আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিতরা আদায়ের আদেশ



রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হাদিসে فرض رسول الله صلي الله عليه وسلم زكاة الفطر صاعاً من تمر أو صاعاً من شعير، على العبد والحر والذكر والأنثى والصغير والكبير من المسلمين، وأمر بها أن تؤدّى قبل خروج الناس إلى الصلاة. ইবনে উমর (রা এর হাদিস : তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতরা নির্ধারণ করলেন এক সাআ’ খেজুর বা এক সাআ’ জব। তিনি স্বাধীন, দাস, নারী-পুরুষ সবার উপর ফেতরা ওয়াজিব করলেন। এবং ঈদের সালাতে যাওয়ার পূর্বে তা আদায় করার আদেশ দিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে সা’লাবা (রা-এর হাদিস, তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের একদিন বা দুই দিন পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন, তিনি তাতে বললেন, তোমারা দুই জনের জন্য এক সাআ’ গম বা প্রতি জনের জন্য এক সাআ’ খেজুর বা এক সাআ’ জব আদায় কর, ছোট বড় সবার পক্ষ থেকে। আবু সাঈদ খুদরি (রা এর হাদিস : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ঈদের দিন আমরা এক সাআ’ খাবার দান করতাম।

তিনি বলেন, আমাদের সেই খাদ্য ছিল জব, কিসমিস, খেজুর এবং পনির। ইবনে আব্বাস (রা এর হাদিস, তিনি বলেন রোজাদারকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্য এবং মিসকিনদের আহারের ব্যবস্থার লক্ষ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেন। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে তা আদায় করবে তারটাই নির্ধারিত জাকাতে আদায় বলে বিবেচিত হবে। আর কেউ যদি তার পর আদায় করে তাহলে তা সাধারণ ছদকা হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি সালাত হয়ে যাওয়ার পর ঈদের কথা জানতে পারে বা জাকাত আদায় কালে সে পল্লিতে (যেখানে ঈদের নামাজ হয় না) কিংবা সেই সময় সে এমন কোন স্থানে থাকে যেখানে জাকাতের অধিকারী কেউ নেই, তাহলে নামাজের পর যখন তার পক্ষে সম্ভব হয় তখন আদায় করলেই হবে।

কারণ এতটুকই তার সাধ্যের মধ্যে আছে। রহমান আল্লাহ কারো উপরে তার সাধ্যের অধিক কোন কিছু চাপিয়ে দেন না। আমাদের এই কালে নিঃসন্দেহে মুসলমানদের দান ও বিভিন্ন ভাল কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ইসলামের এই বিধানটি তার সঠিক ও শরিয়ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে আদায়ের ক্ষেত্রে নানা দুর্বলতা রয়েছে। তাই দায়িদের উচিত এই ক্ষেত্রে সময় দেওয়া, এই বিধান পালনে উৎসাহিত করা এবং তা আদায়ের সঠিক সময় ও পদ্ধতির দিক নির্দেশনা দেয়া।

তাহলেই তার যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়িত হবে : ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে ধনী-দরিদ্র প্রতিটি মুসলিম পরিবারের মাঝে। তারাবীহ নামাজের রাকাতের মত এটি একটি বাৎসরিক বিতর্কিত মাসআলা। এই ক্ষেত্রে আমাদেরকে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সম্ভবত তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে :— ১. বিরোধী চিন্তাকে—যারা নগদ টাকায় ফেতরা আদায়ের কথা বলেন—উদারভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা চর্চা করা। আমাদের বুঝতে শিখতে হবে যে, যারা এই ক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণ করছেন তারা—যদিও আমরা এর বিপরীত মতটাকেই সঠিক মনে করছি—মূলত একটি নির্দিষ্ট চিন্তা-যুক্তি থেকেই তা বলছেন এবং তাদেরও উদ্দেশ্য জাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে শরিয়তের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা।

