আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেনীর নোয়াখাইল্লা পোলা

shohedshakil@yahoo.com

আমার গ্রামের বাড়ি ফেনী । যদি ও কখনোই ফেনী তেমন যাওয়া হয় না । আমার ভেতরে এক ধরনের হীনমন্যতা কাজ করতো , কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে , তোমার গ্রামের বাড়ি কই? আমি একটু অস্বস্তি বোধ করতাম , সবাইকেই ফেনী উত্তর দেয়ার সাথে সাথে যে কথা টা বলে তা হল, ও নোয়াখালী ফেনী । আমি কেমন যেন চুপসে যাই । সেই চুপসে যাওয়া মুখের দিকে মানুষ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে , আর মিটমিট হাসে , আমার নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হয় ,এর কিছু টা আবার কল্পনা ও হতে পারে।

ভার্সিটি তে ঢুকলাম যখন ,তখন আমার প্রথম বন্ধু হল সৈকত নামের এক ছেলে । আমাদের রোলনং পাশাপাশি , দৈবক্রমে গ্রামের বাড়ি ও ফেনী । ঢাকায় নতুন -সৈকত ,নোয়াখাইল্লা অপবাদে কান ঝালাপালা। কী অবস্থা ! কিন্তু এভাবে কি চলা যায় ,যেখানেই অবস্থা সেখানেই আছে অবস্থার পরিবর্তন । সৈকত খুব চরম ভাবেই জবাব দিলো এর ।

আজ কেউ আমাদের নোয়াখাইল্লা বলার সাহস দেখায় না । সবটুকুই চিকন বুদ্ধির সমাধান । সৈকত হয়তো ক্যান্টিন এ গেল । কোন বন্ধু তারে বল্লো "কীরে নোয়াখালী কি অবস্থা " । সৈকত অমায়িক হেসে উত্তর দিলো " দোস্ত , তাইলে খাওয়া " ।

বন্ধুর উত্তর "কেন ?" , সৈকতের জবাব , " দুই দোস্ত একসাথে খাই , বিল তুই দে ,আই তো নোয়াখাইল্লা ,আই(আমি) কিল্লাই(কেন) বিল দিতাম ,কেউ কোন দিন হুইনছেনে এ কতা। " নতুন নতুন তাই ভদ্রতার খাতিরে খাওয়ালো । কিছু দিনের ভেতর যেসব বন্ধু খেপাতো তাকে , তারা কেউ ভুলে ও তাকে ক্যান্টিনে " নোয়াখাইল্লা " ডাকতো না । কেউ কেউ বন্ধই করে দিলো ডাকা । কেউ কেউ তবুও চালিয়ে গেলো ।

আবার কখনো হয়তো রিকশা থেকে নেমে , " দোস্ত আমি তো নোয়াখালীর আমি কেমনে ভাড়া দেই । তুই দে , তোরতো দেশ চরম ভালো । " কখনো হয়ত " দোস্ত ফটোকপির টাকা টা দে , তোদের এলাকার লোক শুনছি বেপক দিলদার "। আবার কখনো "প্লিজ দোস্ত ,আরেকবার আরেক বার বল না আমাকে নোয়াখাইল্লা ,আমার গর্বে বুকটা ভরে যায় " । যাকে খেপানো হয় তার এমন প্রতিক্রিয়াতে অনেকই খেপিয়ে মজা পায় না।

মজার ব্যাপার হচ্ছে কিছু দিনের ভেতর আর কেউ তাকে আর নোয়াখালী ডাকার দুঃসাহস দেখালো না , সবাই বুঝে গিয়েছিলো ডাকলেই লস কোন না কোন ভাবে । সে ও আস্তে আস্তে তার অত্যাচার বন্ধ করে দিলো । মজার ব্যাপার হচ্ছে এখন কেউ তাকে নোয়াখালি না ডাকলেও সে নিজে কোন ভালো কিছু করলেই বলে উঠে, " নোয়াখালীর ছেলে বুঝতে হবে , সবার চেয়ে তো আলাদা হবেই " । আমি আর ও একি দলে ফুটবল খেলি ভার্সি টিতে । আমাদের দল ৯৯% ম্যাচ এ জিতে,(বাকিরা অস্বাভাবিক বাজে খেলে সম্ভবত) ।

কোন ও দিন আমরা হারলে ও আমাকে বলে "চইয়া নে খেলঅছ আঁর " । সে অতিমানবীয় মেধাবী , শত প্রগলভতায় ও সে সবার প্রিয় শুধু তার বুদ্ধির জ়োরে, আর সহযোগিতা পূর্ন মনোভাবের জন্য । আমার এইসব আজাইরা লেখা দেখে সে নির্ঘাত বলবে " হোয়া লেয়া লই আর কত ছুদুর ভুদুর(ছিনি-মিনি) খেইলবি ,হরুগা(পরশু) হরিক্ষা (পরীক্ষা), আইজ্জা বই ব্লগে লেখরে , তরে হোন্দে হোন্দে (পশ্চাৎদেশ) বাইয়াই (মেরে) মাঞ্জা (কোমর) ভাঙ্গিয়ালামু , হইতে মনে নঅ চাইলে যাই মান্দার গাছে হোন (পশ্চাৎদেশ) ঘষ গই" । আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয় ,৫২এর ভাষা আন্দোলন কী শুদ্ধ লেখ্য বাংলার জন্য হয়েছে ,নাকি মাতৃভাষার জন্য হয়েছে । একজন আঞ্চলিক ভাষাভাষী তার মনের ভাব প্রকাশে যদি আধুনিক শুদ্ধ চলিত রীতি না মানে তাকে খুব বেশি কী অপরাধী ভাবা যায় ? যদি ও আমি শুদ্ধ বাংলা বলার বিরুদ্ধে নই ।

কিন্তু আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেই তাকে "খ্যাত" বলার পক্ষপাতী ও নই , এইটা একটি বাড়তি শিল্প । কোন একদিন যদি সবাই একদম পুরোপুরি শুদ্ধ চলিত রীতিতে কথা বলে, জানি না ভাষা কতটুকু শক্তিশালী হবে ,তবে অনেক মজা থেকে তো অনেকে বঞ্চিত হবে । জানি না আমি কী ভাষা নিয়ে কোন "ছুদুর ভুদুর" খেললাম কি-না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.