আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপগঞ্জ, সেনাবাহিনী, জনবসতি ও ভূমি

ক্ষণকালের এ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুস্পষ্ট ভবিষৎ "মৃত্যু"। তাই, এসো সে মৃত্যুকে মহান করে তুলি প্রতিদিন অন্তত একটি ভাল কাজের মধ্য দিয়ে।

আমাদের এই ছোট দেশটিকে বহি:শত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ভূমি ৭টি ক্যান্টনম্যান্ট(সাভার, টাংগাইলের ঘাটাইল, কুমিল্লা, চিটাগাং, যশোর, রংপুর,বগুড়া), হেড কোয়ার্টার(কুর্মিটোলা), ARTDOC, ট্রেনিং ইন্সটিটিউট বাবদ সামরিক উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে (http://www.bdmilitary.com, https://army.mil.bd)। যুদ্ধকালীন সময়ে রাজধানীকে রক্ষার জন্য রাজধানী চারপাশে একাধিক ক্যান্টনমেন্ট এর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের জন্য ঢাকাতে ৪টি(মিরপুর, বনানী, মহাখালী, বারিধারা) DOHS(Defence Officers Housing Society) দেয়া হয়েছে বিনামূল্যে।

এয়াড়াও সামাজিক উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর রয়েছে গলফ ক্লাব, স্টেডিয়াম, রেস্তরা, রাওয়া, স্কুল, এমআইএসটি, সেনা কল্যাণ ইত্যাদি অসংখ্য স্থাপনা। যে কোন দেশের সেনাবাহিনী একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তাদের প্রতি আশাও অনেক। তাই সেনাবাহিনীরও এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে জনমনে ক্ষোভ বা বিরূপ ধারনার সৃষ্টি হয়। সে জন্য তাদেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

এবং বিতর্কিত কিছু না করা বা বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা আবশ্যিক। আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সুনাম কুড়িয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যগে দুর্গতদের জন্য হাত বাড়িয়েছে। সে প্রিয় সেনাবাহিনীকে নিয়ে সমালোচনা শুনতে বা করতে কষ্ট লাগছে। কিন্তু একজন ভাল বন্ধতো বন্ধুর ভালো কাজে উৎসাহ দেবে, বিপদে পাশে এসে দাড়াবে, পাশাপাশি মন্দদিকগুলোও আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে যাতে ত্রুটি সংশোধিত হয়ে সে বন্ধটি আর উৎকৃষ্ট অবস্থানে যেতে পারে।

আমাদের অনেকের কাছে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত ইউরোপ আমেরিকার যে সব দেশ রয়েছে সেখানেও সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে সেসব দেশে ও বহিরবিশ্বে অনেক সমালোচনা হয়। গত বছরের ২৩ অক্টবর, ২০১০ রূপগঞ্জে যে ঘটনা ঘটে গেল তাতে দেখা যায় সেনা বাহিনী ১৩,০০০ বিঘা (কায়েতপাড়া ও রূপগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম) ভূমি ক্রয় করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের জন্য AHS(Army Housing Scheme) নামে একটি কলোনি সৃষ্টি করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী গত জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এটি একটি লিমিটেড কোম্পানি। প্রকল্পের আয়তন ধরা হয় ১৩ হাজার বিঘা যাতে ২৭,০০০ প্লট রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

২০১৫ সালের মধ্যে এটি শেষ হবার পরিকল্পনা করা হয়। এ পর্যন্ত ১,৪০০ বিঘা জমি কিনেছে। এজন্য সেনাবাহিনি ৪টি অস্থায়ী ক্যাম্প করে। এখন এটি ছোট করে ২৭,০০০ প্লটের পরিবর্তে ৮,০০০ করার চিন্তা করা হচ্ছে। প্রকল্পের নাম AHS থেকে পরিবর্তন করে MHS(Military Housing Scheme) হচ্ছে।

