কবি শামসুর রহমানের কথাই যথার্থ উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ। যদিও কবি লাইনটির অবতরন করেছিলেন দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অস্বাভাবিতার বিহদাৎ প্রকাশ করতে গিয়ে। কিন্তু ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী ঘটনার অবতারন করতে গিয়ে কবির কথাই আবারো উচ্চারন করতে হচ্ছে। ঘটনাটি হলো বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় ২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘঠিত বিডিআর বিদ্রোহে সন্দেহাতিতভাবে আটক সদস্যদের বিচারের নামে প্রকাশ্য প্রহসন করে খুচিয়ে খুচিয়ে মারা হচ্ছে। এর দরুন ইতিপূর্বে তাদের রেশন বন্ধ ও মাসিক বেতন-ভাতা কেটে নেয়া হয়েছে।
সবশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বিডিআর পরিচালনাধীন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেল্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ রাইফেল্স স্কুল এন্ড কলেজে তাদের সন্তানদের ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। যার মোদ্দকথা হলো, বিদ্রোহীদের সমূলে নি:শেষ করার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামনে না দাড়ায়।
পিলখানায় বিদ্রোহ একটি হীন উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে - এ কথা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মুখে বহুবার শুনেছি। কিন্তু সরকারি সব তদন্ত শেষে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে তাতে বিদ্রোহের কারন হিসেবে প্রেষনে আসা সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি বিডিআর সদস্যদের অসন্তোষকেই বিদ্রোহের মূল ও একমাত্র কারন হিসেবে বলা হয়েছে।
স¤প্রতি আমার সাথে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তখন তারা যা বলেছে তা হলো, তারা তো (বিডিআর সদস্য ) সব জেনেশুনেই এ বাহিনীতে যোগদান করেছিলো। তখনই তো তারা সেনা কর্মকর্তাদের বস মেনে , বেতন স্ট্রাকচার জেনে চাকরীতে যোগ দিয়েছে। তবে কেন তারা আবারো বিদ্রোহ করলো। এর বিপরীতে তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ওয়েজবোর্ড (বেতন কাঠামো ) নিয়ে কেন আন্দোলন করেন, সম্পাদক, মালিককে চাপ প্রোয়োগ করেন।
এও বলেছিলাম আপনাদের কথা বলার জন্য সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, চীফ রিপোর্টার সবশেষ সাংবাদিক ইউনিয়ন নামে একটি ট্রেড সংগঠণ আছে। দুই-একটি পত্রিকার সম্পাদক ছাড়া আর সবাই সাংবাদিক। কিন্তু ওরা কার কাছে বলবে ? ওদের নেতৃত্বেতো সব আর্মি অফিসার। যারা কিনা সমাজের ব্রাক্ষ্মন শ্রেনীভূক্ত। যাদের ছায়া মারানোও পাপ।
যাই হোক আজ লিখছি, বিডিআর-এর আটক সদস্যদের সন্তানদের কর্তৃপক্ষ পরিচালনাধীন কলেজে ভর্তি না হতে পারা নিয়ে। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, কলেজ দুটিতে দুই ক্যাটাগরিতে ভর্তি নেয়া হয়। যার একটি বিডিআর কোটা অপরটি সাধারণ কোটা। বিডিআর সন্তানরা ভর্তি শেষে যদি কোন আসন ফাঁকা থাকে তখনই কেবল সাধারণ কোটায় ভর্তি নেয়া হয়। কলেজ দুটির পরিচালনা নীতিমালাতেও বিডিআর সন্তানদের অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি স্পষ্টক্ষরে উল্লেখ আছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, বিডিআর কোটায় পড়ালেখার খরচ সাধারণ কোটার চেয়ে অনেক কম।
বিডিআর কোটায় ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে, শিক্ষার্থীর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি, এসএসসি পরীক্ষার একাডেমিক ট্রান্সস্ক্রিপ্টের সত্যায়িত কপি, টেবুলেশন সিটের ইন্টারনেট প্রিন্ট ও সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের প্রত্যায়ন পত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৭ জুন এসব কাগজ নিয়ে যাওয়ার পরেও আটক বিডিআর সদস্যদের সন্তানদের ভর্তি নেয়নি কলেজ দুটির কর্তৃপক্ষ। তবে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেল্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনা পারভীন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বিডিআর-এর পক্ষ থেকেও এ ধরনের নির্দেশ প্রদানের কথা অস্বীকার করেছেন, বিডিআর-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রাজা।
শিক্ষা সচিব সৈয়দ আতাউর রহমান জানিয়েছেন, যদি কেউ এ ধরনের অভিযোগ করে মন্ত্রণালয় সেক্ষেত্রে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নেয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হলেই প্রকৃত তথ্য বেড়িয়ে আসবে। তাদের কেউই প্রিয় স্বজনের পরিনতির কথা ভেবে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোন অভিযোগ তুলতে চাচ্ছেন না। বিডিআর কলেজে ভর্তির আশায় তারা অন্যকোন কলেজের ভর্তি ফরম সংগ্রহ করেনি। সকল কলেজের ভর্তি ফরম বিতরন ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দোষি সাব্যস্ত হওয়ার আগেই আটক পরিবারের সাথে এ ধরনের বৈষম্যের নিন্দা জানিয়েছেন দেশের মানবাধিকার কর্মীরা। মানবাধিকার সংগঠন “অধিকার” - এর নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিডিআর কলেজে বিডিআর সন্তানরা পড়ালেখা করবে। সেখানে তাদের ভর্তি না নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়ম ভঙ্গ করছে।
এ ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে সরকারের তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দরকার।
সবপক্ষ থেকে যখন বলা হচ্ছিল, তাদের ভর্তি না করার বিষয়টি সত্য না তখন বিডিআর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব আ ল ম ফজলুর রহমানের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। তিনি জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধাই বন্ধ হয়ে যায়। কলেজে ভর্তি না করার বিষয়টিও এ ধরনের কার্যক্রমের অংশ বিশেষ হতে পারে।
তবে এ ব্যাপারে লিখিত কোন নির্দেশনা থাকে না, অলিখিত একটি নির্দেশনা থাকে। বাস্তবতার নিরিখেই এসব করা হয় বলে তার দাবী। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করলে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোন ব্যাখ্যা নেই বলেও মনে করেন তিনি।
বাস্তবতার নিরিখ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, কলেজে যখন সন্দেহাতিতভাবে আটক সদস্যদের সন্তানরা অপর বিডিআর সন্তানদের সাথে বসবে তখন এ নিয়ে তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরী হবে। আর এ অবস্থান থেকেই তাদের ভর্তি নেয়া হয় না।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, মানসিক দূরত্ব তৈরী হলে সেটা আটক সদস্যদের সব সন্তানদের ওপরই এর প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে সবাইকে বাদ দেয়া উচিত। কিন্তু এখন সেখানের স্কুল শাখায় আটক বিডিআর সন্তানরা পড়া-লেখা করছে। ##
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।