আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাক্তারদের জীবন-২



শুরু হলো মেডিকেল জীবনের পথ চলা। ঘুম থেকে উঠে ৭.০০ টার সময় চলে যাও ডিসেকশন ক্লাসে, মৃত লাশের পাশে দাড়িয়ে ২.৫০ ঘন্টার ক্লাস করো । এর পর এক ঘন্টা করে দুটো লেকচার ক্লাস কর তারপর আবার ২ ঘন্টার একটা টিউটরিয়াল ক্লাস কর। অবশেষে ২.০০ টার দিকে হোস্টেলে গিয়ে নিজের জৈবিক কাজ গুলো সমাধান করতেই দেখা যায় বিকেলটা শেষ। এরমধ্যে যারা একটু বেশি পড়াশুনা করে তারা এই বিকেলের সময়টুকুতেই বই নিয়ে বসে পড়ে, আর চেষ্টা চলে কঠিন কঠিন মেডিক্যোল টার্ম গুলো মুখস্ত করার পালা।

শুধু যদি ইংলিশে দেহের সব অঙ্গের নাম জানলে চলতো তাইলে ভালোই হতো , কিন্তু দুঃখের বিষয় বইগুলোতে লেখা মেডিক্যোল টার্মে যার অর্থ বের করার জন্য প্রথম প্রথম মেডিকেল ডিকশনারীর পাশাপাশি নরমাল ইংলিশ ডিকশনারীও রাখতে হয়। প্রথম ৬/৭ মাস মেডিকেল টার্মগুলো সাথে পরিচিত হতেই চলে যায়। সন্ধার পর পড়তে বসলে সব পড়া যদি নিয়মিত শেষ করার ইচ্ছা থাকে তাহলে দেখা যায় রাত ১/২ টা বেজে গেছে। তখন অনেক সময় দেখা যায় সকাল বেলার ক্লাস ধরার তাগিদে পড়া শেষ না করেই ঘুমিয়ে যেতে হয়। আর যে পড়াটা বাকি রইলো এইটা আর শেষ করা যায় না।

কারন কয়েকটা ক্লাস শেষ হলেই শুরু হয় আইটেম নাম মেডিকেল লাইফ এর প্রথম মৌখিক পরীক্ষা যার প্রস্তুতি নিতে হয় আবার ঐ পরীক্ষার পূর্বের রাতেই। এরপর ৭-৮ টা আইটেম পরীক্ষার পর আবার এগুলো উপর হয় কার্ড পরীক্ষা , যেখানে থাকে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা । এরপর দুটো কার্ড শেষ হলে দিতে হয় টার্ম নামক পরীক্ষা, যেখানে আবারও লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়। এভাবে নিয়মিত পরীক্ষার উপর পরীক্ষা চলতেই থাকে । ইচ্ছা করলেই অনিয়মিত হওয়ার সুযোগ নেই।

কারন কোন একটা পরীক্ষা অসুস্থ বা অন্য কারনে দিতে না পারলে অবশ্যই পরবর্তী পরীক্ষাটা শুরু হওয়ার আগেই ঐ টায় পাশ করতে হয় , না হলে সে পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারে না । এইজন্য যদি কেউ একবার অনিয়মিত হয় তাহলে তার বারোটা বেজে যায়। কিন্তু আমার জানামতে ভার্সিটিগুলোতে বন্ধুরা ক্লাস না করে ,নিয়মিত পড়াশুনা না করে পরীক্ষার আগে এক দুই মাস পড়েই ৩৩/৪০% মার্ক পেয়ে পাশ করে যায়। যেখানে মেডিকেলে একটা বিষয়ে পাশ করতে হলে তাকে অবশ্যই ৬০% মার্ক পেতে হয় ,যা দ্বারা ভার্সিটি গুলোর ফাস্ট ক্লাস মার্ক হয়। দেড় বছরের মধ্যে এনাটমি(দেহের নরমাল গঠন) , ফিজিওলজি ( দেহের অঙ্গগুলোর নরমাল কাজ) এবং বায়োকেমিষ্ট্রি ( দেহের মধ্যের নরমাল রাসয়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া) এই তিনটি বিষয়ের প্রত্যেকটির তিনটি করে টার্ম পরীক্ষায় পাশ করার পর প্রথম বারের মত প্রফেশনাল-১ নামক বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ পাওয়া যায়।

এই প্রফেশনাল পরীক্ষার লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক প্রতেক ক্ষেত্রে ৬০% মার্ক পেলেই তাহলে সে ঐ বিষয়ে পাশ করে। যদি কোন একটা বিষয়ের কোন একটা ইভেন্টে সে ৬০% এর কম পায় তাহলে সে ঐ বিষয়ে ঐবারের জন্য অকৃতকার্য বলে গন্য হয়। তখন আবার তাকে ছয় মাস পর ঐ বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হয়। এভাবে তাকে মেডিকেলের প্রথম ধাপ ( নরমাল বিষয়) পার করে দ্বিতীয় ধাপের জন্য যোগত্যা অর্জন করতে হয়। একটা ঘটনার কথা না বললেই নয়- প্রফেশনাল নামক পরীক্ষা দেয়ার সময় অনেকেই খাওয়া-দাওয়া ভুলে যায় এমনকি পরীক্ষার দিন নিজের এপরোন ভেবে রুম পরিস্কার করার কাপড় কাধে নিয়ে পরীক্ষার হলের দিকে রওনা দেয়ার ইতিহাসও আছে।

তো আজ এ পযন্তই...... এরপর অনেক কথা আছে যা হয়তো বাদ পরে গেছে.......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.