আমার কমেন্টস ব্যান করে দিছে তাই নিজের পোস্ট ছাড়া কাউকে কমেন্টস দিতে পারছিনা
যাই হোক সকাল বেলা সবাই ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে কাপড় চোপড় পড়ে হালকা নাস্তা খেয়ে কেয়ারী সিন্দাবাদ বাস সার্ভিস এর কথামতো সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে হোটেলের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম, হায়রে !!!!বেরসিক বাস আসলো আধাঘন্টা পর মানে সাতটার দিকে ।
টেকনাফের রাস্তা খুব একটা সুবিধার না তার উপরে আমরা সিট পেলাম বাসের একদম শেষের দিকে দুই ঘন্টা ঝুাকুনি খেতে খেতে অবশেষে জাহাজ ঘাটে গিয়ে পৌছলাম ।
**জাহাজ ঘাটে পৌছানোর পর আপনাকে জাহাজ সার্ভিসের মুল অফিস থেকে যে টিকেটগুলো দিয়েছে সেই টিকেটগুলো দেখিয়ে টোকেন নিতে হবে, না হলে জাহাজে উঠতে দিবে না তাই বাস থেকে নামার সাথে সাথে টোকেন জোগাড় করে নিন ।
যাই হোক অবশেষে জাহাজে গিয়ে বসলাম তারপর সবগুলো ব্যাগ একসাথে রেখে সব জাহাজের ডেকে চলে আসলাম একটু পরেই জাহাজ চলা শুরু করলো ,বিশাল সমুদ্রের মাঝে আমাদের জাহাজ চলছে আমরা সবাই গলা ছেড়ে গান টান দিলাম "তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবোরে ,আমরা কজন নবীন মাঝি হাল ধরেছি শক্ত হাতে............" না লাইফ আসলে খারাপ না কি বলেন !!
যাবার সময় একটা বিরল দৃশ্য দেখলাম ডলপিনের ৮/১০ টা বাচ্চা একটু পর পর আমাদের জাহাজের কাছে এসে লাফ দিচ্ছে সত্যি অসাধারণ !!!!!
**টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার মত সময় লাগে
অবশেষে দেখা গেলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ ............
সেন্টমার্টিন দ্বীপে নামার সাথে সাথে ভাই হোটেল লাগবে হোটেল লাগব বলে চিল্লাচিল্লি ,আমাদের একই উত্তর হোটেল বুক করা আছে যদিও হোটেল বুক করা নেই ।
প্রথমে গেলাম ব্লু মেরিনে বললো সিট খালি নাই কিন্তু তাবু আছে আমরা বললাম ঠিক আছে তাবুতে থাকবো দাম জিজ্ঞাস করলাম ম্যানাজার বললো ৩০০০ টাকা মনে মনে বললাম তোর তাবুতে তুই থাক আমরা থাকুম না ৩০০০ টাকা দিয়ে তাবুতে থাকার দরকার নাই !!!!!!!!!!!!!এবার গেলাম ব্লূ মেরিনের পাশেই প্রাসাদ প্যারাডাইসে একই উত্তর ব্রাদার রুমতো খালি নাই আমি বললাম তাবু থাকলে ব্যবস্হা করে দেন সারাজীবনতো রুমেই থাকলাম এবার তাবুতে থাকবো নতুন একটা অভিজ্ঞতাও হবে ।
ম্যানাজার বললো ছাদে তাবু আছে দেখে আসেন তারপর কথা বলবো ।
আমরা ছাদে গেলাম তাবু দেখতে ,গিয়ে দেখি প্রচন্ড গরম থাকা যাবেনা কোনভাবেই ,পরে যখন ম্যানাজারকে বললাম গরমের কথা ম্যানাজার বললো তাবুর সব দিকতো বন্ধ তাই এত গরম আপনারা আমাকে ১০ মিনিট সময় দেন সব ঠিক করে দিচ্ছি । হোটেলের ডেস্কে বসে বললাম ঠিক আছে দিলাম ১০ মিনিট সময় । পরে দেখলাম হোটেলের ম্যানাজারের কথাই ঠিক তাবু ঠিক ঠাক করা হয়েছে ,তাবু ভাড়া দিতে হলো ১০০০ টাকা ।
