কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, مَنْ كَانَ لَه سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرُبَنَّ مُصَلَّانَا‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। ’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন ও তার ইবাদাতের জন্য পশু জবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার নবীকে কুরবানী করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বলেছেন- ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুণ ও কুরবানী করুণ। ’ (সূরা কাওসার : ২)
এ আয়াতে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ও কুরবানীর পশু জবেহ করতে আদেশ করা হয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ (সা). সারা জীবন কুরবানীর ব্যাপারে অত্যন্ত যতœবান ছিলেন।
কুরবানী আল্লাহর মহান বিধান। বান্দার তাঁর প্রভুর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।
আদম (আ.) পুত্র হাবিল-কাবিল থেকে শুরু করে ইবরাহীম (আ.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবীর উম্মতরাই বিভিন্ন পদ্ধতিতে কুরবানী করেছেন। হযরত ইবরাহীম (আ.) কর্তৃক পুত্র কুরবানীর পূর্ণ প্রচেষ্টায় আল্লাহ তা’য়ালা সন্তুষ্ট হয়ে তদস্থলে পশু কুরবানীর নির্দেশ দিয়েছেন। আর তখন থেকেই পশু কুরবানীর বর্তমান নিয়মের সূচনা। যা অপরিবর্তিত ভাবেই আমাদের জন্যও বিধান সম্মত করা হয়েছে। এই কুরবানী করতে গিয়ে সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি না জানার কারণে আমরা অনেকেই বিভিন্ন ভুল-ত্র“টি করে থাকি।
এমনকি কুরবানীর যে মূল উদ্দেশ্য “নিয়ত পরিশুদ্ধ করা” তাও অনেকেরই কাছে গুরুত্ত্বহীন হয়ে চক্ষুলজ্জা,লোকদেখানো ইত্যাদি প্রাধান্য পাচ্ছে । অথচ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ لن ينال الله لحومهاولادماءهاولكن يناله التقوي منكم অর্থাৎ আল্লাহর কাছে এদের (কুরবানীর পশুর) গোশ্ত কিংবা রক্ত পৌঁছায়না; বরং তাঁর দরবারে তোমাদের তাক্বওয়া পৌঁছায়। (সূরা হজ্জ-৩৭)
কুরবানীর শরয়ী মর্যাদা
সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ এবং রাসূলে কারীম (সা.) এর দায়েমী আমলী সুন্নাত। নবী করীম (সা.) মদীনায় দশ বছর অবস্থান কালে প্রতি বছর কুরবানী করেছেন এবং সাহাবীদের কে কুরবানী করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
কুরবানীর ফযীলত
১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন :اَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلعم بِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ يُضَحِّىْ-“রাসূলে কারীম (সা.) মদীনায় দশ বৎসর জীবন যাপন করেছেন সেখানে প্রত্যেক বৎসরই তিনি কুরবানী করেছেন”। (তিরমিযী)
২. হযরত জায়িদ ইবনে আরকাম (রা.) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন :قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا هذِهِ الْاَ ضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ- قَالُوْا فَمَا لَنَـا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ- قَالُوْا فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِّنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ-“রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানীটা কি? রাসূলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, এটা তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সুন্নাত বা আদর্শ। অতঃপর তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কি ফায়দা বা সাওয়াব রয়েছে হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। সাহাবীগণ আবার জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়া, দুম্বার পশমের ব্যপারে কি কথা? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে ও একটি করে নেকী পাওয়া যাবে”।
(ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ)