(সূত্র:প্রথমআলো ২৪,২৫ ও ২৬ অক্টবর, ২০১০ পৃষ্ঠা ১-২) । এদেশ এখনো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ। এদেশের সিংহ ভাগ মানুষ গরীব কৃষক বা শ্রমজিবী। সারাদিন পরিশ্রম করে পাওয়া ১০০ টাকা দিয়ে যখন ৫জনের একটি সংসারের জন্য অন্ন-বস্ত্র কিনে তখন যে ১৫% মূল্য সংযোজন কর, অমদনি শুল্ক ও অবকারি শুল্ক দেয় সে গরীব জনসাধারনের অর্থে সেনাবাহিনী পরিচালিত। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের পেছনে রাষ্ট্রের অনেক বিনিয়োগ করতে হয়।

প্রতি অর্থ বছরে মোট বাজেটের ৭ থেকে ৮ শতাংশ সেনাবাহিনীর জন্য রাখা হয়। সেনাসদস্যদের চাকুরীকালিন সময়ের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র পৃথক আবাসস্থলের ব্যবস্থা করে দিবে। এতে করে একজন অবসর গ্রহন করলে সে স্থানে এসে চাকুরিরত অপর একজন এসে থাকতে পারবে। রাষ্ট্রের জমি ও অর্থের সুষ্ঠ উপযোগ হবে। সেনাবাহিনীর লোকেরা অবসর গ্রহণের পর সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকবে এটাই কাম্য।

কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের জন্য কিছুদিন পরপর আলাদা স্থায়ি কলোনি তৈরি করা হয়। যেন তারা রাষ্ট্রের জনসাধারণ এর থেকে সম্পূর্ণ পৃথক সত্তার অধিকারী। এভাবে আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনীকে ক্রমে ক্রমে জনগন থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। ক্যান্টনমেন্ট ও সেনাসদস্যের সংখ্যা ভবিষ্যৎএ বৃদ্ধি করে আমাদের সেনা বাহিনী শক্তিশালী হোক এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীর মত আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হোক সেটা আমরা অবশ্যই চাই। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত সেনাঅফিসারদের নিয়ে একের পর এক হাউজিং আর কল্যান সংস্থার নামে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

সৈনিকদের মাত্রাতিরিক্ত আয়েশি জীবন যাপন ও ভোগ বিলাস তাদেরকে মুল কাজ থেকে দূরে নিয়ে যাবে। গতবছর বিবিসি বাংলা রেডিওতে "ফৌজি বাণিজ্য" নিয়ে একাধিক পর্বের যে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে মনে হয়েছিল দেশ রক্ষার মূল ব্রত থেকে সরে গিয়ে তারা সেনা কল্যানের নামে অর্থ তৈরির আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে (Click This Link)। বাস্তবিক পক্ষে তারা সেনা কল্যান কতটুকু করতে পেরেছে তা আমরা বিডিআর গোলযোগের সময় দেখতে পাইনি। প্রতিটি শহীদ পরিবারের ভরন পোষন এর দায়িত্ব নিয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকগুলো এজন্য অবশ্য চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কর কিছুটা হ্রাস করা হয়েছে। শহীদ পরিবারের আবাসনের দায়িত্বও নিয়েছে রাষ্ট্র।

তাহলে তারা কতটুকু কল্যান করলেন? আমাদের এ দেশে আর্মির পাশাপাশি আরও অনেক সরকারী চাকুরিজীবী রয়েছে যেমন- বিচারপতি, ডাক্তার, শিক্ষক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, পুলিশ, আমলা ইত্যাদি। এ সকল লোকেরাও তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এখন এসব বিভাগের লোকেরাও যদি এভাবে একের পর এক পৃথক কোন আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলে তাহলে ছোট রাজধানীটাতে বাকি ৬৩ জেলার(ঢাকা ব্যতিত) জনসাধারণ কোথায় আসবে? আর ঢাকা অঞ্চল এর আদিবাসিদের বসবাস এর কথা তো দূরেই রাখলাম। একটি সমাজে সবধরনের পেশার লোকজন মিলেমিশে থাকবে, আর্মি দরকার হবে ডাক্তারের, ডাক্তারের দরকার হবে শিক্ষকের, শিক্ষকের প্রয়োজন হবে কৃষিবিদের এভাবে ডাইভারসিফিকেশনের মাধ্যমে সমাজ পূর্ণতা পাবে। কিন্তু প্রতিটি সরকারি চাকুরিজীবী লোকেরা যদি আলাদা থাকতে চায় তাহলে অদূর ভবিষ্যৎএ একটি জটিল সমস্যার সৃষ্টি হবে।