**প্রাসাদ প্যারাডাইস হোটেলে থাকার আরও একটা কারণ হলো এর ছাদ থেকে আরাম করে সমুদ্র দেখা যায় আর এর দুই প্রবেশ পথের দুই দিকেই সমুদ্র দেখা যায় মানে হোটেল থেকে পা বাইরে ফেললেই সমুদ্র ।
আপনারা ভালো করে দেখে শুনে তারপর হোটেল ঠিক করবেন কোন তাড়াহুড়া করার দরকার নাই তবে আমার ব্যাক্তিগত ভাবে দ্বীপের পশ্চিম দিকের চেয়ে উত্তর দিকের হোটেলগুলো মানে ব্লুমেরিন প্রাসাদ প্যারাডাইস হোটেলগুলো যেদিকে সেদিকের হোটেলগুলোর লোকেশন ভালো লেগেছে
সবাই তাবুতে কাপড় চোপড় রেখে আর মোবাইল গুলো ম্যানাজারের জিম্মায় রেখে দিলাম দৌড় সমুদ্রে ,সেন্টমার্টিন দ্বীপের সবচেয়ে বড় বিশেষত্বই হলো এর পানি নীল আর একদমই স্বচ্ছ । অণেকক্ষণ পানিতে থাকার পর কিছুটা শীতে কাপতে কাপতে হোটেলে ফিরে আসলাম এসেই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার শেষ করলাম ।
** কক্সবাজারে তুলনায় সেন্টমার্টিনে খাবারের দাম কমই মনে হলো ।
যেহেতু হাতে সময় কম তাই দুপুরের খাবারে পর বিশ্রাম না করেই আবার বিচে চলে আসলাম হাতের ক্যামেরাটা দিয়ে কিছু ছবি তুলতে হবে মাথায় এ ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে । আমি বিচে অন্যদের চেয়ে আগেই এসে ক্লিক ক্লিক করতেছিলাম একে একে সবাই বিচে চলে আসলো তারপর সবাই মিলে ঠিক করলাম পুরো দ্বীপটা একটা রাউন্ড দিতে হবে ,যেই ভাবা সেই কাজ শুরু করলাম হাটা...........
সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রবাল গুলোর উপরে যখন দাড়িয়ে থাকবেন আর ঢেউগুলো এসে প্রবালের উপরে আছড়ে পড়বে তখন যে কি রকম অনুভুতি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা ।
অনেকেই দেখি দ্বীপের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার আগেই বার বার পানিতে নেমে একাকার হয়ে যায় আমার পরার্মশ থাকবে আগে ঠিকভাবে সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন তারপর পানিতে নদীতে প্রবালে উপর শুয়ে বসে চিৎ হয়ে সব জায়গায় ছবি উঠান কোন সমস্যা নাই
যাইহোক আমরা হাটা শুরু করলাম পুরো দ্বীপ রাউন্ড দেবার উদ্দেশ্যে রাস্তায় দেখলাম দোকান, যেহেতু বিকেল হয়ে আসছে তাই কিছু পেটে দেওয়ারও দরকার আছে যাই হোক রুচ চাদা মাছ সাথে কাকড়া আর ৫স্টার নামে এক ধরনের বিরল মাছে ঘাপুস গুপুস পেটে চালান দিলাম
এইগুলোই হলো ৫স্টার এগুলোকে বলা হয় লবস্টারের বড় ভাই
**বারবি কিউ খেতে ভুলবেন না আর কাকড়াও খেতে পারেন খুব মজা তবে আপনার রুচির উপরে সব ছেড়ে দিলাম
হাটতে হাটতে প্রিয় লেখক হুমায়ন আহমেদের বাড়ির কাছে চলে আসলাম
যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই আমরাও হাটার গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিলাম আমাদের মাথায় একটাই চিন্তা পুরো দ্বীপটা একবার চক্কর দিতেই হবে যাই হোক হাটছি তো হাটছিই কোন কুল কিনারা করতে পারছিনা কয়েকবার রাস্তাও হারিয়ে ফেললাম অবশেষে স্হানিয় দুই বাচ্চার সহায়তায় রাস্তা খুজে পেলাম
হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে আবার বিচে গেলাম ,রাতের সেন্টমার্টিন যেন অন্যরকম বিশাল সমুদ্রে চাদের আলো ,সাথে আছে সাদা ফরফরাসের খেলা এক কথায় আমার দেখা সেরা পূর্ণিমা রাত
সকালে উঠে নাস্তা সেরে ছেড়া দ্বীপ যাবার জন্য নৌকা ঘাটে গিয়ে টিকেট কেটে নৌকাতে উঠলাম
**প্রতিজন ১২০ টাকা করে নিবে যাওয়া এবং আসা ,আপনাকে ছেড়া দ্বীপ ১ ঘন্টা ঘুরার সময় দিবে তারপর আবার নিয়ে আসবে
আমাদের নৌকা
ছেড়াদ্বীপ আসলেই অসাধারণ একটা জায়গা, কোন জনবসতি নেই দুই একটা অস্হায়ী দোকান আছে যেহেতু সময় একদম কম তাই পুরো দ্বীপটা একটা চক্কর মেরে দিলাম দ্রুত আর সাথে ক্লিক ক্লিক
ছেড়া দ্বীপ থেকে আসতে আসতেই ১ টার মত বেজে গেলো আমাদের জাহাজের সময় ছিলো ৩ টায় তাই এসেই আস্তে আস্তে সবকিছু গুছিয়ে নিলাম তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে বের হয়ে গেলাম । হোটেল থেকে বের হয়েই কিছু শুকটি কিনলাম তারপর জাহাজে গিয়ে উঠে গেলাম
** কক্সবাজারের চেয়ে সেন্টমার্টিনে শুটকির দাম কম তাই শুটকি সেন্টমার্টিণ থেকে কিনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে
দুইঘন্টা জাহাজ জার্নি করে তারপর বাসে করে কক্সবাজার ফিরে আসলাম । আমাদের বাসের সময় ছিলো সাড়ে দশটায় আমার আগেই কক্সবাজার ফিরে আসায় দেখি কিছু কেনাকাটা করতে পারি কিনা এই টাইপের চিন্তা ভাবনা থেকে মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম
**আচার কিনার সময় অবশ্যই টেস্ট করে তারপর কিনবেন না হয় আমাদের মত ধরা খাবেন
তারপর আর কি এস আলমে করে কুমিল্লা চলে আসলাম ।
এইছিলো আমাদের জার্নির এ টু জেড কথোপকথন । সময় পেলে আবার যাবো তবে কক্সবাজার নয় যদি যাই সরাসরি সেন্টমার্টিন যাবো
**সেন্টমাটিন রাতে না থাকলে এর সৌন্দর্য একদমই বুঝতে পারবেন না কারণ জাহাজ আসা এবং যাওয়ার মাঝে আপনি সর্বোচ্চ ২/৩ ঘন্টা সময় পাবেন এই্ সময়ে আপনি দ্বীপের সৌন্দর্য কিছুই বুঝতে পারবেন আর ছেড়াদ্বীপ এর কথা নাইবা বললাম ।
**জনৈক জ্ঞানি ব্যক্তি বলেছেন সেন্টমার্টিনে রাতে না থাকা আর বোতলের পানিতে সমু্দ্র দেখা একই কথা
আপনাদের কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কোন সংকোচ ছাড়াই জিজ্ঞাস করতে পারেন ।
প্রথম পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিকান
আমার ব্যক্তিগত ব্লগেও প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।