আমাদের বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মুক্তবুদ্ধির চর্চার মত-পথ উন্মুক্ত করা। বর্তমান রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের বিতর্কিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে ‘অসাম্প্রদায়ীক চেতনাবোধ’কে স্থান দেয়া হয়েছে। যাহাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম অসাম্প্রদায়ীক চেতনার মন্ত্রে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজ থেকে সাম্প্রদায়ীক চিন্তা-ভাবনার মুখে ঝাঁটামারার ব্যবস্থা বেশ জোরে-শোরে আয়োজন করছে সরকারের শিক্ষা বিভাগের মধ্যমে আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বাহাদুর।
আদত কথা হলো আমরা সকল সময় আবেগবসত বিভিন্ন শব্দের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়েপরি।
অথচ যাহার যথার্থ অর্থ আমরা বুঝিনা বা ইংরেজিতে মুখস্ত করে পন্ডিত সেজে বসে আছি। বাস্তব আবস্থায় পড়লেই উপলব্ধি হয় মুর্খ্যের পরিচয়। যেমন আমাদের দেশ ‘পিপল্স রিপাবলিক’ অথচ রাষ্ট্রের সর্বচ্চো পদ থেকে তলার পাবলিক সার্ভেন্ট পর্যন্ত ‘ইয়োর একসেলেন্সি’-এ কিভাবে সম্ভব ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রাবাসে কেন সাম্প্রদায়ীক চেতনা বিরাজ করছে ? কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল যে শাসক শ্রেণী তারাই সাম্প্রদায়ীক চেতনা পোষণ করতো। তাই ছাত্রকে হিন্দু ও মুসলমান দুই ভাগে ভাগ করে ছাত্রাবাস গঠন করেছিল। ছাত্রের কেন ধর্ম ও বর্ণের প্রশ্ন আসবে? স্বাধীন বাংলাদেশে শত্রুসম্পত্তি আইনের কারসাজি এখনও কি ভাবে বহাল আছে ?
অথচ ‘বঙ্গ বা বাংলা’ সকল সময় জাতি, ধর্ম ও বর্ণ সকল সম্প্রদায়ের আবাসস্থান ছিল বা এখনও আছে।
দূর্বুদ্ধির শাসককূল ঘাঁড়ে চাপলে বর্ণবাদী বা ধর্মীয় প্রভাব সৃষ্টি করে নিজের শাসন কার্যের স্বার্থে। নিজের বর্ণ বা ধর্মকে বিশেষ মর্যদা দিতে চায় শাসন কার্যে দাস অনুদাস সৃষ্টিকরে লুটের রাজত্ব্যের স্থায়ীত্ব বজায় রাখতে। কিমত্ত বর্তমানে আমরা হ’লাম ‘পিপলস্ রিপাবলিক’। যেখানে ‘জন’-ই মুখ্য। অর্থাৎ ‘মানুষ’ই বিষয় হিসাবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে সংবিধানে।
আমরা কেন ধর্মনিরপক্ষতা বা অসাম্প্রদায়ীক শব্দ ব্যবহার করতে চাচ্ছি সমাজকে কি পোষাকি রূপ দিতে ? যে সমাজ প্রকৃতিগতভাবে মানুষ- মানবিকতার আলোকেই গড়ে উঠছে। এখানে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে সকল ধর্মের স্বীকৃত উৎসব-পার্বণ গুলো পালন করা হয় স্বাভাবিক জীবনধারার প্রবাহের গতিতে। আমরা অবগত আছি যে, অতীতে ধর্ম বিষয় যতো সংঘর্ষ ঘটেছিল ব্রিটিশ, পাক, ভারত ও বাংলাদেশে তার সঙ্গে রাষ্ট্রের শাসকদের সংশ্লিষ্টার কারণে তা হয়েছিল। যেকোনো কায়েমী অপরাধ ক্ষমতার আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া ঘটতে পারে না।
এই উপমহাদেশে গদনারায়ণী গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়ীক রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত ‘ভারত’।
আর গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়ীক ইত্যাদির বাক্যের পূজারী হিসাবে যাহাদের নাম তালিকায় প্রথম আসবে শ্রী জিওহরলাল নেহেরু এবং তাঁর স্বনামধন্য কন্যা শ্রীমতী ইন্দ্রা গান্ধী। উনিশ’শ সাতচল্লিশ পরবর্তী ভারতের সর্বাধিক সাম্প্রদায়ীক এবং বর্ণবাদী দাঙ্গার শাসক এই পিতৃ ও কন্যার আমলেই ভারতে ঘটেছিল ? আমাদের শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় কি শ্রী নেহেরু ও শ্রীমতী ইন্দ্রার মতো ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়ীক চেতনায় উদ্বুদ্ধো ? তাহলে আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের খবর আছে!
ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়ীক শব্দগুলোকে ব্যবহার করতে হয় ইংল্যান্ডের। কারণ ইংল্যান্ড দেশের শাসক হলো রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় প্রধানের পদ দখল করে আছেন কয়েক শতাব্দী ধরে। রানী বা রাজা সকল সময় রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন ওয়ারেশ সূত্রে। শাসককুলের এই ধরনের চাপাবাজী শব্দ ব্যবহার করতে হয়।
কিমত্ত আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কি ইংল্যান্ডের মতো ধর্মীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ? আমাদের দেশের প্রকৃতি বর্ণ ও সম্প্রদায়ের সীমানা অতিক্রম করে মানুষ এবং মানবিকতার সম্পর্কের সমাজ বিরাজ করছে অদি থেকে এখনো। এখানে কেন এই সকল ভন্ড শব্দ দ্বারা শিক্ষা নামক চেতনা বিকাশের আশ্রয়কে কলুসিত করতে চাচ্ছি ?
ব্রিটিশ রচিত ‘ইতিহাস’ বিষয়টা আমাদের সাম্প্রদায়ীক মনন গঠনের প্রজনন ক্ষেত্র বলা যায়। এই সাম্প্রদায়ীক ইতিহাস রচনা করিয়েছেন আদর্শ রাজ্য ব্রিটেন ভারতকে কব্জায় রেখে দীর্ঘ মেয়াদী লুঠ করতে। যার পাঠ্যক্রম রচয়ীতার প্রথম দায়িত্ব পালন করেন ঘোড়েল মাল এ্যালফিনস্টোন ‘হিষ্ট্রি অব ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে। পরবর্তী সময় এ্যাংলিক্যান পাদ্রী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয় একই দায়ীত্ব পালন করছে সাম্প্রদায়ীক চেতনার আলোকে এখনো।
আমরা কি এদের এই সাম্প্রদায়ীক ইতিহাসের পাঠ্যসূচী রচনা বন্ধ করতে পারবো ?
আদত কথা হলো গিয়ে, ঐ সকল আদর্শবাদীদের আদর্শে বিশ্বাসী যারা তাহাদের লেজ তুলে দেখি, বিষয়টা এ্যাঁড়ে, দামড়া নাকি বকনা ? তাহালে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো। তাতে করে আমাদের সমাজে পাশ্চাত্যের কলুষিত চিন্তার অনুপ্রবেশ বন্ধ করা সম্ভব হবে। ইহাই আমাদের জন্য সর্বাত্মক মঙ্গল বলা যায়। নচেৎ লালন সাইজীর বানী স্মরণ করতে হবে জাতিকে রক্ষা করতে যেয়ে -
এ সব দেখি কানার হাটবাজার
বেদ, বিধি’র, পর শাস্ত্র কানা
আর এক কানা মন আমার
এ সব দেখি কানার হাটবাজার
এককানা কয় আর এক কানারে
চল এবার ভবপারে
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বারেবার
এসব দেখি কানার হাটবাজার ।
*আমার এই লেখাটি খুলনা জার্নাল এ প্রকাশিত হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।