উদাহরণ স্বরূপ , যদি প্রতি বছর সেনাবাহিনীর ৫,০০০ জন অবসরে যান, আর ৫ বছর পর পর যদি একটি করে DOHS, AHS বা MHS জাতীয় কিছু করা হয় তাহলে, ৫ x ৫০০০ = ২৫,০০০ সেনার ৩০ শতাংশকে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনা হয় তাহলেও ৭,৫০০ জনকে প্লট দিতে হবে। তাও আবার প্রতিটি ৫ কাঠার প্লট হলে কি পরিমান জায়গার প্রয়োজন? তারপরও সেখানে যদি ১৫/২০ তলা করা হতো তাহলে অনেক পরিবার থাকতে পারতো কিন্তু করা হবে ডুপ্লেক্স ধাচের বাড়ি। অক্টবরের ২৩ তারিখ রূপগঞ্জে যা ঘটে গেল তা অনেকে অনেকভবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। সরকারি দলের এক রাজনীতিক বলছেন এতে বিরধীদল মদদ যুগিয়েছে। অনেকে এতে দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছেন।

কেউ বলছেন বেসরকারি ভূমিদস্যুদের কারসাজি হিসেবে। স্থানীয় এমপি বলছেন এটা যুদ্ধপরাধীদের বিচার নস্যাতের সাথে সম্পর্কিত (২৪,২৫ও২৬ তারিখের জাতীয় পত্রপত্রিকা এবং এটিএন বাংলা ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া)। কিন্তু অসহায় জনগনের দুর্দশা মোস্তফা কামাল জীবন দিয়ে এবং আরও কয়েকজন যাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তা যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে পারলো না। ৭ ফেব্রুয়ারির পত্রিকাতে দেখলাম যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এবং ধারনা করা হচ্ছে তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে।

Click This Link রূপগঞ্জের পরিচিতজন সূত্রে বিগত মাস ছয় আগে(ঘটনা কালিন সময়ের) সেনাবাহিনীর ভূমিদস্যু সুলভ অন্যায় আচরন সম্পর্কে প্রথম শুনতে পাই। এলাকার লোকজন যারা ২৪মৌজার অন্তর্গত তারা তাদের জমি আর্মি ছাড়া অন্য কারও কাছে বেচতে পারেনা। এমনকি নিজ স্বজনদের কাছেও না। কোনভাবে যদি বেচতে পারে তাহলে তার কাছ থেকে জোর প্রয়োগ করে আর্মির নামে অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে নিয়ে নিচ্ছে এবং মধ্যসত্তাভোগীরা আংগুল ফুলে কলাবৃক্ষ হচ্ছে। এছাড়া যারা জমি বিক্রি করতে চায় না তাদেরকে বিক্রয়ের জন্য বলপ্রয়োগ করা হয়।

এসব নিয়ে গ্রামবাসির মাঝে ধিরে ধিরে একটি চাপা ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার বহি:প্রকাশ ঘটে ২৩ অক্টবর। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয়। সাহসী রূপগঞ্জবাসীর এ প্রতিবাদে কে লাল দলের আর কে নীল দলের সমর্থক সে ভেদ ছিলনা। তাদেরকে তাদের পূর্বপুরুষের সম্পদ রক্ষার প্রত্যয়ই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, শিখিয়েছে প্রতিবাদী হতে।

রূপগঞ্জ উপজেলা অর্ধেক শীতলক্ষা নদীর পশ্চিম পার্শ্বে আর বাকি অর্ধেক নদীর পূর্ব প্রান্তে। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম অংশে। এ অংশের পূর্বে শীতলক্ষা, পশ্চিমে রামপুরা খিলক্ষেত এলাকা, উত্তরে পূর্বাচল প্রকল্প (যা কিনা রূপগঞ্জেরই অংশ) এবং ডেমরা। অবস্থান থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে এলাকাটি DAP(এর উদ্দেশ্য হলো ঢাকার ক্রমবর্ধমান চাপ নিয়ন্ত্রনের জন্য মহানগরীর পরিধী বৃদ্ধি করা) এর অন্তর্গত। সংগত কারনেই এখানকার জমি হয়ে যাচ্ছে সোনারটুকরো।

