আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফলিত গণিতের সূচনা মুসলিম মনীষীদের হাতে!



তাহলে কি এডভান্সড ম্যাথ বা ফলিত গণিতের সূচনা হয়েছিল মুসলিম মনীষীদের হাতে! তাদের হাতের ছোঁয়ায় গণিত পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া! মুসলিম বিশ্ব, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম মনীষীরা গণিতকে দান করেছেন নতুন প্রাণ। বিভিন্ন ভবনে, মসজিদে মধ্যযুগীয় মোজাইক নিয়ে গবেষণার পর এমনই অনেক প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা ওইসব মোজাইকের সৌন্দর্য্যে অভিভূত। তারা দখেছেন, মোজাইকগুলোতে জটিল জ্যামতিকি অংকনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের প্রতিকৃতি। এতে গবেষকদের ধারণা, ত্রয়োদশ শতকে ওই অঞ্চলে মুসলিম গণিতবিদদের হাতে যাত্রা শুরম্ন করে ফলিত গণিত।

কিভাবে ওইসব স্ফটিক বা ক্রিস্টাল অংকন করা হয়েছে তা ৩ দশক আগেও আধুনিক বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল অজানা। নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে ইসলামী সংস্কৃতিতে আর্ট, স্থাপত্যশিল্প এবং বিজ্ঞান ছিল কতটা গুরম্নত্বপূর্ণ। এর আগে অনেকে বিশ্বাস করতেন, ওইসব শিল্পকে, চিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে মধ্যযুগের ইসলামী পণ্ডিত বা গণিতবিদরা ব্যবহার করেছিলেন শুধু একটি রম্নলার এবং কম্পাস। এ বিশ্বাসের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন গবেষকরা। তাদের মতে, শুধু রম্নলার ও কম্পাস ব্যবহার করে অতো নিখুঁত, সুবিন্যাসত্ম জ্যামিতিক গঠন আঁকা সম্ভব নয়।

ওই সব স্ফটিক অংকন করতে ব্যবহার করা হয়েছিল অন্যান্য উপকরণ। এই তো প্রায় তিন বছর আগে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট সম্পন্ন করতে যাওয়া পিটার জে. লু উজবেকিসত্মানের একটি দেওয়ালে জ্যামিতিক চিত্র দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন। গণিতবিদরা যাকে ক্রিস্টালের প্রতিকৃতি বলে অভিহিত করেছেন তার বাসত্মব দৃশ্য তার সামনে ধরা দেয়। পিটার জে. লু তার সঙ্গী প্রিন্সটনের জ্যোতির্বিদকে নিয়ে আফগানিসত্মান, ইরান, ইরাক এবং তুরস্ক থেকে মোজাইক সংগ্রহ করে তার উপর পরীড়্গা চালান। দু’ বছরের গবেষণায় তারা এ বিষয়ে যে তথ্য পান তা তুলে ধরেছেন বিজ্ঞান বিষয়ক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘সায়েন্স’-এ।

ওই রিপোর্টে তারা বলেন- ১৯৭০ এর দশকে রজার পেনরোজ যাকে ক্রিস্টালের প্রতিকৃতি বা কসি ক্রিস্টাল বলে অভিহিত করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে মধ্যযুগীয় ওইসব স্থাপত্যে। গবেষকরা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন পেনরোজ বর্ণিত কসি ক্রিস্টালের নিখুঁত ডিজাইন করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলেন ইসলামী ডিজাইনার ও আর্টিস্টরা। এরও ৫ শতাব্দী পরে এ ধারণার উপস্থিতি পাওয়া যায় পশ্চিমা দুনিয়ায়। আফগানিসত্মান, ইরান, ইরাক এবং তুরস্কের কসি ক্রিস্টালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তাতে সঠিক জ্যামিতিক মাপজোক ব্যবহার করা হয়েছে। একই ক্রিস্টাল একটা থেকে আরেকটায় পার্থক্য নেই।

হুবহু আকৃতি দেয়া হয়েছে। একই চিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা গাঠনিক কাঠামো। তার মধ্যে রয়েছে সমান ১০ বাহু বিশিষ্ট আবদ্ধ ড়্গেত্র, ষড়ভুজ সহ বিভিন্ন প্যাটার্নের জ্যামিতিক চিত্র। অত্যনত্ম জটিল এসব অংক সাধারণ হিসাব বা সাধারণ মানের কোন অংকন সরঞ্জাম ব্যবহার করে আঁকা সম্ভব নয়। তুরস্কের এক মসজিদ থেকে উদ্ধার করা এক খণ্ড মোজাইকে পাওয়া গেছে বিচিত্র ক্রিস্টাল।

বিপুল সংখ্যক জ্যামিতিক গঠন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ওই মোজাইক ক্রিস্টালে। তার মধ্যে রয়েছে অষ্টভুজ, পঞ্চভুজ, ডায়মন্ড, ষড়ভুজ সহ নানা মাত্রিকতা। না, এসব শিল্পকর্মের মধ্যে একটি বিন্দুুও ফাঁকা রাখা হয়নি। প্রতিটি ইঞ্চি, প্রতিটি বিন্দুতে ডিজাইনার তার হাতের সুনিপুণ দড়্গতার পরিচয় দিয়েছেন। পিটার জে. লু এবং ড. স্টেইনহার্ড স্বীকার করেছেন- এমনতরো ক্রিস্টালের গঠন সম্বলিত মোজাইক উদ্ভাবন করা হয়েছে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে।

ওইসব মোজাইকের স্টার এবং বহুভুজগুলো একটি নির্দিষ্ট ডিগ্রি পর্যনত্ম ঘুরালে তা অন্য টাইলসে গিয়ে হুবহু বসে যায়। এর বদলে একটি টাইলসকে ঘুরিয়ে বিশাল মাাপের অর্থাৎ অসীম মাপের প্যাটার্ন দাঁড় করানো সম্ভব। এপস্নাইড ম্যাথমেটিকস বা ফলিত গণিতে মুসলমান বিজ্ঞানীদের বিস্ময়কর এ অবদান দেখে অবাক দুই গবেষক। এক সাড়্গাৎকারে ড. স্টেনিহার্ড বলেছেন- স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না কিভাবে, কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে ইসলামী পণ্ডিতরা এসব অংকন করেছেন। পিটার জে. লু বলেছেন- ওই ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।

একটি সভ্যতা, একটি সংস্কৃতি আমাদের চোখের সামনে ফুটে উঠেছে- যে সভ্যতা, যাদেরকে আমরা যথেষ্ট ক্রেডিট বা স্বীকৃতি দিতে চাই না। ইরানের ইস্পাহান এলাকার দার্ব-ই ইমাম মাজার থেকে গবেষকরা উদ্ধার করেছেন একখানা মোজাইক। ওই মাজারটি ১৪৫৩ সালে নির্মিত। সেখান থেকে উদ্ধার করা মোজাইক পাওয়া গেছে পেনরোজ প্যাটার্নের কসি ক্রিস্টালের গঠনে। এখানেই শেষ নয়।

এর বাইরে হয়তো রয়ে গেছে অনেক অজানা বিষয়, তথ্য- যা একনও আবিষ্কৃত হয়নি।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।