আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থমন্ত্রী ভুল স্বীকার করলেও অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সাথে উপহাস করার মতো - আমরা আমাদের অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি



সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের একটি উক্তি বেশ আলোচিত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ''শেয়ার বাজারে ধ্বসের জন্য মাথা ঘামানোর কোন কারণ নাই। কারণ, কতগুলো লোক যদি অর্থনীতিতে অবদান না রেখে লাভবান হতে চায়, তাদের কষ্টে আমার হৃদয় কাদে না। '' নানা ভাবে তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যাচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে লুট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

শোনা যাচ্ছে এর পরিমাণ ৯ থেকে ৮৪ হাজার কোটি টাকা হবে। যে সংখ্যাটিই হোক না কেন লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতিসাধন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সেখানে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। যদি কোনো কাজেই না আসে আর তার পরাণ যদি নাই কাঁদে তাহলে শেয়ার তাহলে এ সংক্রান্ত তার সুনির্দিষ্ট মতামত কি তা দেশবাসী জানতে পারেনি। শেয়ার বাজার কি তার পরামর্শের আওতাভুক্ত নয়? বাজারে বিনিয়োগ ঠেকানোর উপদেশ তিনি কি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন।

নাকি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্তির মধ্যে রেখেছিলেন। শেয়ার বাজার নিয়ে যখন সাবধানতা অবলম্বন করার দরকার ছিল তখন তিনি কি ভূমিকা রেখেছিলেন জানা নেই। তবে রোড শোর মাধ্যমে মানুষকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে সংশ্লিষ্টদের কোনো প্রকার লুকোচুরি ছিল না। বরং মানুষকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এখানে বিনিয়োগের জন্য। আমাদের বেকার সমস্যা যখন দিন দিন বাড়ছে, সেখানে বেকাররা সহজেই বিনা বিবেচনায় নানা ভাবে কিছু অর্থের সংস্থান করেই ঝুঁকেই পড়েছে শেয়ার ব্যবসার দিকে।

আর্থিক নিরাপত্তার গ্যারন্টি সেভাবে পাচ্ছে কই? অথচ এধরনের কথা কোনো ভাবেই কারোর প্রত্যাশিত ছিল না একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে। নতুন নতুন উৎপাদন কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারা, সঞ্চিত পুঁজির নিরাপত্তার অভাব, বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক দিনগুলোর অধিক মাত্রায় উত্থান, এখানকার নানা কর্মকাণ্ড থেকে সহজেই অধিক লাভর আশায় ইত্যাদি নানা কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঝুঁকে পড়ে শেয়ার ব্যবসার দিকে। এই ক্ষেত্রে একটি বিষয় মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছিল। সহজেই টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে শেয়ার ব্যবসাকে মানুষ ধরে নিয়েছিল। ফলে ছাত্রদেরও দেখা গেছে যেসময় ক্লাস বা পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা সেসময় তারা স্টকমার্কেটে ব্যস্ত।

অধিক লোভ মানুষের মধ্যে এমন ভাবে বাসা বাঁধে যা থেকে চিন্তাশীল লোকদের কোনো পরামর্শকেও তাদের কাছে গুরুত্বহীন মনে হয়। বিগত বছরগুলোতে অফিস-আদালতে, রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে সবখানেই আলোচনায় উঠে আসতো শেয়ার বাজার। কোনো ‌‌'খবর' ছিল উল্লেখযোগ্য বিষয়। এমনকি পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতেও একপর্যায়ে শেয়ার বাজার আলোচনায় স্থান করে নিত। অন্যদিকে বিনিয়োগহীন অর্থনীতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে।

দেখা গেছে, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগের অভাবে শিল্পকারখানা উৎপাদন ও বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ছে। ফলে নুতুন নতুন শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে অভাববোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পুরাতনগুলোরও কোনো কোনোটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবসহ নানাবিধ কারণে। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের অভাব বাড়ছে। শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে সেখান থেকে মানুষ চাকরি হারাচ্ছে বলে এদিক থেকেও নতুন করে মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে।

সেই হিসেবে সুযোগ বাড়ছে না কর্মসংস্থানের, বেকারত্ব দূরীকণের। আরেকদিকে এসব শিল্পের টাকা অতি সহজে মুনাফার লোভে শেয়ার বাজারের দিকে চলে যাচ্ছে। এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। বিনিয়োগের টাকা শেয়ার বাজার খাটানোর হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

অথচ তখনও কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো থেকে। জীবিকা তাগিদে, বেঁচে থাকার জন্য মানুষ আবার ঝুঁকে পড়ছে শেয়ার বাজারে। দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বিরাজমান। ফলে মানুষ জমিজামা, গহনা, পেনশনের টাকা ইত্যাদি নানান ভাবে সঞ্চিত সম্পদকে ঢেলে দিয়েছে অধিক আর্থিক নিরাপত্তার জন্য।

ব্যাংকগুলোর মুনাফার হারও আশানুরূপ না হওয়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারে বিনিয়োগকেই তারা অধিক নিরাপদ বলে মনে করেছে। এসব বিষয়গুলোকে আমাদের কোনো ভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয় এবং ছিলও না। অথচ অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য এসব বিষয়কে অবজ্ঞাভরে উড়িয়ে দেয়ার মতো। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এর জন্য সরকার অর্থমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে থাকে।

সেই সাথে একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টাও প্রধানমন্ত্রীকে অর্থনীতির বিষয়ে নানা পরামর্শ দেয়ার কথা। অথচ দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি জনগণের কাছে প্রত্যাশিত মন্তব্য করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অর্থমন্ত্রী ভুল স্বীকার করলেও অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সাথে উপহাস করার মতো। আমাদের অর্থনীতে সমস্য তো দিন দিনই বাড়ছে।

সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে জিনিসপত্র। অথচ সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনী পদক্ষেপ যে মানুষ খুব একটা দেখছে তাও না। অর্থ উপদেষ্টার এধরনের বক্তব্যের পর বলার কিছু না থাকারই কথা। এই যদি হয় আমাদের দায়িত্বশীলদের মনোভাব তাহলে এটা সহজেই অনুমেয় যে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.