আর সেটাই হয়েছে এ এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপরূপে। একটু পেছন ফিরে দেখি। প্রথম রাজউকের পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের নামে আদিবাসীদের থেকে নামমাত্র মূল্যে তাদের পৈত্রিক ধনটুকু নিয়ে নেয়া আর তৎকালিন প্রস্তাবিত প্রকল্পে তাদের কোন প্লট না রাখা। তারপর দাবি তোলা হয় জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তত একটি বাড়ী করার স্থান দেয়া হোক। কিন্তু গাঁয়ের লোককে তারা তাদের অভিজাত এলাকায় বাড়ী করতে দেবে না।

তৎকালিন ক্ষমতাসীন সাংসদ নির্বাচনে হেরে গেলেন ঐ প্রকল্পে মদদ দেয়ার জন্য। এবার অন্য দলের লোকেরা ক্ষতিগ্রস্থদের প্লট দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সাংসদ হলেন। গত ২৫ ডিসেম্বর '১০ রাজউক চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্থদের প্লট দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এতো বছর পরও, এখন পর্যন্ত ব্যপারটি মূলো ঝুলিয়ে রাখার মতোই রয়ে গেছে। কিন্তু আবার নতুন বর্গীর আগমন ক্ষমতাসীনদের পিঠে চড়ে।

এবার পূর্বাচল প্রকল্পের দক্ষিণে রূপগঞ্জের যে অংশটুকু ছিল তা স্থানীয় জনসাধারণের স্বাভাবিক অধিকার হরণ করে ভক্ষণ করার পালা। এবার আর্মি নামে এলো একটি প্রাইভেট লিমিটেড হাউজিং কোম্পানি। জমির জন্য তারা (অবসরপ্রাপ্ত) আর্মিদের নিকট থেকে কাঠা প্রতি নিচ্ছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ও রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১০০০০টাকা। আর রূপগঞ্জের লোকের বিঘা(৩০শতাংশ) প্রতি ৭০-৮০ লাখ (স্থান ভেদে কমবেশি হবে) টাকা বাজার মূল্যের জমি খতাপত্রে দেখাচ্ছে ৫০-৬০ লাখ, জমির মালিক পাচ্ছে ১৫-২০ লাখ টাকা বাকি টাকা আর বাকি টাকা স্থানীয় দালাল ও আর্মির অসাধু সেনাদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এতো গেলো সরকারি বর্গীদের কথা।

বেসরকারী বর্গীদের অত্যাচারেও রূপগঞ্জবাসীর রাতের ঘুম হারাম হতে বসেছে, যা বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকাতে এসেছে। প্রায়ই দেখা যায় পৈত্রিক সম্পত্তিতে বিভিন্ন বেসরকারি হাউজিং সোসাইটি এসে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিচ্ছে "ক্রয় সূত্রে জমির মালিক কখগ কোং" । অথচ জমির মালিক জমি বিক্রিই করেনি। অথবা আপনার জমির চারপাশে জমি কিনে আপনাকে জোর করে সস্তায় বিক্রি করতে বাধ্য করছে। এদের অত্যাচার দেশের অন্যান্য স্থানের ভূমি দস্যুদের থেকে একটু বেশিই হবে।

এক্ষেত্রেও স্থানীয় দালালদের অত্যাচার ও তাদের আর্থিক সুবিধা ভোগের অভিযোগ শুনতে পাওয়া যায় স্থানীয় জনসাধারণের নিকট। আর সকল ক্ষেত্রে স্থানীয় দালাল তারই, ক্ষমতাশীল দলের ছত্রছায়া যাদের উপর থাকে। এবার এই রূপগঞ্জেই একটি বিপরিত চিত্র তুলে ধরব। এতক্ষণ আমরা গল্প শুনেছি শীতলক্ষার পশ্চিম পাড়ের। এবার নদীর পূর্ব পাড়ের গন্ধর্বপুর গ্রামের অগ্রনি সেচ প্রকল্পের পশ্চিম অংশের গল্প বলি।