৩. হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন :مَا عَمِلَ ابْنُ ادَمَ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ اَحَبَّ اِلَى اللهِ مِنْ اِهْراقِ الدَّمِ وَاِنَّه لَيَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِهاَ وَاَشْعَارِهَا وَاَظْلاَ فِهَا- وَاِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِـمَكَانٍ قَبْلَ اَنْ يَّقَعَ فِى الْاَرْضِ- فَطِيْبُوْابِهَا نَفْسَهاَ-“মানুষের আমল সমূহ হতে কোন আমলই আল্লাহর নিকট কুরবানীর দিন কুরবানী হতে অধিক পছন্দনীয় নয়, অবশ্যই কিয়ামতের দিন কুরবানীর জানোয়ার শিং, লোম ও খুর নিয়ে উপস্থিত হবে। যে কুরবানী শুধু আল্লাহর জন্য করা হয়, নিশ্চয়ই সেই কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে উহা কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা ভক্তি ও আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে কুরবানী কর”। (তিরমিযী)
৫. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন নবী করীম (সা.) হযরত ফাতেমা যোহরা (রা.) কে বললেন,ফাতেমা! এসো তোমার কুরবানীর পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাক। এ জন্য যে, তার যে রক্ত কণা মাটিতে পড়বে তার বদলায় আল্লাহ তোমার পূর্বের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন।
হযরত ফাতেমা রা. বলেন, এ সুসংবাদ কি আহলে বায়তের জন্য নির্দিষ্ট, না সকল উম্মতের জন্যে? নবী বললেন, আমাদের আহলে বায়আতের জন্যেও এবং সকল উম্মতের জন্যেও। (জামেউল ফাওয়ায়েদ, আসান ফিকাহ)
কাদের উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব
# ১০ই যিলহজ্জের ফজর থেকে ১২ই জিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থ্যাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে যার নিকট নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত শরয়ী নেসাবের (অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা এ পরিমান অর্থের ) মালিক এমন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব। কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে বছর অতিবাহিত হওয়া জরুরী নয়।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান বিশ্ব বাজারে রূপার মুল্য স্বর্ণের মূল্যের তুলনায় অতি কম হওয়ায় নেসাবের ক্ষেত্রে রূপার মূল্যই ধর্তব্য হবে। প্রত্যেক দেশে সেখানকার বাজার মূল্য ধর্তব্য হবে।
বাংলাদেশে বর্তমান বাজার অনুযায়ী ভরি প্রতি সতেরশত টাকা হারে ৮৯২৫০ টাকার মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
# মুসাফিরের উপর (সফর রত অবস্থায় থাকলে) কুরবানী করা ওয়াজিব হয় না।
# কুরবানী ওয়াজিব না হলেও নফল কুরবানী করলে কুরবানীর ছওয়াব পাওয়া যাবে।
# কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়-সন্তানাদি, মাতা-পিতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কুরবানী হবে।
# যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
# কোন মকসুদের (উদ্দেশ্য) জন্য কুরবানীর মান্নত করলে সেই মকসুদ পূর্ণ হলে তার উপর (গরীব বা ধনী) কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
# যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী না করলে কুরবানী দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর (ছাগল) মুল্য সদকা করা ওয়াজিব।
কুরবানীর পশু সম্পর্কিত মাসয়ালা
কুরবানীর পশু
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট এই ছয় ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী দিতে হবে, এর বাইরে অন্য কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা বৈধ না।
পশুর বয়স প্রসঙ্গ
১। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কম পক্ষে পূর্ণ এক বৎসর বয়সের হতে হবে।
বয়স যদি কিছু কমও হয় কিন্ত এরূপ মোটা তাজা যে, এক বৎসর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে তবে অন্তত ছয় মাস বয়স হতেই হবে।
২। গরু ও মহিষের বয়স কম পক্ষে দুই বৎসর হতে হবে।
৩। উট এর বয়স কম পক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে।
পশুর স্বাস্থ্যগত প্রসঙ্গ
১. কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়াই উত্তম।
২. যে প্রাণী লেংড়া অর্থ্যাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে-এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও ভর করতে পারে না এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী হবে না।
৩. যে পশুর একটিও দাঁত নেই তার দ্বারা কুরবানী হবে না।
৪. যে পশুর কান জন্ম হতে নেই তা দ্বারা কুরবানী হবে না।
৫. যে পশুর শিং মুল থেকে ভেঙ্গে যায় তা দ্বারা কুরবানী হবে না ।
তবে শিং উঠেইনি বা কিছু পরিমাণ ভেঙ্গে গিয়েছে এরপু পশু দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে।
