ই-মেইল অথবা ডাকযোগে পত্র মারফত গ্রীণকার্ড লটারীতে জয়ী হবার খবর প্রতিটি বাংলাদেশীর জন্যেই খুশীতে আত্মহারা হবার মত ঘটনা। লটারীতে অংশ না নিয়েও নিশ্চিত বিজয়ের সংবাদে অনেকে মনে বিস্ময় প্রকাশ করলেও কয়েক বছর যাবত তাই ঘটে চলেছে। এধরনের পরিস্থিতির শিকারদেরকে শেষ পর্যন্ত ঐ লটারীর ভিসা নিতে ১৫/২০ লাখ টাকা করে ব্যয় করতে হচ্ছে।
অন্য কাউকে স্ত্রী বানিয়ে সাথে নেয়ার মাধ্যমে ২০/২৫ লাখ টাকার বাড়তি ব্যবসা হচ্ছে। এসব ঘটনা চলছে রাজধানী ঢাকায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
দীর্ঘ অনুসন্ধানী এ সংবাদটি চলতি সংখ্যা (২ ফেব্রুয়ারি বাজারে এসেছে) ঠিকানায় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।
ঐ সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে প্রতি বছর ডিভি লটারীর ব্যবস্থা করা হয় এবং এখন পর্যন্ত সেই লটারীতে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আগে ডাকযোগে লটারীতে অংশগ্রহণের আবেদন পাঠাতে হতো। এখন ই-মেইলে পাঠাতে হচ্ছে। ডাকযোগে প্রেরিত আবেদনের সময়েও ঢাকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় জিপিও’র কর্মকর্তা এবং ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন অসৎ ব্যক্তিদের যোগসাজশে।
এখনও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে জালিয়াতির টেকনিক পাল্টেছে। রাজধানী ঢাকার মতিঝিল, মিরপুর, ফার্মগেইট এলাকায় অফিস নিয়ে এই সংঘবদ্ধ চক্রের তৎপরতা চালানো হচ্ছে। জেলা-উপজেলাতেও রয়েছে এদের এজেন্ট। কলেজে ¯œাতক শ্রেণীতে ভর্তির ফরম পূরণ করার সময় যাবতীয় তথ্য দিতে হয়।
একইভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়েও যাবতীয় তথ্য সরবরাহপূর্বক আবেদন করতে হয়। ডিভি লটারীতে অংশ নেয়ার জন্যে যে সব তথ্য দরকার তার সবটাই রয়েছে ঐ ফরমে। শুধু বৈবাহিক অবস্থা এবং মা-বাবার বিস্তারিত তথ্য থাকে না। গত ক’ বছরে ডিভি লটারীতে আবেদন না করেও ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগত ডজনখানেক বাংলাদেশীর সাথে কথা হয় এ সংবাদদাতার। তারা নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আসবো এটা স্বপ্নেও ধারণা ছিল না।
ডিভি লটারীতে কখনোই আবেদন করিনি। এতদসত্বেও নাম উঠেছে। অজ্ঞাত লোকজনের কাছ থেকে ই-মেইল কিংবা চিঠি পেয়ে বুকটা নেচে উঠে। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরবর্তীতে তা সত্যে পরিণত হয়।
আর এ অবিশ্বাস্য কাজটি হাসিল করতে ১২ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাসিক কিস্তি হিসেবে বকেয়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। তারা মীরপুর, মৌলভীবাজার, বরিশাল, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, সিলেট সদর, দিনাজপুর, বিক্রমপুরের বিভিন্ন কলেজ/ভার্সিটিতে পড়তেন। আবার কেউ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে আবেদন করেছিলেন। সে সব প্রতিষ্ঠান থেকেই তাদের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে ঐ চক্র ডিভি লটারীতে তাদের নামে আবেদন পাঠিয়েছিল।
তারা বলেন, নির্দিষ্ট লোকের সাথে সাাতের পর হান্ড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দেয়া হয় ভিসার। ভিসা ইস্যুর পরই টাকা দাবি করা হয়। এ ব্যাপারে একটি চুক্তিপত্রেও স্বার নেয়া হয়। টাকা না দিলে ভিসা হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়। এসব প্রবাসী আরো জানান, আমরা অবিবাহিত ছিলাম।
কিন্তু ঐ চক্রটি আমাদের সেকেন্ড লেটারে বিবাহিত হিসেবে উল্লেখ করে এবং স্ত্রীর নাম/ছবি যুক্ত করে দেয়। এেেত্র চক্রটিকে কোন টাকা দিতে হয়নি। অধিকন্তু মূল আবেদনকারীর টিকিটও ফ্রি দেয়া হয়েছে। কথিত স্ত্রীসহ নিউইয়র্কে অবতরনের পরই মহিলাটি তার সত্যিকারের স্বামীর কাছে চলে গেছেন এবং গ্রীণকার্ড লাভের পর ডিভোর্স হয়েছে। এই প্রবাসীরা জানান, আমরা কয়েকজন এখনও চুক্তি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করতে পারিনি।
মাসিক কিস্তিতে টাকা দিচ্ছি। একজন বলেন, ঐ চক্রের এক সদস্য কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিউইয়র্কে আসবে পাওনার টাকা নিতে। টাকা না দিলে গ্রীণকার্ড বাতিলের হুমকি দেয়া হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে হুমকিও দেয়া হয়।
অনুসন্ধানকালে আরো জানা গেছে, ঐ পদ্ধতিতে ডিভি জয়ী এক বাংলাদেশী মহিলার স্বামী ও সন্তান রয়েছে।
