আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি বেসরকারী মেডিকেলের একজন ছাত্র বলছি.........

........ আজকে সকালে বেসরকারী মেডিকেল বিষয়ক একটি পোস্ট পড়ে মনটা একটু দমে গেল । সেই পোস্টের বিভিন্ন কমেন্টে মন্তব্যকারীরা প্রাইভেটের স্টুডেন্টদের ঘিলু, আচার-আচরণ, এপ্রনপ্রিয় মনোভাব, পাসের পদ্ধতি, বেসরকারী থেকে পাশ করা ডাক্তারদের মান, সেই ছাত্রদের পরিবারের টাকা-পয়সা ইত্যাদি টপিক নিয়ে কমেন্ট করেছেন । এই প্রসংগগুলোর মাঝে যেই বিষউগুলো নিয়ে আমি কিছুটা হলেও জানি তা আজ খন্ডন করার চেষ্টা করব । আগেই বলে রাখি, আমি আজ যা বলব সেটা একান্তই আমার ব্যাপার । অন্য কোণ বেসরকারী মেডিকেল স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে আমার কথা গুলো খাটতেও পারে নাও খাটতে পারে ।

কোন প্রাইভেট মেডিকেলের মানই নূন্যতম পর্যায়ের ও ভালো না। এরা চরম ফালতু। যারা মেধা তালিকায় থাকে ভর্তি পরিক্ষার সময় তারা বেশিরভাগই প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হয় না টাকার অভাবে। অথচ আজব এই দেশে আবাল গাধা গুলা যায় ডাক্তার হওয়ার জন্য। কি অবস্থা এসব মেডি্কেলের তা যেমন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি তেমনি পত্রিকা থেকে তো প্রতি মুহুর্তেই জানা......... এই উপরের প্যারাটি যাঁর মন্তব্যের অংশবিশেষ আমি কিন্তু তাঁকে দোষ দিচ্ছি না ।

কারণ, বেসরকারী মেডিকেল সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা মানুষের সংখ্যা কম নয় । এখন আমি নিজে চেয়েছিলাম জাতীয় মেধাক্রমে ৫২২৯ পজিশনে থাকার পর দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে দেখতে । শুনেছি ২০১০সালের ভর্তি পরীক্ষায় যে ৫২৫২ পজিশনে ছিল সে নাকি ২০১১ সালে দ্বিতীয়বারের মত পরীক্ষা দিয়ে সিলেট মেডিকেলে চান্স পেয়ে গিয়েছে । এসব কথা শুনার পর আমি ভাবি, ১টা বছর ভালমত পড়লে কি আমিও চান্স পেতাম না??? কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে এক বছর বসিয়ে রাখার জন্য কোনভাবেই রাজি ছিল না । কাজেই পারিবারিক ব্যাংক ব্যালান্সের বারোটা বাজিয়ে আমাকে বেসরকারী মেডিকেলে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত হয় ।

মেডিকেলে প্রায় ৩০০০ এর মত সিট আছে সরকারী কলেজগুলোতে, এই সিটগুলোর সিংহভাগ(২২০০-২৩০০) দখল নেয় দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থীরা, এখন আপনারাই বলুন, আমি চার মাসের প্রিপারেশন নিয়ে কি ষোল মাসের প্রিপারেশনওয়ালদের সাথে পেরে উঠব? আমি যদি অপেক্ষা করতামও, আমার জন্য হয়ত নতুন পরীক্ষার্থী গরিব কোন মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী হয়ত আটকে যেত । “বেসরকারী মেডিকেলে পড়লে মানুষ ভাল চোখে হয়ত দেখবে না……” এমন আশঙ্কা নিয়ে প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছিলাম । এসব মেডিকেলের পোলাপানরে দেখবেন বৈশাখ মাসের ঠাডা মারা রোদেও গায়ে এপ্রন চড়ায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! এদের মেডিকেলে পড়ার দৌড় ওই গায়ে এপ্রন পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি যে আমি বৈশাখ মাসের তীব্র গরমের মাঝেও এপ্রন গায়ে দিয়ে ঘুরেছি, রিকশায় করে বাসায় এসেছি । কিন্তু কেন এসেছি জানেন??? কাঠফাটা গরমে ক্লাস-পরীক্ষা দিয়ে ঝরনার মত ঘেমেছি, সেই ঘাম আবার শরীরে শুকিয়েছে, আবারো ঘেমেছি……এই ঘাম-শুকানোর খেলায় ডার্ক কালারের শার্টে(কলেজের নিয়ম, টি-শার্ট পরা চলবে না) অনেক অংশ জুড়ে সাদা সাদা দাগ পড়ে যায় ।