৬. যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা একটি চোখের দৃষ্টি শক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশী নষ্ট তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ নেই।
৭. যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কিংবা তার চেয়ে বেশী কেটে গিয়েছে তা দ্বারা কুরবানী হবে না ।
৮. অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই যে, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে তা দ্বারা কুরবানী হবে না ।
৯. ভাল পশু ক্রয় করার পর এমন দোষ ত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কুরবানী দুরস্ত হয় না-এরূপ হলে সেটিই কুরবানী দেয়া যাবে।
১০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েজ। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সে বাচ্চাও জবাই করে দিতে হবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী হলে সেরূপ পশু কুরবানী দেয়া মাকরুহ।
১১. বন্ধ্যা পশু কুরবানী করা জায়েজ আছে।
১২. হযরত বারা ইবনে আযেব রাদি অল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানী জায়েয হবে না।
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না- অন্ধ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু ; যার পঙ্গুগুত্ব স্পষ্ট এবং আহত; যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে। (তিরমিযী, নাসায়ী,)
শরীকের মাসায়েল
(ক) ছাগল, ভেড়া, দুম্বায় এক জনের বেশী শরীক হয়ে কুরবানী করা যায় না। এগুলো একটা একজনের নামেই কুরবানী দিতে হবে।
(খ) একটা গরু, মহিষ, উটে সর্ব্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে, তবে কারো অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হলে তা হবে না।
(গ) মৃত্যের নামেও কুরবানী হতে পারে।
(ঘ) রাসুলে কারীম (সা.) তাঁর বিবিগণ ও বুযুর্গদের নামেও কুরবানী হতে পারে।
(ঙ) যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করে না বরং মাংস খাওয়া বা লোক দেখানো ইত্যাদি নিয়তে কুরবানী করে, তাকে অংশীদার বানিয়ে কোন পশু কুরবানী করলে সকল অংশীদারের কুরবানী-ই নষ্ট হয়ে যায়। তাই শরীক নির্বাচনের সময় খুবই সতর্ক থাকা দরকার।
(চ) কুরবানীর পশু ক্রয় করার সময় শরীক রাখার ইচ্ছা ছিল না, পরে শরীক গ্রহণ করতে চাইলে ক্রেতা গরীব হলে তা পারবে না অন্যথায় পারবে।
(ছ) যার সমস্ত উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম, তাকে শরীক করে কুরবানী করলে অন্যান্য সকল শরীকের কুরবানী অশুদ্ধ হয়ে যাবে।
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা তিন ধরণের হতে পারে।
* নিজের কুরবানীতে পরিবারের মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদেরকে নিযয়তের মাধ্যমে শামীল করা। ইহা বৈধ। নবী (সা.) থেকে এধরণের কুরবানী করার কথা প্রমাণিত আছে।
এভাবে দেওযয়া কুরবানীর গোশত পরিবারের সবাই খেতে পারবে।
* মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসীয়ত করে থাকলে ওসীয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে কুরবানী করা জায়েয আছে।
কুরবানীর নিয়মাবলী
কুরবানীর জন্য পশু পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য নিম্নোক্ত দুটো পদ্ধতির একটি নেয়া যেতে পারে।
(ক) মুখের উচ্চারণ দ্বারা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।
এভাবে বলা যায় যে ‘এ পশুটি আমার কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করা হল। ’ তবে ভবিষ্যৎ বাচক শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট হবে না। যেমন বলা হল- ‘আমি এ পশুটি কুরবানীর জন্য রেখে দেব। ’
(খ) কাজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা যায় যেমন কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করল অথবা কুরবানীর নিয়তে জবেহ করল। যখন পশু কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করা হল তখন নিম্নোক্ত বিষয়াবলী কার্যকর হয়ে যাবে।
১. এ পশু কুরবানী ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না, দান করা যাবে না, বিক্রি করা যাবে না। তবে কুরবানী ভালভাবে আদায় করার জন্য তার চেয়ে উত্তম পশু দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে।
২. যদি পশুর মালিক ইন্তেকাল করেন তাহলে তার ওয়ারিশদের দায়িত্ব হল এ কুরবানী বাস্তবায়ন করা।
