বেশ কয়েকদিন যাবৎ প্রশ্ন উঠেছে মেজর জিয়া প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধা ছিলেন কিনা? প্রথমেই বলে নেই আমার জন্ম যুদ্ধের কিছুদিন পরে তাই আমার দৌড় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত দেশী বিদেশী বই পড়া পর্যন্ত। তাই যদি আমার তথ্যে কোন ভুল থাকে তবে আশা করছি আপনারা তা সংশোধন করে দেবেন।
সে দিন খবরে দেখলাম একজন মন্ত্রী বলছেন, ‘জিয়া মাত্র ৪ মাস সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। ’ হ্যাঁ, বই পত্র বলে তথ্যটি সত্য। জিয়া মাত্র এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ১ নং সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন।
এবং অনুরূপ ভাবে মেজর খালেদ মোশাররফ (২ নং সেক্টর) এবং মেজর শফিউল্লাহ (৩নং সেক্টর) এপ্রিল থেকে মাত্র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাকি সেক্টরগুলোতে কমান্ডারগণ মোটামুটি শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন-বাকি দুইজন স্বল্প মেয়াদী সেক্টর কমান্ডারও কি মুক্তি যোদ্ধা ছিলেন না? উত্তরে আমি ‘একাত্তরের রনাঙ্গন’ বইটি থেকে কিছু লাইন উদ্ধৃত করতে চাই।
উপরোক্ত ১১টি সেক্টর ছাড়াও জেনারেল ওসমানী তিনটি ব্রিগেড আকারের র্ফোস গঠন করেছিলেন এবং এগুলির নামকরণ করেছিলেন র্ফোসের অধিনায়কের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে। ফোর্স তিনটির বিবরনী নিম্নে সন্নিবেশিত হলঃ
র্ফোসের নাম -‘জেড’ ফোর্স।
অধিনায়ক-মেজর পরে লেঃ কর্নেল জিয়াউর রহমান। দায়িত্বকাল-জুলাই-ডিসেম্বর
র্ফোসের নাম-‘কে’ র্ফোস। অধিনায়ক-মেজর পরে লেঃ কর্নেল খালেদ মোশাররফ। দায়িত্বকাল-সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর
র্ফোসের নাম-‘এস’ র্ফোস। অধিনায়ক-মেজর পরে লেঃ কর্নেল কে এম শফিউল্লাহ।
দায়িত্বকাল-সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর
ফোর্সরূপে নাম করণের পূর্বেই জেড র্ফোসএর বাহিনী ব্রিগেড পর্যায়ে জুন মাসের শেষের দিকে/জুলাই মাসের প্রারম্ভে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম, তৃতীয় ও অষ্টম ব্যাটালিয়ান দিয়ে একজন অস্থায়ী অধিনায়কের পরিচালনায় প্রথমে গঠিত হয়। পরে জেনারেল ওসমানী জুলাই মাসে মেজর জিয়াউর রহমানকে অধিনায়ক নিয়োগ করেন এবং এর নাম করণ করেন জেড ফোর্স। জেনারেল ওসমানী ‘কে’ ফোর্স এবং ‘এস’ ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তও প্রথম থেকেই নিয়েছিলেন। কিন্তু অস্ত্র ও যাবতীয় সরঞ্জাম পেতে বিলম্ব হওয়ায় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৯ম, ১০ম, ও ১১তম ব্যাটালিয়ান গঠনও বিলম্বিত হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হল একজন অযোগ্য মুক্তি যোদ্ধাকে ওসমানী ও প্রবাসী সরকার পদোন্নতি দিয়ে একটি এলিট র্ফোসের দায়িত্ব কেন দিল? আর যদি ধরে নেই যে, জিয়া আসলেই অযোগ্য এবং অনিয়ন্ত্রনযোগ্য ছিলেন বলে তাকে নামকাওয়াস্তে একটি র্ফোস বানিয়ে তার অধিনায়ক করে রাখা হয়েছিল অনেকটা দপ্তর বিহীন মন্ত্রির মত, তবে কিন্তু প্রশ্ন ওঠে বাকি দুজনের পদোন্নতি এবং র্ফোসের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও।
যদি আরোও ধরে নেই যে, ওসমানীর জিয়ার প্রতি স্বজনপ্রীতি ছিল তাই এমনটা ঘটেছে সে ক্ষেত্রে আরোও প্রশ্ন উঠতেই পারে স্বয়ং শেখ মুজিবের বিবেচনা শক্তি নিয়ে। কারণ পরবর্তীতে মুজিবের শাসন আমলে সফিউল্লাহ ছিলেন সেনা বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ এবং জিয়া ছিলেন ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ। শুধু তাই নয় ১৬ জন সেক্টর কমান্ডারদের মধ্য থেকে স্বাধীনতার পর বেছে বেছে যে আটজনকে জীবিতদের জন্যে নির্ধারিত সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব ‘বীর উত্তম’ প্রদান করা হয় তাদের মধ্যে জিয়া একজন। তবে কি বাংলাদেশের সরকার প্রথম থেকেই অযোগ্য ব্যাক্তি বা শত্রু চিনতে অক্ষম ছিল?
সব শেষে বলতে চাই জিয়া কখনওই দুধে ধোয়া ছিল না। ভালো দিকের পাশাপাশি তারও অনেক কু কৃর্তী রয়েছে যা নিয়ে অনায়াসেই অনেক আলোচনা সমালোচনা হতে পারে।
কেউই সমালোচনা বা আইন/ সংবিধানের ঊর্দ্ধে নন। তবে কেন তথ্য প্রমানকে উপেক্ষা করে অহেতুক মাঠ বা মঞ্চ গরম করা? এই জাতীয় মানষিকতা থেকে কবে আমাদের নেতা নেত্রীরা মুক্ত হবেন, কবে এদেশে রাজনীতিতে মুখ ফসকে কথা বলার প্রবণতা দূর হবে এই প্রশ্ন রইল সবার কাছে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।