অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
আমরা বসে আছি, আমরা মানে আমি, মারুফ নান্টু আর সোহেল ভাই, অন্য সবারই আসবার কথা, তবে কখন আসবে ঠিক নাই। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আসবার পর থেকেই সোহেল ভাইয়ের মেজাজ ফুরফুরে। এই কয়েক দিন ভালোই গেলো বলতে হবে, ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে পড়তে হচ্ছে না।
তোরা কি দিচ্ছিস মারুফ?
আমরা গরু।
তা তো জানিই, কিন্তু কুরবানির জন্য কি কিনলি?
মারুফ সোহেল ভাইয়ের দিকে লাল চোখে তাকিয়ে থাকে।
নান্টুর দিকে ফিরে সোহেল ভাইয়ের প্রশ্ন, নান্টু তোরা?
এখনও ঠিক নাই সোহেল ভাই, একটু পরেই হাটে যাইতে হবে, কি পাই দেখি।
মানুষের মতো খাদক অন্য কেউ না, এইটা খেয়াল করে দেখছিস তোরা?
কথার ধরণ শুনে একটু চিন্তিত হই, সোহেল ভাইয়ের গলার স্বর একটু বদলে গেছে, এটা চিরায়ত লেকচার দেওয়ার কথার ভঙ্গি। তবে আমাদেরও তেমন তাড়া নেই, ঈদের ছুটি চলছে, সুতরাং সকাল বেলা বাসায় বসে মাছি মারবার বদলে এখানে এসে বসে সোহেল ভাইয়ের কথা শোনা খারাপ না বিনোদন হিসেবে।
দেখ বনের বাঘও কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া একটা পশুও শিকার করে না, নিঝুম দ্বীপে দেখ হরিণ বাড়তেই আছে, সেখানে বাঘ নাই, তাই অবাধে বাড়ছে হরিণ। অথচ সেই হরিণ কুরবানি দেওয়া যাবে না।
ভারত থেকে উট আমদানি করে লাখ টাকায় বেচবে কিন্তু ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এরপরও হরিণের মাংস খেতে দেবে না।
হরিণ কুরবানি দেওয়া যাবে না এমন ফতোয়া কোথাও নেই বলেই জানি, তবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে হরিণ শিকার করা কিংবা হরিণের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ, সুতরাং কোরবানির হাটে চাইলেই হরিণ তোলা যাবে না।
এরপরও মানুষ যে হরিণ খাচ্ছে না এমনও না।
আপনারা কি দিচ্ছেন সোহেল ভাই?
এখনও কিছু কিনে নাই বাসায়।
এক কাজ করেন, একটা জাল ঘাড়ে নিয়া নিঝুম দ্বীপে যান, সেইখান থেকে হরিণ ধইরা নিয়া আসেন।
তা তো করা যায়ই রে পাগলা, কিন্তু একটা সমস্যা আছে বুঝলি, ঐটা নিয়া ইমাম সাহেবের সাথে কথা না বলে হরিণ কুরবানি করা যাবে না।
মারুফ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে সোহেল ভাইয়ের দিকে। আমিও চমকে যাই সোহেল ভাইয়ের উত্তর শুনে, যদি সত্যি সত্যি ইমামের সাথে আলোচনা করে পজিটিভ কিছু জানা যায়, সোহেল ভাই কি হরিণ কুরবানি দিবে?
কি সমস্যা সোহেল ভাই?
আরে উট, দুম্বা এইগুলার ভাগ হয় ৭টা, ছাগল, ভেড়ার ভাগ হয় একটা, হরিণ কি একজনের নামে কুরবানী দেওয়া যাবে ,না ৭ জনের নামে এইটাই এখনও ঠিক হয় নাই।
নান্টুর বাসার কাজের মেয়েটা এসে বললো ভাইজান আপনেরে ডাকে বাসার তন।
যাই রে, হাটে যাই।
মুখটা এমন ব্যাজার কেন? যাইতেছিস তো গরু কিনতে, তোরে তো হাটে নিয়া গিয়া কেউ বেইচা দিবো না, একটু খুশী মনে যা।
না রে ভাই হাটের ভিতরে অনেক মশা,মশা কামড়ায়া লাল কইরা ফেলবে।
সেইটাতে তোর চিন্তিত হওয়ার কি আছে, চিন্তা তো মশাদের।
মানে?
নাহ তোর শরীরে তো শুধু হাড্ডি আর হাড্ডি, মশা কামড়াইলে তো ওদের হুল বাইকা যাইবো, হেগো সমস্যা এইটা, তোর চিন্তা করতে হইবো না, মশা তোরে দেখলে এমনি সাইড দিয়া দিবো।
প্রস্তুত ছিলাম বলে নান্টুর ঘুষিটা এড়াতে পারলাম।
তোরা সকালের নিউজ পেপার পড়ছিস?
সোহেল ভাই বাংলাদেশে নিউজ পেপার মানেই সকালের বিষয়, ইভিনিং নিউজ পেপার কয়টা বাংলাদেশে?
না আজকে সকালে যেইটা আসছে সেইটা পড়ছিস?
না , বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময় দেখলাম আব্বার হাতে। আপতত ৪ ঘন্টা ঐ পেপার বাসার কেউ পড়তে পারবে না, কেনো কি হইছে বলেন।
না খালেদা জিয়া নিজের নমিনেশন পেপারে শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় লিখছে সুশিক্ষিত।
শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় কেউ সুশিক্ষিত লিখতে পারে, ঐখানে লিখতে হবে সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা কি সেইটা।
কিছু মনে কইরেন না ভাই, মনে হয় লিখতে চাইছিলো স্বশিক্ষিত, বানান ভুল করে সুশিক্ষিত লিখছে, শুনছি তো তার কোনো সার্টিফিকেট নাই।
ভুল তথ্য দিলে না কি নমিনেশন বাতিল হয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার নমিনেশন বাতিল হয় নাই?
আরে দেশটার মালিক তো খালেদা জিয়া আর হাসিনা, ওরা যদি শুধু নাম লিখেও নমিনেশন পেপার সাবমিট করে, কার বুকের পাটা আছে ওদের নমিনেশন বাতিল করে?
সোহেল ভাইয়ের কথাটাও ফ্যালনা না একদম। দেশটা চলতেছে দুই বিবির কথায়। আর বাকি সবাই জ্বি আপা, জ্বি ম্যাডাম করে জীবন যাপন করছে।
আচ্ছা যেইটা বলতেছিলাম, দেখ মানুষ এই কুরবানির ঈদে কমপক্ষে ১০ লক্ষ গরু-ছাগল জবাই দিবে।
একটা উপলক্ষে মানুষ ১০ লক্ষ গরু ছাগল খেয়ে ফেলবে, এমনও না যে এটা না করলে কারো কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে, মানুষের মতো খাদক পৃথিবীতে আসলে দ্বীতিয় নেই।
ইকো সিস্টেমের ১২টা বাজাচ্ছে মানুষেরাই, বুঝলি, বাংলাদেশ তলিয়ে যাবে সেটাও মানুষের কারণেই।
এক কাজ করলে হয় না সোহেল ভাই, ধরেন আমরা সমস্ত উপকূলেই বড় বড় গ্যাস বেলুন লাগিয়ে রাখলাম, তাহলে তো আর ডুববে না বাংলাদেশ, ভেসে থাকবে।
একটা থাপ্পড় খাবি তুই, ঐটা বকেয়া থাকলো।
সোহেল ভাই সিগারেট জ্বালিয়ে পুনরায় শুরু করলেন বক্তৃতা।
এই যে কুরবানী এইটা আর উৎসর্গের জায়গায় নাই, এইটা একটা লোক দেখানো বিলাসিতা হইছে, নার্গিসের ভাইকে দেখছিস? কালকে ইয়া বড়, উঁচা আর লম্বা একটা ষাঁড় নিয়া আসছে, দাম নিছে ৭৫ হাজার।
বললাম দেখো ভাই ছোটো গরু কিনলেও ৭ ভাগ, হাতি কিনে জবাই দিলেও ঐ সাত ভাগই তো থাকবে, এত বড় গরু কিনার দরকার কি ছিলো এত টাকা দিয়া?
বললো ভাই জিনিষটা দেখছেন? খাঁটি অস্ট্রেলিয়ান জিনিষ। আর ৭ ভাগ, ১৪ ভাগ হিসাব করে কি হবে, লোকজন দেখলো এইটাই বড় কথা।
আমিও সায় দিলাম সোহেল ভাইয়ের কথায়, কুরবানী মানে উৎসর্গ করা, যখন সেটা আত্ম অহমিকার প্রকাশ হয়ে যায়, যখন সেটা মানুষের অহংকারকে আরও বাড়িয়ে তুলবার উপলক্ষ্য হয়ে যায় তখন কুরবানীর আসল মাহত্ব্য নষ্ট হয়ে যায়।
আচ্ছা সোহেল ভাই মানুষ উট কিনে কেনো?
উটে কিনে ভালো কথা কিন্তু জবাই দেয় কি ভাবে? উঠের পিঠে চড়ে গলায় ছুড়ি চালায় না কি বান্ধে মাটিতে ফেলে জবাই করে?
উট কেনো মানুষ কিনে এইটা আমিও বুঝতে পারি না রে।
ঐ লোক দেখানোর বিষয় বুঝছিস। আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসছে বুঝলি?
সোহেল ভাইয়ের মাথা ভর্তি আইডিয়া।
কি আইডিয়া সোহেল ভাই।
নাহ একটা বিজনেস প্লান, ধর আগামী কুরবানীর আগে আমরা ভুটানি গরু আমদানি করবো।
দেশে সবচেয়ে বেশী দাম আমদানি করা উটের, এরপর বিদেশী গরুর।
সব কিছু থাকতে ভুটানি গরু কেনো সোহেল ভাই?
ভুটানি গরু সাইজে ছোটো, দামে কম পড়বে , ক্যারিং কস্ট কম, আর গরীর মানুষেরা কিনতে পারবে না। এমনি বাজারে গিয়া দেখ, যেই গরুর দাম ২০ হাজার সেইটা দেখলে মনে হবে ঐরা সোমালিয়া থেকে আমদানী করে আনছে, পাঁজরের সব কয়টা হাড় গুনতে পারবি। ভুটানি গরুর এই সমস্যা নাই, হাজার চেষ্টা করেও পাঁজরের হাড় গুনতে পারবি না।
বাজারে চলবে বুঝলি, বিদেশী গরু কুরবানী দেওয়ার ভিতরে একটা আলাদা ভাব আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।