আমেরিকান সরকার আমাদের দেশের অভাগাদের বিরাট একটা উপকার করার সংকল্পে প্রতি বছর লটারী খেলছে। এবার নাকি সারা বিশ্ব থেকে আগামী ডিভির জন্য ১ কোটি ২৫ হাজার মানুষ তাদের ভাগ্য এই সরকারের হাতে ছেড়েছে, তার মধ্যে ৭৮ লাখ এপ্লিকেশন এসেছে বাংলাদেশ থেকে (সোর্সটা আমার সঠিক জানা নেই)। খবরটা শুনে ১ সেকেন্ডের জন্য থমকে গেছিলাম। আজ প্রায় ৬ মাস আমি নিউ ইয়র্কে আছি। বাংগালীদের প্রানপ্রিয় মিলনক্ষেত্র জ্যাকসন হাইটের উপর দিয়েই আমার রোজকার আসা যাওয়া।
আমাকে এখানে হাত ধরে জীবন যাপন শেখানোর মত কেউ নেই। এখানে আসার প্রথম দিকে অনেক কিছুর জন্য প্রায়ই আমাকে যেতে হত ঐ এলাকায়। তখন সামার চলছে, জ্যাকসন হাইটে এক একটি পা বাড়ালেই যা চোখে পড়ে তা হলো অসংখ্য দোকানপাট, তাতে কাজ করছে বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্তানী, নেপালী, ভুটানী মানুষজনসহ আরো অনেক দেশের মানুষ। আর রাস্তায় কিছু মানুষ দোকানের ভেতরে যাবার জন্য মাতৃভাষায় ডাকাডাকি করেন। প্রথমদিকে বেশ মজা পাচ্ছিলাম, উপভোগও করতাম।
একদিন জানলাম এদের অনেককেই ঠিকমত মজুরী দেয়া হয়না। মজুরী চাইলে ছাটাইয়ের ঘটনাও কম না। এদের অনেকেরই আইনী কাগজপত্র না থাকার তারা মামলায় যায় না। এরপর থেকে ব্যপারটা উপভোগ করিনি আর কোনদিন।
এর মাঝে পরিচয় হল আমার থেকে ঠিক ১৫ দিন আগে আসা এক ডিভি বিজয়ী পরিবারের সাথে।
স্বামী স্ত্রী দুজনেই মৌলভিবাজারে কোন এক গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তাদের পরিবারে ৪ সন্তান। দেশে জমানো টাকা পয়সা নিয়েই শুধু আসেননি উনারা, সাথে এনেছেন তোষক, বালিশ, ময়দা, ডাল ব্লেন্ডার, জুসার (যা এখানে কখনই ব্যভার করতে পারবেন না কারন আমাদের দেশের ইলেক্ট্রনিক্স এখানে চালানো যায় না) – এমন আরো অনেক কিছু। আমার মতই তাদেরও আপন বলতে এখানে তেমন কেউ নেই। দূর সম্পর্কের এক বোনের বাসায় উনারা ১৫ দিন থাকার পর তাদের সাহায্যে আরেক আত্মীয়ের বাসা ভাড়া করে দেয়া হয়।
যতদিনে আমার সাথে পরিচয় ততদিনে তারা দিশেহারা। তারা কি কাজ করবেন জানেনা, বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি এমন অনেক বিষয় নিয়ে তারা তখন চিন্তিত। এর মাঝে ভদ্রলোককে একটা কাজ জোগার করে দেয়া হয় ৮ ঘন্টায় ৫০ ডলার। উনার বাড়ি ভাড়া ১২০০ ডলার, উনার স্ত্রী ইদানিং বাংগালী বাচ্চাদের আরবী পড়াচ্ছেন। শুনে ভালো লাগলো এই ভেবে যে আমারা শত বিপদেও হাল ছাড়িনা।
একবার ভাবলাম সেই সব ডিভি বিজয়ীদের কি হয় যাদের এইটুকু সাহায্য করার মত কেউ নেই এখানে?
আমি ভাগ্য পরিবর্তনের বিপক্ষে নই। যে বিষয়টা আমাকে প্রায়ই ভাবনায় ফেলে তা হলো এই মানুষগুলো এদেশে আসার আগে নূন্যতম একটা ওরিয়েন্টেশন যদি পেত তাহলে তারা অকূল সাগরে হাতরে বেড়াতো না। অথবা আসার আগে বুঝতে পারতেন আসাটা লাভজনক কিনা। আমেরিকা ইমিগ্রান্টদের দেশ। এদেশের উন্নয়নের জন্যই এত প্রোগ্রাম।
বুঝতে পারছি না এই মানুষগুলোকে এনে এভাবে পানিতে ফেলার কি কারন? শুভঙ্করের ফাঁকিটা কোথায়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।