পেশায় নাবিক নেশায় যাযাবর আমরা যখন বিদেশে কোন বাংলাদেশীর সাফল্য শুনি খুব ভাল লাগে । গর্ববোধ করি । গর্বিত হওয়ার অনেক সাফল্য আছে আমাদের এবং এসব সংবাদ খুব ফলাও করে মিডিয়াতে প্রকাশ হয় । কিন্তু একটি সেক্টরে বাংলাদেশী সোনার ছেলেরা নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে জয়ের পর জয় করে চলছে অতি নীরবে। কিন্তু তাদের এই জয়ে নেই কোন আত্ন অহমিকা ।
শিপিং সেক্টরে কেমিক্যাল জাহাজে চাকরি করা খুব সম্মানজনক । কারন অনেকঃ প্রথমত ধরা হয় যারা খুব ভাল ইঞ্জিনিয়ার/ অফিসার তারাই এখানে সুযোগ পায়। সুতরাং যারা কেমিক্যাল জাহাজে চাকরি করে তারা নিঃসন্দেহে নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবতে পারে। তাছাড়া আছে সর্বোচ্চ বেতনের হাতছানি। এখানে প্রাধান্য ছিল মুলত ইন্ডিয়ান , কোরিয়ান এবং ফিলিপিনোদের।
এক যুগ আগেও পৃথিবীর কোন কোম্পানি চিন্তা করতে পারত না বাংলাদেশীরা ক্যামিকাল জাহাজ চালাতে পারবে। বার বছর আগে বাংলাদেশের ক্যামিকালের ইঞ্জিনিয়ার অফিসার ছিল হাতে গোনা। রেড সি মেরিন নামে দুবাই ভিত্তিক একটি কোম্পানি এবং ডিলমুন নামে একটি ব্রিটিশ কোম্পানি। তাও আমরা ছিলাম সেকেন্ড চয়েজ অর্থাৎ ইন্ডিয়া থেকে না পাওয়া গেলে তখন বাংলাদেশীদের নেয়া হত।
কেমিক্যাল জাহাজ গুলো খুব ক্রিটিকাল ।
একটু এদিক সেদিক হলেই সব শেষ। এর অপারেশন যে কোন যুদ্ধের চাইতে কোন অংশে কম নয়। এসব জাহাজে এমন সব কেমিক্যাল বহন করা হয় যা একটু অসতর্ক হলে ঘটতে পারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। আবার কিছু কেমিক্যাল আছে যার গন্ধ শুকলে ক্যান্সার হতে পারে। ২/১ ডিগ্রী তাপমাত্রা হেরফেরের কারনে শত কোটি টাকার কেমিক্যাল হয়ে যেতে পারে বর্জ্য পদার্থ।
তাই কেউ চাইলেই কেমিক্যাল জাহাজে যেতে পারেনা। এই জন্য চাই বিশেষ ট্রেনিং, দক্ষতা। কিন্তু এসব থাকলেও কাজ হবে না। জাহাজ মালিক না চাইলে আপনার যত দক্ষতা থাকুক না কেন আপনি জাহাজ পাবেন না।
প্রায় এক যুগ পূর্বে টোকিয়ো মেরিন জাপান নামে একটি কোম্পানি বাংলাদেশে আসে কেমিক্যালের ইঞ্জিনিয়ার / অফিসারের খোঁজে।
তারা তাদের একটি জাহাজের জন্য ইঞ্জিনিয়ার / অফিসার / ক্রু নিয়োগ দেয় অন টেস্ট হিসাবে। তার পর........................... শুধু জয় এবং জয় । একের পর এক জাহাজ দিতে থাকে কোম্পানিটি বাংলাদেশীদের । বর্তমানে ঐ কোম্পানির ১৫ টি জাহাজ ছাড়াও পৃথিবীর নামকরা সব কোম্পানিতে তৈরি হয়েছে আমাদের চাহিদা। আর নীরবে এই সমুদ্র জয়ের সৈনিক হিসাবে আমরা একটু গর্ব তো করতেই পারি।
এর এই সমুদ্র জয় নিয়ে কারো কোন সংশয় আছে কি ?
কেন এই কথা বললাম । আমাদের দেশের মেরিনাররা আজ বিশাল একটা সাফল্য মণ্ডিত কমিউনিটি । কিন্তু আমাদের নেই কোন সংগঠন । একবারে নাই তা না। আছে অলিতে গলিতে পাড়ায় পাড়ায়।
তার মানে তারা ঐক্যবদ্ধ নয়। মেরিনারদের ভিতর অনেক বিভেদ। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী , চিটাগং , মেরিন ফিসারিজ , ডাইরেক্ট ক্যাডেট , নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ড , এক্স নেভি এবং আর অনেক ধারায় বিভক্ত। তার পর আছে মাস্টার এবং চীফ ইঞ্জিনিয়ারদের আলাদা সংগঠন। ঢাকাবাসী –চিটাগংবাসির আলাদা সংগঠন ।
সম্প্রতি একজন মেরিনার গ্রেপ্তার হয়েছেন জামাত সন্দেহে । থানায় নিয়ে তাকে মারধর করার কথাও শোনা গেছে । কিন্তু আমাদের কমিউনিটির কোন মুভমেন্ট নেই। এই আমার দেশ । এই আমার দেশের রাজনীতি।
যারা দিনের পর দিন নিজের যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময় সমুদ্রে পার করে দিয়ে বিদেশী মুদ্রা অর্জনে দেশের সহায়তা করছে । তাদের নেই কোন সম্মান ???
আমার ব্লগিং ধারণা :
“ব্লগ লিখলেই ব্লগার হওয়া যায় না” ব্লগিং হচ্ছে একটা স্বচ্ছ এবং উম্মুক্ত প্লাটফর্ম । এখানে মুলত সবাই যার যার মতামত তুলে ধরবেন । তারপর যুক্তি পাল্টা যুক্তি হবে। এবং যুক্তি তর্কে যারা জিতবে তাদের ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হবে।
এবং “ ব্লগিং আর ফেসবুকিং এক জিনিস না” এই কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু আজ কি চমৎকার দেখা যাচ্ছে । ব্লগিং না করেই ব্লগার। আর কপি পেস্ট , সংবাদ পত্রের কাটিং , এবং নিজস্ব দলের প্রপাগান্ডা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। আমি ব্লগিং শুরু করেছিলাম আমাদের কমিউনিটিকে সবার মধ্যে একটি পরিচিতি আনার জন্য।
কিন্তু কেন জানি এখন নিজেকে একজন ব্লগার ভাবতে ইচ্ছে করে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।