এ গ্রামের পার্শ্ববর্তী রূপসী গ্রামে দেশের একটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপের কারখানা রয়েছে। কিন্তু কোম্পানির উৎপাদন বাড়াতে তাদের ফ্যাক্টরি এক্সটেনশন করার প্রয়োজন পরে। এ জন্য পার্শ্ববর্তী গন্ধর্বপুর গ্রামের মানুষের ভিটেমাটি প্রয়োজন। কিন্তু গ্রামের মানুষজন তাদের বসতবাড়ী বিক্রির চিন্তা কখনো মাথায় আনেনি। তখন সেই কোম্পানি গ্রামবাসীকে সেচ্ছায় জমি বিক্রি করানোর জন্য বর্তমান বাজার মূল্য থেকে ২০ থেকে ৪০ গুন বেশী দামে বিক্রি করতে উদ্বুদ্ধ করল।

অথাৎ যে ১ শতাংশ জমির দাম ছিল ১ লক্ষ টাকা তা কিনে নিচ্ছে ২০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকায়। গ্রামের মানুষ কয়েক বছর ধরে খুশি হয়ে বসতবাড়ী বিক্রি করে দিচ্ছে ঐ কোম্পানির কাছে এবং প্রাপ্ত অর্থে সে গ্রামেরই অন্য অংশে বসতি করছে। এতে করে এ গ্রামের মানুষের মাঝে কোন ক্ষোভ নেই। তবে একসাথে পুরো গ্রামের বা ৪০টি গ্রামের জনবসতি ধ্বংস করে দিতে চাইলে, অধিক দাম সত্বেও ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারতো কিনা বলা মুস্কিল। আমার যে ধন আমি সেচ্ছায় ছাড়তে রাজি নই, সেই ধন নিতে হলে অবশ্যই অধিক গুণ মূল্য দিতে হবে গ্রহিতাকে।

কারন সে ধনতো তার বিক্রি করার কোন প্রয়োজন নেই। একজন চাষী সেই জমিতে ফসল করে দিব্যি তার সংসার চালিয়ে নিচ্ছে আবার তার জমির মালিকানাও থাকছে, সেইসাথে দিনদিন জমির দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে এমন কোন জীবন মৃত্যুর সংকটের সম্মুখ্খীন হয়নি যে সম্পদ পানির দরে বিকিয়ে দিতে হবে। আর প্লট কেনার টাকাতো যারা প্লট কেনতে ইচ্ছুক তারা দিচ্ছেই, তাহলে স্থায়ীবাসীদের সাথে কেন এ অবহেলা। গরীব ঠকানো সল্প মূল্যের এই সকল প্লটের জন্য রাজউকে আবেদনের জন্য সুদীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।

প্লট এবং আবেদনের রেশিও হয় ১:১০০০। দামটা একটু বাড়িয়ে দিলে গরীবও কিছুটা ন্যায্য মূল্য পায়, আর আবেদনের রেশিওটাও কিছুটা কমে। সরকার পক্ষীয় বা বেসরকারী পক্ষীয় যারাই এ ধরনের অধিক পরিমানে ভূমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করে তাদের জন্য একটি বাস্তব সম্মত ও যথাযথ নীতিমালা থাকা উচিত। কোন বিশেষ বিভাগের লোকেদের বেসামরিক উদ্দেশ্যে আবাসনের ক্ষেত্রে সাধারন জনগন ও অন্যান্য বিভাগের লোকদের আবাসনের সাথে একটি যৌক্তিক অনুপাতে বন্টন করতে হবে। ক্রয় বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসাধারনের বা পরিবেশের ক্ষতি হয়, অথবা একটি জনবসতি ধ্বংস হয় এমন কিছু করাও শোভন নয় (Click This Link)।

