আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাণিতিক বিপত্তি***



একটা গল্প দিয়ে শুরু করি - ব্রিটেনের এক জাঁদরেল লর্ড তার গাড়ির জন্য ড্রাইভার রাখবেন। খুঁজে-পেতে একজনকে মনে ধরল তার। চাকরির প্রথম দিনেই ডাক পড়ল ড্রাইভারের। মনিবের সামনে গিয়ে হাজির হল সে। লর্ড গম্ভীর সুরে ড্রাইভারকে বললেন-“এসেছ, ভাল, যাও গাড়ি বের কর।

আচ্ছা, তোমার নামটা যেন কী?” ড্রাইভার বলল-“জন” আচমকা রাগে ফেটে পড়ল লর্ড-“বলি, আদবকেতা কিছু শিখনি? পদবি বল, পদবি। আমি পদবি ধরেই সবাইকে ডাকি জানো না? আমার এখানে কাজ করলে এগুলো মানতে হবে। পদবি কি তোমার?” ড্রাইভার কাচু-মাচু মুখ করে জবাব দিল-“ডার্লিং” কিছুক্ষন অস্বস্তিকর নীরবতার পর মুখ খুললেন লর্ড-“গাড়ি বের কর, জন” এবার কাজের কথায় আসি, বাংলায় ভগ্নাংশকে আমরা কিভাবে পড়ব সেটা নিয়েই এই লেখা। আমাদের আলোচনা শুধুমাত্র ১/২-এর ব্যবহারের মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ রাখব। ১/২-কে আমরা পড়ি আধা।

এর সাথে পূর্ণসংখ্যা হিসেবে ১ আর ২ থাকলে তাদেরকে আমরা বলি দেড় আর আড়াই। ১/২ যুক্ত ভগ্নাংশগুলোর মাঝে এই দুইটারই কেবল “মৌলিক” নাম আছে। এরপরের সব ১/২যুক্ত ভগ্নাংশের একটা জাত নাম আছে, সেটা হল সাড়ে। এভাবে আমরা ১/২যুক্ত ৫, ১২ আর ৭৮ কে বলি সাড়ে পাঁচ, সাড়ে বারো, সাড়ে আটাত্তর। এ পর্যন্ত আমাদের কোন ঝামেলাই হয়নি পড়তে।

কিন্তু আমরা যখন পূর্ণসংখ্যাটাকে তিন অংকে নিব তখন আমাদের একটু দোটানায় পড়তে হবে। যেমন- ১২৫ এর পর ১/২ বসলে তাকে কি বলব? একশ সাড়ে পঁচিশ নাকি সাড়ে একশ পঁচিশ? যেটাই হোক, আমরা দেখতেই পাচ্ছি গাণিতিকভাবে দুটোই ঠিক। এখন কারো কারো নাম নিয়ে আপত্তি থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু এখনো কোন বিপত্তি ঘটেনি। বিপত্তি ঘটবে তখন, যখন আমাদের তিন অংকের সংখ্যাটা হবে Round Figure(যেমন-১০০,২০০,৩০০ ইত্যাদি)। ১০০ আর ২০০ এর ক্ষেত্রে ১/২ যোগ হলে তাকে সাড়ে একশ, সাড়ে দুইশ বলে যদিওবা পার পেয়ে যাই তবুও ৩০০এর পর ১/২ বসলে তাকে কি নামে ডাকি? সাড়ে তিনশ বললে গুনাহ হবে, ঐটা ৩৫০কে বলে।

তাহলে? এ যেন স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর ছোট ভাইকে বিয়ে করা এক মহিলার মত, আগের স্বামীকে “প্রাক্তন স্বামী” বলবে না “ভাশুর” বলবে বুঝতে পারছেনা। এই পর্যায় থেকেই আমাদের গাণিতিক বিপত্তির শুরু। সংখ্যা যত বড় হবে আমাদের এই বিপত্তি ততই বাড়বে। এই সমস্যা আরও হবে ৪০০, ৫০০, ১০০০, ১৫০০এভাবে বহু জায়গায়। এখন প্রশ্ন হলো, এই বিপত্তি কেন? কারণ নীতিমালা নেই।

বাংলাভাষায় মৌলিক গণিতচর্চা কতটুকু হয়েছে তার ইতিহাস আমার জানা নেই। হলেও বোধহয় খুব বেশি হয়নি। কেননা আমাদের অস্বস্তির এই গাণিতিক বিপত্তির মূলে আছে গণিতে বা গাণিতিক যে কোন ব্যবহারে ভাষার দূর্বল নীতিমালা। যদি আমরা মাতৃভাষায় গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষায় আরেকটু উদ্যোগী হতাম তাহলে হয়ত ব্যাপারটা আরেকটু সহজ হতো। এখন পথ দুইটা খোলা- হয় আমরা বাংলায় একটা সমৃদ্ধ পরিভাষা বানাই অথবা হাল ছেড়ে দিয়ে ইংরেজিতেই কাজ চালাই।

সবকিছুকে নিজের মত করে ডাকা যায় না। ব্রিটিশ লর্ড পারেননি, আমরাও না হয় ব্যর্থই হলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।