স্বীকার করেই নিচ্ছি যে ইদানিং দেশের রাজনীতির ঘটনা প্রবাহের দিকে নজর দিতে আর ইচ্ছে করে না। আর কত এইসব ছেলেখেলা দেখব? সহ্যের একটা সীমা থাকে। এখন তো মাঝে মাঝে মনে হয়, নিজের কাজটাই করি। এই খুন খারাবির রাজনীতির দিকে তাকালে কষ্ট হয়, ভয় লাগে যদি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি! যদি সবার মত আমিও আবার কথায় কথায় বাঙ্গালিকে গালি-গালাজ শুরু করে দেই!
যাই হোক, দুইদিন হল ঢাকায় আছি।
প্রথমদিন ক্যাম্পাসে আড্ডা দিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ১১ টা।
আদাবরে বাসায় ঢুকার পথে আম্মার মোবাইলে রিচার্জ করতে গিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় খেলার শেষ ওভার দেখলাম। স্নায়ুচাপে ভুগতে থাকা গ্যালারি ও পর্দার সমর্থকদের অপেক্ষার পালা শেষ হল প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিজয়পতাকা উড়িয়ে। জনতা হাউজিং এর ভেতর থেকে ঢাকের তালে তালে লম্বা পতাকাবাহী একটি মিছিল বের হল। নিজেকে মিলিয়ে দিলাম মিছিলে। মেইন রাস্তা পর্যন্ত উল্লসিত জনতাকে এগিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরলাম।
গদগদ মেজাজেই সে রাতের ঘুমযাত্রা।
সকালে কাগজ মেলেই দেখি লাল সবুজে প্রচ্ছদ মোড়ানো। গ্যাংনাম স্টাইল নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। এর মধ্যেই নাস্তা সেরে ক্যাম্পাসে রওয়ানা দিলাম। পথিমধ্যে মুঠোফোনে আম্মাজান পারিবারিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমার পথরোধ করলেন।
চাচার বাসা ঘুরে ক্যাম্পাসে আসতে বিকেল যায় যায় অবস্থা। ক্যাম্পাসে কথা হল আগামী সপ্তাহে রিডিং ক্লাবের টপিক নিয়ে। খুব উচ্ছসিত ভাবে মোটামুটি সবাই একমত হলাম যে গত চল্লিশ বছরে আমাদের অর্জনের একটা খতিয়ান দরকার। আমাদের যে ‘ব্যাপক’ অর্জন তার স্বীকৃতি দিতে হবে। পাশাপাশি আমি যুক্ত করার চেষ্টা করলাম, এই বাংলাদেশের এগিয়ে চলার সাথে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের হর্তাকর্তারা নিজেদের কীভাবে প্রস্তুত করে তুলছি তারও একটা ফিরিস্তি করতে হবে।
প্রস্তাব খসড়া পাসও হলো। সূর্যসেন হলে নুডলস খেয়ে নীলক্ষেতের বইয়ের ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তেই দেখা ডিপার্ট্মেন্টের প্রিয় ছোট ভাই মাহতাবের সাথে। পরামর্শ নিলাম পাবলিক হেলথের উপর কাজ করার ধরণটা কিরকম হতে পারে। সম্মোহিত হয়ে মাহতাবের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতেই একসময় আবিস্কার করলাম আমি জহুরুল হক হলের ভেতর। মাহতাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে নীলক্ষেতে বাসের জন্য আধ ঘন্টার অপেক্ষা শেষে অগত্যা কুয়াশার ঝাপটা লেপে রিকশা করে বাসায় ফিরলাম।
সংক্ষিপ্ত ভোজনপর্ব শেষে রাত দেড়টায় ৪০ বছরের বাংলাদেশ নিয়ে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বসলাম।
রাত তিনটা বিশ। বক্তৃতার ট্রেসিং প্রায় ঠিক-ঠাক। দিনের প্রথমবারের মত কম্পিউটারে প্রথম আলো ডট কমে ঢুকলাম। বিশ্বজিতের খবরটি ভয়ংকর সে প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল।
কিন্তু আগে ছবি দেখিনি । পর পর ৪ টা ছবি দেখে স্মম্ভিত হলাম। আমার অনুভূতিকে কে যেন মুহুর্তেই রক্তাক্ত করে দিল। আমার চিন্তা অসার হয়ে আসল। চেয়ারে হেলান দিয়ে এক ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম।
আমার প্রস্তাবিত বক্তৃতার পুরো বিষয়টাই ছিল ইতিবাচক এবং শেষটা প্রশ্নবোধক কিছু।
দুইদিন সম্পূর্ণ দুইরকম। প্রথমদিন যে তারুণ্য দেখে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিলাম ঠিক পরদিন সে তারুণ্যই আমার স্বপ্নকে রক্তে লেপে দিয়েছে। দুঃখের সাথে পুরনো উপলব্ধিটা ছিড়েফুড়ে বের হয়ে আসতে চাইল। এটা আমার বাংলাদেশ! এখানে স্বাপ্নিকের অনেক কষ্ট! এখানে কবির অনেক কষ্ট! এখানে মানুষের অনেক কষ্ট!
শুধু রাজনীতির দোকানদারদের সুখ! অবারিত সুখ! অনমিত সুখ!!! ঃ((((
৫ টা বাজল।
সকাল সমাসন্ন। আমি ট্রেসিং টা মুছে দিলাম। নতুন করে ভাবতে হবে। এ ভাবনা হবে ৪০ বছরে কতটুকু মানুষ হলাম। কাল বৈঠকে কথাটা তুলব।
বক্তৃতার বিষয়টা চেঞ্জ করা যায় কিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।