আর ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রয়কারী পক্ষ ও সরকার পক্ষীয় প্রতিনিধির পাশাপাশি থাকা উচিত স্থানীয় জনসাধারনের একাধিক প্রতিনিধি, তবে লক্ষ রাখতে হবে তারা সাধারণ জনগনের মতামতের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল। এবার ফসলি জমি ও জনবসতি ধ্বংসের আরও কয়েকটি চিত্র তুলে ধরছি। ২০১০ সালেই জুলাই মাসের ৩-৪ তারিখ ঢাকা মহানগরীর আরেকটি পার্শবর্তী অঞ্চল জয়দেবপুরে রাজউকের একটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে প্রতিবাদ হয়। পূর্বাচলের মত এখানেও আদিবাসীদের অধিকার বঞ্চনার আশংকা। পরিশেষে স্থানীয় সাংসদের দৃঢ়তায় প্রকল্প স্থগিত করা হয়।

৪ জুলাই'১০ এর প্রথম আলো থেকে নেয়া ছবি। এবার সীমান্তের ওপারের একটি গল্প বলবো, পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৭ সাল থেকে রাজ্যের শাসনক্ষমতায় বারবার বামরা নির্বাচিত হয়েছেন, ২০০৭ এর মার্চ মাসে শিল্পায়নের নামে নন্দীগ্রামের কৃষকদের চাষের জমি কেড়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে যে ক্ষোভ, আন্দোলন পরিনামে হত্যা, ধর্ষন ও লাশ পুড়ানোর ঘটনা ঘটে তা ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টকে ঠেলে দেয় পেছনে । অপরদিকে তৃনমুল কংগ্রেসপ্রধান মমতা ব্যানার্জি, নন্দীগ্রাম তাকে আবার তুলে আনে রাজনীতির শীর্ষে। ফলাফল: ২০০৪ এর লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্টের ছিলো ৩৫টি, বাকী ৭টির মধ্যে ৬টি কংগ্রেস আর মাত্র ১টি তৃনমুল কংগ্রেসের। এবার ৪২ টির মধ্যে তৃনমুল একাই ২০টি, আর বামেদের মাত্র ১৫টি! এখানেও সেই অপরিকল্পিত জমি অধিগ্রহণ ও জনমতের উপেক্ষা।

এমাসের প্রথমদিকে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে হয়ে গেল স্থানীয় লোকজনের প্রচন্ড প্রতিবাদ ও পরিশেষে সে সিদ্ধান্ত হতে সরকারের পিছু হটা। এখানে ফসলি জমি, বিল ও জনবসতির ধ্বংস হবার সম্ভাবনা ছিল। Click This Link আমাদের এ দেশ এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। এর মাঝে বন বাবদ ২২,০০০ ব.কি.(প্রায়); নদনদী বাবদ ১০,০০০ ব.কি.(প্রায়) এবং কৃষি জমি বাবদ ৪৮,০০০ (প্রায়) বর্গকিলোমিটার রয়েছে । তাহলে বাকি রইল প্রায় ৬৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার ভূমি বসবাস এর জন্য।

এর মাঝে রাস্তা-ঘাট, পয়:নিষ্কাশন, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিপণি কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, মসজিদ-মন্দির, বাস স্ট্যান্ড, ঈদগাঁ, খেলারমাঠ, হাসপাতাল, কবরস্থান, পার্ক, বাণিজ্যিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসবের জন্যও ভূমির প্রয়োজন। এদিকে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে এদেশের ১৫-১৮ শতাংশ ভূমি সমুদ্রে তলিয়ে যাবে (সূত্র: http://www.worldviewofglobalwarming.org, Click This Link ) ইতোমধ্যে তালপট্টি ডুবে গেছে। নদী ভাংগনে অসংখ গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে। উপরোক্ত বিষয়াবলী বিবেচনায় এনে, ১৬ কোটি মানুষের বসবাসের জন্য মাথাপিছু কতটুকু করে পড়বে গুনে দেখুন? এ হিসেব শুধুমাত্র আজকের জন্য করবেন। আজ থেকে কিছুদিন পর আমি-আপনি হয়তো থাকব না কিন্তু এ রাষ্ট্র রয়ে যাবে।

