আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাষা শহীদদের অবদান-আমাদের কর্তব্য



কাল মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনের ইতিহাস পুরো বিশ্বের কাছে অভাবনীয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশিরা এই দিনটিকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে অকুতোভয় সৈনিকরা জীবন দিয়েছেন এই দিনটিতে।

ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবন দানের এমন নিদর্শন আর নেই। এই অকুতোভয় ভাষা শহীদদের প্রেরণাতেই একসময় স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মগ্রহণ সম্ভব হয়েছে-একথা একবাক্যে সবাই স্বীকার করবে। কিন্তু বর্তমানে আমরা তাদের এই অবদান কতটুকু সম্মানের সাথে স্মরণ করছি?আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি?ভাষার স্বাধীনতা রক্ষায় কতটুকু সচেষ্ট হচ্ছি?একটু ভেবে দেখুন তো! আমাদের ঘরে ঘরে আজ হিন্দীর কত প্রতাপ!হিন্দী আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে ফেলেছে!ঊর্দু ত্যাগ করে আমরা কি তবে হিন্দী গ্রহণ করতে শুরু করেছি?হয়তো কথাগুলো খারাপ শোনাবে,তবে একটু ভাবুন তো,আমাদের মাতৃভাষা বাংলা এখন আমাদের কাছে কোন পর্যায়ে আছে!আমাদের রাস্তার মোড়ে মোড়ে, বিভিন্ন ঘরোয়া অনুষ্ঠান বা বিয়ে ও গায়ে হলুদে হিন্দী গান বাজানো হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি,আমি একবার দেখেছি,২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানের জন্য প্যান্ডেল তৈরির কাজের সময় ছেলেরা হিন্দী গান বাজাচ্ছে। কেন এ দেশে হিন্দী গানের অবাধে বিচরণ!আমাদের দেশে কি ভাল গান নেই!ভাল গান না থাকলেও আমাদের যে গান আছে,আমরা তাই শুনব।

আরেকটি উদাহরণ দেই-ভারতের বাঙালিরাও সবাই কিন্তু হিন্দী জানেন না,এমনকি শেখার প্রয়োজনও বোধ করেন না। যেমন-ভিক্টর ব্যানার্জী। আর আমরা বাংলাদেশিরা শুধু যে বস্তাপচা হিন্দী সিরিয়াল গ্রোগাসে গিলি তাই না,আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারাও তুখোড় হিন্দী বলে। হিন্দী জানে না এমন মানুষ এদেশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কি অবক্ষয়! মূলত হিন্দীর সাথে আমার কোন বিদ্বেষ নেই।

কিন্তু আমরা বাংলাদেশিরা তা আত্মস্থ করব কেন!হিন্দীর সাথে আমাদের কিসের সংযোগ!এভাবে সেই ভাষা শহীদদের প্রতি কতটুকু সম্মান দেখাচ্ছি!শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি কিছু গৎবাঁধা অনুষ্ঠান আর সভা করলেই হয়ে গেল!বিশুদ্ধ বাংলা বলব আর শুনব এই একটি দিন!এভাবে একদিনের বাংলাদেশি হয়ে কি লাভ!আমাদের দেশের স্বাধীনতা শিল্পীরা অভাবে,বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পান;আর এদেশে ভারতীয় শিল্পী এলে আমরা ২৫০০০ $ খরচ করেও তাকে দেখতে যাই!আর কত নামাব আমরা নিজেদের!!শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি খালি পায়ে,”আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ,আমি কি ভুলিতে পারি...”গাইতে গাইতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসলাম,তারপর এক বছরের জন্য আবার ভুলে থাকলাম। এতে কি ভাষার প্রতি দায়িত্ব পালন করা হয়ে গেল!যে স্বাধীন রাষ্ট্র আর মাতৃভাষা বীর শহীদেরা আমাদের জন্য রেখে গেছেন তার স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে না? আমারএই লেখাটি যারা পড়বেন,তাদের কাছে আমার অনুরোধ- দয়া করে আজকের দিন থেকে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন এবং ভাবনাগুলো ধরে রাখুন। আসুন শপথ করি,আজ থেকে বাংলা বলব,বাংলা শুনবো,বাংলা দেখবো। হিন্দীকে নিজেদের মাঝে ধারণ করা থেকে বিরত থাকব। যদি পাঁচজন মানুষও আমার সাথে একমত হন এবং এ বিষয়ে ভাবতে শুরু করেন-আমি বুঝবো আমার উদ্দেশ্য সফল।

আসুন আমরা সেই সব ভাষা শহীদদেরকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এবং মাথা নত করে বলি,’আমরা তোমাদের ভুলবো না,কখনোই ভুলবো না’।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.