আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেয়ার বাজারে আবারো লুটপাট: যা ঘটেছে, যা করবেন, আর যা করবেন না।

ডানের বামে এবং বামের ডানে
শেয়ার ও শেয়ার বাজার: শেয়ার হচ্ছে কোম্পানির মালিকানার অংশ। অবশ্য এটা পুঁজিরও অংশ বটে। কোম্পানির মূলধনকে ছোট ছোট কতকগুলো অংশে ভাগ করা হয় এবং যে যতটুকু অংশ কেনে তাকে সেই অংশের মালিক বা শেয়ার হোল্ডার বলে। এই শেয়ার কেনাবেচা করা যায়। যে সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মূলধন সংগ্রহ ও বিতরণ করে বা শেয়ারের মালিকানা বেচাকেনায় নিয়োজিত তাদের সমন্ময়ে সিকিউরিটি মার্কেট অথবা পুঁজিবাজার বা শেয়ার বাজার গঠিত।

শেয়ার বাজারে সরকারী ও বেসরকারী এবং বিভিন্ন প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানির শেয়ার- এর লেনদেন হয়ে থাকে। এখানে বিনিয়োগ করে দুই ভাবে লাভবান হওয়া যায়। প্রথমত: কোম্পানির বন্টিত মুনাফার অংশ, যা লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড হিসেবে দেয়া হয়। দ্বিতীয়ত: বাজারে শেয়ারের মূল্য ওঠানামার সুযোগ নিয়ে শেয়ার বেচাকেনা করা। বাংলাদেশের শেয়ার বাজার ও লুটপাটের শুরু: বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালের আগে এই শেয়ার বাজার অত্যন্ত স্থিতিশীল ছিলো।

সেই ছাত্র জীবনেও প্রাইমারী শেয়ারে আবেদন করে কখনোই বিফল হইনি (এখন তো শুনি প্রাইমারী শেয়ার পাওয়া আমাবশ্যার চাঁদের মতই দুর্লভ)। শেয়ার বিক্রীর চিন্তাও কখনো করিনি। বছরে একবার এজিএম এ যেতাম। লভ্যাংশের চেকটাই যথেষ্ট মনে করতাম। ১৯৯৬ সালের পর এই ব্যবসায় অস্থিরতার আমদানী হলো।

ওয়াল স্ট্রিটের মত এখানেও শেয়ার বেচাকেনা আর তাঁতে অবৈধ হস্তক্ষেপের পরিমান বাড়তে থাকলো। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শেয়ার বাজারে ভারতীয় মারোয়ারী ষাঁড় আমদানী করলো। এই টাউট কোম্পানীগুলোর ব্যাবসার টেকনিক হচ্ছে প্রথমে ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে শেয়ারের দাম কমিয়ে কমদামে বেশী পরিমান শেয়ার কেনা তারপর কৃত্তিমভাবে শেয়ারের চাহিদা ও দাম বাড়িয়ে উচ্চমূল্যে সেই শেয়ার বাজারে ছেড়ে সটকে পড়া। যা বলছিলাম, ঐ সময় কোন হিসেব নিকেশ ছাড়াই শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে লাগলো। মানুষজন জমি-জমা বিক্রী করে শেয়ারে টাকা খাটাতে শুরু করলো।

তখন নারায়নগঞ্জ হতে এসে ঢাকার দিলকুশায় অফিস করতাম। অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে অভিসার সিনেমা হল থেকে হেটে অফিসে আসতে হতো। কারণ অভিসার সিনেমা হল থেকে শুরু করে শাপলা চত্বর পর্যন্ত মানুষ গিজগিজ করতো। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেব এটাকে তাঁদের সাফল্য বলতে দেরী করলেন না। যদিও আমি ভয় পেয়ে হাতে থাকা সব শেয়ার বেঁচে দিলাম।

কারণ একেতো হুজুগে বাংগালীকে প্রচণ্ড ভয় পাই তার ওপর সরকারী প্রপাগাণ্ডা! এক মাসের ব্যবধানে লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথের ভিখারী হতে দেখলাম। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের অন্যতম একটি কারণ ছিলো এই শেয়ার বাজার কেলেংকারী। আবার সেই একই গল্প: ২০০৯ এ ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগ অনেক সুন্দর সুন্দর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু কথায় আছে না, "স্বভাব যায় না মরলে"। আবার তারা শেয়ার বাজারে কৃত্তিম স্ফিতি সৃষ্টি করলো, আবার সাধারণ মানুষকে শেয়ার বাজারে পুঁজি সরবরাহের আহবান জানালো।

