বাংলা আমার দেশ ‘ইসলাম-চোরা’র গল্প অনেকেরই জানা। বহু কথিত গল্পটি প্রাসঙ্গিকতার কারণে উল্লেখ করতে হচ্ছে এখানে। গল্পে কোন এক গাঁয়ে অদূর নদী থেকে চিৎকার ভেসে আসছিলো গ্রামবাসীদের কানে- ‘ইসলাম ডুবল ইসলাম ডুবল’। যে যার কাজ ফেলে মানুষ ছুটলো নদীর দিকে চিৎকারের উৎস লক্ষ্য করে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের বুঝি কোন বড় ক্ষতি হতে চলছে এই আশঙ্কায় রাতের আধাঁর ভেদ করে মানুষজন নদীর কিনারে যেয়ে দেখে নদীতে ডুবছে আর ভাসছে এক লোক।
দু’হাত তুলে থেমে থেমে চিৎকার করছে ‘ইসলাম ডুবল ইসলাম ডুবল’। সাঁতার জানা সাহসী কয়েকজন তৎক্ষনাৎ ঝাঁপ দিলো নদীতে, টেনে তুলে আনলো লোকটিকে ডাঙ্গায়।
আলোতে নিয়ে দেখা গেলো এতো ও পাড়ার ইসলাম-চোরা! চুরি করে নদী পার হতে গিয়ে সাঁতার না-জানা ইসলাম-চোরা অগভীর জল ভেবে গিয়ে পড়েছিলো গভীর জলে। মরতে বসেছিলো ডুবে। সুচতুর ইসলাম-চোরা বুঝে গিয়েছিলো ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলে তার কুকর্মে অতিষ্ট গ্রামবাসী কেউ হয়তো এগিয়ে আসবেনা তাকে বাঁচাতে।
তাই মানুষদের বিভ্রান্ত করে জান বাঁচাতে চিৎকার করতে থাকলো ‘ইসলাম ডুবল ইসলাম ডুবল’ বলে।
নিছক বানানো গল্প নয় এসবই লোককথা আর অভিজ্ঞতা বলে লোককথা আসলে জীবনেরই প্রতীক-কথন। সমাজেরই রূপক চিত্র। এদেশে এই উপমহাদেশে বিগত শতক জুড়ে নানারূপে আবির্ভূত দেখা গেছে ইসলাম চোরাদের। গোষ্ঠি স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থে এরা যেমন পবিত্র ইসলামকে ব্যবহার করছে নির্বিচারভাবে সুচতুরভাবে ঠিক তেমনি এদের স্বার্থ যখন হুমকির মুখে পড়েছে অথবা বিপন্ন হতে চলেছে এদের অস্তিত্ব তখনই এরা ধর্ম গেলো ধর্ম গেলো বলে ধুয়ো তুলেছে।
বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে সরল প্রাণ মুসলমানদের।
বিগত শতকে ব্রিটিশ জমানায় নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে এরাই এই ‘ইসলাম-চোরারা’ সেদিন ‘মুসলমানরা বিপন্ন’ বলে ভাগ করেছিলো ভারতবর্ষ ভাগ করেছিলো বাঙলা, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে। তারপর কোটি কোটি মুসলমানকে ‘ইসলাম-চোরা’ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্, লিয়াকত আলী গংরা পাকিস্তানে বেছে নিয়েছিলো আয়েশী বিলাসী জীবন ক্ষমতার আড়ালে। এই ইসলাম-চোরারাই গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রনাধীন অধিকারের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে গিয়ে জিকির তুলেছিলো ইসলাম- বিপন্ন বলে।
এই ‘ইসলাম-চোরা’রাই ১৯৭১ সালে ইসলাম ডুবলো বলে হত্যা করেছিলো ত্রিশ লক্ষ মানুষকে।
লুটে নিয়েছিলো লাখো মা বোনের ইজ্জত এমনকি এই ‘ইসলাম-চোরা’রাই এই সেদিনও এদশে ধর্ম বাঁচানোর নামে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার নীল নকশায় চেঁচিয়ে উঠেছিলো দেশজুড়ে ‘ইসলাম ডুবল ইসলাম ডুবল’ বলে। যুগে যুগে থাকা ইসলাম চোরাদের আজকের উত্তরাধিকাররা একই কায়দায় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে দেশজুড়ে। এবারও একই চিৎকার - ‘ইসলাম ডুবল ইসলাম ডুবল’। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণজাগরণকে আজকের ‘ইসলাম-চোরারা’ ধর্মের অবমাননা, কুরআনের অবমাননা, নবী (সঃ)-এর অবমাননা ইত্যাদি জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ এনে প্রজন্মযোদ্ধা সেনাপতিদের চরিত্র হনন করতে গিয়ে পুরোনো কায়দায় আশ্রয় নিচ্ছে ‘ইসলাম ডুবল ইসলাম ডুবল’ কৌশলের।
গল্পের ‘ইসলাম-চোরা’কে ঠিকই চিনতে পেরেছিলো গাঁয়ের মানুষ।
ফলে আবার ফেলে এসেছিলো নদীতে একই স্থানে। জিন্নাহ ও তার অনুসারি ইসলাম চোরাদেরও গত শতকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করেছিলো এদেশের মানুষ। সত্তর একাত্তরেও মওদুদী, গোলাম আজম ইসলাম চোরাদের কথায় বিভ্রান্ত হয়নি বাঙালি মুসলমান; ব্যতিক্রম ছিল না গত কয়েক দশকেও। মিথ্যা ক্ষণস্থায়ী, সত্য স্থায়ী তার জ্বলন্ত প্রমাণ হয়ে এবারও উঠে এসেছে সাহসী তরুণ প্রজন্ম।
দশক দশকের মিথ্যা প্রচারনা, ইতিহাসের নানান বিকৃতি সত্ত্বেও এ যুগের বাঙালি সূর্য সন্তানেরা সত্যের আলো হয়ে আবির্ভূত হয়েছে ঠিকই কালকন্ঠি হয়ে।
কন্ঠে তুলে নিয়েছে শ্বাশত স্লোগান - ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’/ ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’/ ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’ - অকুতোভয় এই প্রজন্ম যোদ্ধাদের কন্ঠে উঠে এসেছে শ্বাশত সত্য - ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’। জাতির কলঙ্ক মোচনে অঙ্গিকারবদ্ধ তারুণ্য শপথ করেছে বাঙালির বাঙলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই, শহীদের বাঙলায় যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই নাই। কোনকালেই ‘ইসলাম-চোরারা’ পবিত্র ইসলামকে ব্যবহারে সকল হতে পারেনি। পারবে না এবারও, পারবেওনা কোন কালে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।