয়াতে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এরমধ্যে বেনগাজিতে প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
আরেক জিম্মি ফরিদপুরের আব্দুল আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে। প্রথম কয়েকদিন সারাদিন দুটি করে রুটি খেতে দেওয়া হয়েছে।
সামান্য হলেও পানি দিয়েছিলো। কিন্তু রোববার থেকে পানি পাচ্ছি না। আজ এখন পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টা) কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। আমাদের কাছে সামান্য পানি আছে, সেটাই খাচ্ছি। "
"আমাদের ফোন করতে দিচ্ছে না।
তবে ফোন এলে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছে। তারা এখনো কিছু দাবি করেনি। শুধু বলছে গাদ্দাফি (মুয়াম্মার) ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, এখন আমাদের শাসন চলবে", বলেন তিনি।
শফিউদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার মানিকগঞ্জ থেকে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের পরিবারের সবাই খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। আমার স্বামীসহ অন্য যাদের জিম্মি করা হয়েছে, তাদের মুক্ত করা জন্য সরকারের কাছে সাহায্য চাইছি।
সরকার যেন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। "
গণবিক্ষোভে গত ১৪ জানুয়ারি তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্টের পলায়ন এবং গত ১১ ফেব্র"য়ারি মিশরের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর লিবিয়াসহ বিভিন্ন আরব দেশে সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে।
লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফি চার দশক ধরে ক্ষমতাসীন। বিক্ষোভকারীরা তার পদত্যাগ দাবি করছে। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে সংগঠিত হয়ে বৃহস্পতিবারকে 'ক্ষোভের দিন' নাম দিয়ে সরকার পতনের দাবিতে বিক্ষোভে করে কয়েক হাজার মানুষ।
১৯৬৯ সালে তরুণ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে এক সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা নেন গাদ্দাফি। তখন থেকে দেশটি শাসন করে আসছেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?id=150626&cid=2
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।