জাকাতুল ফিতর নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরোনো এবং সম্পূর্ণভাবে তা দূর করা সম্ভব নয় এবং তা আমাদের লক্ষ্য হওয়াও উচিত নয়। এই ক্ষেত্রে সর্বোত্তম কর্মপন্থা হচ্ছে জ্ঞান সাধক তার নিকট যে মতটি শক্তিশালী গ্রহণযোগ্য প্রমাণসিদ্ধ মনে করে সে তাই গ্রহণ করবে এবং যে কোন বিরোধী মতকে উদারতার সাথে গ্রহণ করবে এবং সবাই মিলে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিতর্কের অনিষ্ট থেকে উদ্ধার করা এবং শরিয়তি এবাদতগুলোর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং মুসলিম শরিয়া বিশেষজ্ঞদের প্রতি সাধারণের আস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করবে। এ ছাড়া অর্থহীন, মন-মানসিকতা বিনষ্টকারী যে সব বিতর্ক হয় তাতে জড়িয়ে কোন লাভ নেই। এই সব বিতর্ক আমাদের অনেক ক্ষতি করছে। অনেক সময় তা বরকত থেকে বঞ্চনার কারণ হয়ে উঠে।

আমাদের মনে রাখা উচিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে শবে কদর নিয়ে দুই ব্যক্তির ঝগড়ার কারণ এই সংক্রান্ত জ্ঞানকে ঊর্ধ্বাকাশে চির দিনের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছিল। ২. যে নিরাপদ ও বিতর্ক মুক্ত থাকতে চায় এই ক্ষেত্রে তার জন্য সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে তার নিজ দেশে প্রচলিত খাবার দ্বারা ফিতরা আদায় করা। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করতেন এবং এই ক্ষেত্রে কারো কোন বিতর্ক নেই। পক্ষান্তরে নগদ টাকায় আদায় করলে হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ৩. সাদকায়ে ফিতরের যে লক্ষ্য—ঈদের দিনে দরিদ্রদের প্রয়োজন পূরণ করা, তাদের আনন্দে সহযোগিতা করা, সদকা আদায়ের সময় তার প্রতি মনোযোগী থাকা উচিত।

দরিদ্রদের চাহিদা এবং প্রয়োজনের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মত খাবার দান করার দ্বারা এই লক্ষ্য অনেক সময় বাস্তবায়িত হয় না। এর মাধ্যমে নি:সন্দেহে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে যেহেতু তা সদকার মূল লক্ষ্য পূরণ করছে না, তাই তা উত্তম হওয়ার কথা নয়। আল্লাহই ভাল জানেন। অনুরূপ নিুমানের খাদ্য দানের ক্ষেত্রে এই লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয় না।

এই ক্ষেত্রে মিসকিনরা তা ব্যবসায়ীর নিকট বা অন্যান্য সদকা দানকারীদের নিকট সেই খাদ্য বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হয় এবং ঈদের দিনে দরিদ্রের প্রয়োজন পূরণের যে লক্ষ্য ছিল তা অনর্জিত থেকে যায়। এই ভুলের উৎস হচ্ছে সদকার জন্য সঠিক ও উপযোগী খাদ্য নির্বাচন ও তার ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। যদি দানকারীরা সঠিক উপযোগী খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করত তাহলে অবশ্যই খাদ্য দ্বারা সদকা করার নানা হিকমত আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। ৪. জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে মূল বিধান হচ্ছে নিজেদের দেশ-মহল্লাতেই তা আদায় করা।

অন্য কোন দেশ বা নিজ দেশেরও অন্য কোন এলাকায় তা পাঠানো উচিত নয়। এই ক্ষেত্রে যে নির্বাধভাবে তা করা হয় তা সঠিক পদ্ধতি নয়। যদি নিজ দেশে জাকাতের আদায়ের মত দরিদ্র না থাকে তাহলে আমরা বলি অন্য দেশ বা এলাকায় তা পাঠানো যায়। তবে এই ক্ষেত্রে শরিয়তি দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়া এবং সঠিকভাবে তা আদায় করার জন্য বিশ্বস্ত হাতে তা অর্পণ করা উচিত। ৫. অনেক ব্যক্তি যে জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে উকিল নিয়োগ করেন, সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় কিছু ভুল করা হয়।

যেমন উক্ত সংস্থা মিসকিনের পক্ষ থেকে উকিল হয়ে তা গ্রহণ করেন না বরং তিনি হন আদায়ের ক্ষেত্রে দানকারীর উকিল। এর প্রমাণ, আদায়ের সময় তিনি যাকে ইচ্ছে তাকে দান করতে পারেন। মাসআলার বিচারে এই ওকালত সুদ্ধ নয়। সদকা দানকারী যদি বিশ্বস্ত কাউকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দরিদ্রের উকিল নিয়োগ করেন তাহলেই ওকালাত সুদ্ধ হবে। অন্যথায় এই ওকালত সুদ্ধ হবে না এবং জাকাতও আদায় হবে না।

ত্রু

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.