৩. এ পশুর থেকে কোন ধরনের উপকার ভোগ করা যাবে না। যেমন দুধ বিক্রি করতে পারবে না, কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারবে না, সওয়ারি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, পশম বিক্রি করা যাবে না।
যদি পশম আলাদা করে তবে তা সদকা করে দিতে হবে, বা নিজের কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
৪. কুরবানী দাতার অবহেলা বা অযতেœর কারণে যদি পশুটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে বা চুরি হয়ে যায় অথবা হারিয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য হবে অনুরূপ বা তার চেয়ে ভাল একটি পশু ক্রয় করা।
আর যদি অবহেলা বা অযতেœর কারণে দোষযুক্ত না হয়ে অন্য কারণে হয়, তাহলে দোষযুক্ত পশু কুরবানী করলে চলবে।
৫. যদি পশুটি হারিয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায় আর কুরবানী দাতার উপর পূর্ব থেকেই কুরবানী ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে সে কুরবানীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। আর যদি পূর্ব থেকে ওয়াজিব ছিল না কিন্তু সে কুরবানীর নিয়তে পশু কিনে ফেলেছে তাহলে চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে অথবা হারিয়ে গেলে তাকে আবার পশু কিনে কুরবানী করতে হবে।
যবেহ করার পদ্ধতি
কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর কুরবানী করতে হবে। আর কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কন্ঠনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দুপার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবে না।
যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
কেউ যদি আরবী নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
চামড়া সংক্রান্ত মাসায়েল
১. কুরবানীর চামড়া ব্যবহারের উপযুক্ত করে কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে বিক্রি করলে পুরো মূল্য সদকা করা জরুরী ।
সদকার ক্ষেত্রে গরীব আত্মীয়-স্বজনকে প্রাধান্য দেয়া উত্তম। আর যে সকল দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরীব ও এতিম ছাত্রদের ভরণ-পোষণ প্রদান করতঃ ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়,সেখানে চামড়া/তার মূল্য দান করলে অধিক সাওয়াবের আশা করা যায়। (আলমগীরী, জাওয়াহিরুল ফিক্হ)
২. পশুর দেহ থেকে চামড়া আলাদা করার পূর্বে তা বিক্রি করা বৈধ নয়। (আলমগীরী)
৩. কুরবানীর চামড়ার প্রকৃত হক্বদার তারাই যারা যাকাত ও সদকা ভোগ করতে পারে। সুতরাং কুরবানীর চামড়ার বিক্রিত মূল্য দিয়ে কর্মচারীদের বেতন আদায় করা যাবেনা।
তেমনি ভাবে মসজিদ,মাদরাসা, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মানেও তা ব্যয় করা যাবে না। (ইমদাদুল ফাতাওযয়া,কিফাযয়াতুল মুফতী)
৪. কুরবানীর পশু জবাই করার পর তার রশি ইত্যাদি সদকা করে দিবে। (বাদায়েউস সানায়ে’)
গোশ্ত সংক্রান্ত মাসায়েল
১. কুরবানীর গোশ্ত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ গরীবের জন্য, আর এক ভাগ আত্মীযয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য। তবে এধরণের বন্টন করা ওয়াজিব নয় মুস্তাহাব।
বরং পুরো গোশ্ত যদি নিজে রেখে দেয়,তাতেও কোন অসুবিধা নেই,তবে তা অনুত্তম। (আলমগীরী, বাদায়েউস সানায়ে’)
২. কুরবানীর গোশ্ত শুকিয়ে বা ফ্রিজে রেখে দীর্ঘ দিন খাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। (বাদায়েউস সানায়ে’)
৩.কুরবানীর গোশ্ত বা চামড়া কসাই বা জবেহকারীকে বিনিময় স্বরূপ দেয়া যাবেনা,যদি কেউ দিয়ে থাকে তাহলে তার মূল্য সদকা করে দিবে। তবে উচিত পারিশ্রমিক প্রদান করতঃ হাদিয়া রূপে দেয়া যাবে। (আলমগীরী, বাদায়েউস সানায়ে’, ইমদাদুল আহকাম)
৪.শরীকদের মাঝে গোশ্ত মেপে বন্টন করতে হবে।
তবে যে কোন কারণে অনুমান করে বন্টন করার ক্ষেত্রে খুর, পায়া ইত্যাদি সকলের ভাগে গেলে তাও সহীহ হবে। (শামী)
কোরবানীর সাথে আকীকা দেয়া
একই পশুতে কোরবানীর সাথে আকিকা দেয়া যায়। তবে এমনটি করা উত্তম নয়। কোরবানীর গোস্তের মতো আকিকার গোস্তও নিজে খেতে পারবে, অপরকে খাওয়াতে পারবে, দিতেও পারবে। ছেলের আকিকা হলে দুইটি ছাগল অথবা গরুতে দুই শরীক এবং মেয়ের আকিকা হলে একটি ছাগল অথবা গরুতে এক শরীক দিতে হবে।
সম্ভব না হলে ছেলের জন্যও এক অংশই নির্ধারণ করা যেতে পারে। (রদ্দুল মুহতার ৫/২১৩, আবু দাউদ, ফতওয়ায়ে রাহিমিয়া ২/৯১। )##
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।