কোনো রোগী নিয়ে গেলেন সরকারী মেডিকেলে। বহু হয়রানী শেষে ভর্তি করালেন। অবশ্যই চাইছেন- ১০ জন ডাক্তার দৌড়ে আসবে। বড় বড় ডাক্তারদের তত্বাবধানে সেরে উঠবে আপনার রোগী। কিন্তু বাস্তবে কখনোই হয়না বলে তাদের গুষ্টি উদ্ধারে লেগে যান।
সমস্যাটা সরকারী প্রোটোকলের। এই প্রটোকলগুলো উন্নত বিশ্বে কঠোরভাবে মানা হয়, আমারা বাঙ্গালীয় কায়দায় মেনে চলি।
মেডিকেলের স্বাস্হ্যসেবা নেবার আগে জানুন আমাদের সেবার স্তর ৩টিঃ
১. প্রাইমারী হেলথ কেয়ার (উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেক্স)
২. সেকেন্ডারী হেলথ কেয়ার (সদর হাসপাতাল)
৩. টারশিয়ারী হেলথ কেয়ার (মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়)
ধরুন আপনার জ্বর, সর্দি।
প্রটোকল আনুসারে আপনার যাবার কথা প্রাথমিক সেন্টারে (যেটা বিদেশে হয়ে থাকে)। সেখানের MBBS ডাক্তার এটার ট্রিটমেন্ট দেবে।
তবে সিরিয়াস কিছু দেখলে তাহলে পাঠিয়ে দেবে সেকেন্ডারী বা টারশিয়ারী লেভেলে।
কিন্তু দেশের মানুষভাবে MBBS ডাক্তাররে ডাক্তারই ভাবে না! পাবলিক চায় তার সর্দিও সারাবে FCPS পাশ দেয়া বড় ডাক্তার! তাদের এই সাইকোলজিক্যাল সমস্যাই সৃষ্টি করে প্রটোকল ব্রেকের।
তাছাড়া, আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সুবিধা অনেক সস্তা। মাত্র ৩০০ বা ৫০০ টাকার বিনিময়ে খুব সহজে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাগাল পেতে পারি। যেটা উন্নত বিশ্বে অনেক খরচের ব্যাপার।
সেজন্য প্রাইমারী কয়োরগুলো শুধু গরিবেরই আস্তানা। সর্দি জ্বরেও আমরা ধরণা দেই বিশেষজ্ঞের কাছে আর ভারী করতে থাকি তাদের পকেট।
মেডিকেলে ভর্তিরপর আমাদের কথাঃ ইন্টারনী বা ছোট ডাক্তার (রেজিস্টার) নয় , আমরা চাই হাসপাতালের সবচেয়ে বড় ডাক্তার ২৪ ঘন্টা আমাগো পাশে খারায়া থাকবো। ইন্জেকশনটাও তিনিই দিবো।
মেডিকেলের প্রটোকল অনুসারেই আপনার চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
একটা রোগী ভর্তি হলে রেজিস্টার তার ট্রিটমেন্ট করবেন, রেজিস্টারের আন্ডারে থাকবে ইন্টারনীরা। বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যন্য বড় ডাক্তারদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে শিক্ষা দেয়া ও চেকআপ করা তারা কোনো ভুল করছে কিনা সাথে সঠিক নির্দেশনা দেয়া। তেনারা কাজটা প্রতিদিন রাউন্ডের মাধ্যমে করে থাকেন।
এই স্পেসিয়ালাইজড ডাক্তাররা কখনোই সরাসরি কোনো রোগীর তত্বাবধানে থাকেননা এই জিনিষটা আমাদের জানা নেই। শুধুমাত্র রেজিস্টাররা ফেইল করলে তারা আসেন, সরাসরি ট্রিটমেন্ট দেন, অথবা মেডিকেল বোর্ড বসান।
তাই আমাদের বক্তব্য হয়ঃ বড় কোনো ডাক্তার তো আমারে দেখলো না!
মেডিকেলে প্রত্যেকের দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া থাকে। সেখানে ভুল হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই। একজন ডাক্তারের দেয়া চিকিৎসা কমপক্ষে ১০ জন ডাক্তার চেকআপ করেন, স্পেশালিস্টগন রাউন্ডের সময় সেটা বিশ্লেষণ করেন। কেউ ভুল করলে তাকে চরম অপমান করা হয়। কিন্তু, তারপরও আমাদের ধারণা মেডিকেলে নয় প্রাইভেট চেম্বারেই ডাক্তাররা ভালো করে দেখেন।
রোগীদের এই সাইকোলজিতে হাসা ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নেই। মেডিকেলে, ডাক্তার যখন প্রেসক্রিপশন লেখেন, সেটা অনেকভাবে বিশ্লেষণের সুযোগ অনেক। অন্যন্য ডাক্তারেরা এটা পড়েন, শিক্ষার্থীরা সেটা দেখে শিখে। তাই এখানে ডাক্তাররা চরমভাবে সতর্ক থাকে যাতে কোনো ভুল না হয়। কিন্তু প্রাইভেট চেম্বারে তারা কারোকাছে দায়বদ্ধ নয়, কোনো বিশ্লেষণও হয়না।
তবুও আমরা চেম্বারেই বেশি ভরসা পাই, কারণ ফ্রি জিনিষে আমাদের ভরসা নাই!
যার দাম যত বেশি, সেটি ততভালো।
মেডিকেল দেশের একটি টারশিয়ারী বা সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা ক্ষেত্র। ছোটখাট সমস্যা নিয়ে অনেকেই চলে আসে যেগুলো সমাধান করার কথা প্রাইমারী বা সেকেন্ডারী লেভেলে। ফলে এখানকার চাপ বেশি, চাপ সামলাতেই ডাক্তারেরা হিমশিম খান, প্রকৃত রোগীরা পড়েন বিপাকে।
এরকম হাজারো সমস্যায় জর্জরিত হলেও কিছু মানুষ সত্যিকার অর্থে সেবা দিয়ে যান।
(সেবার কথা এজন্যই বলছি, প্রাইভেটে ২৫ হাজার টাকার চাকরী না নিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকায় বা বিনা টাকায় অনারারী হিসাবে ২৪ ঘন্টা সেবা দিয়ে যান অনেকেই) । সারাদিন মাত্র ৮ ঘন্টা অফিস করে বাড়ি ফিরে আপনার যদি ক্লান্ত ও বিরক্ত লাগে তাহলে ভেবে দেখবেন, কিছু মানুষ সারাদিন অন্যকে সেবা দিয়ে হয়তো খেতে বসে, তখন কোনো রোগী এলে না খেয়েই চলে যায়, মাঝরাতেও ঘুম থেকে উঠে বিরক্ত প্রকাশ না করেই সেবা দেয়। এরমাঝেই পড়াশোনার চাপ নেন, নেয় পরিবারের চাপ।
মানুষ শুধু চেম্বারে বসা বড় বড় ডাক্তারদের সুখের কাহিনী দেখে, কখনো দেখেনা, রেজিস্টার ও ইন্টার্ণ ডাক্তারদের পরিশ্রম ও বিসর্জনকে। এই পোস্টের মাধ্যমে আমি তাদের শ্রদ্ধা জানাই কারণ তারাই প্রকৃত সেবক।
ফেসবুকে কর্ণেল সামুরাই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।