জনগন আবার শেয়ার এলো, আবারো ডাকাতি!! সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখন সেই ১৯৯৬ সালের মতই সব হারাতে বসেছে। মূলত: গত বছরের শেষ থেকেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। গত ১৯ ডিসেম্বর ডিএসই সাধারণ সূচক একদিনে ৫৫১ পয়েন্ট কমে যায়। গত ১২ ডিসেম্বর কমে ২৮৫ পয়েন্ট। গত ৬ নভেম্বর মূল্যসূচক কমে ২৩৩ পয়েন্ট।

ঐ সময় অর্থমন্ত্রীর উচিত ছিলো জনগনকে সাবধান করা এবং লেনদেনে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা। কিন্তু তাহলে দাদাদের মাড়োয়ারী কোম্পানীকে সুবিধা দেবেন কি করে? তাই তখন আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয় কোন ব্যবস্থা নেন নি। ২০১১ সালের শুরুতেও দরপতনের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। গতকাল রোববারও দরপতন দিয়েই দিন শুরু করে ডিএসই, শেষে তা ১৯ নভেম্বরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সাধারণ সূচক দাঁড়ায় ৭১৩৫ দশমিক ০২, যা দিনের শুরুর চেয়ে ৬০০ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা ৭ দশমিক ৭ শতাংশ কম।

কোন ব্যবস্থা না নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষেঅর্থমন্ত্রী উল্টো বললেন, " শেয়ারবাজারে ৯৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না " আজ সোমবার লেনদেন শুরুর প্রথম ৫৫ মিনিটে আগের দিনের রেকর্ড ভেঙে মূল্যসূচক পড়ে যায় ৬৬০ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। শেয়ার বাজার বন্ধ করে আপাতত এই পতন রোধ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ যেন মাথা কেটে মাথাব্যাথার চিকিৎসা। ডিএসইর সামনে সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ ছিলো। কিন্তু লেনদেন বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পর হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারী রাজধানীর মতিঝিল ও দিলকুশার রাস্তায় নেমে আসে।

মতিঝিল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফার্মগেট, মিরপুর, রাজশাহী এবং চট্টগ্রামের আগ্রাবাদেও বিক্ষোভ করেছে বিনিয়োগকারীরা। তারা সরকারবিরোধী শ্লোগান দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব ও পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের। এতে চার সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়।

(সূত্র ) মাত্র গত কালই মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেছিলেন, "আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই শেয়ারবাজার লুট হয়ে যায়" । আজ জনগন আবারো হাতে নাতে সেই প্রমান পেল। তবু কি এদেশের জনগনের শিক্ষা হবে না? কেন তারা বার বার এই তস্করের মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস করে সব হারায়? শেয়ারে বিনিয়োগের আগে যা দরকার: যে কোন বিনিয়োগ কারী বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিযোগকারীদের কোন কম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার পূর্বে প্রথমত: বাজারে তালিকা ভুক্ত কোম্পানির আর্থিক হিসাব বিবরণীতে উল্লেখিত তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেয়া উচিত। দ্বিতীয়ত: শেয়ার বাজার সম্পর্কিত কিছু টার্মস্ বা বিষয় যেমন ইপিএস, ডিডভডেন্ড বা লভ্যাংশ, ডিডভডেন্ড ইয়েল্ড, প্রাইস আরণিং র‌্যাশিও, নিট অ্যাসেট ভ্যালূ ইত্যাদি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখা উচিত। সাধারণ কাঁচা বাজারে একটা আলু বা পেঁয়াজ কেনার আগেও যারা দশবার টিপে পরীক্ষা করেন তাঁদেরই দেখেছি কোন খোঁজ-খবর না করেই লক্ষ টাকার বিনিয়োগ করেন হায়হায় কোম্পানীর শেয়ার কিনে।

এখন আর বিক্ষোভ করে কি হবে? ভুল যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন যা করবেন আর করবেন না: যারা প্রফিট লস করেছেন তাঁদের হা-হুতাশ একটু কমই হবার কথা। তবে যারা মূলধন খুইয়েছেন তাদেরকে বলছি, আতঙ্কিত হবেন না। ভয় পেয়ে পানির দামে শেয়ার বেচবেন না। ধরে রাখুন।

বাজার আবার স্বাভাবিক হোক তারপর বেচতে পারবেন। এখন তাড়াহুরা করলে দাম আরো কমে যাবে। আর আপনার শেয়ার কমদামে কিনে সেই মাড়োয়ারীরা আবার বেশিদামে বেচে নিজেরা লাভ করবে। সবশেষে, ভবিষ্যতে বিদেশের স্বার্থে ব্যবহৃত অর্থমন্ত্রীদের কথায় বিশ্বাস করার আগে দশবার চিন্তা করবেন।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.