ঈদের খাবারকে মুখরোচক করতে গিয়ে নানা রকম ঘি ও মসল্লা ব্যবহার করা হয়। আর এতেই খাবারে কোলেস্টেরলের মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বেশ কিছু অসুস্থতার যোগসূত্র রয়েছে, যেমন-মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, (হার্ট অ্যাটাক) ব্রেইন স্ট্রোক ও পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ। কোলেস্টেরলের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে, বৃদ্ধি সঙ্গে আনুপাতিক হারে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। লিভারে উৎপন্ন কোলেস্টেরল রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে সরবরাহ হয়ে থাকে।
দেখা গেছে যে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে সারা দেহের রক্তনালীতে স্থানে স্থানে স্তূপাকারে কোলেস্টেরল জমা হতে থাকে। এই সব স্তূপকে এ্যথেরোমা এবং জমা হওয়ার পদ্ধতিকে এ্যথেরোস্ক্লেরোসিস বলা হয়। এ্যথেরোমাকে সাধারণের ভাষায় প্ল্যাক বলা হয়। যার ফলে রক্তনালীতে ব্লক সৃষ্টি হয়ে থাকে। সুতরাং হার্ট ব্লকের জন্য রক্তের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
মানবদেহে লিভার বা কলিজা কোলেস্টেরল উৎপন্ন করে থাকে। হজম প্রক্রিয়া ব্যবহারের জন্য পিত্তরস তৈরিতে কোলেস্টেরল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিধায় লিভার পিত্তরস তৈরির জন্য কোলেস্টেরল উৎপাদন করে থাকে। উৎপাদিত কোলেস্টেরলের কিছু অংশ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের প্রয়োজন মেটাতে, লিভার রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গে কোলেস্টেরল সরবরাহ করে থাকে। প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে মানুষ কোলেস্টেরল গ্রহণ করে থাকে যা হজম শেষে রক্তে প্রবেশ করে বিভিন্ন অঙ্গ সরবরাহ হয়ে থাকে। দেখা যাচ্ছে, মানবদেহে দুভাবে কোলেস্টেরল প্রবেশ করে থাকে, খাদ্যের মাধ্যমে এবং লিভার বা কলিজায় উৎপাদনের মাধ্যমে।
অনেক উদ্ভিজ্জ্য খাবারে ফাইটোস্টেরল নামক পদার্থ বিদ্যমান থাকে। ফাইটোস্টেরল শোষণ প্রক্রিয়ায় কোলেস্টেরলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শোষিত হওয়ার ফলে ফাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়। কোলেস্টেরলকে বেশ কয়টি ভাগে করা হয়। যাদের লিপিড নামেও অবিহিত করা হয়ে থাকে। যেমন ঞড়ঃধষ ঈযড়ষবংঃবৎড়ষ (ঞঈ) যার মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি।
খড় িফবহংরঃু ষরঢ়ড়ঢ়ৎড়ঃবরহ (খউখ) যাকে সবচেয়ে ক্ষতিকারক কোলে-স্টেরল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঐরময ফবহংরঃু ষরঢ়ড়ঢ়ৎড়ঃবরহ (ঐউখ) এর মাত্রা বেশি থাকলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায় বলে একে বন্ধু কোলেস্টেরল বলা হয়। ঞৎরমষুপবৎরফব (ঞ)ে যা চর্বি জাতীয় খাদ্যে সব চেয়ে বেশি পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। রক্তে এর মাত্রার কিছুটা বৃদ্ধি ঘটলেও কোনো সমস্যা হয় না তবে অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি ঘটলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ঞঈ-এর স্বাভাবিক মাত্রা ২০০সম/ফষ-এর নিচে।
২০০সম/ফষ থেকে ২৫০সম/ফষ পর্যন্ত মাত্রাকে ঐরময এবং ২৫০সম /ফষ এর বেশি থাকলে তাকে ঠবৎু যরময বলে বিবেচনা করা হয়। খউখ এর মাত্রা ১৫০সম/ফষ অথবা তার নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়। যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে মাত্রা ১০০সম/ফষ এর নিচে রাখাই উত্তম। ঐউখ-এর মাত্রা পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০সম/ফষ এবং মহিলাদের ৫০সম/ফষ এর উপরে থাকা বাঞ্ছনীয়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।
ফোন : ০১৯৭১-৫৬৫৭৬১।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।