এ-মন একবারই ছুঁয়ে যেতে পারে কেউ...
http://www.somewhereinblog.net/blog/syedafsar
.সৈয়দ আফসার
শীতকাল ভালো লাগে খুব। ঝুমঝুম বৃষ্টি নেই। আকাশে ঘনঘটা নেই। বিকেলটা ভালোই কাটত ফুটবল খেলায়। শীতের সকালে শিশির কণাগুলোতে রোদের ঝিলিকে পায়ে লেগে থাকত আর জলকণাগুলো নিয়ে হাঁটতাম পায়ে-পায়ে।
সেসব স্মৃতিগুলো এখনও আন্দোলিত করে শীতের দুপুরে গোসল সেরে উঠোনে দাঁড়িয়ে তৈল গায়ে মেখে কুসুম রোদে পিঠ ঘেঁসে শীতল পাটিতে বসে পড়তাম রোদে। মা আদরমাখা হাতে ভাত তুলে দিতেন মুখে। সীমের সাথে কৈ মাছের তরকারী দিয়ে ভাত খেতে কী-না ভালো লাগত। এখনও সে স্বাদ মনে হলে জিভে জল আসে। মাকে ছেড়ে যখন ভিনদেশী হলাম, বাবা বলতেন— ‘এই শীতের দেশে যত পারো ঠাণ্ডা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে, একবার ঠাণ্ডা লেগে গেলে আর যাবে না সহসা’… যতটা সম্ভব বাবার কথা মেনে চলার চেষ্টা করেছি।
শীতে সারাক্ষণ গরম কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই ভালোলাগা শীত আমাকে এতটা আপন করেছে যে এবারের শীতে আমার অবস্থা হল তথৈবচ। তীব্রতা আস্তে-আস্তে বাড়তে লাগলো আমার অসুখের মাত্রাও বেড়ে গেল!দীর্ঘদিন ধরে অসুখটা আমাকে চেপে ধরেছে। তাই মায়ের সাথে ফোনালাপের বালাই নেই। ফোনে যতক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলি ততক্ষণ মা কাঁদে… মায়ের একটাই কথা— আমাকে কবিতা লেখা ছেড়ে দিতে হবে!কবিতার জন্যই নাকি অসুস্থ্য হয়েছি।
ফোনালাপে মা বলেন, কেন লিখি? লিখার জন্যই নাকি সারারাত জেগে থাকি। রাত জাগার জন্যই আমার এ অবস্থা!... মাকে বলি না আমি ‘দীর্ঘরাত্রি জেগে থাকি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আশায়… মাকে কোন ভাবেই বুঝানো যাচ্ছে না লেখালেখির জন্য আমার এমন হয়নি, অসুখ-বিসুখ হতেই পারে, হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অসুখটাতে যে এমন চেপে ধরবে কে জানি প্রায় ৫/৬ মাস ধরে অসুস্থ্য, (দু’হাঁটুর ব্যথা, স্টেচার ছাড়া দাঁড়াতে পারি না)গত মাস থেকে বিছানায়, শয্যাশায়ী।
মাকে বুঝাতে পারি না কবিতা না-লিখলে আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন। ঘুমাতে পারব না।
চোখের কান্নাজল শুকাবে না। অস্থিরতা বেড়ে যাবে। অনুভব-অনুভূতিগুলো মরে যাবে। আবেগগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। মাকে বুঝাতে পারি না! আমি আমার প্রাণের আকুতিগুলো, ইচ্ছেগুলো লিখি।
নিজের আনন্দের জন্য, আনন্দ পারার জন্য, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য লিখি। মাকে বুঝাতে পারি না কবিতায় লিখি আমার না-বলা কথা, না-পাবার বেদনা, না-দেখা দৃশ্য, না-শুনার আকাঙ্ক্ষা, না-ধরার অনুভূতিগুলো… একমাত্র কবিতার সাথে মিশে থাকা যায় প্রিয়ার মতো, কথা বলা যায় আপন করে তাই লিখি। মরার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত কবিতা লিখে যেতে চাই।
মাকে কোন ভাবেই বুঝাতে পারি না, আমি কবিতা না লিখলে সময় যেমন চলবে নিজস্ব গতিতে। হাওয়া ঘুরবে তার মত করে।
রোদ উঠবে, ছায়া পড়বে, সন্ধ্যাও নামবে… মহাকবি থেকে শুরু করে পথকবিরা লিখছেন, লিখবেন, আমার মত একজন না লিখলেও চলবে। মাকে বলেছি দোয়া কর মা, যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হই। সুপ্রিয় স্বজনদের কাছে দোয়া কামনা করছি। আমি যে সুস্থ্য হয়ে কবিতা লিখতে পারি, ফিরে আসতে পারি আপনাদের মাঝে…
.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।