অসবে আরো নতুন বাঙালী। শিক্ষাজীবনে অর্থনীতির বইতে পড়েছিলাম, ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে দেয়া অর্থনীতিবিদ টমাস রবার্ট ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব মতে প্রতি ২৫ বছরে জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ আজ যে ১৬ কোটি তা ২৫ বছর পর হয়তো হবে ৩২কোটি তার ২৫ বছর পর হবে ৬২কোটি। এদেশের জন্মের সময় জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি। ৩৯ বছরে বালাদেশী বড়লেও বাংলাদেশটা কিন্তু বাড়েনি।

এদেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল হচ্ছে ঢাকা জেলা। যার আয়তন প্রায় ১,৪৬৩ বর্গকিলোমিটার, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩২,৬০৮ জন(২০০১ সালের অদম শুমারি) মানুষ (সূত্র: Click This Link)। এদেশের মোট জনসংখ্যার ছয় ভাগের এক অংশ থাকে এই ঢাকা অঞ্চলে। ক্রমান্নয়ে ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফাও(FAO) এ প্রকাশিত একটি গ্রাফটিতে দেখা যাচ্ছে বিগত ১০০ বছরে এ দেশের জনসংখ্যা কিরূপে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাই, এখন সময় এসেছে আমাদের ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও বন্টনের প্রতি সুদৃষ্টি দেবার নয়তো ভবিষ্যৎএ অপরিকল্পিত নগরায়নের বর্তমান সমস্যার পাশাপাশি যোগ হবে ভূমির অপব্যবহার বা অপরিকল্পিত ব্যবহার। রাজধানী ঢাকা অঞ্চলে সারাদেশ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে লোকেরা আসবে, বসবাস করবে। তাই এ অঞ্চলের ভূমির সুষ্ঠু বন্টন ও যথাযথ ব্যবহার এর প্রতি আমাদের নীতি নির্ধারণী মহলের দীর্ঘমেয়াদী চীন্তাভাবনা করতে হবে। এবং লক্ষ রাখতে হবে অধিক পরিমান ভূমি গ্রহনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা দল যেন বিশেষ ফায়দা লুটতে না পারে। সেই সাথে প্রকল্প এলাকার প্রকৃতিক পরিবেশ এর ব্যপারটিও মাথায় রাখতে হবে।

এছাড়া অধিগ্রহণ বা ক্রয় করতে হলে স্থানীয় জনগণকে উচ্ছেদ করে বা সস্তায় দখল করে নয়। তারা যাতে সেচ্ছায় বিক্রি করতে পারে এমন মূল্য দেয়া উচিত। আর পৈত্রিক ভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে হলে প্রকল্পিত আবাসন প্রকল্পে আদিবাসীদের আবাসন এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া, ঢাকার ক্রমবর্ধমান চাপ কমানোর জন্য, ঢাকাতে মানুষ কি কি কারনে আসতে চায় ? সেটা মাথায় রেখে বিভাগীয শহরগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। সরকারের উচিত ভূমির সুষ্ঠ উপযোগ পাওয়ার জন্য ১টি প্লটে ডুপ্লেক্স করে ৭ জনের বাসস্থানের সুযোগ না করে সেখানে যদি ১৫তলার একটি এপার্টমেন্ট তুলে দেয় আর প্রতি তলাতে যদি ৪টি করে ফ্ল্যাট থাকে তাহলে ১৫x৪=৬০টি পরিবারের বাসস্থান করে দিতে পারবে।

তাই সরকারের প্লটের পরিবর্তে ফ্ল্যাটের দিকে ঝোঁকার মাধ্যমে ভূমির অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার রোধ ও কার্যকর ব্যবহার করতে পারবে। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যথাযথভাবে বসবাস করতে পারে। সুকান্ত বেচে থাকতে "ছাড়পত্রে" লিখে গিয়েছিলেন - "এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে। চলে যেতে হবে আমাদের। চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ অঙ্গীকার।

অবশেষে সব কাজ সেরে, আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে করে যাব আশীর্বাদ, তারপর হব ইতিহাস। "

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।