শেয়ার বাজার দরপতনের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার নেপথ্যে নায়করা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। তাদের স্পর্শ করার ক্ষমতা কারো নেই। নির্মম, নির্দয়ভাবে প্রায় ৪০ লাখ বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তারা। ৪০ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও তার পরিবারসহ প্রায় ২ কোটি মানুষ নিদারুণ আর্থিক কষ্টের শিকার। এই নির্দয় লুণ্ঠনকারীদের আলস্নাহ বিচার করবেন।
গতকাল রবিবার নবমবারের মত শেয়ার বাজারে দরপতনে নিঃস্ব হওয়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বেশ কয়েকজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অপরদিকে বিভিন্ন সংস্থা শেয়ার বাজারে দরপতনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারীদের সনাক্ত এবং কিভাবে আত্মসাৎ করেছে তার বিস্তারিত তথ্য উলেস্নখ করে ইতিমধ্যে সরকারের শীর্ষ প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তারপরও শেয়ার বাজারে দরপতনের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ গতকাল শেয়ার বাজারে দরপতন হয়েছে। পাশাপাশি বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শেয়ার বাজারে কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠনকারী কিছুসংখ্যক অর্থলোভীকে নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। তাদের এত ক্ষমতার উৎস কি? অনুসন্ধান ও বিভিন্ন সংস্থা এবং বিনিয়োগকারীসহ ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, শেয়ার বাজারে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারীরা ক্ষমতাধর দুইটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং কেউ কেউ দলীয় নেতা। রাজনীতি নিয়ে উভয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে রাজপথে ও জনগণের সামনে কথা বলছে। দৃশ্যপট এমন যে, উভয়ের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক।
আসলে তা নয়, একশ্রেণীর নেতা উভয় দলের মধ্যে কোটি কোটি টাকা ভাগাভাগিতে একে অপরের জানিদোস্ত। কি মজার ব্যাপার শেয়ার বাজারের কোটি কোটি টাকা কেলেংকারির জন্য উভয় দল থেকে একে অপরকে দায়ী করে এবং সরকারের চরম ব্যর্থতার কথা উলেস্নখ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলের এক ক্ষমতাধর মন্ত্রীর পুত্র, অসীম ক্ষমতাধর দুই এমপি ও তিন ব্যবসায়ী এবং বর্তমান আওয়ামী লীগসহ মহাজোট সরকারের দুই এমপি, দুই ক্ষমতাবান শিল্পপতি ব্যবসায়ীসহ উভয় দলের ১১ জন প্রত্যক্ষভাবে শেয়ার কেলেংকারিতে জড়িত। এছাড়া তাদের সঙ্গে আরো কয়েকজন জড়িত বলে জানা গেছে। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত নবম দফা শেয়ার বাজারের দরপতন ঘটিয়ে কোটি কোটি টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শেয়ার বাজার থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা শেয়ার বাজারে বার বার দরপতন ঘটিয়ে কোটি কোটি টাকার কেলেংকারি ঘটনার দীর্ঘ তদন্ত করেছে। তদন্ত করে উভয় দলের ১১ জন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী শেয়ার বাজার কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। বিষয়টি সরকারের শীর্ষ প্রশাসনকে অভিহিত করেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, শেয়ার বাজারে কোটি কোটি টাকা লুটপাটে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কতিপয় কর্তা জড়িত।
বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিধি অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ তাদের মূলধনের ১০% এর বেশি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে না। কিন্তু অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক নীতিমালা লংঘন করে তাদের মূলধনের অধিকাংশই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার ফলে শেয়ারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এ নীতিমালা অনুসরণের জন্য আদেশ দেয়ায় এবং তদারকি করায় ব্যাংকসমূহ তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করায় শেয়ার বাজারে দরপতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ ডিসেম্বর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগের দুই হাজার কোটি টাকা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এতে শেয়ার বাজারে দরপতন ঘটে যায় বলে সংস্থার তদন্তে উলেস্নখ করা হয়।
১৯৯৬ সালে উক্ত জড়িত ব্যবসায়ী ও নেতারা কৌশলে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন ঘটিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়। সেই উভয় দলের নেতারা এবার শেয়ার বাজারে একই কেলেংকারি ঘটিয়েছেন। এছাড়া ১৯৯৬ সালে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন শেয়ার বাজারে দরপতনের সঙ্গে ১৫টি কোম্পানি জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে মামলা দায়ের করে। সেই মামলা এখন হিমাগারে।
এসব লুণ্ঠনকারী কোম্পানি শেয়ার বাজারে এখন তৎপর রয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।