আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোহাগী

লিখতে পারিনা তাই চেষ্টা করি।
----- বাজান মোরগে বাগ দিছে ওঠ। কামে যাইবানা? পুরানো কাথাটা মাথা পর্যন্তু টান দিয়ে লতিফ মিয়া কয়- ----- না রে মা আজ আর কামে যামুনা শরীলডা ক্যামন ব্যাথা ব্যাথা করতেছে। রাইতে মনে হয় জ্বর আইছিল। ----- বাজান আজ না হাটের দিন? তুমি যদি আজ কামে না যাও তাইলে তো আগের ৩ দিনের মাইনা ও পাইবা পরের হাটের দিন।

ঘরে এক পোয়া চাল ও নাই। লতিফ মিয়া কাথা মুড়ি দিয়ে আরামে শুইয়া মেয়েটার কথা খুব চিন্তা করে কত অল্প বয়সে মেয়েটা সংসারের সব কিছু কত সুন্দর গোছাইয়া রাখে। ৩ বছর গত হলো লতিফ মিয়ার স্ত্রী ডাইরিয়ায় মারা গেল। সময়মত হাসপাতালে নিতে পারলে হয়ত বেচে যেত। হউত মউত আল্লার হাত কিন্তু চেষ্টা ও করতে পারেনাই বলে লতিফ মিয়ার অনেক আফসোস।

স্ত্রী মারা যাবার পর সংসারের সব দায়িত্ব এসে পড়ছে এই মেয়েটার উপর। লতিফ মিয়া ময়েটার নাম রাখছিল সোহাগী। সোহাগী জন্মের আগে তার আরও দুইটা ভাই পর পর হইয়া মারা যায়। লতিফ মিয়া সেইটা নিয়াও বহুত আফসোস করে। আজ যদি তার ছেলে দুইটা বেচে থাকতো তাহলে হয়ত এই বুড়া বয়সে এত কস্টের কাম করতে হতো না।

এরকম নানা কথা মনে মনে ভাবতে থাকে ঠিক সেই সময় পাশের বাড়ির গফুর ডাক দেয়-- ----- ও লতিফ চাচা কামে যাইবানা? খেয়া ছাইড়া দিলে পাছে পইড়া যাইবা। কি যেন মনে কইরা লতিফ মিয়া উইঠা পড়ে পান্তাভাত আর শুকনা মরিচ পোড়া এক ঢিস ভাত লইয়া রওনা দেয় কামে। লতিফ মিয়া ইটের ভাটায় কাম করে। ইট নিয়া ট্রাকে লোড করতে হয়। আগে বার তের খান ইট ও লইত পারত আখন ছয়-সাতখান লয়।

একবেলা কাম করলেই ষাট সত্তর টাকা হয়। কিন্তু পান্তা খাইয়া বেশিক্ষন কাম করতে পারেনা। সবাই টানে এক হাজার বার শ ইট, লতিফ মিয়া টানে পাঁচ ছয় শ ইট। সারা সপ্তাহ কামের পর হাটের দিন টাকা পায়। আজ পাটগাতীর হাটের দিন।

আজ টাকা পাইব বাজার করব তাই মনডা একটু ভালো। লতিফ মিয়া গামছা পইরা মধুমতিতে গোসল সেরে নেয়। তার পর হাটে রওনা হয়। আগে আগে যাইয়া দুইটা আটার রুটি অথবা সিঙ্গারা খাইয়া নেবে। হাটে যাইয়া ভাবে অনেকদিন টাকার অভাবে ইলিশ মাছ কেনা হয়না।

মাইডার ও তো মন চায় ইলিশ মাছ খাইতে কিন্তু কোন সময় মুখ ফুইটা কয়না বাজান হাটের থ্যাইকা আমার লাইগা এইডা আইনো বা ওইডা আইনো। রাতে ইলিশ মাছ দিয়া ভাত খাইতেছে দুই বাপে-ঝি এ এমন সময় লতিফ মিয়ার বুকের মধ্যে চিন কইরা ব্যাথা ওঠে। ভাত খাওয়া শেষ করতে পারেনা কয় আমারে ধইরা শোয়াইয়া দে। আমার বুকের ভিতর খুব ব্যাথা করতাছে। সোহাগী কয়---- ---- বাজান তোমার কি হইছে এ্যামন করতাছো ক্যান? কোনমতে পাটিতে শোয়াইয়া দিয়া সোহাগী গফুর মিয়ারে ডাক দেয়--- ----- গফুর ভাই জলদি একটু আমাগো বাড়ী আসো দ্যাহোতো বাজান যেন ক্যামন করতেছে।

গফুর তাড়াতাড়ি আইসা দ্যাহে লতিফ মিয়া কথা কইতে পারতেছে না। অবস্থা ভালো না দেইখা পাশের বাড়ীর করিম কবিরাজ রে গফুর মিয়া ডাইকা নিয়া আসে। করিম কবিরাজ তেলপড়া, পানি পড়া, গাছ-গাছড়া দিল। কোন কিছুতে কাজ হয়না। কবিরাজ অবশেষে কইল-- বুকে মনে হয় বান পড়ছে গরম তেল ডলতে থাকো কাম হইব।

সোহাগীর কান্নাকাটিতে পাড়ার সব লোক হাজির হলো। কোন কিছুতেই কাম হয়না। কইতে কইতে লতিফ মিয়া দুনিয়া ছাইড়া আদরের মেয়ে সোহাগীর কোলের উপর চিরতরে ঘুমাইয়া পড়ল। সোহাগীর কান্দনে রাতের নিরবতা ভেঙ্গে বাড়ী ভরা মানুষের আহাজারী শুরু হয়ে গেল। --- লতিফ মিয়া খুব ভালা মানুষ আছিলো।

---- আহারে! ব্যাচারা সখ কইরা ইলিশ মাছ কিনে আনল খাইয়া যাইতে পারল না। ---- আহারে! সুস্থ্য মানুষ আজ ও কামে গেল হেই মানুষডার কি হইল। --হায় হায়! মেয়েটার এখ্ন কি হবে। আজ ৩ দিন হয়ে গেল লতিফ মিয়া মারা গেছে। এর ভিতর সোহাগী একফোটা দানা-পানি মুখে দ্যায়নাই।

সারাক্ষন ভাবে এখন তার কি হবে? কার কাছে যাবে কি করবে? হাজার প্রশ্ন মাথার ভিতর ঘোরে। পাড়া-প্রতিবেশি যত শান্তনা দেয় ততবেশি কষ্ট বাড়ে। ঠিক এমন সময় গফুর সোহাগীর মাথায় হাত দিয়া কয় ----- ------- যার যাবার হে গেছে, আর ফিরা আইবনা। সোহাগী এত চিন্তা করিস না, এত চিন্তা কইরা কি ওইব? তাছাড়া .....তাছাড়া ..... আমি তো আছি..........। সোহাগী অপলক দৃষ্টিতে গফুর মিয়ার দিকে তাকইয়া থাকে।

যেন এ চেয়ে থাকা কৃতজ্ঞতার চাওনি।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।