গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ৩৭ কিলোমিটার অংশকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের গ্রামে গ্রামে চলছে পুলিশের অভিযান।
প্রশাসন সূত্র জানায়, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে সীতাকুণ্ডের ৩৭ কিলোমিটার মহাসড়ক এলাকায় ৪৫০ পুলিশ ও আনসার, বিজিবির ৫০ এবং র্যাবের ৫০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত বুধবার থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব সদস্যের তৎপরতা বেড়েছে। এতে বৃহস্পতিবার থেকে মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে গাড়ি চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
কিন্তু গতকাল শনিবার বিকেলে সীতাকুণ্ড পৌর এলাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সীতাকুণ্ড এলাকা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে এ মহাসড়ক দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়। মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে।
এক দিন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য জাহাজীকরণে বিলম্ব ঘটে। এতে বিদেশি ক্রেতার কাছে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পৌঁছানো যায় না। ফলে রপ্তানিকারকেরা ক্ষতির মুখে পড়েন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে যা ঘটছে, সেটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কিছু নয়। সন্ত্রাসীদের হাতে আমরা এ এলাকাকে তুলে দিতে পারি না।
তাই বিপুলসংখ্যক র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ’
৮ নভেম্বর রাজধানীতে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সীতাকুণ্ডে বিপুলসংখ্যক গাড়ি ভাঙচুর এবং অর্ধশতাধিক গাড়ির চাকার বাতাস ছেড়ে দিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে ৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টা থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম, দুই পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজার সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল।
পুলিশ সূত্র জানায়, ওই ঘটনা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তোলে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় আমরা মহাসড়কে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্য মোতায়েন এবং অভিযান জোরদার করেছি।
এ ছাড়া কোনো ঘটনা ঘটলে দায়ী ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্টভাবে আসামি করে মামলা নিচ্ছি। ’ হাফিজ আক্তার বলেন, বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরী সীতাকুণ্ডকে অস্থির করে তুলেছেন।
আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্যমতে, এলাকার তরুণদের বিশাল একটি অংশকে তিনি রাজনীতিতে আনতে সক্ষম হন। ওই তরুণেরা একের পর এক নাশকতা ঘটিয়ে অস্থির করে রেখেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশকে।
আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমার এলাকার বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নিরীহ অনেক লোককে আসামি করে পুলিশ বাড়িঘরে থাকতে দিচ্ছে না। তারা ঘরছাড়া হয়ে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। অস্তিত্বের জন্য গাড়ি ভাঙচুর কিংবা অবরোধ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ জন্য তো পুলিশ দায়ী। ’ আসলাম চৌধুরীর অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘নিরীহ কোনো ব্যক্তিকে আসামি করা হয়নি।
’
পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ৩৭ কিলোমিটার অংশের অন্তত ২০টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সেখানে সহিংস ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর সঙ্গে প্রায় ৩০০ জন জড়িত, যাদের তালিকা পুলিশ প্রস্তুত করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।