জানলাম-'' যিনি বীর্যবান , গুনবান, চরিত্রবান , কান্তিমান , বিদ্বান , ধর্মজ্ঞ , কৃতজ্ঞ , সত্যবাদী , দৃঢ়ব্রত , প্রিয়দর্শন , ইন্দ্রিয়জয়ী , ক্রোধজয়ী , সর্বহিতকারী , পরোন্নতি-সহনশীল এবং লৌকিক ব্যবহারে দক্ষ - তিনিই আদর্শ পুরুষ । "
আপনি পুরুষ মানুষ অথচ কখনো কোন মেয়ের উপর দুর্বলতা অনুভব করেননি – এমন কথা যদি বলেন তাহলে বলবো তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখান, আপনার সমস্যা আছে। যাইহোক কি বলতে গিয়ে প্রথমেই অন্যলোকের পুরুষত্বে আঘাত করে বসলাম।
হ্যা, একেবারেই আমার নিজের কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে আজ তাই লিখতে বসা। যদিও মানুষ তার নিজের কথা ছাড়া অন্যলোকের কথা শুনতে বেশি আগ্রহী নয়- তা জানি।
তারপরো কেন যেন মনে হলো আমার এই টুকরো গল্পটা সবার সাথে শেয়ার করলে নিজেই বেশ আনন্দ পাবো। এটা আমার এখন পর্যন্ত প্রথম এবং একমাত্র প্রেমের গল্প। গল্প ঠিক না একেবারে সত্যি ঘটনা, আমি নিজেই তার সাক্ষী সুতরাং মিথ্যা হওয়ার কোন চান্সই নেই।
যত নষ্টের গোড়া এই ফেসবুক। গতবছর, মানে ২০১২ এর প্রায় শেষের দিকে আমার কাছে একটা ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্ট আসে।
মেয়েমানুষের ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্ট। উপেক্ষা করার সাধ্য কার! পাওয়ার সাথে সাথেই এক্সেপ্ট করে বসলাম। যাইহোক, বাইরে অত্যন্ত ভাব ধরে থাকি বলে আমি নিজে উপযাচক হয়ে কোন মেয়েকে মেসেজ দেই না। বলতে পারেন অত্যন্ত ভদ্র টাইপের লাজুক আর ভালো ছেলে আমি। তো তিনিই আমাকে প্রথম মেসেজ দিলেন।
লিখলেন- “আপনার স্ট্যাটাস আমি আমার হোমপেজে দেখতে পাই কেন?”। প্রথম মেসেজ! কোথায় থাকি; কেমন আছি; কি করি; এইসব জিজ্ঞেস করবে- তা না করে কি সব বাজে প্রশ্ন। আমিও নীরস মুখে জবাব দিলাম- “তাহলে এক কাজ করুন আমাকে ব্লক করে দিন, তাহলে আর আপনাকে এই প্রব্লেম ফেস করতে হবে না, সব ঠিকঠাক, সিম্পল সমাধান। ”
তবে বিপত্তি বাধলো তারপরই। কারন আমার এই ‘সিম্পল সমাধান’ তার কাছে বোধহয় কমপ্লেক্স ঠকলো।
কোন এক অজ্ঞাত কারনে তিনি আমাকে ব্লক তো করলেনই না উপরন্তু ভদ্রতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আমাদের কথার রেলগাড়ি ধীরবেগে চলতে শুরু করলো। প্রতিদন একটু একটু করে। তারপর আর কি, যা হবার তাই হলো। আমরা পুরুষেরা স্বভাবতই মেয়ে বলতে অজ্ঞান কিন্তু এই ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন ঘটনা ঘটলো। না, তাই বলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যাননি আর আমার কুদর্শন চেহারা-সুরত দেখে যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে গেছেন এমন রেকর্ড নাই।
কারন কোন মেয়ে একবার এই মুখপানে তাকিয়ে আবার দ্বিতীয়বার তাকাবার করুনা করলে হয়তো আরো অনেক আগেই আমার প্রথম প্রেমের ইতিবৃত্ত লিখে আত্মপ্রচারের কাজে নিয়োজিত হতাম।
প্রসংগত, আমাদের নিয়মিত মেসেজ বিনিময় হতে থাকলো। ছোট ছোট টুকরো টুকরো কথা। সকালে, দুপুরে, রাতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যা হয় তার থেকে ভিন্ন কিছু নয়।
অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম অনেকটা বিনা পরিশ্রমে। কিন্তু যতই দিন যেতে লাগলো ততই যেন মনে হলো যে সে হয়ত কিছু বেশি ভাবছে। সামথিং মোর দেন ফ্রেন্ডশিপ। এই ভাবনাটা আসলে আমার ভাবা উচিত ছিলো কিন্তু ভাবতে পারিনি কারন এখনো পড়াশোনা শেষ করতে বছর দুয়েক বাকি আর সে সবেমাত্র লেখাপড়া শেষ করে একটা বেশ ভালো জব করছে। তাই সেও যাতে এইরকম কিছু না ভাবে তাই আর কি, একদিন কৌশলে জানিয়ে দিলাম যে আমি তার প্রায় ২/৩ জুনিয়র।
কেমন যেন একটা অপরাধবোধ কাজ করছিলো তখন, মনে হচ্ছিল আরো অনেক আগেই বোধ হয় জানানো উচিত ছিলো কথাটা।
তবে মজার ব্যাপার হলো সে কিন্তু মোটেই বদলে গেলো না। বরং আমরা নেমে এলাম- আপনি থেকে তুমি’তে। তখনও ফোনে কথা হয়নি। হঠাত সেদিন রাতে ফোন এলো।
অন্যপ্রান্ত থেকে মিষ্টি একটি কন্ঠস্বর-“হ্যালো” । আমি বললাম-“হ্যা, … কেমন আছো?” [নামটা বললাম না আপনাদের]
খুব অবাক হয়ে গেলো মেয়েটা। আমি চিনতে পারলাম কিভাবে এই ভেবে! কোথায় আমাকে ফোন করে চমকে দিতে গিয়ে নিজেই চমকে গেলো। আমার জন্যে ব্যাপারটা খুব একটা কঠিন ছিলো না কারন দুয়েকজন বান্ধবি আর মা ছাড়া তেমন কোন মেয়ে ফোন দেয় না। আর তার ফোনটা প্রত্যাশিত ছিলো তাই সহজেই বুঝে ফেললাম।
কথা হলো কিছুক্ষন। স্বীকার করতেই হবে কারো কন্ঠস্বর এতটা মধুর লাগে নি আগে। বুঝলাম, আমার কপালে অনেক বড় ফাড়া আছে তা না হলে নিজের চেয়ে সিনিয়র কাউকে ভালোলাগা শুরু হয়।
ব্যাপারটা তখনো ভালোলাগা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো যতক্ষন পর্যন্ত না সে আমাকে প্রপোজ করে। এই প্রপোজ মানে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ টাইপ কিছু না বরং আরো ভয়াবহ, সে সরাসরি বলে ফেললো- “আচ্ছা আমি যদি সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে চাই তাহলে সেটা কি সম্ভব?” সত্যি বলতে ভীষন ভালো লেগেছিলো সেদিন।
কিন্তু ভালোলাগা দীর্ঘস্থায়ী হয় না বলেই তা ভালো লাগে আর আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমি তাকে বললাম, নিম্নমধ্যবিত্ত ফ্যামিলির বড় ছেলে হিসেবে জীবনের জটিল অংক সামনে নিয়ে যা বলা যায়- তাই। বিসর্জন দিতে হলো। না, তবে ভালোবাসা বিসর্জন না বরং ভালোবাসার মানুষটিকে সারাজীবন কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন। বললাম-“তুমি যদি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারো শুধু তাহলেই তা সম্ভব হতে পারে”।
বলাবাহুল্য, আমার ফ্যামিলি আমাকে সেই ছোটবেলা থেকেই অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে এসেছে তাই কখনো উচ্ছৃংখল হয়ে যেতে পারিনি। আসলে বেশি স্বাধীনতাও অনেকসময় অনেক বড় আবদ্ধতা। মা বলেন আমার সুখেই তারা সুখী, আমি যেখানে যেভাবে সুখে থাকি তাতেই তারা খুশি। এইভাবে সহজভাবেই মা-বাবা চিরকাল সব কিছু মেনে নিয়েছেন আর তাই সবকিছু সহজভাবে দেখতে শেখা আমার একটা বদভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। আমি এই সম্পর্কটাও সহজভাবে দেখেছিলাম।
বললাম সে যদি কিছুদিন মানে লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে মানে যদি সম্ভব হয় তাহল.....