এই বেশভূষায় মানুষজনের সামনে বাসায় ফিরতে অস্বস্তি লাগে, তাই গরম স্বত্বেও এপ্রন গায়ে দিয়েই বাসায় ফিরি । এইছাড়া ডাক্তার হওয়ার পরেও বেসরকারী মেডিকেল থেকে পাস করা ডাক্তারদের নিয়ে অনেক মতামত আছে মানুষের । যেহেতু আমি ঐ পর্যায়ে যাইনি তাই সে ব্যাপারে এখনি বলতে পারছি না । আর বেসরকারী হাসপাতালের ব্যাপারে একটা কমন দুর্নাম যে ভালো হাসপাতাল, ক্যাম্পাস, হোস্টেল ইত্যাদি থাকেনা । আমি আমার কলেজে(কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ) ভালো হাসপাতাল, প্রশস্ত ক্যাম্পাস আর পর্যাপ্ত সিটওয়ালা হোস্টেল(একাধিক) দেখেছি ।

আর যদি পড়াশোনার ব্যাপারে জানতে চান তাহলে বলি, আমার কখনো মনে হয়নি বেসরকারী হওয়ার কারণে পড়াশোনার চাপ ছাড়া অন্য কিছু বেশি পেয়েছি । আর এখানে যারা পাশ করতে পারবে তাদের খুব ভালো করে বাছাই করা হয় । ক্লিয়ারেন্স পাওয়া অনেক কঠিন । এমন বেসরকারী মেডিকেল আরো ৫-৬টা আছে বলেই জানি । বাকিগুলোর ব্যাপারে ধারণা নেই ।

অনেকের ধারণা, বাংলাদেশ মেডিকেল প্রাইভেটগুলোর মাঝে বেস্ট । কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেলের সেই দিন আর নেই । অনেকে কেবল ঢাকার প্রাইভেট মেডিকেলগুলো দেখেই মন্তব্য করেন, এটা ঠিক না । আমাদের ব্যাচে পড়ে উত্তরার একটা ছেলে(এই ছেলেটার কনসেপশন এত ভালো যে তাঁর ভাইভা স্যারেরা ভিডিও করতে চেয়েছিলেন একবার), তাকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম উত্তরায় তো ২-৩টা মেডিকেল আছে সেগুলোতে ভর্তি না হয়ে ময়মনসিং হে কেন আসলা?......সে বলেছিল, “ঐগুলা ভাল না……এই কলেজটাই(কমিউনিটি বেজড) আমার ভালো লাগছে……” । যদিও প্রাইভেটের ছাত্র তারপরও বলছি, যত্রতত্র প্রাইভেট মেডিকেল বানিয়ে মেডিকেল কলেজ এত সস্তা হতে দেয়া উচিত নয় ।

শুনেছি ধানমন্ডিতেই নাকি কয়েক বছরের মধ্যে ৭টা মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়ে যাবে । আমার প্রশ্ন, এই মেডিকেলগুলো বিএমডিসির পূর্ণাংগ হাসপাতাল, ক্যাম্পাস, হোস্টেল ইত্যাদি বিষয়ক নীতিমালা কোন যাদুবলে মানতে পারবে??? যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার তামশা কে বন্ধ করবে??? কারণ এইসবের পেছনে তো বিখ্যাত ডাক্তাররাই আছেন । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.