এমন যান্ত্রিক যুগেও মরুভূমিতে চলতে গেলে উটের কথা ভাবতে হয়। যোজনবিস্তৃত বালির পথ পেরোতে গিয়ে গাড়ি বিকল হয়ে যেতে পারে, ঘোড়া ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়তে পারে, কিন্তু ‘মরুভূমির জাহাজ’ উট হার মানে না। তার জন্মই যেন হয়েছে মানুষের মরুভূমি পারাপারের জন্য। মরুভূমিতে মানুষের গতিশীলতার একমাত্র নিয়ামক যেন সে-ই।
মরুভূমির মানুষ উটের মাংস খায়, দুধ পান করে।
তেমন অবস্থার সৃষ্টি হলে উটটিকে মেরে তার কুঁজের ভেতর জমা পানি পান করে নিজের জীবন পর্যন্ত বাঁচায়। উট তাই সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানুষের বন্ধু হিসেবে বিবেচিত।
তবে সম্প্রতি চমকে দেয়ার মতো এক খবর দিয়েছেন আরব বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, উটের দুধ শুধু যে মানুষের ক্ষুিপপাসা মেটায় তা নয়, এটা এমনকি ক্যান্সার নিরাময়ের ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। আর শুধু দুধই নয়, ক্যান্সার সারানোর ক্ষমতা আছে উটের মূত্রেও।
পিটিআই
আরব বিজ্ঞানীদের দাবি, গবেষণাগারে ক্যান্সারে আক্রান্ত ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা এর প্রমাণ পেয়েছেন। উটের দুধ ও মূত্রে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা ইঁদুরের শরীরে ঢোকানোর পর তাদের ক্যান্সারের প্রকোপ কমে গেছে। ওদের ক্যান্সারাক্রান্ত কোষগুলোও ধীরে ধীরে সেরে উঠেছে। কারণ তারা ওই ইঁদুরগুলোকে দফায় দফায় উটের দুধ খেতে দিয়েছিলেন। আর উটের মূত্রেও একই রকম রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি দেখে তাদের শরীরে ইনজেকশনের সাহায্যে মূত্র প্রবেশ করিয়েও একই ফলাফল পেয়েছেন।
আরব বায়োটেকনোলজি কোম্পানির (এবিসি) গবেষকরা বলেছেন, মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশেও কোনো উট পীড়িত হয়ে পড়লে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে পীড়িত উটটি সেরে ওঠে। এর কারণ কী, তা বোঝার জন্য একটি উটের দুধ ও মূত্র প্রতিদিন পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল তার দুধ ও মূত্রে এমন একটি পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে যে, তার কোষগুলোতে রয়েছে একটি বিশেষ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড। এ কোষগুলোকে বলা হয় স্মার্ট সেল। ওই সেলগুলোকে ক্যান্সারে আক্রান্ত ইঁদুরের কোষে প্রবেশ করিয়ে দেয়ার পর দেখা গেছে, ইঁদুরের দূষিত কোষগুলো ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।
আরব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবদাল্লা আলী নজর বলেছেন, ‘উটের দুধ ও মূত্রে তৈরি ওষুধ ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দারুণ সুফল পেয়েছি। এখন ওই ওষুধ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে দেখা হবে। ’
তিনি বলেন, ‘বছরখানেক ধরে শারজা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণা চলে আসছিল। বাগদাদের ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে এ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এই ওষুধ মানবসভ্যতার জন্য রীতিমত আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে।
কারণ, পৃথিবীতে রোগটি এখন প্রায় মহামারী হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই ওষুধ এমনকি লিউকোমিয়া সারানোর কাজেও ব্যবহার করা যাবে। ’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।