কিন্তু আবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। এখন মহিলাটি যদি তার বিয়ের তারিখ হালনাগাদ করে ডিভিতে স্বামীকে যুক্ত করতে সম হলেও সন্তানকে কোনভাবেই সাথে নিতে পারবেন না। কী হবে সে পরিবারের অবস্থা? এ নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় স্বামী-স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ কোনভাবেই হারাতে চান না। ঐ চক্রটি দাবি করেছে ২৫ লাখ টাকা। ২০ লাখ টাকায় সাব্যস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ইমিগ্রেশনের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বৈধপথে কখনোই তারা ঐ সন্তানকে নিজের সন্তান দাবি করতে পারবেন না যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী। তবে দত্তক সন্তান হিসেবে কয়েক বছর পর তারা তাকে সাথে আনতে পারবেন। কিন্তু কেউ যদি অভিযোগ করে এবং সন্তানের ডিএনএ টেস্ট হয় তাহলে আম-ছালা উভয়ই যাবার আশংকা রয়েছে। তাই সন্তানের কারণেও এহেন ফাঁদে পা না দেয়াই শ্রেয় বলে এটর্নীরা উল্লেখ করেন। কারণ, দিন যত যাচ্ছে ইমিগ্রেশনের আইন তত কঠোর হচ্ছে।
অনুসন্ধানকালে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশের ঐ জালিয়াতি চক্রের সাথে নিউইয়র্কের কেউ কেউ জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশের কলেজ-ভার্সিটি থেকে চুরি করা তথ্য নিউইয়র্কে এনে তা ই-মেইলে প্রেরণ করা হচ্ছে ডিভি লটারীতে। এরপর লটারীতে জয়ী হবার পর নিউইয়র্ক থেকেই সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশীর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আবেদন করার সময় যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হয় জালিয়াতচক্রের। বিজয়ের প্রথম চিঠি পায় তারা।
এরপরই মূল আবেদনকারীর কাছে জালিয়াত চক্র চিঠি পাঠায় অথবা ই-মেইল করে তাদের সাথে অবিলম্বে যোগাযোগের জন্য। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে ঐ চক্রের নিয়োজিত দালাল পাঠানো হয় প্রত্যন্ত গ্রামে অথবা উপজেলা/জেলা সদরে। জানানো হয় সোনার হরিন প্রাপ্তির তথ্য। এক পর্যায়ে আবেদনকারীকে কনভিন্স করে ঢাকায় ঐ চক্রের কাছে হাজির করা হয়। শুরু হয় দেন-দরবার।
বাংলাদেশে ফটো আইডি চালু হচ্ছে সর্বত্র। তেমনি সময়ে কলেজ-ভার্সিটি অথবা অভিযোগ অনুযায়ী পিএসসি থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির এহেন তৎপরতা অব্যাহত থাকলে ডিভি লটারীর মত আরো অনেক েেত্রই জালিয়াতি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সুধীজন। এমনকি এক পর্যায়ে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানের একটি ঠিকানা ব্যবহার করে ডিভি লটারীতে অংশগ্রহণ এবং জয়ী হবার পর ভিসা লাভে যাবতীয় সহায়তা প্রদানের জন্যে ই-মেইল পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রান্তে। ঐসব ই-মেইল প্রাথমিক দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কোন অংশ।
ফলে সহজ-সরল মানুষেরা ই-মেইলের জবাব দিচ্ছেন। বিনিময়ে অর্থ দাবি করা হচ্ছে। অনেকে অর্থও দিচ্ছেন। বাংলাদেশেও ঘটছে এহেন অপতৎপরতা। ঢাকাস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাচেলরদের আবেদন লটারীতে উঠলে জালিয়াত চক্রের জন্য সেটি পোয়াবার হয়। কারণ, ঐ ব্যাচেলরের সাথে অন্যের বউকে বিয়ে দিয়ে ২৫/২৬ লাখ টাকার বিনিময়ে ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করা যায়। এ লটারীতে জয়ী মূল আবেদনকারীকে কোন খরচও বহন করতে হয় না। ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে বিমানের টিকিট পর্যন্ত সবকিছু ফ্রি দেয়া হয়। অর্থাৎ সাজানো বিয়ের নায়িকার কাছ থেকে নেয়া ২৫/২৬ লাখ টাকার মধ্যে থেকে ৫/৬ লাখ ব্যয় করা হয় আবেদনকারীর পেছনে।
অবশিষ্ঠ অর্থ জমা হয় জালিয়াত চক্রের তহবিলে। এভাবে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরতদের সাথে তাদের স্ত্রীরা মিলিত হবার সুযোগ পাচ্ছেন এবং এক পর্যায়ে ঐ স্ত্রীর মাধ্যমে কয়েকজনের গ্রীণকার্ড হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আরো জানা গেছে, অনেক সময় ২০/২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে লটারীতে জয়ী ব্যক্তির পৈত্রিক সম্পদ দলিল-রেজিস্ট্রি মূলে বন্দক দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। এরপর চুক্তি অনুযায়ী সমুদয় অর্থ পরিশোধের পর জমির দলিল ফেরৎ দেয়া হয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভিসা ইস্যুর পর পাসপোর্ট হাতে দূতাবাস থেকে বের হয়ে আসার সাথে সাথে সংঘবদ্ধ ঐ চক্রের লোকজন পাসপোর্ট কেড়ে নেয় এবং ভিসাধারীকে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়। লেন-দেন বাকি থাকলে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়। নইলে ভিসা বাতিলের হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। (নিউইয়র্ক থেকে এনা )
link..http://www.probashaprotidin.com/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।