কিন্ত যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হীত স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিত, জানাও সে নরাধম জানাও সত্বর অতীব ঘৃনীত সেই পাষন্ড বর্বর
ঢাকা: সেনাবাহিনীর আবাসন প্রকল্পের জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার ইছাপুর ইউনিয়নের গ্রামবাসী, স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের মধ্যে মূহুর্মূহু সংঘর্ষে শনিবার দুপুরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রূপগঞ্জ-সারুলিয়া এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় পুলিশ ও র্যাব। আহত হন অর্ধশতাধিক।
বেলা ২টা ৩৮ মিনিটে ঘটনাস্থল থেকে আমাদের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সাঈদুর রহমান রিমন জানান, রূপগঞ্জের পাপিরা এলাকায় র্যাব সদস্যরা কয়েক হাজার জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করলে সেখানে বেশ কয়েকজনকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশের লরিতে করে তাদের অন্যত্র নিয়ে যেতেও দেখা যায়।
এলাকার বাসিন্দা শংকর বাংলানিউজের কাছে দাবি করেছেন, তিনি নিজে হেলিকপ্টারে করে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহতকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন।
ঘটনাস্থলে শত শত দাঙ্গা পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে সাঈদুর রহমান রিমন জানান, সেনাবাহিনীর ৩টি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থল থেকে সেনা সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
এর আগে ‘গুলিতে ৪ জন নিহত হলে তাদের লাশ ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে’ মাইকিং করে এমন ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানে আশেপাশের অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিতে ছুটে আসতে থাকেন।
তাদের হাতে ছিলো লাঠিসোটা।
এর আগে সকালে উত্তেজিত জনতা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
ওই সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রূপগঞ্জ থানার ওসিসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন।
এলাকাবাসীদের একজন দাবি করেন, রূপগঞ্জ থানাধীন ৩টি ইউনিয়নে সেনাবাহিনীর আবাসন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ৬ হাজার এক জমি দখলকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ এলাকার সরকারি জমিগুলোতেই তাদের আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার কথা বললেও বাস্তবে তারা গ্রামবাসীদের ভূমিহীন করার উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামবাসীদের জায়গাজমি দখলে নিতে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর সহযোহিতা রয়েছে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এমন আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকেই শুরু হয় গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন। উত্তেজিত গ্রামবাসী রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রূপগঞ্জের রেজিস্ট্রি অফিস এবং থানা ঘেরাও করে রাখে এবং সেনাবাহিনীর হাউজিং ক্যাম্প ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।
স্থানীয় অধিবাসী মো. সেলিম বাংলানিউজকে জানান, শনিবার সকাল থেকেই রূপগঞ্জ থানার কাঞ্চনপাড়া, কায়েতপাড়া এবং বাউতপুরসহ মোট তিনটি ইউনিয়নের ২২টি মৌজার ৩০টি গ্রামের প্রায় ১০/১২ হাজার গ্রামবাসী রূপগঞ্জ-সারুলিয়া সড়কের ২০০টি স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে।
তিনি জানান, অবস্থা সামাল দিতে সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে দাঙ্গা পুলিশ ডাকা হলে গ্রামবাসীর উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে।
এ সময় তারা দাঙ্গা পুলিশকে বহনকারী দুটি ভ্যানে ভাঙচুর চালায় এবং স্থানীয় জায়েদ আলীর সহযোগী সন্দেহে জাহিদ মিয়া নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করে ও তার মোটরসাইকেলটি (ঢাকা মেট্রো হ ১৭-৬৫৭২) জ্বালিয়ে দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দাঙ্গা পুলিশ লাঠিপেঠা শুরু করলে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন এবং গ্রামবাসীর মধ্যকার সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফোরকান শিকদার ফোনে বাংলানিউজকে জানান, সংঘর্ষ চলাকালে কমপক্ষে তিনজনকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়। এদের ভেতর একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্য দু’জনকে নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
পরে জনতার হামলায় ওসি ফোরকান সিকদার, এসআই মনজুর হোসেন, এসআই আলী হোসেন ও কনস্টেবল নাজমুল গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেনা আবাসন প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। কিন্তু গত শুক্রবার সকালে হঠাৎ করেই উপজেলায় জমি দখলের গুঞ্জন শুরু হয়।
এদিকে, রূপগঞ্জ-সারুলিয়া সড়কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সড়কে চলাচলরত মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো কাঞ্চনসংলগ্ন এশিয়ান হাইওয়ে ব্যবহার করছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
গ্রামবাসীদের সঙ্গে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সাবেক সেনাপ্রধান এবং রূপগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) কেএম শফিউল্লাহ ও স্থানীয় প্রশাসন বিকেল ৩টায় স্থানীয় কাজী আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আলোচনায় বসার আহবান জানিয়ে গ্রামবাসীকে শান্ত থাকতে বলেছেন বলে জানান রূপগঞ্জের ওসি ফোরকান শিকদার।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গ্রামবাসী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।