আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাপাতি কুড়াল রামদা নিয়ে যাত্রা শুরু : নিজের ঘরেও রণোন্মাদ ছাত্রলীগ



বছরের শুরুতেই খুন-খারাবির অভিযোগ মাথায় তুলে নিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। ১ জানুয়ারি থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে ছাত্রদল ও যুবদলের একাধিক নেতা প্রাণ দিয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদর হাতে। নিহতদের স্বজনরা আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন সংশ্লিষ্ট থানায়। খাগড়াছড়িতে যুবলীগের হামলায় শ্রমিক দল নেতা এবং পিরোজপুরের কাউখালীতে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদল নেতা জীবন দিয়েছেন।

হত্যার প্রতিবাদে ৪ জানুয়ারি কাউখালীতে হরতাল পালন করেছে বিএনপি ও স্থানীয় জনগণ। সেই রক্তের দাগ মলিন হওয়ার আগেই ছাত্রলীগ ফের তাদের রণোন্মদনার মহড়া দিল বরিশালে। সেই যুদ্ধংদেহী ভয়ঙ্কর সব ছাত্রলীগ সেনার ছবি প্রকাশিত হয়েছে ৫ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকায়। এবার প্রতিপক্ষ বা নিরপেক্ষ কারও ওপর সশস্ত্র হামলা নয়, সরাসরি স্বপক্ষের ওপর। তাও আবার ছাত্রলীগের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবসে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই বিশেষত ছাত্রলীগ যে তাণ্ডব চালিয়েছিল দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাঙ্গনে, তা খোদ শাসক দল আওয়ামী লীগকেও চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছিল। ছাত্রলীগ-যুবলীগের দাপট এতটাই ন্যক্কারজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছিল যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে বাগে আনতে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে সংগঠনটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ফলাফল ইতিবাচক হয়নি। ছাত্রলীগ দমেনি। ক্রমাগত প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে, খুন-জখম করেছে।

জবরদখল, টেণ্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভর্তিবাণিজ্যসহ হেন কোনো অছাত্রসুলভ কাজ নেই, যা তারা করেনি। সেই মারমুখো চেহারাই আবার দেখা গেল বরিশালে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনকালে। এবার নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ। অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের এক গ্রুপ অপর গ্রুপকে ধাওয়া করেছে এবং বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে মলিন করেছে নানা আয়োজনে উত্সবমুখর পরিবেশ। প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সূচনাপর্ব থেকেই ছাত্রলীগ গ্রুপযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে অসংখ্যবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ তাদের স্বদলের নেতাকর্মীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ‘ছাত্রলীগকে সামলান’ শিরোনামে একাধিক কলাম ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় যে, এতসবের পরও ছাত্রলীগকে সামলানো যায়নি। উল্লেখ্য, ছাত্রলীগ এদেশের প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ‘শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি’ মূলমন্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের জন্ম।

তারপর ঘটনাবহুল ৬৩টি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ছাত্রলীগ তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। এখন যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে এ সংগঠনটি তার আলোকে বলা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্নের মূলমন্ত্রকেই যেন বিপরীত স্রোতে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অথচ নেতারা সেই পুরনো ধূয়া তুলে ছাত্রলীগের এসব অমার্জনীয় দোষ স্খলন করার প্রয়াস পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গুটি কয়েক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে গোটা ছাত্রলীগ কালিমালিপ্ত হতে পারে না।

এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কবে নেয়া হবে? যতবার ছাত্রলীগ কলম ফেলে অস্ত্র হাতে ময়দানে নেমেছে প্রতিপক্ষের সঙ্গে, এমনকি নিজেদেরই অন্য গ্রুপের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে, ততবারই আওয়ামী লীগের নেতারা এ কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন। কিন্তু সোজা আঙুলে ঘি ওঠেনি। এবার বরিশাল ছাত্রলীগ তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাই যেন প্রমাণ করল। না, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে এ ধরনের আত্মঘাতী সংঘর্ষের নগ্ন চেহারা এমনকি শত্রুরাও দেখতে চায়নি।

নতুন বছরের প্রারম্ভ পর্বে রক্তপাত, সংঘর্ষ, স্ববিরোধী লড়াইয়ের অভিযোগ কেন স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিল ‘বেপরোয়া’ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, তা বিস্ময়কর বৈকি! এদিকে দেশে বর্তমান সরকারের আমলে খুন-খারাবি বেড়েছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছাড়াও যে হারে খুন হচ্ছে সাধারণ মানুষ এমনকি বছরের শুরুতেই—এটি গভীর আশঙ্কার বিষয়। শুরুতেই দেখা গেল লাশের মিছিল, মানুষের রক্তস্রোত এবং স্বজনদের অশ্রুধারায় সিক্ত হলো ২০১১ সালের সূচনা সপ্তাহ। বিষয়টি সরকারের চরম ব্যর্থতা তথা আইনশৃঙ্খলার ঘোরতর অবনতিকেই মনে করিয়ে দেয়। এ অবস্থার অবসান চাই।

আমার দেশ থেকে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.