যাইহোক বলতে লজ্জা নেই যে, আমি তাকে ভালোবেসে ফেললাম। ভালোবাসার আবেদন উপেক্ষা করার দুঃসাহস হলো না। কোন যৌক্তিক কারণ ছিলো না তাকে ভালোবাসার, এমন নয় যে সে দেখতে অনেক সুন্দরী, আয়তলোচনা; আহামরি, এমনটি আর হয় না- নাহ, এরকম কিছুই না সে; কিন্তু তবুও কোন এক অজানা কারনে ভালোবেসে ফেললাম।
তবে সে বললো তার অপেক্ষা করার সময় নেই। আর সেও চাইতো না যে তার জন্যে আমার জীবনটা জটিল হোক।
তাছাড়া অসম সামাজিক স্তরবিন্যাসের মিথস্ক্রিয়া সব সময় সুখকরও হয় না। কিন্তু তারপরো ভালোবাসাতো আর বাস্তবতার গতিবিধি মেনে চলে না। আর তাই বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভবী জেনেও এতটুকুই চাওয়ার ছিলো যে, এই ভালোবাসার অনুভুতি যা নিজেদের অজান্তেই সৃষ্টি বিচ্ছেদের পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত যেন তা অক্ষত থাকে। তারপর বিদায়ের ক্ষন যখন আসবে তখন নাহয় হাসিমুখেই বিদায় দেবো। এতটুকু মনের জোর অন্ত্যত ছিলো আমার।
খুব বেশি কথা হতো না ওর সাথে। দিনে একবার কি দুইবার এমন। তবে সারাদিনে মাঝে মাঝে মেসেজ দিতো। সকালে গুডমর্নিং আর রাতে গুডনাইট – এ ছাড়া যেন দিন কাটতেই চাইতো না তখন। এই করে করে বেশ কেটে যাচ্ছিলো আমাদের দিন।
যাকে সরাসরি দেখিনি, শুনিনি সেই চুপিসারে এসে মনের এক বিশাল জায়গা অধিকার করে বসলো। আমিও তার মনে অনধিকারচর্চা করে বসে রইলাম।
তারপর ! … তারপর আর কি … যা প্রত্যাশিত ছিলো তাই হলো, তবে অনেকটা নাটোকীয়ভাবে আর একটু বেশি তাড়াতাড়ি। দুই /তিন মাস পর হুট করে একদিন বললো যে-“আমার নেক্সট ফ্রাইডে তে বিয়ে…তাই এই কয়দিন ধরে তোমাকে এভোয়েড করছি, আমি চাইনা তুমি বেশি কষ্ট পাও!”। ছেড়ে যাবে- তা তো শুরু থেকেই জানতাম কিন্তু এই যে ভালোবেসে তারপর অবহেলা করা, উপেক্ষা করা, ইচ্ছা করে ফোন না ধরা , এইসব বিষয়গুলো আসলেই ভীষন কষ্টদায়ক।
মেয়েদের মনের গতিপথ অনুমান করার সাধ্য আমার নেই; শুধু আমার কেন বোধকরি কারো নেই। তবু এই খবরটা শুনে কেমন যে লেগেছিলো তা নাহয় নাই বললাম কারন অযথা পরিবেশ ভারী করার কোন দরকার নেই।
দুর্ভাগ্যবশতঃ তখন আমার পরীক্ষা চলছে, যতবারই বই খুলে পড়ার চেষ্টা করছি ততবারই দেখি চোখ থেকে কেন জানিনা ঝরঝর করে পানি পড়ছে। আমার সেই পরীক্ষার খাতা, হাহ! আমাকে দেখতে দিলেও আমি লজ্জাতে নাম্বার দিতে পারবো না। আমি আমার বোনকে মেসেজ দিলাম, সে বিষয়টা আগে থেকেই জানতো।
সে আমাকে স্বান্তনার বানী শোনালো যা সেই মুহুর্তে আমার খুব দরকার ছিলো।
এই ঘটনা হয়ত তেমন খুব গভীর কিছু না কারণ মেয়েটার সাথে দেখা করিনি, একসাথে বসে বাদাম খাই নি, পার্কে ঘুরিনি, হাতধরে রেললাইনে হেটে যায়নি, পরস্পরের চোখে ডুব দেই নি। প্রথাগত প্রেমের সাথে কিছুতেই মেলে না; তার উপর আবার বয়সের প্রায় ২/৩ বছরের পার্থক্য। তার ফ্যামিলিও এই ধরনের রিলেশন মানবে না। না মানাটা খুবই সংগত।
সব মিলিয়ে ঠিক যায় না। কিন্তু এটাই ছিলো আমার প্রথম প্রেম, আমার প্রথম ভালোবাসা। আমার প্রথম চুপি চুপি কাদবার একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা।
মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে এইত কিছুদিন হলো ; তারপর থেকে আর যোগাযোগ হয় না। সে নতুন জীবনে হয়তো সুখী কারন অদেখা কোন ছেলের টেলিফোনের উচ্চারন কোন মেয়ের মনে আজীবন রেখাপাত করে গেছে এমন গল্প আজো শুনিনি ।
আমিও তাকে আর কল দেই না । জানি সেটা অন্যায় হবে। অধিকার ছেড়ে দিয়ে অধিকার ধরে রাখতে যাওয়া যে বিড়ম্বনা কথাটা কারো অজানা নয়। তার নতুন জীবনে সমস্যা তৈরি হতে পারে আর তাছাড়া কি দরকার নতুন করে পুরানো ক্ষত খুঁচিয়ে তা আবার সতেজ করে তোলার। তবুও রক্ত-মাংসের মানুষ তো তাই যখন খুব বেশি মনে পড়ে তখন রবীন্দ্রনাথের এই দুটি লাইনের মাঝে আশ্রয় খুঁজি…
“ জীবনে ওমন কত বিচ্ছেদ, কত মৃত্যু… পৃথিবীতে কে কাহার !”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।