পত্রিকার পাতা থেকে-
গত ৬ জানুয়ারি সারাদেশে ১১০টি ব্যাংক একাউন্ট জব্দের আদেশ হাইকোটে বহাল থাকায় সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইউনিপে টু ইউর বিনিয়োগকারীরা চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের খবর পেয়ে বিনিয়োগকারী কয়েক শতাধিক গ্রাহক কপালে হাত দিয়ে বসেছে। বিনিয়োগের অর্থ কিভাবে ফেরত পাবে, নাকি পাবে না এ নিয়ে ভাবনা এখন তাদের।
সীতাকুণ্ড উপজেলায় সহজ সরল ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবীদের সুকৌশলে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা প্রদান করে ইউনিপে টু ইউর কার্যক্রম শুরু করে ১৩ মাস পূর্বে চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে শিল্পাঞ্চল হওয়ায় গ্রাহকরা অতি মুনাফার লোভে আশাতীত বিনিয়োগ করেন। সম্প্রতি এই কোম্পানির বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ও সরকারি কঠোর সিদ্ধান্তগুলো গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়।
পুরাতন বিনিয়োগকারীরা এখন আর বিনিয়োগের অর্থ নিয়মিত তুলতে পারছে না। তারা এখন লাভের আশা ফেলে আসল অর্থ উত্তোলনে কোন পথও খুঁজে বের করতে পারছে না।
সীতাকুণ্ড উপজেলায় ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদম রসুল, সোনাইছড়ি, কুমিরা, বাঁশবাড়ীয়, সীতাকুণ্ড, বারৈঢালায় প্রায় সহস্রাধিক ইউনিপে টু ইউর গ্রাহক রয়েছে। এতে প্রায় ৩০কোটি টাকা এই প্রতিষ্ঠানে জমা পড়েছে। গ্রাহকরা জানান, তিন কিস্তির বেশি কোন গ্রাহক ভোগ করতে পারেনি।
অথচ তারা জমি, স্বর্ণ, ব্যাংক ঋণ, টেক্সি বিক্রি করে, ধার এবং দাদন নিয়েও বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা নিরবে কাঁদছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এ এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম মূলত এক এনজিও কর্মির নেতৃত্বে সম্প্রারিত হয়। অফিস দায়িত্বকে অবহেলা করে অনেক স্থানে এমএলএম কার্যক্রম প্রচার করে দ্রুত মুনাফা করেন। মাদামবিবিরহাটের কাইছার ও ভাটিয়ারীর আব্বাস নামে দুই বিনিয়োগকারী বলেন, সরকার এ এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে অবস্থান বা নীতিমালা প্রণয়ন করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের অর্থ কিভাবে ফেরত পাওয়া যায় তা বিবেচনা করা উচিত বলে গ্রাহকরা মনে করছেন।
তারা বিভিন্ন জনের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। এক কিস্তি পাওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে সরকারের তরফ থেকে উপজেলা ইউনিপে টু’র নামে কোন প্রতিষ্ঠান আছে কিনা জানতে চেয়ে একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়। তবে স্থায়ী কোন প্রতিষ্ঠান না থাকাতে প্রতিবেদনটি দিতে দেরী হচ্ছে বলে জানান থানার সেকেন্ড অফিসার আমিনুল ইসলাম। মূলত এই ব্যবসাটি ইন্টারনেট ভিত্তিক হওয়াতে কোন শাখা অফিসের প্রয়োজন হয় না।
যার কারণে এতে কত জন লোক কত টাকা বিনিয়োগন করছে তা জানা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে এ ব্যবসার সাথে উপজেলার সহাস্রাধিক লোক বিনিয়োগকারী আছে বলে ধারণা করছেন তিনি। অনেক ছোটখাট ব্যবসায়ী চাকরি অবসর প্রাপ্ত ও বেকার যুবকরা বাপদাদার জমি বিক্রি করে অনেকে সিএনজি ব্যবসা বন্ধ করে তা বিক্রি করে ইউনিপে টুই উতে বিনিয়োগ করেছে নগদ ও বেশি লাভের আশায়। এখন ঐ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একুল সেকুল সবই হারিয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। ইউনিপেটুর গ্রাহকদের ভবিষ্যৎ কি এখনও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা।
এদিকে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোটের বেঞ্চ ইউনিপে টু’র ১১০টি ব্যাংক একাউন্ট জব্দের আদেশ হাইকোটে বহাল রেখেছে। ব্যাংক হিসাব জব্দ করে নিম্ন আদালতের দেওয়া আর্দেশের বিরুদ্ধে করা রিটটি খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে দিয়েছেন হাইকোট।
গত বছরের ৬ জুলাই নিম্ন আদালতের এক আদেশে ইউনিপে টু’র ১১০টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে মুনতাসির হোসেন ও শহীদুজ্জমান হাইকোটে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত বছরের ২৬ আগস্ট হাইকোট রুল জারি করেন এবং নিম্ন আদলতের আদেশ স্থগিত করেন।
রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত রবিবার আদালত তা খারিজ করে নিম্ম আদালতের রায় বহাল রাখে। আদালতে আবেদন কারীর পক্ষে রোকনুদ্দিন মাহামুদ ও দুদকের পক্ষে আনিসুল হক ও এম এ আজিজ খান মামলাটি পরিচালনা করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।